পাকিস্তানে তৈরি ভারতীয় জাল নোট, বিস্তার রোধে বিজিবির সহায়তা চাইলেন অমিত শাহ
প্রকাশিতঃ 8:33 pm | December 28, 2019

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো :
ভারতীয় জাল নোট বা রুপী ছাপা হচ্ছে পাকিস্তানে। আর সেই টাকা ছড়িয়ে পড়ছে গোটা ভারতে। ফলে জাল নোটের এ ভয়ঙ্কর বিস্তার রোধে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও অন্যান্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কার্যকর সহায়তা চেয়েছেন ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ।
এসব জাল মুদ্রা কারবারিদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ সরকারের কঠোর পদক্ষেপের বিষয়টি নিশ্চিত করে বিজিবির ডিজি মেজর জেনারেল মো.সাফিনুল ইসলাম সরকারের অন্যান্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর অনুরোধের বিষয়টি সবিশেষ গুরুত্ব দিয়ে পৌঁছে দেওয়ার কথা জানিয়েছেন।
ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে গত বৃহস্পতিবার (২৬ ডিসেম্বর) নিজেদের মধ্যকার সৌজন্য সাক্ষাতে ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) মহাপরিচালক (ডিজি) মেজর জেনারেল মো.সাফিনুল ইসলামকে এ বিষয়টি অবহিত করলে তিনি এ বিষয়ে সরকারের কঠোর পদক্ষেপের বিষয়ে তাকে আশ্বস্ত করেন।
বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) একটি দায়িত্বশীল সূত্র কালের আলোকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। ইতোমধ্যেই ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্সের (বিএসএফ) মধ্যে মহাপরিচালক (ডিজি) পর্যায়ের ৫ দিনব্যাপী সীমান্ত সম্মেলন চলছে। গত বুধবার (২৫ ডিসেম্বর) শুরু হয়েছে এ সীমান্ত সম্মেলন।
বিজিবির জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. শরিফুল ইসলাম কালের আলোকে জানান, সম্মেলনে বিজিবির ডিজি বাংলাদেশের ১১ সদস্যের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন এবং বিএসএফের পক্ষে নেতৃত্ব দিচ্ছেন ডিজি ভিভেক জোহরী। সম্মেলনে ১৯ সদস্যের ভারতীয় প্রতিনিধিদল অংশ নিয়েছে।
যেসব কথাবার্তা হলো ২০ মিনিটে
বিজিবি সদর দপ্তর সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এ সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে গত বৃহস্পতিবার (২৬ ডিসেম্বর) বিজিবির ডিজি মেজর জেনারেল মো.সাফিনুল ইসলাম ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। ২০ মিনিট সময়কালের এ সাক্ষাতে তারা পারস্পরিক কুশল বিনিময় এবং দ্বিপক্ষীয় গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে আলোচনা করেন।
সূত্র জানায়, সাক্ষাতকালে ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ভারতীয় জাল নোট পাকিস্তানে ছাপা হচ্ছে বলে বিজিবি ডিজিকে জানান। তিনি দাবি করেন, এসব জাল নোট বাংলাদেশ ও নেপালের মাধ্যমে ভারতে প্রবেশ করছে। দুই দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে এসব জাল নোটের বিস্তার রোধে তিনি ভারতকে সব রকমের সহযোগিতা করার জন্য বিজিবিসহ বাংলাদেশের সব আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সার্বিক সহযোগিতা কামনা করেন।

একই সূত্র কালের আলোকে জানায়, এ সময় বিজিবির ডিজি অবৈধ জাল নোট কারবারিদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ সরকারের ‘জিরো টলারেন্স’ নীতির বিষয়টি তুলে ধরেন এবং বিজিবিসহ অন্যান্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কঠোর পদক্ষেপের বিষয়টিও অবহিত করেন।
একই সঙ্গে এ অপরাধ মোকাবেলায় ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর আহ্বানও দেশের অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনীর কাছে পৌঁছে দেওয়ার বিষয়টিও উল্লেখ করেন।
সূত্র জানায়, ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে ১৫০ গজের মধ্যে নতুন ডিজাইনের একক সারির বেড়া তৈরির বিষয়টি তুলে ধরেন। তখন যুক্তি দিয়ে বিজিবির ডিজি বলেন, নতুনভাবে ডিজাইন করা একক সারির বেড়া দূর থেকে দৃশ্যকে বাঁধা দেবে।
সামাজিক কারণে অবৈধ সীমান্ত পারাপারের বিষয়টি বিবেচনা করে দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রস্তাব করেন-সীমান্তবর্তী লোকদের প্রয়োজনীয় মানদন্ডের ভিত্তিতে একে অপর দেশে যাওয়ার জন্য ৪৮ ঘন্টার পাস ইস্যুর বিষয়ে।
বিজিবির ডিজি সীমান্ত ব্যবস্থাপনা ও সীমান্ত সম্পর্কিত সমস্যা দ্রুত সমাধানের জন্য ‘কার্যকর সমন্বিত সীমান্ত ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা’ বাস্তবায়ন এবং বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে সীমান্ত সড়ক নির্মাণের বিষয়ে ভারতের প্রয়োজনীয় সহযোগিতা প্রত্যাশা করেন।
পরে ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) মহাপরিচালক (ডিজি) মেজর জেনারেল মো.সাফিনুল ইসলাম একটি দুলর্ভ প্রজাতির বৃক্ষ উপহার দেন এবং বিজিবি-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ ক্রেস্ট উপহার দেন।
সম্মেলনে গুরুত্ব পেয়েছে সীমান্তে গুলিবর্ষণ ও রোহিঙ্গা সংকট
ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্সের (বিএসএফ) মধ্যে মহাপরিচালক (ডিজি) পর্যায়ের ৫ দিনব্যাপী সীমান্ত সম্মেলনে সর্বোচ্চ গুরুত্ব পেয়েছে সীমান্তে গুলিবর্ষণ, মাদক ও রোহিঙ্গা সংকটের বিষয়টি।
এছাড়া সীমান্তে নিরস্ত্র বাংলাদেশী নাগরিকদের গুলি করে আহত বা হত্যার প্রতিবাদ জানানোসহ এ ধরনের কর্মকান্ড বন্ধে করণীয় নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হয়েছে। পাশাপাশি ভারত থেকে বাংলাদেশে ইয়াবা, ফেনসিডিল, মদ, গাঁজা, হেরোইনসহ বিভিন্ন প্রকার মাদকদ্রব্যের চোরাচালান রোধের বিষয়ে দুই পক্ষের মধ্যে আলোচনা হয়।
ভারতের অভ্যন্তরে ফেনসিডিলসহ বিভিন্ন নেশাজাতীয় দ্রব্যের কারখানা ও গুদাম এবং মাদক পাচার সম্পর্কিত তথ্য বিনিময় হয়েছে দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মধ্যে। ভারত থেকে বাংলাদেশে অস্ত্র ও গোলাবারুদ চোরাচালান রোধে দুই পক্ষের মধ্যে আলোচনা হয়েছে।
বিএসএফ ও ভারতীয় নাগরিকের (মিয়ানমার নাগরিকসহ) সীমানা লঙ্ঘন ও অনুপ্রবেশ রোধের বিষয়ে বিজিবি-বিএসএফ একসঙ্গে কাজ করার দৃঢ় অঙ্গীকার করেছে।
কালের আলো/এসটি/আরআর