গণতন্ত্রের উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রায় পুলিশ সাহসিকতার ভূমিকা পালন করেছে : প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিতঃ 11:23 am | January 05, 2020

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:

গণতন্ত্রের উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ পুলিশ সাহসিকতার ভূমিকা পালন করেছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

আরও পড়ুন: আইজিপির জবানীতে ‘বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের পুলিশ’, প্রধানমন্ত্রীর বাস্তবধর্মী পদক্ষেপে বেড়েছে সক্ষমতা!

তিনি বলেছেন, আজকের পুলিশ বাহিনীর প্রতি জনগণের বিশ্বাস এবং আস্থা অর্জিত হয়েছে। তিনি বলেন, গণতন্ত্রের উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রায় পুলিশ সাহসিকতার ভূমিকা পালন করছেন। পুলিশের দায়িত্বশীল ভূমিকা মানুষের প্রশংসা অর্জন করেছে।

রোববার (৫ জানুয়ারি) সকালে রাজারবাগ পুলিশ লাইন্স মাঠে বার্ষিক পুলিশ প্যারেডের মধ্য দিয়ে পুলিশ সপ্তাহের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। এসময় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড.মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী, বিপিএম(বার) উপস্থিত ছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, দেশে পুলিশের অবদান ইতিহাসে সবসময় স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। পুলিশ বাহিনী প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে সাহসিকতা ও দক্ষতার পরিচয় দিচ্ছে। বিশেষ করে সড়ক নিরাপত্তায় বিশেষ ভূমিকা পালন করছে। পথচারীসহ সকলের চলাচলে ট্রাফিক পুলিশ অক্লান্ত পরিশ্রম করছে।

আরও পড়ুন: ‘সাহসী’ ও ‘মানবসেবী’ ১১৮ পুলিশকে পদক দিলেন প্রধানমন্ত্রী

তিনি বলেন, বাংলাদেশ যখন স্বাধীন করা হয় তখন এদেশের ৮২ ভাগ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করত। দেশ স্বাধীন হওয়ার পরে আমাদের রাস্তাঘাট, পুল, ব্রিজ সব ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছিল। ছিল না ব্যাংকে কোনো টাকা। গোলায় ছিল না ধান। তারপরেও রাতদিন পরিশ্রমের মাধ্যমে মাত্র সাড়ে তিন বছরে তিনি (বঙ্গবন্ধু) যখন বাংলাদেশকে স্বল্পোন্নত দেশে পরিণত করেন, তখনই ৭৫-এর ১৫ আগস্ট তাকে সপরিবারে হত্যা করা হয় । সেখানে একজন পুলিশ কর্মকর্তাও শহীদ হয়েছিলেন। এসময় তিনি তাদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন।

‘বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে তারা শুধু আমাদের পরিবারকে নিঃশেষ করেনি, তারা নিঃশেষ করেছে বাঙালি জাতির ভাগ্য, বাংলাদেশের সম্ভাবনাকে। বঙ্গবন্ধু যেভাবে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন, সেই সম্ভাবনাকে ধ্বংস করেছে তারা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা দেশের স্বাধীনতা চায়নি তারাই ২১ বছর সরকারে ছিল। এ সময় তারা দেশের উন্নয়ন করতে পারেনি। আওয়ামী লীগ সরকারে এসে দেশকে উন্নত ও সমৃদ্ধ করতে কাজ শুরু করে। এ সময় পুলিশের প্রত্যেকটি কাজে সাহসিকতা ও দক্ষতা দেখেছি।

বিএনপি-জামায়াতের নাশকতায় পুলিশের ২৯ জন সদস্য নিহত হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের প্রত্যেকটি পুলিশ সদস্য এ সময় নিজের জীবনবাজি রেখে এসব ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড প্রতিহত করেছে। এজন্য আমি পুলিশকে ধন্যবাদ জানাই।

তিনি বলেন, আমরা সন্ত্রাস, মাদক, জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেছি। পুলিশ বাহিনী অত্যন্ত সাহসিকতার সঙ্গে এগুলো মোকাবিলা করছে। বিশেষ করে জঙ্গিবাদ দমনে পুলিশের ভূমিকা অত্যন্ত প্রশংসনীয। এটা শুধু আমাদের দেশে নয়, বিদেশেও পুলিশের ভূমিকা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে।

আমাদের দেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিভিন্ন শিল্পাঞ্চলে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ হচ্ছে। আমাদের দেশে এই বিনিয়োগ সন্ত্রাসের কারণে কোনোক্রমেই যেন ব্যাহত না হয় সেদিকে পুলিশকে ভূমিকা রাখতে হবে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেছেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাসের সঙ্গে রাজারবাগ এবং পুলিশের শহীদ হওয়ার ঘটনা ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।

জাতীয় জরুরি সেবার হটলাইন নম্বর ৯৯৯-এর উদাহরণ টেনে শেখ হাসিনা বলেন, পুলিশ জনগণের সেবক। বাংলাদেশের পুলিশ ইতোমধ্যেই জনগণের বিশ্বাস এবং আস্থা অর্জন করেছে। এখন ৯৯৯-এ ফোন করলেই পুলিশ দ্রুত ছুটে গিয়ে সেখানকার সমস্যার সমাধান করছেন। এতে জনগণ অত্যন্ত উপকৃত হচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এবার যখন আমরা ১০ হাজার কনস্টেবল নিয়োগ দিয়েছি। বাংলাদেশ পুলিশ অত্যন্ত দক্ষতার সাথে দুর্নীতিমুক্তভাবে এই দশ হাজার পুলিশ কনস্টেবল নিয়োগ দিয়ে একটি ইতিহাস সৃষ্টি করেছে। সেজন্য আমি আপনাদের আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আমি মনে করি আপনারা একটি অনুকরনীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ পুলিশকে আধুনিক জনবান্ধব ও যুগোপযোগী হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষে ইতোমধ্যে বহুমুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। পুলিশের জনবল আমরা ধাপে ধাপে ব্যপক হারে বৃদ্ধি করেছি এবং প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছি। শুধু জনবল বৃদ্ধি না নতুন নতুন পদ সৃষ্টি করে আমরা পদোন্নতির ব্যবস্থা করেছি।

প্রধানমন্ত্রী সারাদেশের বিভিন্ন পুলিশ ইউনিটের সদস্যদের সমন্বয়ে গঠিত নয়নাভিরাম প্যারেড পরিদর্শন ও অভিবাদন গ্রহণ করেন। কুচকাওয়াজ শেষে রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সে স্থাপিত বাংলাদেশ পুলিশ নারী কল্যাণ সমিতির (পুনাক) স্টল পরিদর্শন এবং পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে কল্যাণ প্যারেডে অংশগ্রহণ করেন প্রধানমন্ত্রী।

পুলিশ সপ্তাহ উপলক্ষে পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের অসীম সাহসিকতা ও বীরত্বপূর্ণ কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ ১৪ জনকে ‘বাংলাদেশ পুলিশ পদক (বিপিএম)’, ২০ জনকে ‘রাষ্ট্রপতির পুলিশ পদক (পিপিএম)’ এবং গুরুত্বপূর্ণ মামলার রহস্য উদ্ঘাটন, অপরাধ নিয়ন্ত্রণ, দক্ষতা, কর্তব্যনিষ্ঠা, সততা ও শৃঙ্খলামূলক আচরণের মাধ্যমে প্রশংসনীয় অবদানের জন্য ২৮ জনকে ‘বাংলাদেশ পুলিশ পদক (বিপিএম)- সেবা’ এবং ৫৬ জনকে ‘রাষ্ট্রপতির পুলিশ পদক (পিপিএম)- সেবা’ প্রদান করেন প্রধানমন্ত্রী।

প্রসঙ্গত, ‘মুজিববর্ষের অঙ্গীকার পুলিশ হবে জনতার’ এ প্রতিপাদ্য নিয়ে পাঁচ দিনব্যাপী পুলিশ সপ্তাহ-২০২০ শুরু হয়। পুলিশ সপ্তাহ চলবে আগামী ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত।

অনুষ্ঠানে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ, নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল আওরঙ্গজেব চৌধুরী, বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল মাসিহুজ্জামান সেরনিয়াবাত প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

কালের আলো/পিএ/এনএল