যুবলীগে শেখ পরশের যাত্রা শুরু, চাইলেন সবার সহযোগিতা

প্রকাশিতঃ 8:43 pm | November 22, 2019

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো :

যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা শেখ ফজলুল হক মণির বড় ছেলে তিনি। দেশের স্বনামধন্য ব্র‍্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক। চলনে-বলনে নিপাট সাদামাটা জীবন তার। ছিলেন রাজনীতি থেকে যোজন যোজন দূরে। কিন্তু বুদ্ধিবৃত্তিক রাজনীতির চর্চা করতেন। এবার তাকে দেখা যাবে রাজনীতির মাঠে; বাবার হাতেগড়া সংগঠন সামলাতে।

গুঞ্জন-গুঞ্জরণকে সত্য প্রমাণ করে ক্যাসিনো ঝড়ে লন্ডভন্ড যুবলীগকে ঢেলে সাজাতে ঐতিহ্যবাহী সংগঠনটির গুরুদায়িত্ব বর্তে যাচ্ছে তার কাঁধে। এখন কেবল ঘোষণার অপেক্ষা। খবর সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল সূত্রের।

বিশ্লেষকরা বলছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মানেই চমক। আর চমক হিসেবেই স্বচ্ছ ভাবমূর্তির ‘জ্ঞানের বাতিঘর’ শেখ ফজলে শামস পরশকে যুবলীগের সপ্তম কংগ্রেসে চেয়ারম্যান করা হচ্ছে।

আগামীকাল শনিবার (২৩ নভেম্বর) ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে যুবলীগের সপ্তম কংগ্রেসের (সম্মেলন) দ্বিতীয় পর্বে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিবেন বলে একাধিক সূত্র কালের আলোকে নিশ্চিত করেছে।

এরই মধ্য দিয়ে যুবলীগের রাজনীতির প্রতি অনীহা-হতাশার কালো আঁধার সরিয়ে আশার আলো জ্বালিয়ে দিচ্ছেন বঙ্গবন্ধু কন্যা। পর্যবেক্ষকদের মতে, শেখ ফজলে শামস পরশের মতোন ফ্রেশ ব্লাড, নিবেদিত আদর্শবান ক্লিন ইমেজের নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠার মাধ্যমেই কেন্দ্র থেকে প্রান্ত ঘুরে দাড়াবে যুবলীগ।

বহুল আলোচিত এ সম্মেলনে কাউন্সিলর, ডেলিগেট, অতিথিসহ প্রায় ৩০ হাজার নেতা-কর্মী উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে। যুবলীগের সব শেষ সম্মেলন হয় ২০১২ সালের ১৪ জুলাই। চার বছর আগে শেষ হয়েছে ৩ বছর মেয়াদি এই কমিটির মেয়াদ।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, শনিবার (২৩ নভেম্বর) যুবলীগের চেয়ারম্যান হওয়ার মাধ্যমে অধ্যাপক শেখ ফজলে শামস পরশের যুবলীগের রাজনীতিতে যাত্রা শুরু হলেও আদতে তার রাজনীতিতে অভিষেক হয়েছে শুক্রবার (২২ নভেম্বর)। এদিন দিনমান দলীয় নেতা-কর্মী, সংগঠক ও কাউন্সিলরদের সঙ্গে শেখ পরশ মতবিনিময় পর্ব সেরেছেন।

একই সূত্র জানায়, ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এদিন সকালে সম্মেলন প্রস্তুতি দেখতে সেখানে যান শেখ পরশ। এ সময় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের যুবলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক হারুন অর রশিদকে দায়িত্ব দেন শেখ পরশের সঙ্গে সংগঠনের নেতা-কর্মী ও কাউন্সিলরদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে।

পরে যুবলীগের ‘ভাবী চেয়ারম্যান’ সম্মেলন প্রস্তুতি ঘুরে ঘুরে দেখেন এবং নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলেন।

এরপর বিকেল থেকেই বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের আ.লীগ ও যুবলীগ কার্যালয় এলাকায় খবর ছড়িয়ে পড়ে যুবলীগের নতুন কান্ডারি প্রথমবারের মতো দলীয় কার্যালয়ে আসছেন। মুহুর্তেই নড়েচড়ে বসেন নেতা-কর্মীরা। দলীয় কার্যালয়ে প্রবেশ পথের দুই পাশে উৎসাহী নেতা-কর্মীরা অবস্থান নেন।

সন্ধ্যা সোয়া ৬ টার দিকে ঐতিহ্যবাহী গণমুখী আদর্শিক রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন যুবলীগের বঙ্গবন্ধুএভিনিউয়ের কার্যালয়ে আসেন শেখ ফজলে শামস পরশ।

যুবলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক হারুন অর রশিদের নেতৃত্বে সংগঠনটির নেতা-কর্মীরা তাকে অভিবাদন জানান। এ সময় নেতা-কর্মীদের স্লোগানে প্রকম্পিত হয়ে উঠে বঙ্গবন্ধু এভিনিউ।

পরে যুবলীগের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে যুবলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক হারুন অর রশিদ বলেন, ‘শেখ ফজলে শামস পরশ রাজনীতি বিমুখ নন। তিনি অত্যন্ত সাধারণ জীবন যাপন করেন।

আমাদের মনি ভাইয়ের তিনি প্রথম সন্তান। তিনি পন্ডিত উচ্চ শিক্ষিত ব্যক্তি এবং ব্র‍্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক। মনি ভাইয়ের সন্তান তার পুরোটাই রাজনীতি। তিনি রাজনীতি থেকে এতোদিন দূরে ছিলেন। আমরা তার কাছ থেকে আশা করি তার গতিশীল নেতৃত্বে যুবলীগ তার গৌরবদীপ্ত পথচলা অব্যাহত রাখবে।’

এরপর দলীয় নেতা-কর্মীদের উদ্দ্যেশ্যে বক্তব্য রাখেন যুবলীগের হবু চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ। তিনি বলেন, আমার বাবা শেখ ফজলুল হক মনি যুবলীগ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।

আপনারা সংগঠন ধরে রেখেছেন। আপনাদের উৎসাহ উদ্দীপনা ভালোবাসার জন্য আমি কৃতজ্ঞ। আপনারা যদি সুযোগ দেন যুবলীগকে এগিয়ে নিয়ে যাবো।’

প্রসঙ্গত, সাম্প্রতিক শুদ্ধি অভিযানে চরম ইমেজ সংকটে পড়ে যুবলীগ। গত ১৮ সেপ্টেম্বর রাজধানীতে ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানের শুরুতেই গ্রেপ্তার হন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া। এরপর একই কমিটির সভাপতি ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট, সহসভাপতি এনামুল হক আরমান গ্রেপ্তার হন।

যুবলীগের চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরীকে সংগঠন থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। তাকে বাদ দিয়েই সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি করা হয়েছে। একাধিক নেতা সংগঠন থেকে বহিষ্কৃত হন। যুবলীগের বেশ কয়েকজন নেতার দুর্নীতির অনুসন্ধান করছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

কালের আলো/এমএন/এমএএএম