ঢাকা মহানগর উত্তর যুবলীগে অনুকে ঘিরে ফারুক-সম্রাট সিন্ডিকেটের ‘ছক’!
প্রকাশিতঃ 11:43 am | November 17, 2019

কালের আলো রিপোর্ট :
সুন্দর অবয়বের আড়ালে কুৎসিত জগত প্রকাশ্যে চলে আসায় প্রথমে বেকায়দায় পড়েছিলেন, গ্রেফতার হয়ে কারাগারেও রয়েছেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের বহিস্কৃত সভাপতি ইসমাইল হোসেন সম্রাট। ক্যাসিনো কেলেঙ্কারীতে সম্রাটের মতোই পদ গেছে তাঁর রাজনৈতিক ‘গুরু’ যুবলীগ চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরীর।
তাবৎ প্রভাবশালী একজন ‘খোয়াড়ে’ অন্যজন ‘ভেজা বিড়ালে’ পরিণত হলেও সামনের দিনগুলোতে নিজেদের ক্ষমতা ও প্রভাব দু’টিই ধরে রাখতে নতুন ছক কষে তাঁরা এগোচ্ছেন। এক্ষেত্রে প্রথমেই ঢাকা মহানগর উত্তর যুবলীগের কমিটি নিজেদের কব্জায় নিতে সঙ্গোপনে তৎপরতাও শুরু করেছেন। এ সিন্ডিকেটের ছদ্মবেশিরা আওয়ামী লীগের এক শ্রেণির কর্তা-ব্যক্তিদের কাছে ধর্ণা দিচ্ছেন।
এরই মধ্যে এ বিশেষ সিন্ডিকেটের প্রার্থী হিসেবে আলোচনায় উঠে এসেছে ঢাকা মহানগর উত্তর যুবলীগের বর্তমান যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তাসবিরুল হক অনু’র নাম। বিশেষ করে ওমর ফারুক চৌধুরী ও ইসমাইল চৌধুরী সম্রাটের জামানায় তাদের ‘বিশ্বস্ত’ নেতা হিসেবে নানা কায়দায় নিজেকে প্রমাণ করেছিলেন।
ফলে অনুর মাধ্যমেই ‘খাদের কিনারা’ থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন বুনছেন শুদ্ধি অভিযানে অপকর্ম ফাঁস কান্ডে নেতিয়ে যাওয়া এ সিন্ডিকেটের।
যদিও ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর এক সদস্য বলেছেন, ‘দলে রাজনীতিবিদদের জায়গা করে দিতে ও দুর্বৃত্তদের হাত থেকে দলকে মুক্ত করতেই শুদ্ধি অভিযান শুরু করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কে কোন সিন্ডিকেটের লোক এবং কার সঙ্গে কার সম্পর্ক এসব সম্পর্কে সুস্পষ্ট তথ্য রয়েছে দলীয় সভাপতির কাছে।’
দলীয় একটি সূত্র জানিয়েছে, এসব হিসাব-নিকাশ করেই সৎ ও মেধাবী ছাড়া বিতর্কিত কেউ অথবা সিন্ডিকেটের ‘অনুকম্পা’ রয়েছে এমন কোন প্রার্থী নেতৃত্বে আসতে পারবে না। ইতোমধ্যেই কৃষক লীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় ও ঢাকা মহানগরের উত্তর দক্ষিণের কমিটিতেই এ বিষয়টি প্রমাণিত হয়েছে।

যুবলীগের তিনটি কমিটির বেলাতেই সম্ভাবনাময় ও প্রতিশ্রুতিশীল রাজনীতিকদের হাতে নেতৃত্ব তুলে দেবেন প্রধানমন্ত্রী।
জানা যায়, এক সময় ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন তাসবিরুল হক অনু। এরপর মাইনুল হাসান নিখিল ও ইসমাইল হোসেনের নেতৃত্বাধীন ঢাকা মহানগর উত্তর যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হিসেবে পদ পান তিনি। যুবলীগের ওমর ফারুক চৌধুরীর ধানমন্ডির ‘যুব জাগরণ’ অফিস ও সম্রাটের অবৈধ ‘ডেরা’ হিসেবে পরিচিত কাকরাইল রোডের ভূইয়া ম্যানসনে নিয়মিত যাতায়াত ছিল তাঁর।
যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির বহিস্কৃত দপ্তর সম্পাদকের মাধ্যমে ওমর ফারুক চৌধুরীর সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তুলেন। এরপর ওমর ফারুক চৌধুরী ও ক্যাসিনো সম্রাটের সঙ্গে সমানতালে ‘খাতির’ বজায় রাখতেন। তাদের সঙ্গে হাঁটাচলাসহ নানা কায়দায় ছবি দিয়ে ‘ফেসবুকমার্চ’ করতেন। কালের আলো’র হাতে এসেছে এমন কিছু ছবি।
প্রচার রয়েছে, ঢাকার অপরাধ জগতের নব্য মাফিয়া ও পেশাদার জুয়াড়ি সম্রাটের সঙ্গে কারাবন্দি শীর্ষ সন্ত্রাসী সানজিদুল ইসলাম ইমনের ‘সমঝোতা’ করে সম্রাটের ‘গুডবুকে’ জায়গা করে নেন তাসবিরুল হক অনু। তাঁর মাধ্যমেই সম্রাট ক্যাসিনো বাণিজ্যের একটি ভাগ বঙ্গবন্ধুর খুনি ফ্রিডম পার্টির আদর্শ লালনকারী ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসী ইমনের হাতে পৌঁছে দিতেন।

সূত্র মতে, ক্যাসিনো কান্ডে ‘অ্যাকশন’ শুরুর আগে যুবলীগের চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী তাসবিরুল হক অনুকে ঢাকা মহানগর উত্তর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক করার ‘পাকা’ কথা দিয়েছিলেন। সংগঠনটির বহিস্কৃত দপ্তর সম্পাদক পুরো বিষয়টি সমন্বয় করেছেন। কিন্তু এর আগেই ক্যাসিনো কেলেঙ্কারীতে ওমর ফারুক ফেঁসে যাওয়ায় না কী তাঁর কপাল পোড়ার উপক্রম হয়েছে!
তবে আশা না ছেড়ে প্রভাবশালী এক ব্যক্তিগত কর্মকর্তার সঙ্গে নিবিড় সখ্যতা গড়ার কাজে মনোনিবেশ করেছেন। সাম্প্রতিক সময়ে ওই ব্যক্তিগত কর্মকর্তা নানা কারণে বিতর্কিত হয়ে পড়েছেন। তিনি ইতোমধ্যেই তাকে পদ ভাগিয়ে দেওয়ার জোর গ্যারান্টিও না কী দিয়েছেন, এমন কথাবার্তা হরহামেশাই শোনা যাচ্ছে দলীয় পরিমন্ডলে।
দলীয় একটি সূত্র জানায়, তাসবিরুল হক অনু’র সঙ্গে কারাবন্দি এক শীর্ষ সন্ত্রাসীর সম্পর্ক নতুন কোন বিষয় নয়। আরও কয়েক বছর আগে থেকেই ওই সন্ত্রাসী অনুকে ঢাকা মহানগর উত্তর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক করতে নানামুখী তৎপরতা চালিয়ে আসছেন। কিন্তু বারবার কাউন্সিল পিছিয়ে যাওয়ায় ওই শীর্ষ সন্ত্রাসী সফল হতে পারেননি।
ঢাকা মহানগর উত্তর যুবলীগে একাধিক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে কালের আলোকে বলেন, ‘তাসবিরুল হক অনু’র সঙ্গে যুবলীগের বিতাড়িত সিন্ডিকেটের যেমন সুসম্পর্ক তেমনি কারাবন্দি এক শীর্ষ সন্ত্রাসীরও হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হওয়ার প্রচার রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে।’

বিষয়টি স্পষ্ট করে নিজেদের বক্তব্যের অনুকূলে কালের আলো’র কাছে একটি দালিলিক প্রমাণও তুলে ধরেন ওই নেতারা। ২০১৬ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি দেশের অন্যতম শীর্ষ জাতীয় দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিনে প্রকাশিত ‘ঢাকা আন্ডারওয়ার্ল্ডে মেরুকরণ’ শিরোনামে প্রকাশিত খবর থেকে কোট করে তাঁরা বলেন, ‘তাসভীরুল হক অনুর প্রতি সমর্থন রয়েছে কারাবন্দী শীর্ষ সন্ত্রাসী সানজিদুল হক ইমনের।
ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি বর্তমানে যুবলীগের যুগ্ম-সম্পাদক অনু আগামীতে মহানগর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী হচ্ছেন বলে সূত্র নিশ্চিত করেছে।’
একই সূত্র জানায়, ফ্রিডম পার্টি থেকে শীর্ষ সন্ত্রাসী হওয়া সানজিদুল হক ইমনের সঙ্গে অনুর সম্পর্ক অনেক গভীর। এবার অনুকে যে কোনভাবে সাধারণ সম্পাদক করে নিজের হারানো সাম্রাজ্য ফিরে পেতে চান ফ্রিডম ইমন। স্থানীয় সরকার দলীয় এক সংসদ সদস্যের শেল্টারও পাচ্ছেন। আবার বিতাড়িত সিন্ডিকেটের কুটকৌশলও প্রয়োগ করছেন।

সূত্র মতে, শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমনের ভাবনাকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার পাশাপাশি আরও শক্ত-পোক্ত করতে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ১৫ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জাকির হোসেন স্বপনের সঙ্গে অনু’র ‘গাঁটছড়া’ বাঁধানো হয়েছে। দু’জন এক হয়ে এখন না কী গোটা ধানমন্ডি এলাকার অঘোষিত ‘রাজা’ হয়ে উঠেছেন এমন অভিযোগও উঠতে শুরু করেছে।
এসব অভিযোগের বিষয়ে ঢাকা মহানগর উত্তর যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তাসবিরুল হক অনু’র সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করে কালের আলো। তবে তাকে পাওয়া যায়নি।
যদিও তাঁর অনুসারী কর্মী-সমর্থকরা বলছেন, ‘সংগঠনের প্রতি শ্রম, ত্যাগ ও যোগ্যতার বিচারেই তাসবিরুল হক অনু’র নেতা হওয়ার কথা। তাঁর সঙ্গে কুলিয়ে উঠতে না পেরে একটি মহল বিশেষ অপপ্রচার চালাচ্ছেন। এগুলো ষড়যন্ত্র ছাড়া আর কিছুই নয়।’
কালের আলো/এসআর/এমএ