আন্তরিক’ চীনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী, মিয়ানমারের সঙ্গেও সম্পর্ক উন্নতি করতে চান সেনাপ্রধান (ভিডিও)

প্রকাশিতঃ 12:28 am | November 26, 2019

এম.আব্দুল্লাহ আল মামুন খান, অ্যাকটিং এডিটর, কালের আলো :

মিয়ানমারের সঙ্গে সম্পর্ক জোরালো করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের সামরিক কূটনীতির মাধ্যমে ‘মহাপরাক্রমশালী’ চীনের কাছ থেকে ইতিবাচক সাড়া মেলার পর নিজেদের প্রতিবেশী দেশটির সঙ্গেও সুসম্পর্ক বাড়াতে চাচ্ছে বাংলাদেশ।

আরও পড়ুন: ‘আপ্লুত’ জাতির সূর্য সন্তানরা, যেন ফিরে গেলেন দু:সাহসিক স্মৃতিঘেরা দিনগুলোতে!  

বাংলাদেশের সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ নিজেও বলেছেন, ‘আমাদের সরকার সব সময় চেষ্টা করে যাচ্ছে দুই প্রতিবেশী দেশ ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে। ভারতের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক চমৎকার।

মিয়ানমারের সঙ্গেও ভালো সম্পর্ক রয়েছে। এ সম্পর্ককে কীভাবে আরও উন্নতি করা যায় সেই লক্ষে আমি আগামী মাসে (ডিসেম্বরে) মিয়ানমার সফরে যাচ্ছি।’

সম্প্রতি সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদের চীন সফরকালে সেখানকার সামরিক নীতি নির্ধারকরা তাঁর সঙ্গে আলোচনায় রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে সম্মত হয়েছেন। চীনের প্রতিরক্ষামন্ত্রীসহ শীর্ষ নেতৃত্ব এ বিষয়ে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

আরও পড়ুন: আইসিজে’র সঙ্গে সেনাপ্রধানের মিয়ানমার সফরের কোন সম্পর্ক নেই কেন?

যারপরেনাই প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সঙ্গে সামরিক কূটনৈতিক যোগাযোগ সম্পর্ক দৃঢ় করার প্রচেষ্টার আগে চীন সফরকে ‘টার্নিং’ পয়েন্ট হিসেবে বিবেচনা করছেন বিশেষজ্ঞরা।

কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, সর্বজনস্বীকৃত সামরিক কূটনীতির বিশেষ কৌশলের মাধ্যমে ‘স্পর্শকাতর’ রোহিঙ্গা সংকট সমাধানের বিষয়ে সেনাপ্রধানের আসন্ন মিয়ানমার সফরে অবশ্যই বিস্তারিত আলোচনা হবে। সেদিক থেকে এ সফর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।

রোহিঙ্গাদের শান্তিপূর্ণ প্রত্যাবর্তনের বিষয়টিকে টেকসই করতে চীনের আন্তরিকতা প্রশ্নাতীত বলেই বারবার দাবি করেছে দেশটি। এমনকি গত জুলাইয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চীন সফরেও রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিষয়ে ইতিবাচক মনোভাবের কথা জানায় দেশটি। দুই দিন আগে বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত লি জিমিং একই রকম কথা জানিয়েছেন।

সোমবার (২৫ নভেম্বর) বেলা সাড়ে ১১ টার দিকে ঢাকা সেনানিবাসস্থ আর্মি মাল্টিপারপাস কমপ্লেক্সে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে আলাপকালে দেশপ্রেমিক এ বাহিনীটির প্রধান আসন্ন মিয়ানমার সফর, চীন সফরের প্রত্যাশা-প্রাপ্তিসহ বিভিন্ন বিষয়ে মিডিয়ার সঙ্গে খোলামেলা কথা বলেন।

মূলত সশস্ত্র বাহিনী দিবস উপলক্ষে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে অবদানের জন্য ৭৫ জন মুক্তিযোদ্ধার সম্মানে এ সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এর মধ্যে খেতাবপ্রাপ্ত সেনাবাহিনীর ৩ জন বীরশ্রেষ্ঠের নিকটাত্নীয়, ৫ জন বীর উত্তম, ১২ জন বীর বিক্রম ও ৩০ জন বীর প্রতীক এবং ২৫ জন অন্যান্য মুক্তিযোদ্ধা সেনাসদস্যকে ঘটা করে এ সংবর্ধনা প্রদান করা হয়।

এছাড়া একই অনুষ্ঠানে ২০১৮-১৯ সালে শান্তিকালীন সময়ে বিভিন্ন প্রশংসনীয় ও বীরত্বপূর্ণ কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ ৬ জন ‘অসামান্য সেবা পদক’ এবং ১৭ জন ‘বিশিষ্ট সেবা পদক’ এ ভূষিত করেন সেনাপ্রধান। এ অনুষ্ঠান শেষ হতেই কৌতূহলী সংবাদকর্মীদের মুখোমুখি হন সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ।

মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত ১১ লাখ রোহিঙ্গা নাগরিককে নিয়ে নিরাপত্তাসহ নানান সমস্যার মুখে পড়েছে বাংলাদেশ। এমন প্রেক্ষাপটে সাম্প্রতিক সময়ে সেনাবাহিনী প্রধানের চীন সফর ফলপ্রসু হওয়ার পাশাপাশি প্রতিবেশী মিয়ানমার সফরের বিষয়টিও আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে আসে।

এ অনুষ্ঠান শেষে গণমাধ্যমকর্মীদের সেনাপ্রধান বলেন, ‘বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত এলাকায় রাস্তা ও কাঁটাতার দু’টিই প্রয়োজন। তবে কাঁটাতার হয়তো ভবিষ্যতে হবে। এখন বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের ২৮৭ কিলোমিটার সীমান্ত সড়ক নির্মাণে সরকার অনুমোদন হয়েছে।’

রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরের নিরাপত্তায় কাঁটাতারের বেড়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা বড় বড় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কাঁটাতারের বেড়া দেওয়ার কার্যক্রম শুরু করেছি, এটা সরকারের সিদ্ধান্ত।’  

টেলিভিশন চ্যানেলের এক সংবাদকর্মীর প্রশ্নের উত্তরে সেনাপ্রধান বলেন, ‘দুই দেশের সেনাবাহিনীর মধ্যে সম্পর্কের উন্নয়ন, সহযোগিতা ও প্রশিক্ষণসহ বিভিন্ন বিষয়ে যোগাযোগ বৃদ্ধির বিষয় নিয়ে আমরা আলোচনা করবো।’

সম্প্রতি সেনাপ্রধানের চীন সফরের অর্জনসহ নানা দিক তুলে ধরে জেনারেল আজিজ আহমেদ বলেন, ‘রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও অবকাঠামোগত উন্নয়নে আমরা চীনের কাছ থেকে অনেক সহযোগিতা পেয়ে থাকি। এমনকি আমাদের সশস্ত্র বাহিনীর উন্নয়নেও চীনের ওপর অনেকভাবে নির্ভরশীল।

বাংলাদেশ-চীনের মধ্যকার সম্পর্কের ধারাবাহিকতায় আমার সফর ছিল। এ সফরের মাধ্যমে দুই দেশের মধ্যকার সম্পর্ক আরও একটু উচ্চ অবস্থানে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা ছিল আমার।’

তিনি বলেন, ‘চীনের পিপলস লিবারেশন আর্মির ল্যান্ডফোর্স কমান্ডারের সঙ্গে বিভিন্ন ইস্যুতে অত্যন্ত ফলপ্রসু আলোচনা হয়েছে। চায়না আমাদের প্রশিক্ষণসহ অন্যান্য বিষয়ে আমাদের সহযোগিতা দিতে পারে। চীনের প্রতিরক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে আমার ৪০ মিনিটের নির্ধারিত বৈঠক প্রায় ২ ঘন্টা হয়েছে।

আমরা সেনাবাহিনীর পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো, আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও বিশেষ করে গুরুত্বপূর্ণ রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে আলোচনা করেছি। রোহিঙ্গা ইস্যু এ অঞ্চলে নিরাপত্তায় কী কী সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে এ বিষয়সমূহ বিস্তারিত আলোচনা করেছি। চীনের প্রতিরক্ষামন্ত্রীকে এ বিষয়গুলোতে অনেক আন্তরিক মনে হয়েছে আমার কাছে।’  

অনুষ্ঠানে সেনাবাহিনীর প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার (পিএসও) লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো: মাহফুজুর রহমান, আর্মি ট্রেনিং অ্যান্ড ডকট্রিন কমান্ডের (আর্টডক) জেনারেল অফিসার কমান্ডিং (জিওসি) লেফটেন্যান্ট জেনারেল এস.এম.শফিউদ্দিন আহমেদ, কোয়ার্টার মাস্টার জেনারেল (কিউএমজি)  লেফটেন্যান্ট জেনারেল শামসুল হক,   চিফ অব জেনারেল স্টাফ (সিজিএস) লেফটেন্যান্ট জেনারেল শফিকুর রহমানসহ সাবেক বেশ কয়েকজন সেনাপ্রধানসহ বর্তমান উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

কালের আলো/এনআর/এমএইচএ