শুন্য থেকে কীভাবে শিখরে পৌঁছেছেন, জানালেন মেয়র আতিকুল ইসলাম
প্রকাশিতঃ 9:11 pm | January 04, 2020
কালের আলো টিম:
১১ ভাই-বোনের বিশাল সংসার। কিন্তু পরিবারের হাল ধরতে হবে এমন চাপ ছিল না জীবনে। কিন্তু নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে, সফলতার উদাহরণ তৈরি করতে হবে, ছোট সন্তানকে ঘিরে এমন আকাঙ্খা ছিল মায়ের। পরিবারের অন্য ভাই-বোনদের মতোন তিনি সরকারি চাকুরি বেছে নেননি। নিজের মাকে বলেছেন, ‘মা আমি চাকরি করবো না, চাকরি দেবো।’
আরও পড়ুন: মায়ের কাছ থেকেই ‘মিতব্যয়ী’ হওয়ার শিক্ষা পেয়েছেন সাবেক মেয়র আতিকুল
স্নেহময়ী মায়ের সেই স্বপ্ন পূরণ করেছেন। আবার মা’কে দেওয়া কথাও রেখেছেন। দেশের সফল ব্যবসায়ী হয়েছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) সদ্য বিদায়ী মেয়র ও আগামী ৩০ জানুয়ারির ভোটে মেয়র পদে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আতিকুল ইসলাম। পরিশ্রম এবং সততায় শুন্য থেকে শিখরে উঠে এসেছেন তিনি।
শনিবার (৪ জানুয়ারি) মিরপুর ইনডোর স্টেডিয়ামে নিজের বলার মতো একটি গল্প ফাউন্ডেশনের দ্বিতীয় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ও উদ্যোক্তা সম্মেলনে উদ্বোধনকালে স্মৃতির প্রকোষ্ঠে জমানো আশা জাগানিয়া এমন গল্পই উচ্চারণ করেছেন আতিকুল। এতে তরুণ উদ্যোক্তাদের মনের ভেতর বুনে দিয়েছেন নতুন স্বপ্ন। দেখিয়েছেন সম্ভাবনার পথ।
আরও পড়ুন: আরও পড়ুন: আতিকুল সমাজবদলে পাশে চান তরুণদের, জানালেন সততা-নিষ্ঠার গুরুত্ব
প্রথমে আইসক্রিমের দোকান; সফল হননি
ডিএনসিসির নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘প্রথমে আমি বেইলি রোডে একটি কোন আইসক্রিমের দোকান করতে যাই। ওটাতে সফল হইনি। পরবর্তীতে আমি লিও ক্লাব করেছি। ন্যাশনাল ক্যাডেট কোর করেছি, বাংলাদেশ ন্যাশনাল ক্যাডেট কোরের শ্রেষ্ঠ ক্যাডেট হয়েছি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্লাড ডোনেশনে শ্রেষ্ঠ লিও হয়েছি।’
২০ টি পুরনো মেশিনে ব্যবসা শুরু
আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘একদিন এসে আমি বাবা-মাকে বললাম, আমার ড্রয়িং রুমটা তোমরা ভেঙে দাও। তারা বললো- আমাদের বাসার ড্রয়িং রুম কেনো ভাঙবা? আমি বললাম, ২০টি পুরনো মেশিন এনেছি এক জায়গা থেকে। সবমিলিয়ে ৪০ টি মেশিন। আমি গার্মেন্টস করবো।’
বাবা-মা অবাক হলেন। তাঁরা বললো, তুই গার্মেন্টস করবি? তোকে টাকা দিল কে? ৪০ টি পুরাতন মেশিন নিয়ে যাত্রা শুরু করলাম। আমার মায়ের একটি মেশিন ছিল। আমাদের ভাইবোনদের কাপড় সেলানোর জন্য। সেই সিঙ্গার মেশিনটি আমি রেখে দিয়েছি। আমি গল্প শোনেছি আমি যখন পেটে ছিলাম তখন মা অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলো। এই সংসার কীভাবে চলবে এসব ভাবনা-চিন্তায়।’
তিনি বলেন, ‘যখন গার্মেন্ট শুরু করি তখন আমাদের ট্যালেক্স ছিলো না। কম্পিউটার ছিল না। শান্তিনগর থেকে গোলাপশা’র মাজার-যেটা কি না টিএন্ডটির অফিস ছিলো। প্রতিদিন সেখানে হেঁটে হেঁটে যেতাম ট্যালেক্স মেশিনের সামনে গিয়ে বসে থাকতাম উত্তর কখন আসবে। কারণ আমার সেই টাকা ছিলো না, শান্তিনগর থেকে গুলিস্থান রিকশায় আসার জন্যে। এটাই আমার জীবনের বাস্তবতা।’
মুড়ির টিনে শান্তিনগর থেকে গুলিস্থানে..
ডিএনসিসির সদ্য বিদায়ী মেয়র আতিকুল ইসলামের কাছ থেকে সাফল্যের মন্ত্রগাঁথায় উদ্দীপ্ত তারুণ্য। তিনি যখন জীবনের গল্প বলছিলেন তখন অবাক বিস্ময়ে পিনপতন নীরবতায় তারা শুনছিলেন। আতিকুল ইসলাম এবার বললেন, ‘অনেক দিন আমি মুড়ির টিনে বাদুরঝোলা হয়ে শান্তিনগর থেকে গুলিস্থানে গিয়েছি।
যত টাকা সেইভ করা যায়, কারণ আমাদের তো এত টাকা ছিল না। গার্মেন্টস করেছি, সবার থেকে টাকা নিয়ে নিয়ে, ভাইবোনের সহযোগিতায়। মা-বাবা ড্রয়িং রুম, ড্রাইনিং রুম ভেঙে দিলো। শুরু করলাম গার্মেন্টসের যাত্রা।
অনেকেই রাঙামাটি ঘুরতে যেতো, আমাকে বলতো যাও না কেন? আমি কিন্তু দেশ দেখতে পারিনি গার্মেন্টস এর জন্য। আমি এই গার্মেন্টসের পেছনে সময় ব্যয় করেছি দিনের পর দিন, রাতের পর রাত। অনেক সময় কখন ঈদ হয়েছে বুঝতেই পারিনি। কারন এটা পরিবারের ও আমার প্রথম ব্যবসা এটাকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য পরিশ্রম করেছি।’
তিনি বলেন, ‘যখন এটি করতে যাই তখন অনেক ঘাত-প্রতিঘাত আসে। যখন আমার দু:সময় বিভিন্ন জায়গায় যাই, বিভিন্ন ব্যাংক থেকে বলে দেওয়া হয়েছে- তুমি এই ব্যাংকে ঢুকতে পারবে না। তোমার ব্যবসা ভাল না। আমি তখন প্রতিজ্ঞা করেছি, ইনশাআল্লাহ আমি এই ব্যাংকে ঢুকবো এবং হাইয়ার এক্সপোর্টার হয়ে বের হবো।’
হান্ড্রেড ফিফটি মিলিয়ন ডলারের এক্সপোর্ট ব্যবসা
বক্তৃতা নয় গল্প বলার ঢঙে মেয়র আতিকুল ইসলাম বলতে থাকেন যে, ‘যে ৪০টি মেশিনে শুরু করেছিলাম এখন আমার ফ্যাক্টরিতে ১২ হাজার মেশিন। ১৯ হাজার শ্রমিক কাজ করে, আলহামদুলিল্লাহ্। যে ব্যাংক আমাকে বলেছিল ঢুকতে পারবা না, সেই ব্যাংকে আলহামদুলিল্লাহ এখন হান্ড্রেড ফিফটি মিলিয়ন ডলারের এক্সপোর্ট ব্যবসা আমার। এটাই আমার জীবনের গল্প।’
দেশের উদ্যোক্তা বিষয়ক অনলাইন প্রশিক্ষণ কার্যক্রম নিজের বলার মতো একটি গল্প’র তৃতীয় বর্ষে পদার্পণ ও দুই লাখ তরুণ-তরুণীকে বিনামূল্যে প্রশিক্ষণ প্রদান উপলক্ষে ৪ হাজার শিক্ষার্থীদের নিয়ে অনুষ্ঠিত এই উদ্যোক্তা সম্মেলনের আয়োজক ইকবাল বাহার বলেন, ‘এখান থেকে দুই হাজার উদ্যোক্তা বের হয়েছে। তার মধ্যে ২০০ জন হয়েছেন নারী উদ্যোক্তা।’
কালের আলো/সিএইচ/এমএইচ/এমএএএমকে