‘স্বস্তির সুবাতাস’ ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে

প্রকাশিতঃ 4:08 pm | April 28, 2018

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:

চার বছর আগে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে একবার সাংবাদিক নিষিদ্ধের বিজ্ঞপ্তি সাঁটানো হয়েছিল। ওই সময় এমন নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে সাংবাদিক নেতারা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করলে পরবর্তীতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বিজ্ঞপ্তিটি সরিয়ে নেয়। ‘উস্কানীমূলক’ এ বিজ্ঞপ্তিটি ওই সময় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সাঁটায়নি এমন দাবিও করা হয়েছিল।

শুধু তাই নয়, ওই সময়টাতে ঠুনকো অজুহাতে এ হাসপাতালেই শিক্ষানবিশ চিকিৎসকদের হাতে লাঞ্চিত হয়েছিল বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের তিন সাংবাদিক। এ নিয়ে এখানকার সংবাদকর্মীদের সঙ্গে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দূরত্ব তৈরি হয়।

কিন্তু বর্তমান সময়ে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্বস্তির সুবাতাস বইছে। বৃহত্তর ময়মনসিংহের ৬ জেলা, গাজীপুর, সুনামগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা রোগীদের জন্য দিন রাত ২৪ ঘন্টা যেমনি সুচিকিৎসা নিশ্চিত করার পাশাপাশি সেরার পরিবেশ ফিরে এসেছে তেমনি এখানকার দায়িত্বশীল মিডিয়া’র কর্মীদের সঙ্গেও আন্তরিক ও সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

আর এসব সম্ভব হয়েছে মূলত ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ‘রোগী অন্ত:প্রাণ’ পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাসির উদ্দিন আহমেদের দৌলতে। তাঁর ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় গোটা হাসপাতালটির পুরনো দৃশ্যপট বদলে দেশের সব সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মধ্যে চিকিৎসা সেবার একটি মডেল হিসেবে উপস্থাপিত হয়েছে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল।

জানা যায়, ২০১৪ সালের ২৫ এপ্রিল দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিন, ইনকিলাব, বাংলানিউজ, যুগান্তরসহ দেশের প্রথম সারির একাধিক দৈনিকে ফলাও করে প্রকাশিত হয়েছিল ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সাংবাদিক নিষিদ্ধের খবর। ওই সময় ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালকের দায়িত্বে ছিলেন ডা: মো: জাহাঙ্গীর আলম ভূইয়া। আর ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের প্রিন্সিপাল ছিলেন ডা: মতিউর রহমান।

 

সূত্র মতে, গত ২৪ ঘন্টায় পুরনো এ খবরটিকে নতুন হিসেবে চালিয়ে দেয়ার অপতৎপরতা শুরু হয়েছে। এমন অপতৎপরতার সমালোচনায় মুখর হয়েছেন ময়মনসিংহের সচেতন নাগরিক ও হাসপাতালটির চিকিৎসকরা।

এ ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাসির উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কোন সাংবাদিক নিষিদ্ধ করা হয়নি। মূলত ৪ বছর আগের পুরনো একটি খবরের মাধ্যমে নতুন করে গুজব ছড়ানো হচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘দেশের শীর্ষ স্থানীয় গণমাধ্যমের সংবাদকর্মীদের সঙ্গে হাসপাতালের কর্মকর্তা থেকে শুরু করে চিকিৎসকদের একটি চমৎকার ও সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রয়েছে। হাসপাতালটিতে ২৪ ঘন্টা সেবার পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে ময়মনসিংহের দায়িত্বশীল গণমাধ্যম কর্মীদের সব সময় সহযোগিতা পেয়েছি।

এ হাসপাতালটিকে দেশের চিকিৎসা সেবায় একটি দৃষ্টান্ত হিসেবে তুলে ধরতে সামনের দিনগুলোতেও গণমাধ্যম কর্মীদের একই রকম সহযোগিতা প্রত্যাশা করছি।’

ময়মনসিংহের সচেতন নাগরিক থেকে শুরু করে সর্বস্তরের মানুষ সবাই একবাক্যে স্বীকার করেছেন, অতীতের সব সময়ের চেয়ে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা সেবায় গতি ফিরে এসেছে।

ময়মনসিংহের ক্লিনিক, ডায়াগনোস্টিক সেন্টার মালিকদের মাথায় হাত পড়েছে। সরকারি এ হাসপাতালে এক সময় ‘নির্বাসনে’ থাকা সুচিকিৎসা এখন নিশ্চিত হওয়ায় হাসপাতালটিতে প্রতিনিয়তই রোগীদের চাপ বাড়ছে। ইতিবাচক এমন পরিবর্তনের ধারা সূচিত হওয়ায় অগ্নিশর্মা হয়েছেন কেউ কেউ।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাসির উদ্দিন আহমেদ ২০১৫ সালের পহেলা নভেম্বর পরিচালক হিসেবে যোগদান করেন। এরপর তিনি এ হাসপাতালে ২৪ ঘন্টা চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে ওয়ান স্টপ সার্ভিসসহ নানামুখী উদ্যোগের সফল বাস্তবায়ন করেন। তাঁর সময়েই সরকারি এ হাসপাতালে রোগীদের ভাগ্যে জুটেছে বিনামূল্যে শতভাগ ওষুধ।

পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতার পাশাপাশি পুরো হাসপাতালেই সেবার পরিবেশ ফিরিয়ে এনে আমুল বদলে দিয়েছেন হাসপাতালটিকে। ওষুধ পাচার যেভাবে বন্ধ করেছেন তেমনি রোগীদের খাবার সরবরাহের নামে নিজেদের পকেট ভারী করা ঠিকাদারদের সিন্ডিকেটও ভেঙে দিয়েছেন। এমন পরিবর্তন যারা মানতে পারেননি তাঁরাই তাকে নিয়ে অপতৎপরতা চালাতে পারেন বলে মনে করেন হাসপাতালটির চিকিৎসক, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

 

কালের আলো/এমকে/ওএইচ