আইজিপির স্মৃতির জানালায় স্কুলজীবন, উজ্জ্বলতর আলোকে উদ্ভাসিত ‘মানবিক পুলিশ’
প্রকাশিতঃ 12:46 pm | December 31, 2019
বিশেষ সংবাদদাতা, কালের আলো :
একে তিনি পুলিশ প্রধান। নিজের গভীর অন্তর্দৃষ্টি ও মননশীলতার আলোকে বাস্তবধর্মী কথা বলেন বরাবরই। আত্মার স্পন্দন ছোঁয়া কথামালায় নতুন প্রজন্মকে মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় জাগিয়ে তোলার সম্মোহনী প্রণোদনা দিতে পারেন। নিয়মতান্ত্রিকতার অক্ষরে পরিপূর্ণ থেকে শিক্ষার্থীদের আলোকিত মানুষ হতে বললেন পুলিশের আইজি ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী, বিপিএম (বার)।
মাদক ও সোশ্যাল মিডিয়ায় ডুবে থাকার নেশা যে একই; চরম অভিনব চমকের মাধ্যমে সে কথাই যেমন তিনি বুঝিয়ে দিতে পারেন তেমনি চমৎকার রূপক আর চিত্রকল্প দিয়ে নিজের স্কুল জীবনের সময়কার চাঁদপুর আর হাল সময়ের চাঁদপুরের জনপদের পার্থক্য, জীবনমানের পরিবর্তনও তুলে আনতে পারেন অকল্পনীয় সৃজনী ক্ষমতায়।
জীবন গড়ার পাঠ নিয়েছেন যে বিদ্যালয় থেকে সেই বিদ্যালয়ের ১২০ বছর পূর্তির উদ্বোধন করে শীত বিকেলের মিঠে রোদে স্মৃতির জানালা খুলে মাতিয়ে দিতে পারেন অনায়াসেই। প্রতিটি আখ্যানের ভাঁজে ভাঁজে বাস্তবধর্মী উদাহরণ টানতে পারেন।
আবার মানবিকতা, নৈতিক স্বাতন্ত্রিকতার অমল মাত্রায় অসুস্থ সামাজিকতার অচলায়তন ভেঙে মুক্তির দূয়ারে যেন কড়া নাড়াতে পারেন। নিজের বাহিনী পুলিশকে নিয়ে স্বপ্ন ও অধিকারের পদাবলী উচ্চারণ করতে পারেন। জাগ্রত চৈতন্যে আত্মবিকাশের অপরাজেয় প্রতীতি ও প্রত্যয়ে উজ্জীবিত করতে পারেন দেশপ্রেমিক বাহিনীকে।
বঙ্গবন্ধুর মানবিক পুলিশের স্বপ্ন উজ্বলতর আলোকে জাতির মানসে উদ্ভাসিত এই বার্তাও দিতে পারেন এ পুলিশ মহাপরিদর্শক। তিনি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন- ‘থানা হবে সেবার কেন্দ্রবিন্দু, মানুষের আস্থা ও বিশ্বাসের জায়গা’।
সেবা ও মানবিক আচরণের মাধ্যমেই পুলিশ দেশের সাধারণ মানুষের আস্থা অর্জন করবে, প্রমাণ করবে পুলিশ জনগণের বন্ধু। পরিশ্রম, সততা, সাহস, প্রজ্ঞা, ধৈর্য্য ও দূরদর্শী নেতৃত্বগুণের মাধ্যমে বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর প্রতিটি সদস্যকে দায়িত্ব পালনের সময় সাধারণ মানুষের মৌলিক অধিকার, মানবাধিকার ও আইনের শাসনকেই সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়ার ‘গাইড লাইন’ দেওয়া পুলিশের এ সর্বোচ্চ কর্মকর্তাকে নিয়ে তাই প্রশংসায় পঞ্চমুখ সরকারের শিক্ষামন্ত্রী থেকে শুরু করে ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধা ও ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের নিজ জেলার নেতারাও।
চাঁদপুরের বাবুরহাট উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজের ১০ যুগ পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় দিনে গত শনিবার (২৮ ডিসেম্বর) এমনভাবেই নিজেকে সমর্পণ করেন বিদ্যালয়টির সাবেক কৃতি শিক্ষার্থী ও শান্তি, শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তার প্রতীক হিসেবে বিবেচিত বাহিনীটির এই শীর্ষ কর্মকর্তা।
কী ছিল আইজিপির বক্তব্য?
জীবন-নদীর বাঁকে বাঁকে কর্ম ও কীর্তিতে গোটা দেশকে আলোকিত করেছেন ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী। তেমনি এ উচ্চবিদ্যালয়টিও এগিয়ে যাচ্ছে সামনে, বড় গৌরবে মাথা উঁচু করে। ১৯৭৬ সালে এ উচ্চবিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক পাস করেছেন। বিদ্যালয় জীবনের বিচিত্র প্রতিচ্ছবিতে কখনও স্বপ্নিল, কখনও ধূসর, কখনও রঙিন স্বপ্নগুলো হয়তো এ পুলিশ প্রধানের মনের জানালায় উঁকি দেয়।
নিজের বক্তব্যের শুরুতেই আইজিপি ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী বিজয়ের বৈজয়ন্তী ওড়ানোর মাসে সশ্রদ্ধচিত্তে স্মরণ করেন ইতিহাসের মহানায়ককে। তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব অর্জনে অনন্য সাধারণ নেতৃত্ব দিয়ে আমাদেরকে এই বাংলাদেশ নামক ভূখণ্ডটি উপহার দিয়েছেন।
‘উপহার দিয়েছেন আমাদের এই প্রিয় মাতৃভূমি। আমি নিজেকে বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর সদস্য হিসেবে গৌরবান্বিত বোধ করি। দেশের স্বাধীনতা অর্জনের সঙ্গে বাংলাদেশ পুলিশ অবিচ্ছেদ্য ও অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। মহান মুক্তিযুদ্ধে রাজারবাগে পাক হানাদারদের বিরুদ্ধে প্রথম প্রতিরোধ গড়ে তোলে পুলিশ।’
নিজের শৈশব স্কুলজীবনের স্মৃতিতে আপ্লুত হয়ে তিনি বলেন, ‘বাবুরহাট স্কুল ও পুরো চাঁদপুরই বদলে গেছে। আজকে ঢাকা থেকে চাঁদপুর আসতে আমার দুই ঘণ্টারও কম সময় লেগেছে। আমি আসতে আসতেই চিন্তা করছিলাম এক সময় ঢাকা থেকে চাদঁপুর যেতে দীর্ঘ সময় লাগতো। সকালে রওনা দিলে আমরা বিকেলে বা সন্ধ্যায় গিয়ে পৌঁছতাম। এর মধ্যে রাস্তায় তিনটি ফেরি পড়তো এবং সারাদিন আমাদের অপেক্ষা করতে হতো ফেরি পারাপারের জন্য। আর এখন কী অভূতপূর্ব উন্নয়ন হয়েছে এই কয়েক বছরের মধ্যে।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘উন্নয়নের ম্যাজিশিয়ান’ উল্লেখ করে পুলিশ প্রধান বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশকে আমূল বদলে দিয়েছেন। আমাদের গ্রামে-গঞ্জে প্রত্যেকটি বাড়িতে আগে সারাদিন কেউ না কেউ আসতো ভিক্ষার ঝুলি নিয়ে। মাগো কিছু দেন। হাত পাততো। মাকে দেখতাম কিছু চাল রাখতেন এদের জন্য। কিন্তু আজকে কোথাও দেখবেন না কোন বাড়িতে কেউ এসে চাল ভিক্ষা চায়।’
‘আমার মনে আছে আমাদের বাড়ি বেশি দূরে নয়। মেইন রোড থেকে ডাকতে হতো এই কে আছো নৌকা নিয়ে আসো। আর আজকে আমাদের ঘরের উঠোনে গাড়ি ডুকে যাচ্ছে। এই যে পরিবর্তন নিজের চোখে দেখেছি। আপনারও যারা আছেন চোখের সামনে পরিবর্তনগুলো দেখেছেন। বাংলাদেশ যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে উন্নয়নের মহাসড়কে। ভিশন ২০২১, ২০৩১, ২০৪১ নয় শুধু, আছে শতবর্ষব্যাপী ডেল্টা প্ল্যান। যে স্বপ্ন আমাদের দেখাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী সেই স্বপ্ন আর স্বপ্ন নয়; এই স্বপ্ন এখন অতি বাস্তব।’
মাদক থেকে নিজেকে মুক্ত রাখতে এবং অপরকে মুক্ত রাখার অঙ্গীকারও করান আইজিপি। তিনি বলেন, ‘মাদক এমন একটি মরণনেশা যা শুধু একটি ব্যক্তিকে নয়, সে পরিবারকে সমাজকে ধ্বংস করে দেয়। মাদক থেকে সবাই নিজেকে দূরে রাখবো এ হোক অঙ্গীকার। আমরা জঙ্গিবাদকে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে এসেছি। জঙ্গিবাদে জড়িত না হওয়ার জন্য আমাদের যারা শিক্ষার্থী রয়েছো তাদের প্রতি আমাদের আহ্বান- জঙ্গিবাদ একটি ভুল মতবাদ যা সমাজকে শুধু নয়; দেশকে কীভাবে ডুবিয়ে দিয়েছিল। তোমরা নিশ্চয়ই ভুলে যাওনি ২০১৬ সালের সেই হলি আর্টিজানের ঘটনা।’
‘একটি ঘটনার জন্যে বাংলাদেশকে অনেক ভুগতে হয়েছে। জঙ্গিবাদের যে ছোবল থেকে এখন আমরা অনেকটাই মুক্ত হয়েছি। আমরা আশা করবো আমাদের সন্তানদের জঙ্গিবাদ ও মাদক থেকে দূরে রাখার জন্য আমরা সচেষ্ট থাকবো। আমাদের সন্তান কোথায় যাচ্ছে, স্কুলে, কলেজে গিয়ে কার সাথে মিশছে, বন্ধুবান্ধব কারা এগুলোর খোঁজখবর আমাদের সকলেরই রাখতে হবে,’ যোগ করেন পুলিশ প্রধান।
স্যোশাল মিডিয়ার নেশায় আক্রান্ত হয়ে বর্তমান প্রজন্মকে সারাদিন ঘাড় গুঁজে থাকার নেশা পেয়ে বসেছে- এমন মন্তব্য করে তিনি বলেন, এ প্রজন্মের নামকরণ করা হয়েছে, ট্রিপল জি। অর্থাৎ, ঘাড় গোঁজা জেনারেশন। সব ঘাড় গুঁজে শুধু নিচের দিকে তাকিয়ে আছে। আমরা পুরো পৃথিবীকে দেখছিনা এখন। আমার পৃথিবীকে নিয়ে আসছি আমার মোবাইলের মধ্যে।
‘ঘরের মধ্যে যাও-বাবা ফেসবুকে, মা ফেসবুকে, ভাই-বোন সবাই ফেসবুকে। নিজেদের মধ্যে কোনো আলাপচারিতা নেই, কথাবার্তা নেই। দয়া করে এই নেশা থেকেও বেরিয়ে আসতে হবে। এই নেশা এবং মাদকের নেশা কিন্তু একই নেশা। দুটো নেশাই কিন্তু। মাদক খেলে ব্রেনের যে পরিবর্তন আসে, এই ইন্টারনেট/মোবাইলের নেশা; এই নেশাটিও সেইম। যখন তাকে না দেওয়া হয়, ইন্টারনেট থেকে দূরে রাখা হয়, তখন তার মধ্যে যে পরিবর্তনগুলো আসে তা ঠিক মাদক না পেলে তার মধ্যে যে পরিবর্তনগুলো আসে সেই একই পরিবর্তন। এর ভালো দিকগুলো অবশ্যই নিবো আমরা তবে এতে বুঁদ হয়ে থাকবো না। সারা দিনমান এই নেশাতে ডুবে থাকবো না,’ বলছিলেন আইজিপি।
গুজবের বিষয়ে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়ে ড. জাবেদ পাটোয়ারী বলেন, ‘কিছুদিন আগে আপনারা দেখেছেন পদ্মাসেতুতে মাথা লাগবে, ছেলে ধরা গুজবে নিরীহ কিছু প্রাণ আমরা হারাতে দেখেছিলাম। সেই সময়ে আমরাই বুঝানোর চেষ্টা করেছি এবং খুব সহসাই মানুষকে বুঝাতে সক্ষম হয়েছি যে, এটি নিছকই গুজব। সুতরাং আপনার ফেসবুকে কোনো কিছু দেখার সময় যাচাই করবেন তারপরে যদি কাউকে পাঠাতে চান ফরওয়ার্ড করবেন তার আগে নয়। আপনারা দেখেছেন সেই কক্সবাজারের রামুতে কি হয়েছিলো, আপনারা দেখেছেন ক’দিন আগে ভোলাতে কি হয়েছে? কীভাবে গুজব একটি দাঙ্গায় রূপ নিয়েছে?’
‘এই ফেসবুক, স্যোশাল মিডিয়াকে যেমন ভালো কাজেও ব্যবহার করা যায় তেমনি খারাপ কাজেও ব্যবহার করা যায়। সুতরাং যাচাই বাছাই করবেন তারপরে ফেসবুকে শেয়ার করবেন। নিজে আগে নিশ্চিত হবেন যে তথ্যটি আপনি পেয়েছেন এটি সঠিক কিনা। আপনি হয়তো ইনস্ট্যান্টলি শেয়ার করেছেন তাতে কিন্তু ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে আপনিও কিন্তু আসামি হয়ে যাবেন।’
ভাল ফলাফলে সাফল্য আসে না, ভালো মানুষ হওয়াই জরুরি বলে মনে করেন আইজিপি। অভিভাবকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘আমি বলবো আপনার সন্তানকে ভালো মানুষ হওয়ার শিক্ষা দিন। ভালো মানুষ হওয়ার জন্য অনুপ্রাণিত করুন। আমরা পৃথিবী বিখ্যাত অনেককেই জানি যারা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারেননি। আমরা অনেককেই জানি যারা কলেজে পড়াশোনা করতে পারেননি। অনেককেই বিদ্যালয়ের পড়াশোনাও শেষ করতে পারেননি, কিন্তু তারা পৃথিবী বিখ্যাত। সুতরাং ভালো মানুষ হওয়ার জন্য অনুপ্রেরণা দিবেন। শুধুমাত্র জিপিএ ফাইভ পাওয়ার জন্য সন্তানকে সারাদিন পড়ানোর পরেও সন্তানের কোনো সময় নেই।
‘কিন্তু বাবা মা বলছে, সন্তান তো পড়ে না। অথচ এই সন্তানটির কিন্তু নিজের জন্য কোনো সময় বরাদ্দ নেই। স্কুল কোচিং করে করে সন্তানকে সারাক্ষণ শুধু পড়ো পড়ো না বলে, শুধু ক্লাসের বইয়ের বাইরেও যে পৃথিবী রয়েছে সেটি দেখার জন্যেও অনুপ্রাণিত করবেন। সার্বক্ষণিকভাবে আপনি যখন মোবাইলে আসক্ত হয়ে যাচ্ছেন তখন আপনার চিন্তা শক্তি খুব বেশি বিকশিত হয় না। বইয়ে একটি গল্প যখন পড়ি আমরা তখন সেই গল্পের দৃশ্যপট আমার চোখে ভেসে উঠে। বই মানুষকে অনেক কিছু দেয়, সুতরাং বই পড়তে উৎসাহিত করবেন।’
উদাহরণ টেনে ড. জাবেদ বলেন, ‘মাইক্রোসফটের প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটস বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনা শেষ করতে পারেননি। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিগ্রি নিয়েছিলেন তার সহপাঠী পরবর্তীতে তার প্রতিষ্ঠানে কর্মকর্তা হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন। ফেসবুকের প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জুকারবার্গ তিনিও কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ঝরে যাওয়া একজন। বৈদ্যুতিক বাতির আবিষ্কারক টমাস আলভা এডিসন তিনিও কিন্তু খুব ভালো ছাত্র ছিলেন না। আব্রাহাম লিংকন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ছিলেন। আপনারা জানেন তিনি আটবার নির্বাচনে দাঁড়িয়ে পরাজিত হয়েছিলেন। সুতরাং, সন্তানকে শেখান সে যেন হতোদ্যম না হয়। যাতে সে লেগে থাকে, লেগে থাকলে জয় একদিন হবেই।’
আবারও বাস্তবধর্মী উদাহারণে তিনি বলেন, ‘‘আমরা অনেকেই জ্যাক মার নাম শুনেছি। তিনি পৃথিবীর সবচেয়ে বড় অনলাইন শপ ‘আলিবাবা’র মালিক। তিনি স্কুল ও কলেজ মিলিয়ে ৫ বার ফেল করেছিলেন। আমি এজন্য বলছি যে- শুধুমাত্র পড়াশোনা, পড়াশোনা, পড়াশোনা, জিপিএ ৫, জিপিএ ৫, জিপিএ ৫। এরকম চিন্তাভাবনা থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে।’’
জনগণের পুলিশ, মানবিক পুলিশ
‘আমরা জনগণের পুলিশ হওয়ার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি’ জানিয়ে পুলিশের আইজি ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী বলেন, ‘দুইবছর হলো আমি আইজিপির দায়িত্ব নিয়েছি। আমার দুইবছরের মধ্যে চেষ্টা ছিলো পুলিশকে জনগণের কাছে নিয়ে আসার জন্য। আমি প্রথম দিন থেকেই বলেছি, থানা হবে মানুষের বিশ্বাস ও আস্থার জায়গা। আমি জানি কেউ বিপদে পড়লে প্রথমেই থানায় যায়। আপনারা যেন সেই থানায় নির্বিঘ্নে যেতে
পারেন। সেজন্য আমার কঠোর নির্দেশনা আমার পুলিশ বাহিনীকে প্রতিনিয়ত দিয়ে আসছি।’
তিনি বলেন, ‘থানায় কোনো সেবা নেওয়ার জন্য কোনো পয়সা লাগে না। যদি কখনও আপনাদের জিডি করতে, মামলা নিতে অথবা কোনো সেবাগ্রহণ করার জন্য কোনো পয়সা দিতে হয়, সেটি আমাদের তাৎক্ষণিক জানাবেন। আমাদের সিনিয়র কর্মকর্তারা আছেন, এসপি আছেন। এসপিসহ, ডিআইজিসহ যারা যারা আমরা উপরে আছি সবাইকেই আপনারা যেকোনো মুহূর্তে জানাতে পারেন।’
তিনি বলেন, ‘মনে রাখবেন আমরা বদলে যেতে চাই, বদলে যাওয়ার জন্য চেষ্টা করছি। সাধারণ মানুষের কাতারে এসে মানবিক পুলিশ হওয়ার চেষ্টা আমাদের অব্যাহত থাকবে। আগামী বছর থেকে শুরু হচ্ছে মুজিববর্ষ। আমরা মুজিববর্ষের যে রকম অঙ্গীকার করেছি যেটা আপনারা শোনলেই বুঝতে পারবেন। ‘মুজিব বর্ষের অঙ্গীকার, পুলিশ হবে জনতার।’
‘‘আমরা জনতার পুলিশ হতে চাই। আমরা মানবিক পুলিশ হতে চাই। আমরা চাই আপনাদের পুলিশ হতে, জনগণের পুলিশ হতে। সে লক্ষ্যেই আমরা প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের ভুল ত্রুটি থাকতে পারে। ভুল ত্রুটি থাকলে তার সমালোচনা আপনারা অবশ্যই করবেন কিন্তু যদি আমার কোনো অফিসার অপরাধ করে, একজন সাধারণ মানুষ অপরাধ করলে যে শাস্তি হবে একজন পুলিশ সদস্য অপরাধ করলে তারও সেই একই শাস্তি হবে’ ঘোষণা পুলিশ মহাপরিদর্শকের।’’
কোনো পুলিশ সদস্যের ব্যক্তিগত অপরাধের দায় পুলিশ বাহিনী নেবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘পুলিশ সদস্য যদি ব্যক্তিগত অপরাধ করে থাকে তাহলে তার দায় দায়িত্ব তার নিজের। তার বিরুদ্ধে আমরা কঠোর ব্যবস্থাগ্রহণ করবো। আমাদের কোনো পুলিশ সদস্য মাদকের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকলে তা আমাদের জানাবেন। আমরা তার বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেবো।’
‘আইজিপির নিজের কোনো দিন নেই’
ব্যস্ততার শেকলে যেন ‘বন্দি জীবন’ পুলিশ মহাপরিদর্শক জাবেদ পাটোয়ারীর। সেই তথ্যই স্মরণ করিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, ‘গতকাল (শুক্রবার) আমার এখানে আসার কথা ছিল। কিন্তু আসলে আইজিপি হিসেবে এখন আমার নিজের কোনো দিন নেই। প্রত্যেকটি দিন আমার থেকে ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে। প্রত্যেকটি দিন একেক জনের জন্যে বরাদ্দ করে রেখেছি। গতকাল ছিলো অন্যদের জন্য, আজকের সকাল আরও কিছু মানুষদের জন্য। এখন এখানে এবং সন্ধ্যার পরে আবার অন্যদের জন্য বরাদ্দ।এখন নিজের জন্য কোনো সময় নেই। এখন সবচেয়ে বেশি অবহেলিত আমার পরিবার। তাদের সঙ্গেই দেখা হয় না এখন। যতই সফল হবেন ততই কিন্তু সবচেয়ে বেশি পরিবার সাফারার হয়, সন্তানরা সাফারার হয় সবচেয়ে বেশি।’
পুলিশ প্রধানের সততার প্রশংসায় মন্ত্রী থেকে শুরু করে সবাই
বাবুরহাট উচ্চবিদ্যালয়ের ১০ যুুগ পূর্তি অনুষ্ঠান। নবীন-প্রবীণের এ মিলন মেলায় চারপাশে হাসির ফোয়ারা। ক্যামেরার ক্লিক ক্লিক শব্দ। পুরনোদের চোখ-মুখে ঝিলিক দিয়ে যাচ্ছে অতীতকে ছুঁয়ে দেখার উচ্ছ্বাস। সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে নেতৃত্বে থাকা পূর্বসূরীদের কাছে পেয়ে নতুনদের বিকেল কেটেছে যেন স্বপ্নের ঘোরে।
অগ্রজদের পাশে সমান আনন্দে মশগুল ছিলেন অনেকেই। আলিঙ্গনে বাঁধা হলে জমে উঠছে গল্প। হয়তো নানা রঙের মানুষ কৈশোরের হারানো সকাল-বিকেলগুলো খুঁজে ফিরেছেন। পুরোনো বন্ধুকে কাছে পেয়ে খুলে দিয়েছেন স্মৃতির জানালা। আচমকা মনের আঙিনা ভিজিয়ে দিয়েছে বন্ধুতার একপশলা বৃষ্টি।
এই অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি দেশের প্রথম নারী শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি পুলিশ প্রধান ড. জাবেদ পাটোয়ারীর উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেন। নিজের বক্তব্যের শুরুতে পুলিশ প্রধানকে তিনি উপস্থাপন করেছেন এভাবে- ‘বাবুরহাট উচ্চ বিদ্যালয়ের গর্ব, চাঁদপুরের গর্ব, পুলিশের আইজি ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী, যিনি সততা, কর্তব্যনিষ্ঠা এবং দক্ষতার অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। পুলিশ যেমন তাকে নিয়ে গর্বিত, চাঁদপুর জেলাবাসীও তাকে নিয়ে গর্বিত।’
চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু নঈম পাটোয়ারী দুলালের ভাষ্যমতে, ‘দেশের মানুষের কাছে স্বচ্ছ ও সৎ পুলিশ কর্মকর্তা হিসেবে পরিচিত ড. জাবেদ পাটোয়ারী।’
‘জাবেদ পাটোয়ারী সজ্জন, নির্লোভ ও নিরহংকারী মানুষ,’ বলছিলেন চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও পৌর মেয়র নাসির উদ্দিন।
আবার চাঁদপুর বাবুরহাট উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক ও বর্তমান গভর্নিং বডির সভাপতি শহীদুল্লাহ মাষ্টার ডা. দীপু মনিকে সরকারের সেরা মন্ত্রী হিসেবে আখ্যায়িত করেন। তিনি বলেন, ‘প্রশ্নফাঁস ছিল জাতির জন্য গলার কাঁটা। সেই প্রশ্নফাঁস বন্ধ করে সরকারের শিক্ষামন্ত্রী হিসেবে শতভাগ সফল আমাদের সবার প্রিয় দীপু আপা।’
কালের আলো/এমএএএমকে