এসপি মঈনুলের ঝুলিতে সাফল্যের নতুন পালক

প্রকাশিতঃ 4:10 pm | April 26, 2018

বিশেষ প্রতিবেদক, কালের আলো :

নানামুখী সৃজনশীল কাজ বাস্তবায়নের মাধ্যমে পুলিশী সেবাকে ‘জনবান্ধব’ হিসেবে গড়ে তুলতে কাজ করেছেন। কেবল মানবিক গুণাবলীই নয় পেশাগত দক্ষতাতেও তিনি সমবয়সী অন্য কর্মকর্তাদের চেয়ে আলাদা।

কমিউনিটি পুলিশিং’র মাধ্যমে জনগণের দোরগোড়ায় পুলিশী সেবা পৌঁছানো, শহর বা প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মাদক ও জঙ্গিবিরোধী প্রচারণা, সমানতালে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় বিশেষ ভূমিকা রাখার সক্ষমতার জন্যই তিনি অনন্য। তাঁর নাম মঈনুল হক। একজন পুলিশ সুপার (এসপি)।

ময়মনসিংহ, নারায়ণগঞ্জসহ নিজের প্রতিটি কর্মস্থলেই শত ব্যস্ততা আর নানা সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও তিনি চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়েছেন কীভাবে নেতৃত্বের কারিশমায় নিজেকে অন্য রকম এক উচ্চতায় নিয়ে যাওয়া যায়। জঙ্গিবাদ, মাদকসহ সব রকমের অপরাধ নির্মুলে তাঁর সাহসী ভূমিকা নজর কেড়েছে পুলিশে।

এরই ধারাবাহিকতায় নারায়ণগঞ্জের মতো কঠিন জেলাতেও আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি’র উন্নতিতে প্রশংসনীয় ভূমিকা রেখে তিনি নিজের কর্মস্থলের মুখ উজ্জ্বল করেছেন। ঢাকা রেঞ্জে সফল পুলিশ সুপার (এসপি) হিসেবে শ্রেষ্ঠত্বের পুরস্কার পেয়েছেন।

সোমবার (২৩ এপ্রিল) ঢাকা রেঞ্জ পুলিশের মাসিক অপরাধ সভায় নিজের সাফল্যের ঝুলিতে নতুন পালক যুক্ত করেন কর্মে বীর এক পুলিশ সুপার (এসপি) মঈনুল হক। পুলিশের ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনের কাছ থেকে তিনি পুরস্কার গ্রহণ করেন।

পুলিশের ২০ তম ব্যাচের কর্মকর্তা মঈনুল হক ২০০১ সালের ৩১ মে পুলিশ বাহিনীতে যোগ দেন। ১৯৭০ সালের ২৯ ডিসেম্বর পটুয়াখালিতে জন্ম নেয়া চৌকস এ পুলিশ কর্মকর্তা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএসসি, এমএসসি সম্পন্ন করেন। দীর্ঘ চাকরি জীবনে স্ব-নামে খ্যাত এ পুলিশ কর্মকর্তা এর আগে পিপিএম ও বিপিএম পদকে ভূষিত হয়েছেন। ছাত্র জীবনে তিনি সক্রিয় ছিলেন ছাত্রলীগের রাজনীতিতে।

ময়মনসিংহের এসপি হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে প্রায় সাড়ে তিন বছরে তিনি ময়মনসিংহের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নয়নেও চমক সৃষ্টি করেছিলেন। অপরাধীদের সাম্রাজ্যে কাঁপন ধরিয়ে মাদক সিন্ডিকেটে পুরোপুরি ভেঙে দিয়েছিলেন। যে ময়মনসিংহের নামের পাশে দিনের পর দিন ‘জুয়া’ কলঙ্ক কালিমা লেপন করেছিলো সেই অপবাদও তিনি মুছে দিয়ে গেছেন। বন্ধ করেছিলেন জুয়া-হাউজি’র রমরমা বাণিজ্য।

একের পর এক শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ীদের পুলিশের কব্জায় এনে স্বস্তির শ্বাস নিতে সহায়তা করেছিলেন ময়মনসিংহকে। ক্ষমতা নেয়ার চেষ্টায় মরিয়া বিএনপি-জামায়াত জোটের আগুন সন্ত্রাসও ময়মনসিংহে রুখে দিয়েছিলেন প্রথা বিরোধী এসপি মঈনুল হক। ২০১৩ থেকে ২০১৫ সালের জোট চক্রের নাশকতা কঠোরভাবে দমন করে জনজীবনকে নির্বিঘ্নে করতে সক্ষম হয়েছিলেন তিনি। ফলে বিদায় বেলায় গোটা ময়মনসিংহবাসীর হৃদয় নিংড়ানো ভালোবাসায় সিক্ত হয়েও অনন্য এক কৃতিত্বের জন্ম দিয়েছিলেন কর্মগুণে দেশপ্রেমিক বাহিনীতে ‘আলো ছড়ানো’ এ পুলিশ কর্মকর্তা। ময়মনসিংহের মানুষের কাছে এখনো ‘ডাইনামিক’ এসপি হিসেবে তিনি স্মরণীয় হয়ে আছেন।

ময়মনসিংহের চেয়ে নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার (এসপি) হিসেবে দায়িত্ব পালন করা এক কঠিন চ্যালেঞ্জ। সেই চ্যালেঞ্জেও সফলতার সঙ্গে উত্তীর্ণ হয়েছেন এ পুলিশ কর্মকর্তা। নিজের বিচক্ষণতা, দক্ষতা ও অনুসন্ধানের মাধ্যমে রূপগঞ্জের বড় অস্ত্র ভান্ডারের সন্ধান করে দেশকে বড় রকমের সন্ত্রাসী হামলার কবল থেকে মুক্ত করেছেন।

নব্য জেএমবি শীর্ষ নেতা ও গুলশান হামলার মাস্টারমাইন্ড বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কানাডিয়ান নাগরিক তামিম আহম্মেদ চৌধুরীসহ তার আরও দুই সহযোগীকে ‘খতম’ করতেও তাঁর অবদান প্রশ্নাতীত।

নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার (এসপি) হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে বার বার তিনি বলেছেন, নারায়ণগঞ্জের মাটিতে জঙ্গিদের ঠাঁই হবে না।’ জঙ্গিবাদ নির্মুলে পুলিশের গ্রহণকৃত ভাড়াটিয়া তথ্য ফরম নিয়ে তিনি পাড়া মহল্লার অলিগলির বাড়ি বাড়ি ছুটে নজির সৃষ্টি করেছেন।

নারায়ণগঞ্জে সাধারণ মানুষের চলাচলে প্রতিবন্ধকতা দূর করতে সব হুমকি-ধমকি উপেক্ষা করে হকার উচ্ছেদ করেছেন। তাঁর সময়ে নারায়ণগঞ্জে মাদকের কলঙ্কিত চার ব্যক্তির তিনজনই পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়েছে। অনেক সন্ত্রাসী ও মাদক ব্যবসায়ী আইনের আওতায় এসেছে। এর আগে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন সফলভাবে সম্পন্ন করেও মুন্সীয়ানার পরিচয় দিয়েছেন এসপি মঈনুল হক।

বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনা অন্ত:প্রাণ এ পুলিশ কর্মকর্তা কাজের মাধ্যমেই নিজের বর্তমান ও অতীত কর্মস্থলের মানুষের মাঝে বেঁচে থাকবেন যুগ-যুগান্তর, এমন প্রত্যাশা তাঁর শুভাকাঙ্খীদের।

 

কালের আলো/এসটিএ/এএ