ভালো মানুষ হতে বললেন সেনাপ্রধান, আলোড়িত-উদ্দীপ্ত মেধাবী ক্যাডেটরা

প্রকাশিতঃ 7:58 am | December 21, 2019

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো :

৫২.৩৭ একর আয়তনের সুবিশাল ক্যাম্পাস। সিলেট শহরের বিমানবন্দর সড়কে ছায়া সুনিবিড় সিলেট ক্যাডেট কলেজ; আলোকিত মানুষ গড়ার প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠানের নিয়ম-কানুনও কঠোর-কঠিন। দেশের সেনাবাহিনীর সর্বোচ্চ কর্মকর্তার কাছ থেকে নিয়মানুবর্তিতা ও সুশৃঙ্খলতায় অনন্য এ প্রতিষ্ঠানটির মেধাবী ক্যাডেটরা এবার পেশাগত স্বপ্নপূরণের প্রেরণা পেয়েছেন। হয়েছেন আলোড়িত-উদ্দীপ্ত।

শুক্রবার (২০ ডিসেম্বর) সিলেট ক্যাডেট কলেজের তিন দিনব্যাপী অষ্টম পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় দিনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে আলো ছড়ানোর ‘বাতিঘর’ মেধাবী ক্যাডেটদের মানবিক, নৈতিক ও বিবেকবোধের শিক্ষার ওপর জোর দিয়ে তাদেরকে ভালো মানুষ হওয়ার উপদেশ দিয়েছেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ।

স্বদিচ্ছা, আন্তরিকতা ও দায়বদ্ধতার সমন্বয়ে ক্যাডেটদের সৌন্দর্যবোধ ও সৃজনধর্মী প্রতিভার বিকাশ ঘটলেও নিজের বিবেকের স্বচ্ছ থাকার জন্য হলেও ভাল মানুষ হওয়াকেই জরুরি বলে মনে করেন তিনি।

সংকীর্ণতা, স্বার্থপরতা, সংস্কার, লোভ-লাভ-মোহ-ক্রোধ-লালসা মুক্ত থেকে পরস্পরকে জানা-বোঝা ও পারস্পরিক শ্রদ্ধার বিষয়টিও গুরুত্বপূর্ণ হওয়ায় মেধাবী ক্যাডেটদের জীবনে উচ্চ লক্ষ্য নির্ধারণ করে এগিয়ে যাওয়ার মর্মবাণীও উচ্চারণ করেছেন জেনারেল আজিজ আহমেদ।

আবার আগামীর নেতৃত্বের জন্যই তাদের প্রতি জাতির প্রত্যাশা ও অপেক্ষার কথাও বলেছেন। সেনাপ্রধান বলেছেন, ‘জীবনে উচ্চ লক্ষ্য নির্ধারণ কর এবং তা অর্জনে কঠোর পরিশ্রম কর। তোমাদের মতো মেধাবী নেতৃত্বের জন্য জাতি অপেক্ষা করে আছে।’

সুনাগরিক তথা সম্পন্ন মানুষ হতে দেশপ্রেম অপরিহার্য। একজন সুনাগরিকের দায়িত্বশীল আচরণ ও ইতিবাচক মনোভাব সমাজ পরিবর্তনের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। মানবিক সমাজ বিনির্মাণে নৈতিকতা ও মানবিক মূল্যবোধের যেমন প্রয়োজন রয়েছে তেমনি চিন্তাশক্তি, ভাষাজ্ঞান ও সৃজনশীল ক্ষমতাও গুরুত্বপূর্ণ।

ইতিহাসের মহানায়ক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহ্বানে সাড়া দিয়ে ৩০ লাখ প্রাণের তাজা রক্ত উৎসর্গ করে বিজয়ের এ রক্তের মূল্য ও সম্মান মেধাবীদের রক্ষা করতে হবে, এমন ইঙ্গিতও মিলেছে সেনাপ্রধানের বক্তব্যে।

জেনারেল আজিজ আহমেদ মেধাবী ক্যাডেটদের উদ্দেশ্যে বলেছেন, ‘ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি চর্চা কর, নৈতিকতা ধরে রাখো এবং নিজেদের মাঝে দেশপ্রেমের স্পৃহা বজায় রাখো।’ বক্তব্যের শুরুতে সেনাপ্রধান বিনম্র শ্রদ্ধায় স্মরণ করেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। এবং শ্রদ্ধা জানান ৩০ লাখ শহীদদের যাদের অসামান্য অবদানে অর্জিত হয়েছে স্বাধীন বাংলাদেশ।

পরে অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ও সাবেক ক্যাডেটদের পুনর্মিলনীর স্মৃতি রক্ষার্থে কলেজের শহীদ মিনার এলাকায় বৃক্ষরোপন কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেন। এই পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে সামরিক ও অসামরিক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, স্থানীয় বিশিষ্ট ব্যক্তিরা, সাবেক অধ্যক্ষ, উপাধ্যক্ষ ও অনুষদ সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

আন্ত:বাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) জানিয়েছে, সেনাপ্রধান বর্তমান ও সাবেক ক্যাডেটদের দৃষ্টিনন্দন কুচকাওয়াজ পরিদর্শন করেন।

তারা জানায়, তিন দিনব্যাপী সিলেট ক্যাডেট কলেজের পুনর্মিলনী অনুষ্ঠান গত বৃহস্পতিবার (১৯ ডিসেম্বর) শুরু হয়। প্রতি চার বছর পর পর পুনর্মিলনীর আয়োজন করা হয়ে থাকে।

এতে বন্ধুত্ব ও ভ্রাতৃত্বের বন্ধন এক অনাবিল আনন্দের সাথে দৃঢ়তর হয় এবং পারস্পরিক সহমর্মিতা, সহযোগিতা ও সংবেদনশীলতার এক অপূর্ব মেলবন্ধন তৈরি হয় এই পুনর্মিলনীতে। আগামী শনিবার (২১ ডিসেম্বর) পর্যন্ত এ পুনর্মিলনী অনুষ্ঠান চলবে।

শুভেচ্ছা উপহার সেই ছবি

সম্প্রতি সশস্ত্র বাহিনী দিবসে ঢাকা সেনানিবাসে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে অসামান্য সেবাপদকপ্রাপ্তদের প্রধানমন্ত্রী পদকে ভূষিত করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ পদকপ্রাপ্তদের অন্যতম ছিলেন সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সেনাপ্রধানের সেই ছবিই সিলেট ক্যাডেট কলেজের ৮ম পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা উপহার হিসেবে দেওয়া হয়েছে জেনারেল আজিজ আহমেদকে।

এ সময় সেনাপ্রধানের জীবনসঙ্গী দিলশাদ নাহার আজিজ, সেনাবাহিনীর কোয়ার্টার মাস্টার জেনারেল (কিউএমজি) লেফটেন্যান্ট জেনারেল শামসুল হকসহ উর্ধ্বতন সেনা কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

কালের আলো/এমএইচ/এমএএএমকে