আরও শক্তিশালী বাংলাদেশ-সৌদি আরব সম্পর্ক, রোহিঙ্গা প্রশ্নে ফের জোর সমর্থন

প্রকাশিতঃ 2:06 pm | November 29, 2019

বিশেষ সংবাদদাতা, কালের আলো:

মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সৌদি আরবের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক আরও শক্তিশালী হচ্ছে। ‘বহুমুখী’ এ সম্পর্ক যেমন নতুন মাত্রা পেয়েছে তেমনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাষ্ট্রনায়কোচিত নেতৃত্বে দুই দেশের মধ্যকার সম্পর্ক গতানুগতিক ধারাবাহিকতা পেরিয়ে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কেও সূচনা করেছে নবযুগের।

আরও পড়ুন: রোহিঙ্গা ইস্যুতে সৌদি সবসময় বাংলাদেশের পাশে থাকবে

বিশেষ করে রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে মধ্যপ্রাচ্যে গুরুত্বপূর্ণ রিয়াদ ঢাকার পাশে থাকারও প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। দুই দেশের সেনাবাহিনীর বন্ধুত্বপূর্ণ ও সহযোগিতামূলক সম্পর্কের স্বীকৃতি হিসেবে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদকে ‘বাদশাহ আবদুল আজিজ মেডেল অব এক্সিলেন্স’ প্রদান করেছিল সৌদি সরকার।

সেনাপ্রধানের সৌদি আরব সফরের ৯ মাসের মাথায় দুই দিনের সফরে দেশটির সশস্ত্র বাহিনী প্রধান (চিফ অফ জেনারেল স্টাফ) জেনারেল ফা’আদ হামেদ আল রুয়াইলি’র বাংলাদেশ সফর দুই দেশের সামরিক সম্পর্ককে আরও জোরদার করবে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।

আরও পড়ুন: সেনাপ্রধানের সাথে সৌদি আরবের সশস্ত্র বাহিনী প্রধানের সাক্ষাৎ

সেনাবাহিনী সদর দপ্তরে সেনাপ্রধানের সঙ্গে বৃহস্পতিবার (২৮ নভেম্বর) সাক্ষাতকালে তিনি সফরত সশস্ত্র বাহিনীর প্রধানকেও একইভাবে ‘বাংলাদেশ আর্মি ফ্রেন্ডশীপ মেডেল’ প্রদান করেছেন। দুই সেনাবাহিনীর মধ্যে বিদ্যমান সুসম্পর্ক, প্রশিক্ষণ ও অন্যান্য সহায়তা বিষয়েও গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হয়েছে।

বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমির আধুনিকায়ন ও অবকাঠামোগত উন্নয়নে সৌদি আরবের আর্থিক সহায়তার বিষয়ে একটি চুক্তিপত্র স্বাক্ষর করেছেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান ও সৌদি সশস্ত্র বাহিনীর চিফ অফ জেনারেল স্টাফ। খবর সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল সূত্রের।

জানা যায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত চার বছরে পাঁচবার সৌদি আরব সফর করেন। সৌদি আরবের বাদশাহ সালমান বিন আব্দুল আজিজ দায়িত্ব গ্রহণের পর নিজের সরকারের দ্বিতীয় মেয়াদে ২০১৬ সালের জুনে প্রথম সৌদি সফর করেন তিনি।

চারদিনের সেই সফর বৃহত্তর মুসলিম উম্মাহর ঐক্য ও সমৃদ্ধি ছাড়াও রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, বাণিজ্যিক ও নিরাপত্তা বিষয়ক সম্পর্ক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত হয়।

গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন সৌদি আরব সশস্ত্র বাহিনীর চিফ অব জেনারেল স্টাফ (সিজিএস) জেনারেল ফায়াদ বিন হামিদ আল-রুওয়াইলি।

এর ঠিক দুই বছর পর ২০১৮ সালের অক্টোবরে প্রধানমন্ত্রীর চারদিনের সৌদি আরব সফরে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা সংক্রান্ত একটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) চুক্তির বিষয়ে আলোচনার পাশাপাশি আইসিটি খাতে সহযোগিতা সংক্রান্ত একটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষরিত হয়।

সৌদি বাদশার সঙ্গে বৈঠকে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া মিয়ানমারের বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা নাগরিকদের নিজ দেশে প্রত্যাবাসনের বিষয়ে তাঁরা বাংলাদেশের পাশে থাকার অঙ্গীকার করেন।

সূত্র মতে, ২০১৮ সালের এপ্রিলে বাংলাদেশ ও সৌদি আরবের মধ্যে প্রথমবারের মতো যৌথ সামরিক মহড়া অনুষ্ঠিত হয়। ‘গালফ শিল্ড-১’ নামের সেই মহড়ায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ১৮ সদস্য অংশগ্রহণ করেন।

অধিকতর সামরিক সহযোগিতা বাড়ানোর উদ্দেশ্যে আয়োজিত এ মহড়ায় অংশ নেয় আরও ১৯ টি দেশ।

সৌদি বাদশা সালমানের আমন্ত্রণে সমাপনী সেই অনুষ্ঠানে যোগ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই বছরের মে মাসে ‘আরব ইসলামিক আমেরিকান সামিটে’ যোগ দেন তিনি। চলতি বছরের জুনে সৌদি আরবের মক্কায় প্রধানমন্ত্রী সাফা প্যালেসে ইসলামী দেশগুলোর জোট ওআইসির চতুর্দশ সম্মেলনে যোগ দেন।

বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমির আধুনিকায়ন ও অবকাঠামোগত উন্নয়নে সৌদি আরবের আর্থিক সহায়তার বিষয়ে একটি চুক্তিপত্র স্বাক্ষর করেছেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান ও সৌদি সশস্ত্র বাহিনীর চিফ অফ জেনারেল স্টাফ।

সেখানে অর্থনীতি, নিরাপত্তা ও বাস্তুতন্ত্র নিয়ে বর্তমান বিশ্ব যে চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার কৌশল গড়ে তোলতে ওআইসির প্রতি তিনি আহ্বান জানান।

একই সূত্র জানায়, সৌদি আরবের সঙ্গে বাংলাদেশের সামরিক সহযোগিতা বাড়াতে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারির শুরুতে সৌদি আরব সফর করেন বাংলাদেশের সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ।

সপ্তাহব্যাপী সেই সফরে সশস্ত্র বাহিনী প্রধান (চিফ অফ জেনারেল স্টাফ) জেনারেল ফা’আদ হামেদ আল রুয়াইলি’র সঙ্গে সাক্ষাত করেন তিনি।

সাক্ষাতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে সৌদি আরবের বিভিন্ন সামরিক, বেসামরিক অবকাঠামো নির্মাণ ও উন্নয়ন কাজে নিয়োজিত করার বিষয়ে আলোচনা করেন। সেনাবাহিনীর অভিজ্ঞ চিকিৎসকদের সৌদি আরবের বিভিন্ন সামরিক খাতে নিয়োজিত করারও প্রস্তাব দেন।

তিনি সৌদি আরবের সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর কর্মকর্তাদের বাংলাদেশে মিলিটারি একাডেমি, ডিফেন্স কলেজ ও ডিফেন্স সার্ভিসেস কমান্ড ও স্টাফ কলেজে প্রশিক্ষণ গ্রহণের বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে উপস্থাপন করেন।

প্রায় ৯ মাস আগে সৌদি আরব সফরত বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদকে ‘বাদশাহ আবদুল আজিজ মেডেল অব এক্সিলেন্স’ পরিয়ে দেন দেশটির সশস্ত্র বাহিনীর চিফ অব জেনারেল স্টাফ (সিজিএস) জেনারেল ফায়াদ বিন হামিদ আল-রুওয়াইলি।

সূত্র মতে, বাংলাদেশের সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ ১৯৯২ সালে সৌদি আরবের সঙ্গে কোয়ালিশন ফোর্সের অংশ হিসেবে বাংলাদেশের যারা অংশ নিয়েছিল তাদের সৌদি আরব সশস্ত্র বাহিনীর ব্যবস্থাপনায় ওমরাহ করার প্রস্তাব দেন।

প্রায় ৯ মাস আগে দেওয়া গুরুত্বপূর্ণ এ প্রস্তাবনার বিষয়ে অগ্রগতি হচ্ছে বলে বৃহস্পতিবার (২৮ নভেম্বর) সেনাপ্রধানের সঙ্গে সাক্ষাতকালে জানিয়েছেন সৌদি আরবের সশস্ত্র বাহিনী প্রধান (চিফ অফ জেনারেল স্টাফ) জেনারেল ফা’আদ হামেদ আল রুয়াইলি।

একই সূত্র জানিয়েছে, সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদের সৌদি আরব সফরের পর সৌদি আরবের সশস্ত্র বাহিনী প্রধান (চিফ অফ জেনারেল স্টাফ) জেনারেল ফা’আদ হামেদ আল রুয়াইলি’র বাংলাদেশ সফরটি সবিশেষ গুরুত্ব পাচ্ছে।

তিনি সেনাপ্রধানের পাশাপাশি বৃহস্পতিবার (২৮ নভেম্বর) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারি বাসভবন গণভবনে তাঁর সঙ্গে সাক্ষাত করেন। সাক্ষাতে রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশের ভূমিকার প্রশংসা করে এই ইস্যুতে সবসময়ই ঢাকার পাশে থাকার দৃঢ় অঙ্গীকার করেন।

কালের আলো/আরআইএ/এমএএএমকে