খেলা দেখতে পুরুষ সেজে স্টেডিয়ামে ইরানের মেয়েরা!
প্রকাশিতঃ 12:45 pm | May 02, 2018
কালের আলো ডেস্ক:
ইরানে নারীদের মাঠে গিয়ে খেলা দেখা আইনত নিষিদ্ধ না হলেও এক অর্থে স্বীকৃত নয়। সামাজিকভাবে এমন কাজ কাউকে করতে দেয়া হয় না। এমতাবস্থায় কয়েকজন মেয়ে ছেলে সেজে অভিনব পদ্ধতিতে স্টেডিয়ামে বসে খেলা দেখে আলোচনায় এসেছেন।
ফুটবল ম্যাচ দেখতে অভিনব পদ্ধতি অবলম্বন করে ব্যাপক নজর কেড়েছেন ইরানের বেশ কজন নারী। মুখে নকল দাড়ি গোঁফ, মাথায় পরচুলা লাগিয়ে পুরুষদের পোশাক পরে প্রিয় দল পার্সপোলিসের পতাকা গায়ে জড়িয়ে খেলা দেখতে মাঠে গিয়েছিলেন তারা। তেহরানের আযাদি স্টেডিয়ামে গত শুক্রবার ঘটেছে ঘটনাটি।
একটি ছবিতে দেখা যাচ্ছে গ্যালারিতে বসে আছে কয়েকজন তরুণ। খুব মনোযোগ দিয়ে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে না দেখলে তারা যে নারী তা বোঝা অনেকটা কঠিন, সেটি এই মেয়েরাই প্রমাণ করেছে।
এই মেয়েদের একজন স্থানীয় একটি পত্রিকায় সাক্ষাৎকারে জানিয়েছে, তিনি এ নিয়ে তিনবার এভাবে মাঠে ঢুকে খেলা দেখেছেন। তিনি বলেন, ‘গুগলে গিয়ে টিউটোরিয়াল দেখে মেকআপের নানা রকম কায়দা শিখেছি ছদ্মবেশ নেয়ার জন্য।’
মেয়েটি জানান, এর আগে একবার মাঠে খেলে দেখতে গেলে তাকে নিরাপত্তা কর্মীরা ঢুকতে দেয়নি। তারপর তিনি এমন বুদ্ধি বের করেছেন এবং অন্যদেরও উৎসাহিত করেছেন।
নারীদের মাঠে না ঢোকাই সেখানে স্বাভাবিক। মাঠে যাওয়ার পর ঢুকতে দেয়া হয়নি এমন ঘটনা রয়েছে। এমনকি মাঠে খেলা দেখতে যাওয়ার জন্য শাস্তির মুখেও পড়তে হয়েছে নারীদের।
২০১৪ সালে একজন ব্রিটিশ ইরানি অ্যাক্টিভিষ্ট মাঠে ঢুকে পুরুষদের ভলিবল ম্যাচ দেখার চেষ্টা করলে তাকে আটক করা হয়। ২০১৮ সালে মাঠে ঢুকে খেলা দেখার চেষ্টা করার কারণে ৩৫ জন নারীকে আটক করা হয়। তবে ১৯৭৯ সালে ইরানে ইসলামি বিপ্লবের আগে নারীরা মাঠে গিয়ে খেলা দেখতে পারতেন।
অবশ্য গত ফেব্রুয়ারিতে একবার নারীদের মাঠে ঢোকার অনুমতি মিলেছিল। তবে তাদের পুরুষদের থেকে আলাদা বসতে হয়েছিল।
ছদ্মবেশি ওই নারীকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল আটক হওয়ার কোনো ভয় তার মধ্যে ছিল কি না? এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘কেন আমি চিন্তিত হবো? মাঠে গিয়ে আমি কোনো অপরাধ করিনি। আইনে নারীর মাঠে যাওয়াকে অপরাধ হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয়নি। তবে কয়েকজন নারীকে এর আগে তারা ধরেছে। তাদের মাঠে আর যাবে না বলে মুচলেকাও দিতে হয়েছে।’
কিন্তু ঝুঁকি নিয়েও মাঠে যাওয়ার পর যে ছবি তারা প্রকাশ করেছেন শুরুতে তা নিজেদের মধ্যেই ছিল। পরে সেই ছবি ছড়িয়ে পড়লে অনেকেই তাদের বাহবা জানিয়েছেন।
নিরাপত্তা রক্ষীদের চোখ কিভাবে ফাঁকি দিলেন সেই প্রশ্নের জবাবে আরেকজন বলেন, ‘আমরা দুটি গেট দিয়ে দল করে যখন ঢুকেছি তখন কেউ টেরই পায়নি। তবে স্টেডিয়ামে বসার পর অবশ্য অনেকেই বুঝে গিয়েছিলেন। কিন্তু মজার ব্যাপার হল তারা ম্যাচ জুড়ে আমাদের দিকে কোন মন্তব্য ছুড়ে দেননি। বরং কেউ কেউ এসে আমাদের সঙ্গে সেলফি তুলেছেন।’
ইরানে যতদিন পর্যন্ত মেয়েদের মাঠে গিয়ে খেলা দেখা স্বীকৃত না হবে ততদিন পর্যন্ত এই কাজ চালিয়ে যাবেন বলে এই মেয়েরা জানান। সূত্র: বিবিসি
কালের আলো/এএসকে