জোরদার বাংলাদেশ-ভারত সেনাবাহিনী সম্পর্ক, এবার শুভেচ্ছা উপহার ‘প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কুকুর’
প্রকাশিতঃ 10:09 am | December 08, 2019
বিশেষ সংবাদদাতা, কালের আলো :
মহান মুক্তিযুদ্ধে বন্ধুপ্রতিম প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতের সেনাবাহিনীর অবদান ও আত্নত্যাগের কথা সব সময়ই কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বাংলাদেশ ও ভারতীয় সেনাবাহিনীর মধ্যে উচ্চ পর্যায়ের সফর বিনিময়ের মাধ্যমে পারস্পরিক বিশ্বাস যেমন বেড়েছে তেমনি জোরদার হয়েছে সুসম্পর্কও।
প্রায় তিন বছর আগে ভারতীয় সেনাপ্রধান জেনারেল বিপিন রাওয়াত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাতে দুই দেশের সেনাবাহিনীর বিদ্যমান চমৎকার সম্পর্কের কথা উচ্চারণ করেছিলেন। একই সঙ্গে দুই দেশের সেনা বাহিনীর মধ্যে সহযোগিতা আরও বাড়ানোর ওপরও গুরুত্বারোপ করেছিলেন।
আন্তরিক ও সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ককে আরও বেগবান করতে গত তিন বছর যাবত দুই দেশের সেনাসদস্যদের অংশগ্রহণে যৌথ সাইক্লিং অভিযান পরিচালিত হচ্ছে। এটি উভয় দেশের সেনাবাহিনীর পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদের পরামর্শে ইতোমধ্যেই দুই দেশের সেনাবাহিনীর তরুণ কর্মকর্তারা নিজেদের স্ত্রীদের সঙ্গী করে দুই দেশ সফর করেছেন। এতে করে বাংলাদেশ ও ভারতের সামরিক বাহিনীর মধ্যে চলমান সহযোগিতা আরও বিস্তৃত হয়েছে।
বন্ধুত্বপূর্ণ এ সম্পর্ককে আরও এগিয়ে নেওয়ার পাশাপাশি মাদক ও দুষ্কৃতিকারী শনাক্ত করতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে এবার প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ১০ টি কুকুর শুভেচ্ছা উপহার হিসেবে দিয়েছে ভারতীয় সেনাবাহিনী।
শনিবার (০৭ ডিসেম্বর) বেনাপোল চেকপোস্ট দিয়ে কলকাতার চাসাড়া সেনানিবাসের কর্নেল কেশব যাদব বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কর্নেল আনোয়ার হোসেন ও লেফটেন্যান্ট কর্নেল মিজানুর রহমানের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে কুকুরগুলো হস্তান্তর করেন।
বেনাপোল বিজিবি ক্যাম্পের কমান্ডার সুবেদার মিজানুর রহমান জানান, কুকুরগুলো প্রথমে ভারতের মিরাট সেনানিবাস থেকে চাসাড়া সেনানিবাসে আনা হয়। পরে দুপুরে পেট্রাপোল বিএসএফ ক্যাম্প থেকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তর করা হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, শুভেচ্ছা উপহার হিসেবে ভারতীয় সেনাবাহিনী বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে মোট ৩০টি প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ভারতীয় কুকুর উপহার হিসেবে দেবে। পাশাপাশি প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কুকুরগুলোর জন্য হ্যান্ডালারদের তিন সপ্তাহের প্রশিক্ষণও দেয়া হবে।
শনিবার (০৭ ডিসেম্বর) প্রথম চালানের ১০টি কুকুর দেওয়া হয়। প্রশিক্ষণ শেষ হলে পরবর্তী ৬ মাসে আরও ২০ টি প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কুকুর দেওয়া হবে।
জানা যায়, ২০১৭ সালের এপ্রিলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারত সফরে গেলে তাকে বিমানবন্দরে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এক টুইট বার্তায় লিখেছিলেন, ‘শেখ হাসিনা এবং আমি দৃঢ়প্রতিজ্ঞ, যাতে করে এই সফরের মাধ্যমে দুই দেশের সম্পর্ক একটি নতুন উচ্চতায় যায়।’
বন্ধুত্ব-সৌহার্দ্যরে মূল্যায়নে ঐতিহাসিক সেই সফরটিতে ভারতের দিল্লি ক্যান্টনমেন্টের মানেক শ’ সেন্টারে বাংলাদেশের মুক্তযুদ্ধে ভারতীয় শহীদ সেনা পরিবারের সদস্যদের সম্মাননা জানানো কর্মসূচিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতের প্রধানমন্ত্রী’র উপস্থিতিতে ভারতীয় সেনা ও অন্যান্য মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান।
একই সঙ্গে তাদের সেই আত্মত্যাগ বাংলাদেশকে স্বাধীন করতে যে অবদান রেখেছে তা কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করেন তিনি। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে শহীদ ১০ হাজার ভারতীয় মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের বৃত্তি দেওয়ারও ঘোষণা দেন নরেন্দ্র মোদি।
এরপর বর্তমান সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ দায়িত্ব নেওয়ার পর ২০১৮ সালের জুলাইয়ে তাঁর প্রথম বিদেশ সফরে ভারতে যান। সে সময় ভারতীয় সেনাপ্রধান জেনারেল বিপিন রাওয়াতের সঙ্গে আলোচনার সময় তিনি দুই দেশের প্রতিরক্ষা সহযোগিতার উদ্দেশ্যে দুই দেশের তরুণ সেনা কর্মকর্তাদের তাদের স্ত্রীসহ দুই দেশ সফর আয়োজনের পরামর্শ দেন।
ভারত সরকার এ বিষয়ে ইতিবাচক সাড়া দেওয়ার পর ২০১৮ সালের নভেম্বরে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর তরুণ ২৫ কর্মকর্তা তাদের স্ত্রীসহ প্রথম ভারত সফর করেন। সেই ধারাবাহিকতায় চলতি বছরের জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ১৫ তরুণ কর্মকর্তা তাদের স্ত্রীদের সঙ্গে নিয়ে সাত দিনের শুভেচ্ছা সফরে বাংলাদেশে আসেন।
কালের আলো/আরআইএ/এমএএএমকে