‘অলরাউন্ডার’ নগর পিতা!

প্রকাশিতঃ 8:56 pm | December 27, 2019

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো :

স্বপ্নের সবুজ ঢাকা গড়তে চেয়েছিলেন প্রয়াত মেয়র আনিসুল হক। মাত্র দুই বছর সময়ে অনেক সাহসী পদক্ষেপের জন্য হয়েছিলেন প্রশংসিত। কিন্তু তার স্বপ্নগুলো থেমে যাবে, অপমৃত্যু ঘটবে কিংবা কে পূরণ করবে এ শুন্যস্থান? এমন প্রশ্ন যখন নগরীর বাসিন্দাদের মুখে মুখে ঠিক তখনই নৌকার প্রার্থী হিসেবে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বেছে নিলেন আতিকুল ইসলামকে।

আরও পড়ুনঃ কোন হিসাব-নিকাশে মেয়র আতিকুল ইসলামই উত্তরে নৌকার মাঝি?

একজন নগর সেবক হিসেবে মাত্র ৯ মাসেই সাধারণ নগরবাসীর কাছাকাছি যাওয়ার চেষ্টা করেছেন মেয়র আতিকুল ইসলাম। সাফল্য-ব্যর্থতার খেরোখাতায় এ ৯ মাস যৎসামান্য হলেও মেয়র আনিসুল হকের পদাঙ্ক অনুসরণ করেই তিনিও যে একজন তরতাজা স্বপ্ন দেখা সৃজনশীল মানুষ এমনটি স্বীকার করতে দ্বিধা নেই যান্ত্রিক নাগরিক বাসিন্দাদেরও।

কর্মময় জীবনে সুন্দর ধ্যানধারণা এবং সততার সৌরভে উজ্জ্বল নগরপিতা আতিকুল ইসলাম, এমনটি বলছিলেন মিরপুরের কালশী এলাকার বাসিন্দা শিক্ষক আলফাজ উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘তৃণমূলের মানুষের সঙ্গে মিশে যাওয়ার গুণ একজন নগর পিতার জন্য অপরিহার্য। আর সেই গুণটি রয়েছে মেয়র আতিকের। তিনি সত্যিকারের নগর পিতার প্রতিচ্ছবি।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সমাবেশে উদ্দীপনামূলক বক্তৃতায় তরুণদের স্বপ্ন দেখা ও সফল করার আগুন জ্বালাতেন প্রয়াত মেয়র আনিসুল হক। অভিন্ন পথেই নিজেকে সমর্পণ করেছেন উত্তরসূরী আতিকুল ইসলামও। শুক্রবার (২৭ ডিসেম্বর) রাজধানীর রাজউক উত্তরা মডেল কলেজের রজত জয়ন্তী অনুষ্ঠানে বলেছেন, ‘প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার পাশাপাশি নিজেকে ভালো মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে হবে।

আমাদের মানুষের মতো মানুষ হতে গেলে যেরকম পড়ালেখা করতে হবে, ঠিক সেরকমভাবে অন্য কাজও করতে হবে। আমাদের সবাইকে মানুষের সেবায় এগিয়ে আসতে হবে। বড় স্বপ্ন দেখতে হবে। অবশ্যই স্বপ্ন ঘুমিয়ে দেখলে চলবে না। স্বপ্ন বাস্তব করতে হলে আমাদেরকে জেগে জেগে স্বপ্ন দেখতে হবে।’

স্মার্ট ঢাকা গড়তে সবার আগে পরিচ্ছন্নতার ওপরই সবিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন মেয়র আতিকুল ইসলাম। পরিচ্ছন্ন বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্নে বিভোর ‘বিডি ক্লিন’কে যেমন পাশে রেখেছেন। তাদের প্রতিটি ইতিবাচক পদক্ষেপে সাহস জুগিয়েছেন। ‘আমরা করবো জয় একদিন’ স্লোগান তুলে গভীর আস্থা ও বিশ্বাসের ওপর দাঁড়িয়ে পরিচ্ছন্ন ঢাকা গড়ার আন্দোলনকে স্বার্থক করেছেন।

তরুণদের জাগিয়ে তুলছেন, একসুতোয় গাঁথছেন। পরিচ্ছন্ন ঢাকা স্লোগান কেবল মুখেই নয় বাস্তবেও রূপ দিতে চেয়েছেন। শারদীয় দুর্গোৎসবে আনন্দে বিভোর পূজা মন্ডপে ঘটা করে পরিচ্ছন্নতা অভিযানের বদলে মন্ডপে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা ময়লা-আবর্জনা নিজের হাতেই পরিস্কার করেছিলেন।

মেয়রের এমন ভূমিকায় সেদিন সবাই হাতে হাত মিলিয়ে পরিচ্ছন্নতা অভিযানে নেমে পড়েছিলেন। মূলত সবার মাঝে জাগরণ তৈরির পাশাপাশি নাগরিকের স্বার্থে, উন্নয়নের স্বার্থে যখন যেভাবে আবির্ভূত হওয়া প্রয়োজন তখন সেই কাজটিই সুচারুরূপে সম্পন্ন করেছেন কৌশলী এ নগর পিতা।

নিজের প্রতিটি কর্মসূচি বা অনুষ্ঠানে একটি কথা বেশ গুরুত্ব দিয়েই বলে আসছেন ডিএনসিসির মেয়র আতিকুল ইসলাম। শুক্রবার (২৭ ডিসেম্বর) রাজধানীর রাজউক উত্তরা মডেল কলেজের রজত জয়ন্তী অনুষ্ঠানেও সেই বক্তব্যের পুনরাবৃত্তি করেছেন। অর্থাৎ, বিরাট শক্তি তরুণদের পরিচ্ছন্ন ঢাকা গড়ার মিছিলে প্রাণিত করেছেন।

বলেছেন, ‘বিদেশে গেলে আমরা যেখানে সেখানে ময়লা আবর্জনা ফেলি না। নির্ধারিত জায়গায় ময়লা আবর্জনা ফেলি। বিদেশে আমরা ঠিকই নিয়ম মানি, কিন্তু দেশে মানি না। তাই যথাযথ স্থানে ময়লা আবর্জনা ফেলে রাজধানী ঢাকাকেও পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন নগরী হিসেবে গড়ে তুলতে হবে।’

শিক্ষার আলোয় দেশকে পরিচ্ছন্ন রাখার ওপর জোর দিয়ে বলেছেন, তোমরাই আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। আজকের এই দিনে আমরা একাত্মতা গ্রহণ করি। আমরা নগরীর যেখানে সেখানে ময়লা আবর্জনা ফেলব না। সকলে মিলে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন একটি সুন্দর দেশ গড়ে তুলবো।’

নগরবাসীকে সচেতন করে মেয়র বলেন, ‘আমাদের দেশে সুনাগরিকের বড়ই অভাব রয়েছে। তাই সুনাগরিক হিসেবে সবাই ট্রাফিক আইন মেনে চলুন। যত্রতত্র রাস্তা পারাপার না হয়ে ফুট ওভারব্রিজ ব্যবহার করুন। একজন সুনাগরিক হিসেবে আপনার নগরী ও দেশকে ভালবাসুন।’

হাসিমুখ, ভরাট কন্ঠ ও মানবিক হৃদয়ে অনন্য মেয়র আতিকুল ইসলাম যে প্রয়াত নগর পিতা আনিসুল হকেরই প্রতিচ্ছবি এমনটিই হয়তো বলবেন মিরপুরের চলন্তিকা বা কালশী বস্তির ক্ষতিগ্রস্তরাও। মেয়র হওয়ার পর অগ্নিকান্ডে ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিটি বস্তির বাসিন্দাদের পাশেই দাঁড়িয়েছেন তিনি।

বার বার বলেছেন, ‘বস্তিতে যারা থাকে তারা আমাদেরই জনগণ। তারাও মানুষ। তাদের এখানে বসবাসের জন্য ব্যবস্থা করে দেওয়া হবে। সিটি মেয়র হিসেবে তাদের দেখার দায়িত্ব আমার।’

বস্তিতে বসবাসকারীদের জীবনমান উন্নয়নে ইতিবাচক কর্মসূচির কথা যেমন জানিয়েছেন মেয়র আতিকুল তেমনি বস্তিবাসীর আবাসন সমস্যা নিরসনকল্পে ডরমিটিরি নির্মাণ করার আগ্রহের কথাও বলেছেন। গুরুত্ব দিয়েছেন বস্তির সমস্যা সমাধানে বস্তি ও তাতে বসবাসকারীদের একটি তালিকা প্রস্তুতে। বলেছেন, বস্তি এলাকায় রাস্তা-ঘাট, ড্রেন ইত্যাদি অবকাঠামো নির্মাণে বস্তির মালিকানা প্রতিষ্ঠান, বস্তিবাসী এবং ডিএনসিসির ত্রিপক্ষীয় সমঝোতার।

কালশীর ক্ষতিগ্রস্তদের সান্ত্বনা; আর্থিক সহায়তা
মিরপুরের কালশী এলাকায় অগ্নিকাণ্ডে বিধ্বস্ত বস্তি পরিদর্শন করে তাদের আর্থিক সহায়তার ঘোষণা দিয়েছেন ডিএনসিসির মেয়র আতিকুল ইসলাম। শুক্রবার (২৭ ডিসেম্বর) বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে তিনি সেখানে উপস্থিত করপোরেশনের কর্মকর্তাদের ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করার নির্দেশ দেন।

একই সঙ্গে ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিটি পরিবারের জন্য ২টি কম্বল এবং ৫ হাজার টাকা সহায়তা দেওয়ার ঘোষণা দেন মেয়র আতিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘এমন ঘটনা সত্যিই হৃদয় বিদারক। আমি এই মানুষগুলোর পাশে আছি। অতীতেও ছিলাম, ভবিষ্যতেও থাকব।

ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর পুনর্বাসন না হওয়া পর্যন্ত তাদের সার্বিক দায়িত্ব নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে করপোরেশনের কর্মকর্তাদের। আশা করছি, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে শিগগিরই তাদের পুনর্বাসন সম্ভব হবে।’

এ সময় ঢাকা-১৬ আসনের সংসদ সদস্য ইলিয়াস আলী মোল্লা এবং স্থানীয় আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা তাঁর সঙ্গে ছিলেন।

কালের আলো/এএসআর/এমএএএমকে