হঠাৎ ‘বেসামাল’ রাঙ্গা! (ভিডিও)

প্রকাশিতঃ 10:21 am | November 11, 2019

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো :

হঠাৎ বেসামাল হয়ে পড়েছেন জাতীয় পার্টির (জাপা) মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গা। একই দিনে দু’টি বেফাঁস মন্তব্য করে বসেছেন তিনি। দুর্নীতির মামলায় কারাগারে থাকা বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে ‘স্বৈরাচার’ বলার পাশাপাশি গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলন-সংগ্রামের মহিয়সী লড়াকু নেত্রী, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়েও একই শব্দ উচ্চারণের চরম ধৃষ্টতা দেখিয়েছেন।

শহীদ নূর হোসেনের রক্তে নিজের স্বৈরাচার ‘মামা’র তক্ততাউস ভেসে যাওয়ার যন্ত্রণাতেই কীনা খেঁই হারিয়েছেন ৩২ বছর পর। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে অকুতোভয় এ শহীদকে ‘ইয়াবাখোর’ বাণী দিয়ে চরম বিতর্কের মুখে পড়েছেন এ জাপা নেতা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাকে নিয়ে ট্রল হচ্ছে। চরম ক্ষোভ প্রকাশের পাশাপাশি হাসাহাসিও করছেন অনেকেই।

নীরব রাঙ্গা অনেক দিন পর আলোচনায় এবং মিডিয়ার ফোকাস পেতে একটু ‘ফাউল টক’ করে ফেলেছেন বলেও বলাবলি হচ্ছে। একটি রাজনৈতিক দলের দায়িত্বশীল পদে থেকে তাঁর দায়িত্বকান্ডজ্ঞানহীন এমন বয়ানের প্রেক্ষিতে তাঁর সুচিকিৎসা বা রিহেবিলাইটেশন দরকার বলেও মনে করছেন কেউ কেউ।

সূত্র বলছে, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের জীবনের গোধূলী বেলায় তাঁর চিকিৎসা নিয়ে ওই সময় বেশ কয়েকবার বেফাঁস বক্তব্য দিয়েছিলেন মশিউর রহমান রাঙ্গা। হাসপাতালে এরশাদের চিকিৎসা নিয়ে দলীয় অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিয়ে চরম বিতর্ক তৈরি করেছিলেন। পরে দলটির এক সিনিয়র নেতার হস্তক্ষেপে তিনি ভোল পাল্টান।

তবে এরশাদের চিকিৎসা করানোর অর্থ নেই বলে সংসদে বক্তব্য দিয়ে দলীয় নেতা-কর্মীদের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি করেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাঁর এ বক্তব্যকে সেই সময় ‘হাস্যকর’ উপমায় ভূষিত করেন অনেকেই। অবশ্য ওই সময় দলটির কো চেয়ারম্যান জিএম কাদের রাঙ্গার বক্তব্য ঠিক নয় বলে মন্তব্য করেছিলেন। এরপর কয়েক মাস ‘ফাউল টক’ ফর্মুলা থেকে দূরে ছিলেন রাঙ্গা!

কিন্তু মিডিয়ার দৃষ্টি কাড়তেই রোববার (১০ নভেম্বর) বনানীতে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান কার্যালয়ে জাতীয় পার্টি মহানগর উত্তর শাখার উদ্যোগে ‘গণতন্ত্র দিবস’ উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় দলটির মহাসচিব মশিউর রহমান রাঙ্গা বলেন, ‘হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ কাকে হত্যা করলেন। নূর হোসেনকে? নূর হোসেন কে? একটা অ্যাডিকটেড ছেলে। একটা ইয়াবাখোর, ফেন্সিডিলখোর।’

রাঙ্গার এমন বক্তব্যের পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাকে নিয়ে নানা রকম মন্তব্য আসছে। অনেকে তো বলছেনই, মন্ত্রীত্ব হারিয়ে, সত্যিকারের বিরোধী দলে থেকে রাঙ্গার মাথাটাই গেছে। দলটির নতুন চেয়ারম্যানকে খুশি করতে এবং মহাসচিব পদে নিজেকে অধিকতর ‘যোগ্য’ প্রমাণ করতেই হয়তোবা এমন ফতোয়াটাইপ কথাবার্তা বলছেন।

কারও কারও মতে, শহীদ নূর হোসেনের সময়ে দেশের সাধারণ মানুষ ‘ইয়াবা’ বড়ি নামক শব্দের সঙ্গে পরিচিত হয়নি। দক্ষিণ এশিয়ায় মাদকের বিস্তার নিয়ে গবেষণা করেছেন নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ইমদাদুল ইসলাম। তাঁর ভাষ্য মতে, ‘বাংলাদেশে একটা সময় মাদক হিসেবে ফেনসিডিল বহুল প্রচলিত থাকলেও ১৯৯৯ সাল থেকে ইয়াবা ধীরে ধীরে ওই জায়গা দখল করে নেয়।’

অর্থাৎ, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় শহীদ নূর হোসেনের আত্নত্যাগের কমপক্ষে এক যুগ পর দেশে ইয়াবা সাম্রাজ্যের বিস্তার ঘটলেও তাকে ‘ইয়াবাখোর’ হিসেবে ব্যঙ্গ করে প্রকারান্তরে স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে শহীদদের ‘কটাক্ষ’ করেছেন ইতিহাস বিকৃতির পথে হাঁটা দলটির মহাসচিব।

মহাসচিব রাঙ্গার এমন বেসামাল কথাবার্তার বিষয়ে সাংবাদিক ও বিশ্লেষক হারুন অর রশিদ বলেছেন, ‘আমরা জানি অতিরিক্ত অ্যালকহল বা মাদকের প্রভাবে মাদকাসক্তরা অনেক সময় ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন। গভীর রাতে সদর রাস্তার বিদ্যুতের খাম্বা মাথা দিয়ে ঠেলে সরিয়ে ফেলার কাহিনিও শোনা যায়। আবার রাজা-উজির মেরে পুলিশের হাতে পড়ে শ্রীঘরে যাওয়ার ঘটনাও আছে অনেক।

মাদক ‘ইয়াবা’র প্রভাবে কেমন আচরণ হয়, সেটা আমার জানা ছিল না। কিন্তু এবার জাতীয় পার্টির মহাসচিব মশিউর রহমান রাঙ্গার কথা শুনে তা আর বুঝতে বাকি নেই। এর প্রভাব যে ভয়াবহ ও মারাত্মক, তা আগে চিকিৎসকদের কাছে শুনেছি। এবার হাতে-হাতে তার প্রমাণ পেলাম। তাই বলছি, এখন হয়তো তার সুচিকিৎসা বা রিহেবিলাইটেশন দরকার।’

রোববার (১০ নভেম্বর) শহীদ নূর হোসেন দিবসের আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তথ্যমন্ত্রী ড.হাছান মাহমুদ বলেছেন, ‘নূর হোসেনের রক্ত বৃথা যায়নি। নূর হোসেনসহ সব শহীদের রক্তে আমাদের গণতন্ত্র আজ সুপ্রতিষ্ঠিত। নব্বইয়ের ১০ নভেম্বর সেদিন শুধু নূর হোসেনই নয়, টার্গেট ছিলেন শেখ হাসিনাও।’

সাংবাদিক ও বিশ্লেষক হারুন অর রশিদ জাপা মহাসচিবের কঠোর সমালোচনা করে আরও লিখেছেন, ‘কে ইয়াবাখোর? কার মাথায় ইয়াবার প্রভাব দেখা দিয়েছে? ইয়াবার প্রভাবেই হয়তো তার দল ‘শহীদ নূর হোসেন দিবস’কে ‘গণতন্ত্র দিবস’ হিসেবে পালন শুরু করছে। ভুলে গেছে ইতিহাস।

গণতন্ত্র হত্যা করার দায়ে যাদের কারাগারে থাকার কথা ছিল, যাদের বাংলাদেশের রাজনীতি থেকে চিরতরে বিদায় নেওয়ার কথা ছিল, যাদের প্রতি দেশের মানুষের অবিরাম ঘৃণা থাকার কথা ছিল, তারা যদি মুক্ত থাকেন, তারা যদি গণতন্ত্রের কথা বলেন, তারা যদি ক্ষমতার অংশীদার হন, তারা যদি বিরোধী দল হন; তাহলে তার তো একটা প্রভাব থাকবেই।

সেই প্রভাবে বেসামাল হওয়াই স্বাভাবিক। সেই প্রভাব ইয়াবার প্রভাবের চেয়ে কোনও অংশে কম হওয়ার কথা নয়। আমার ধারণা তা-ই হয়েছে। আর এই ‘ইয়াবা’র প্রভাবে মশিউর রহমান রাঙ্গাকে এখন বেসামাল বলেই মনে হচ্ছে।’

কালের আলো/এমএইচ/এমকে