সশস্ত্র বাহিনী দিবসে দুর্নীতি বিরোধী অভিযান অব্যাহত রাখার ঘোষণা প্রধানমন্ত্রীর

প্রকাশিতঃ 6:35 pm | November 21, 2019

বিশেষ সংবাদদাতা, কালের আলো :
ক্যাসিনো, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজিসহ দুর্নীতি ও সামাজিক অপরাধের বিরুদ্ধে অ্যাকশন শুরু করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীর ইতিবাচক ও সময়োপযোগী এ পদক্ষেপে নাখোশ বিশেষ মহল। তবে দুর্নীতি বিরোধী চলমান অভিযান অব্যাহত রাখার পক্ষে এখনও অনড় বঙ্গবন্ধু কন্যা।

সশস্ত্র বাহিনী দিবসেও চলমান দুর্নীতি বিরোধী অভিযান অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। প্রধানমন্ত্রীর এ ঘোষণা দুর্বৃত্তায়নের সঙ্গে জড়িতদের মনে জেঁকে বসা আতঙ্কের পারদে নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে।

> আবেগরুদ্ধ কন্ঠে কম্পিত গলায় উচ্চারণ প্রধানমন্ত্রীর, অশ্রুতে ছলছল সবার চোখ

বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) সেনাকুঞ্জে সশস্ত্র বাহিনী দিবস উপলক্ষে আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন, ‘সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে যে অভিযান চলছে সেটি অব্যাহত থাকবে। দেশের মানুষ যেন শান্তি ও নিরাপত্তাতে বাস করতে পারে সেই ব্যবস্থাই আমরা করতে চাই।’

অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী আধুনিক প্রযুক্তি ও উন্নত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সশস্ত্র বাহিনীকে যুগোপযোগী হিসেবে গড়ে তোলার কাজ চলছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘যেভাবে বাংলাদেশের আর্থ সামাজিক অবস্থার পরিবর্তনের জন্য আমরা পরিকল্পনা নিয়েছি ঠিক তেমনি সশস্ত্র বাহিনীর জন্য পরিকল্পনা নিয়েছি।

>সশস্ত্র বাহিনী দিবসে দু’হাত বাড়িয়ে দিলেন প্রধানমন্ত্রী, বিনিময় করলেন শুভেচ্ছা

জাতির পিতার প্রতিরক্ষা নীতির আলোকে সেই পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছি। আমরা ইতোমধ্যে সিলেট, কক্সবাজার, রামু ও বরিশাল বিভাগে পটুয়াখালীতে তিনটি পূর্ণাঙ্গ পদাতিক ডিভিশন প্রতিষ্ঠা করেছি। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রশিক্ষণ, অস্ত্র, সরঞ্জামাদি, জনবলের ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব উন্নতি হয়েছে। আন্তর্জাতিক আদালতে জয়লাভের মাধ্যমে আমরা আমাদের বিশাল সমুদ্রসীমা অর্জন করেছি। এ সমুদ্রসীমা আইন ১৯৭৪ সালে জাতির পিতা করে গিয়েছিলেন, জাতিসংঘ যেটি করেছে ১৯৮২ সালে। বঙ্গবন্ধু ১৯৭৪ সালে এ আইন করে নিজের দূরদর্শী নেতৃত্ব প্রমাণ করেছেন।’

সমুদ্র সম্পদ কাজে লাগানোর পরিকল্পনার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এ বিশাল সমুদ্র সম্পদ আমাদের দেশের আর্থ সামাজিক অবস্থার উন্নয়নে আমরা কীভাবে লাগাবো এ পরিকল্পনা নিয়ে তা বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি। ইতোমধ্যে বাংলাদেশে আমাদের খুলনা শিপইয়ার্ড, টকইয়ার্ড সবকিছু মিলিয়ে যুদ্ধ জাহাজ নির্মাণেরও প্রয়াস চালাচ্ছি। কয়েকটি পেট্রোল গার্ডও তৈরি করেছি।

বিমান বাহিনীকে শক্তিশালী ও আধুনিকায়ন করার জন্য কাজ করছি। ৯৬ সালে সরকারে মিগ-২৯ ক্রয় করেছিলাম। নৌ বাহিনীর জন্যও যথেষ্ট সরঞ্জামাদি আমরা আনি। প্রতিটি বাহিনীকে যুগোপযোগী করার বিভিন্ন পদক্ষেপ আমরা নিয়েছি।’

সশস্ত্র বাহিনীর আধুনিকায়নের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘প্রযুক্তি বৃদ্ধি পাচ্ছে, আধুনিকায়নের দিকে আমাদের যেতে হবে, বিদেশের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমাদের চলতে হবে সেদিকে লক্ষ্য করেই সরকার সব সময় পদক্ষেপ নিয়ে থাকে। আমাদের বিমানবাহিনীকে আধুনিক বিমান বাহিনী হিসেবে গড়ে তুলতে বিভিন্ন সরঞ্জামাদি কিনে দিচ্ছে, প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নিচ্ছি।

আরও পড়ুন: ১৯৭৫ সালের পর বাংলাদেশ খুনের রাজ্যে পরিচিত হয় : প্রধানমন্ত্রী

ইতোমধ্যেই আপনারা জানেন আমাদের সশস্ত্র বাহিনীর জন্য মেডিকেল কলেজ, ডেন্টাল কলেজ, ইঞ্জিনিয়ারিং ইন্সটিটিউট, বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করে দিয়েছি। আবাসন সমস্যার সমাধান করেছি। এনডিসি আমার হাতে তৈরি। ৯৬ সালে ওয়ার্ক কলেজ করে দিয়েছি। সারা বিশ্ব থেকে মানুষ আসে। আমাদের মিলিটারী একাডেমি সারা বিশ্বে প্রশংসিত, যারা আসে সকলে প্রশংসা করে।

দেশের আধুনিকায়নের সঙ্গে সশস্ত্র বাহিনীর আধুনিকায়নে আমরা দৃষ্টি দিয়েছি উল্লেখ করে বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, ‘আমাদের বাজেট বৃদ্ধি করেছি। সকলের বেতন ভাতা বৃদ্ধি করেছি এবং অন্যান্য অনেক সুবিধা বৃদ্ধি করে দিয়েছি। আমাদের অর্থনীতি এখন যথেষ্ট শক্তিশালী। আমরা নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে নিজের দেশকে গড়ে তুলতে যাই। সকলে যার যার অবস্থান থেকে আন্তরিকতার সঙ্গে নিজের দেশকে গড়ে তুলবেন এটা আমি চাই।

কারো কাছে হাত পেতে বা মাথা নত করে নয়, বিশ্ব দরবারে বাঙালি মাথা উঁচু করে সম্মানের সঙ্গে চলবে, সম্মানের সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ী জাতি হিসেবে চলবো এটা আমাদের লক্ষ্য। সেভাবে আমরা দেশকে গড়তে যাই।’

উন্নয়নের ৯০ ভাগ অর্থ বাংলাদেশ নিজস্ব অর্থে বাস্তবায়ন করছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে বিশ্বের ৫ টি দেশের একটি বাংলাদেশ। উন্নয়নের ৯০ ভাগ কাজ আমরা নিজস্ব অর্থায়নে করি। যত বার্ষিক উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করি তাঁর ৯০ ভাগ নিজস্ব অর্থায়নে করার সক্ষমতা অর্জন করেছি।

আরও পড়ুন: চাল নেই লবণ নেই বলে একটি গোষ্ঠী অপপ্রচার চালাচ্ছে : প্রধানমন্ত্রী

আমি আশা করি গণতান্ত্রিক ধারাকে সমুন্নত রাখতে দেশপ্রেমিক সশস্ত্র বাহিনী সর্বোচ্চ দায়িত্ববোধ, শৃঙ্খলা ও কর্মপ্রচেষ্টার মাধ্যমে অবদান রাখবে। দেশের শান্তি, নিরাপত্তা নিশ্চিত থাকে তবে অগ্রযাত্রা অভিসম্ভাবী, এটা হতেই হবে। আমি বিশ্বাস করি আমাদের সশস্ত্র বাহিনী সব সময় সব অবস্থায় চেইন অব কমান্ড মেনে এবং সংবিধানের প্রতি দায়বদ্ধ থেকে দেশ গঠনে তাঁর ভূমিকা রেখে যাবে।’

সশস্ত্র বাহিনী দিবসের এ অনুষ্ঠান মঞ্চে প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা বিষয়ক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব:) তারিক আহমেদ সিদ্দিক, সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ, বিমান বাহিনীর প্রধান এয়ার চীফ মার্শাল মশিহুজ্জামান সেরনিয়াবাত, নৌ বাহিনীর প্রধান রিয়ার এডমিরাল আওরঙ্গজেব চৌধুরী, সশস্ত্র বাহিনীর প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার (পিএসও) লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো: মাহফুজুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।

অনুষ্ঠানে স্পিকার ড.শিরীন শারমিন চৌধুরী এমপি, শিক্ষামন্ত্রী ডা: দীপু মনি এমপি, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ.কে আব্দুল মোমেন, কৃষিমন্ত্রী ড.আব্দুর রাজ্জাক, তথ্যমন্ত্রী ড.হাছান মাহমুদ, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো: নজিবুর রহমান, পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড.মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী, বিপিএম (বার), প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক ড.আবুল কালাম আজাদসহ সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী, সচিবসহ সশস্ত্র বাহিনীর উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

কালের আলো/এডিবি/এমএএএমকে