আব্দুল আলিমের গানেই ভবিষ্যত সাজাতে চান কন্যা

প্রকাশিতঃ 2:09 am | December 24, 2017

শোবিজ প্রতিবেদক:
বাংলা গানের পরশমণি বলা হয় লোকসঙ্গীতকে। আর সেই লোকসঙ্গীতের কিংবদন্তি আব্দুল আলিম। কালজয়ী অনেক গানের মরমী এ কন্ঠশিল্পীর কন্যা নূরজাহান আলীম। বাবার গান গেয়েই বড় হয়েছেন। নিজের ভবিষ্যতও সাজাতে চান বাবার গান নিয়েই।

পল্লী গীতির গায়কীতে শ্রেষ্ঠ আব্দুল আলিমের মৃত্যুর অনেক সময় পর প্রথমবারের মতো ভারতের আসামের গৌহাটিতে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ‘লোকসঙ্গীত সম্মেলন’। আগামী ১০ থেকে ১২ জানুয়ারির মধ্যে যে কোন একদিন এ সম্মেলন হবে। সেই অনুষ্ঠান মঞ্চে বাবার গান গাইবেন নূরজাহান আলিম। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে ১১ জানুয়ারি তিনি দেশ ছাড়বেন।

তার সঙ্গীত জীবন, আশা-আকাঙ্খা এবং ভবিষ্যত পরিকল্পনাসহ সার্বিক বিষয়ে দৈনিক কালের আলো’র সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি। সাক্ষাৎকারের চুম্বক অংশ তুলে ধরা হলো পাঠকের জন্য।

লোকসঙ্গীত সম্মেলনে যাচ্ছেন? অনুভূতি কেমন?
শব্দ বা বাক্যে এ অনুভূতি প্রকাশ করা কঠিন। তবে আমি খুবই এক্সাইটেড। সেখানে বাবার ভক্ত শ্রোতারা আমার গান শুনতে চাইছেন। এ কারণে তাদের কাছে বাবার গানগুলো ছড়িয়ে দেয়ার সুযোগ পাচ্ছি। বলতে থাকেন- আমার বাবার জন্ম মুর্শিদাবাদে। কিন্তু এর আগে সেখানে কোন প্রোগ্রাম হয়নি। ভারতবর্ষে বাবার গান ছড়িয়ে দিতে চাই আমি। তাঁর ভক্ত শ্রোতাদের কাছে বাবার গান নিয়ে যেতে চাই। কারণ, প্রতিটি সন্তানের মাঝেই বাবাকে খুঁজে পায় সবাই। আমি খুব ভালভাবে বাবার ভক্ত-শ্রোতাদের কাছে বাবার গান তুলে ধরার চেষ্টা চালাবো।

কবে মঞ্চে উঠছেন?
প্রশ্ন শুনেই আসামের গৌহাটির শিবচর অডিটোরিয়ামেরও একটি ধারণা দিলেন। বললেন, বেশ বড় আকারেই হচ্ছে এ সম্মেলন। স্টেজে উঠবো লোকসঙ্গীতের শেষ দিন। কারণ ৩ জন শিল্পী গেলেও শেষ দিনের প্রধান আকর্ষণ হিসেবে ওরা আমাকে চাইছে। এ কারণে আয়োজকরা আমাকে শেষ দিনে রেখেছেন।

শৈশবের গানের কথা
ছোটবেলা থেকেই আমি গান করি। মাঝখানে একটু গ্যাপ ছিল। দূরে সরেছিলাম গান থেকে। আমার বাবার নাম যেভাবে প্রচার হওয়া উচিত সেভাবে হচ্ছে না। এ কারণে নতুন করে সিরিয়াসলি বিষয়টি নিয়ে ভেবেছি। তাঁর অন্তত নামটা বেঁচে থাকুক সন্তান হিসেবে সেটি চাচ্ছি। আজকের জেনারেশন গান শুনে কিন্তু কার গান জানতে চায় না। ভক্তদের মাঝে আব্দুল আলিম বেঁচে থাকবেন যুগ যুগান্তর, এমন প্রত্যাশা নিয়েই কাজ করে যাবো।

কতটি অ্যালবাম বের হয়েছে?
এ পর্যন্ত আমার দু’টি অ্যালবাম প্রকাশিত হয়েছে। প্রথম মৌলিক গানের অ্যালবাম ‘মাঝি’। সিডি চয়েস থেকে সেটি প্রকাশিত হয়েছে ২০১৪ সালে। সেখানে ৭ টি গান ছিল। লেজার ভিশন থেকে ‘ট্রিবিউট টু আব্দুল আলিম’ নামে আরেকটি অ্যালবাম প্রকাশিত হয়। এখানেও বাবার ৩ টি গান ছিল।

নতুন অ্যালবাম নিয়ে ভাবনা
আমরা নতুন ভাবনা অ্যালবাম নিয়ে নয়, ইউটিউবকে ঘিরে। একটি করে গান ইউটিউবের মাধ্যমে বের করবো আমি। সেটি এ বছরেও হতে পারে কিংবা আগামী বছর। এখন কেউ অ্যালবাম কিনেও না। আমি দু’টি অ্যালবাম বের করেছি। কোম্পানিগুলো যেসব দোকানে অ্যালবাম দেয়, সেখানে কেউ পায় না। তাহলে তারা কোথায় দিচ্ছে?

আপনিও কী তাহলে ইউটিউবে ঝুঁকছেন?
শুধু আমিই নই, এখন প্রতিটি শিল্পী ইউটিউবের মাধ্যমে গান বের করছেন। পহেলা বৈশাখে লাইভ টেকনোলজি কোম্পানির মাধ্যমে আমার একটি গান বের হয়েছিল। ভিউয়ার্সদের ভালো রেসপন্স পেয়েছি। ইউটিউবে শিল্পীদের ভালভাবে প্রচার হচ্ছে।

আসামে আপনার সঙ্গে কে কে যাচ্ছেন?
আমি, শতাব্দী এবং রথীন্দ্রনাথ রায় একসঙ্গে যাচ্ছি।

বাবা পল্লী সম্রাট, নিজেকে কোথায় নিয়ে যেতে চান?
এ প্রশ্নের উত্তরে নূরজাহান আলীম আগে বলে নেন-আমরা যে গানগুলো করছি, ফুল লোকসঙ্গীত বলা যায় না তাকে। এখন লোকসঙ্গীত হয় আধুনিক প্যার্টানে। যেটাকে মর্ডান ফোক বলা হচ্ছে। লোকসঙ্গীতের মূল বিষয়, সুর, কথা অনুযায়ী যদি গানগুলো গাইতে পারতাম তাহলে একটি শিল্পীর ভাল অবস্থান হয়। কিন্তু ভাল একটি লিরিক, টিউন পাচ্ছি না। আপনারা দেখবেন, মমতাজ ভাল গান পেয়েছে বলেই দর্শকদের ভালবাসা পেয়েছে।
ভাল গান না পেলে দর্শকশ্রোতা তা গ্রহণ করে না। ভাল একটি অবস্থানে আমি যেতে চাই। বাবার মতো হতে পারবো না কখনোই। কিন্তু আমি মনে করি, একজন ভাল শিল্পীর অন্তত একটি ভাল স্থান থাকবে। প্রাপ্য সম্মান পাবে।

ভবিষ্যত পরিকল্পনা
আমি ভাল গান করতে চাই। বাবাকে নিয়ে কিছু পরিকল্পনা আছে আমার। কিছু অনুষ্ঠান করতে চাই আমি। যেগুলো আরো ২০ বছর আগে করা দরকার ছিল। কিন্তু দুর্ভাগ্য করা হয়নি। মেয়ে হিসেবে আমি সেই দায়িত্ব পালন করবো। সেটা হতে পারে বাবাকে নিয়ে বই, অনুষ্ঠান। বাংলাদেশের লোকসঙ্গীত নিয়ে যারা গান করছে তাদের নিয়ে অনুষ্ঠান করতে চাই।