অভূতপূর্ব উন্নয়নের গর্বিত অংশীদার হতে চায় স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়

প্রকাশিতঃ 8:17 am | December 15, 2019

বিশেষ সংবাদদাতা, কালের আলো :

টানা চার বছর দেশের গুরুত্বপূর্ণ জেলা ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) ছিলেন হেলালুদ্দীন আহমদ। ২০১৩ সালে মাঠ প্রশাসনের সর্বোচ্চ পদ বিভাগীয় কমিশনার পদে রাজশাহীর বিভাগীয় কমিশনারের দায়িত্ব পালন করেন। সেখানে ছিলেন প্রায় দুই বছর। এক বছর দায়িত্বরত ছিলেন ঢাকার বিভাগীয় কমিশনার পদেও। চাকরি জীবনের দীর্ঘ পথপরিক্রমায় এখন সামলাচ্ছেন স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়।

আরও পড়ুন: ‘রিমার্কেবল’ একাদশ সংসদ নির্বাচনের সুখস্মৃতিতে ‘নষ্টালজিক’ সচিব হেলালুদ্দীন

এ মন্ত্রণালয়ের সচিব হিসেবে দেশের প্রতিটি গ্রামে আধুনিক নগর সুবিধা সম্প্রসারণের কঠিন চ্যালেঞ্জ ও গুরুদায়িত্বও স্বভাবতই তার কাঁধে।

আর এ চ্যালেঞ্জ বাস্তবায়নে পাকা সড়কের মাধ্যমে সকল গ্রামকে জেলা-উপজেলা শহরের সঙ্গে সংযুক্ত করা, পর্যাপ্ত সুপেয় পানি এবং উন্নত মানের পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থা নিশ্চিত করার মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে অভূতপূর্ব উন্নয়নের গর্বিত অংশীদার হতেই স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী তাজুল ইসলামের অভিভাবকত্বে নিজ মন্ত্রণালয়কে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জাদুকরি নেতৃত্বে গত এক দশকে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে গোটা বিশ্বকে চমকে দিয়ে অসাধারণ সাফল্য অর্জন করেছে বলে মনে করেন হেলালুদ্দীন আহমদ।

তিনি বলেন, ‘শক্তিশালী নেতৃত্ব, সুশাসন, সঠিক উন্নয়ন পরিকল্পনা, স্থিতিশীল সরকার এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বাংলাদেশের অর্থনীতিকে মজবুত করে তুলেছে। বাংলাদেশকে উন্নয়নের মডেল হিসেবে গোটা বিশ্বের সামনে উপস্থাপন করেছেন জাতির পিতার কন্যা।’

সোমবার (০৯ ডিসেম্বর) বিকেলে সচিবালয়ে নিজ কক্ষে কালের আলো.কম’র সঙ্গে আলাপকালে এসব কথা বলেন স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের এ সচিব। কালের আলো’র পাঠকের সামনে তাঁর সাক্ষাতকারের চুম্বক অংশ উপস্থাপন করা হলো।

চার ওয়াসায় সারফেস ওয়াটার ট্রিটমেন্ট
স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ বলেন, ‘ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা ও রাজশাহী ওয়াসায় ডিপটিউবল না করে সারফেস ওয়াটার ট্রিটমেন্টের মাধ্যমে আমরা ওয়াটার সাপ্লাই দেওয়ার ব্যবস্থা করেছি। ২০৩০ সালকে সামনে রেখে সারা বাংলাদেশে প্রায় ১০ হাজার টিউবওয়েল স্থাপন করা হবে। শহরের প্রতিটি সুযোগ সুবিধা গ্রামীণ পর্যায়ে পৌঁছে দেওয়ার জন্য আমরা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি।

তিনি বলেন, ‘সারা বাংলাদেশে একযোগে পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। আগামী জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত যাতে আর ডেঙ্গু মশা মাথাচাড়া দিতে না পারে সেজন্য ব্যাপক কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। প্রতিটি সিটি করপোরেশনকে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে।’

তিন বিষয়ে সর্বোচ্চ গুরুত্ব
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গীকার ছিল। তাতে বলা হয়েছে, ‘আমার গ্রাম আমার শহর’ অর্থাৎ ‘গ্রাম হবে শহর’। দেশের প্রতিটি গ্রামকে শহরে উন্নীত করার এ কর্মসূচি বাস্তবায়নে মুখ্য ভূমিকা পালন করবে স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়।

শহরের সুবিধা গ্রামে পৌঁছে দেওয়ার পাশাপাশি বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীতে প্রতিটি ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়া এবং পাকা সড়কের মাধ্যমে সকল গ্রামকে জেলা-উপজেলা শহরের সঙ্গে সংযুক্ত করার মহাপরিকল্পনাও নিয়েছে মন্ত্রণালয়।

ফলে গ্রামে গ্রামে পাকা সড়ক, সুপেয় পানি এবং উন্নত মানের পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থা নিশ্চিত করার বিষয়টিতে মন্ত্রণালয় সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে বলে জানিয়েছেন সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ।

তিনি বলেন, আমাদের অর্থনীতি হল গ্রামমুখী অর্থনীতি। শতকরা ৮০ ভাগ মানুষ গ্রামে বাস করে। গ্রামের কৃষিভিত্তিক অর্থনীতি মজবুত করতে এবং যেন সহজেই গ্রামের লোকজন কোন পণ্য বিক্রি ও বাজারজাত করতে পারে এজন্য শহরের সঙ্গে লিংকআপ রোড তৈরি করা হবে। কৃষিকেই চিন্তাশক্তি ধরে গ্রামীণ সড়কের ওপর বিশেষ জোর দেওয়া হচ্ছে।  

সচিব বলেন, আমরা চাই দেশের প্রতিটি সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, উপজেলা পরিষদ এবং জেলা পরিষদসহ স্থানীয় সরকারের অন্যান্য প্রতিষ্ঠানও যেন নিজেরাই সক্ষমতা অর্জন করতে পারে। এজন্য তাদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ও জনবল দিয়ে সহযোগিতা করা হবে, যোগ করেন তিনি।

সাফল্যের ঝুলিতে যত পুরস্কার
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, চাকরি জীবনে অভিজ্ঞতায় ঋদ্ধ সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ রাজশাহীর বিভাগীয় কমিশনার থাকাকালেই চমক সৃষ্টি করেছিলেন। ওই সময় পণ্য সংরক্ষণ, সরবরাহ ও মোড়কীকরণে পাটজাত মোড়কের ব্যবহার সরকার বাধ্যতামূলক করলে সেই অভিযানের পরিকল্পনা, নেতৃত্বদান ও সমন্বয়কারী হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন তিনি।

প্রায় চার বছর আগে রাজশাহীতে পরিচালিত তাঁর এ অভিযানের এখনও প্রশংসা করেন সেখানকার মানুষজন। এরই প্রেক্ষিতে পরের বছরের ৬ মার্চ প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে তাকে শ্রেষ্ঠ বিভাগীয় কমিশনারের পুরস্কার প্রদান করেন।

এখানকার বিভাগীয় কমিশনার থাকাকালীন সময়েই জাপানি বিশেষ পদ্ধতির (কাইজান) মাধ্যমে ভূমি অফিস ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ গ্রহণ করেন স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের বর্তমান এ সচিব। মূলত সাধারণ মানুষের মনে ভূমি অফিস নিয়ে নেতিবাচক ধারণা পাল্টে দিতে স্বচ্ছতার মাধ্যমে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করেছিলেন। এক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের জন্য ‘পাবলিক সার্ভিস ইনোভেশন’ পুরস্কারও রয়েছে তাঁর সাফল্যের ঝুলিতে।

কালের আলো/এডিবি/এমএএএমকে