পুলিশ যেভাবে নতুন উচ্চতায় (ভিডিও)
প্রকাশিতঃ 9:25 am | January 08, 2020
বিশেষ সংবাদদাতা, কালের আলো :
শুধু লোকবল বাড়ানোই নয়, একই সঙ্গে আধুনিকায়ন হচ্ছে পুলিশের। সময়ের প্রয়োজনেই পুলিশ আধুনিক প্রযুক্তির সঙ্গে পরিচিত হচ্ছে। বদলে যাওয়া অপরাধের ধরণের সঙ্গে মাঠ পর্যায়েও পুলিশের হাতে পৌঁছে যাচ্ছে প্রযুক্তির সর্বাধুনিক সেবা।
আরও পড়ুন: পুলিশকে কতটা ভালবাসেন প্রধানমন্ত্রী?
অপরাধী সনাক্তকরণে আধুনিক প্রযুক্তি-সরঞ্জাম পুলিশের সক্ষমতা বাড়াচ্ছে প্রতিনিয়ত। প্রযুক্তির সফল ব্যবহারে মিলছে ইতিবাচক ফল। কাজের মান বাড়ানোর পাশাপাশি পুলিশ সদস্যদের মানসিকতারও পরিবর্তন ঘটাতে উদ্যোগী হয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর। নিজেদের সঙ্গে জনগণের দূরত্বরেখা কমে আসছে।
আভ্যন্তরীণ স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা হচ্ছে। অপরাধ ব্যবস্থাপনা ও সেবা প্রদানেও গুরুত্ব পাচ্ছে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার পাশাপাশি সাহসিকতা, দক্ষতা ও পেশাদারিত্ব দিয়েই রুখে দিয়েছে জঙ্গি-সন্ত্রাস। উন্নয়ন-অগ্রগতির ধারাবাহিকতায় পুলিশের মানবিক দৃষ্টান্ত সমাজ জীবনে আলোর বিচ্ছুরণ ঘটিয়েছে। নতুন এক উচ্চতায় নিজেদের তুলে ধরেছে বাংলাদেশ পুলিশ।
আরও পড়ুন: পুলিশ কনস্টেবল নিয়োগ ‘ইতিহাসের পাতায়’, তৃতীয় বারের মতো স্বীকৃতি প্রধানমন্ত্রীর
পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড.মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী, বিপিএম (বার) নিজেও মনে করেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রগাঢ় আন্তরিকতার দৌলতেই এমন সাফল্য-অর্জন পুলিশের ঝুলিতে। জনগণ পুলিশকে যে নতুন উচ্চতায় দেখতে শুরু করেছে তা অটুট রাখতে যেকোন ত্যাগ স্বীকারে নিজেদের প্রস্তুত থাকার কথাও ঘোষণা দিয়েছেন তিনি।
পুলিশ সপ্তাহ উপলক্ষে সোমবার (০৬ জানুয়ারি) প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে উর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর মতবিনিময় অনুষ্ঠানে আইজিপি বলেছেন, ‘২০১৯ সালে আমরা সম্পূর্ণ স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতার সাথে ১০ হাজার কনস্টেবল নিয়োগ করে সর্বস্তরের মানুসের প্রশংসা কুড়িয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী এই নিয়োগ প্রক্রিয়াকে একটি অনুকরনীয় দৃষ্টান্ত হিসেবে উল্লেখ করে এজন্য আমাদের প্রশংসা করেছেন।’ পুলিশ প্রধানের এমন উচ্চারণের সময় অদূরে মঞ্চে থাকা প্রধানমন্ত্রী তাঁর দিকে তাকান এবং মাথা নেড়ে ইতিবাচক মনোভাবের কথাই প্রকাশ করেন।
পুলিশের আইজি আরও বলেন, ‘আপনার (প্রধানমন্ত্রীর) এই প্রশংসা ও স্বীকৃতি পুলিশের প্রতিটি সদস্যকে গর্বিত করেছে এবং তাদেরকে স্বচ্ছতা, নিরপেক্ষতা ও পেশাদারিত্বের সাথে কর্তব্য পালনের প্রেরণা জোগাচ্ছে।
আরও পড়ুন: আইজিপির জবানীতে ‘বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের পুলিশ’, প্রধানমন্ত্রীর বাস্তবধর্মী পদক্ষেপে বেড়েছে সক্ষমতা!
নিষ্পেষিত মানুষের অনিরুদ্ধ আবেগের নাম বঙ্গবন্ধু
২০২০ সাল আমাদের জন্য এক অনন্য ও তাৎপর্যময় বছর উল্লেখ করে ড.মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী বলেন, ১০০ বছর পূর্বে এই সময়ে বাংলার মাটিতে জন্ম হয়েছিলো সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালী, বাঙালি জাতির স্বপ্নদ্রষ্টা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের।
মূলত বঙ্গবন্ধু জন্মের মহান লগ্নেই বাংলাদেশ রাষ্ট্রে অভ্যুদয়ে অমোঘ নিয়তি নির্ধারিত হয়ে গিয়েছিলো। শেখ মুজিবুর রহমান শুধু একজন মানুষের নাম নয়, একটি আদর্শ ও চেতনার নাম। নিপীড়িত, নিষ্পেষিত মানুষের অনিরুদ্ধ আবেগের নাম। অন্যায়ের বিরুদ্ধে নিয়ত সোচ্চার সংগ্রামী কন্ঠস্বরের নাম। সুদূর কৌশলে বঙ্গবন্ধু নিপীড়ক শাসকের বিরুদ্ধে বঞ্চিত ও শোষিত মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন।
তারপর ধাপে ধাপে তার সম্মোহনী নেতৃত্বের মাধ্যমে তাদের মধ্যে মুক্তি ও স্বাধীনতার অনন্য স্পৃহা জাগ্রত করেছিলেন এবং মুক্তির সংগ্রামের জন্য তাদেরকে প্রস্তুত করেছিলেন। অবশেষে এক মাহেন্দ্র মুহুর্তে স্বাধীনতার ঘোষণা প্রদান করে দৃপ্ত ও তেজস্বী আহ্বানের মাধ্যমে তিনি ধর্ম-বর্ণ, শ্রেণি নির্বিশেষে সব পেশার মানুষকে মহান মুক্তিযুদ্ধে শামিল করেছিলেন।
বঙ্গবন্ধুই ছিলেন বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী একটি সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মূল প্রেরণা ও চালিকাশক্তি। তার নেতৃত্ব, দিক নির্দেশনা ও প্রেরণাতেই আমরা পেয়েছি আমাদের প্রিয় স্বাধীনতা, প্রিয় বাংলাদেশ ও লাল সবুজের প্রিয় পতাকা। তাই তো তিনি জাতির পিতা।
তার জন্মশতবার্ষিকীর এই আনন্দঘন মুহূর্তে আমরা উদযাপন করতে যাচ্ছি বহুল প্রতীক্ষিত মুজিববর্ষ। এই অনন্য উদযাপনের প্রাক্কালে বাংলাদেশ পুলিশের পক্ষ থেকে আমি বিনম্র শ্রদ্ধা জানাচ্ছি বঙ্গবন্ধুর প্রতি। তার পরিবারের শাহাদাতবরণকারী সকল সদস্যদের প্রতি এবং মহান মুক্তিযুদ্ধের সকল শহীদদের প্রতি।
জাতির পিতাকে হত্যার মাধ্যমে গণতন্ত্রের ধারা স্তব্ধ
পুলিশ মহাপরিদর্শক বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, স্বাধীন বাংলাদেশে জাতির পিতা সবসময় বলতেন, ‘এই স্বাধীনতা তখনই আমার কাছে প্রকৃত স্বাধীনতা হয়ে উঠবে যেদিন বাংলার কৃষক, মজুর ও দু:খি মানুষের সকল দু:খের অবসান হবে।’
তাই দীর্ঘ বঞ্চনার শিকার মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য তিনি ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন এবং স্বাধীনতার পর অল্প সময়ের মধ্যে যুদ্ধ বিধ্বস্ত বাংলাদেশকে শক্ত অর্থনীতির উপর দাঁড় করিয়েছিলেন। কিন্তু স্বাধীনতা বিরোধী অপশক্তি ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে স্বপরিবারে হত্যার মাধ্যমে উন্নয়ন ও গণতন্ত্রের ধারাকে স্তব্ধ করে দিয়েছিলো।’
পেশাদারিত্ব দিয়েই ষড়যন্ত্র নসাৎ করেছে পুলিশ
আইজিপি বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আবার ঘুরে দাঁড়ালেও সেই প্রতিক্রিয়াশীল সাম্প্রদায়িক শক্তি সুযোগ পেলেই বাংলাদেশকে অন্ধকারে নিমজ্জিত করার লক্ষে ধ্বংসযজ্ঞে মেতে উঠেছে বারবার। কিন্তু যখনই তারা এরূপ অশুভ তৎপরতা চালিয়েছে তখনই শান্তিপ্রিয় প্রগতিশীল মানুষকে সাথে নিয়ে বাংলাদেশ পুলিশ সাহসিকতা ও পেশাদারিত্বের সাথে তাদের সকল ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করে দিয়েছে।
এসকল ক্ষেত্রে আপনার দক্ষ ও দূরদর্শী নেতৃত্ব, সময়োচিত বলিষ্ঠ পদক্ষেপ, সুদৃঢ় মনোবল ও দৃঢ় প্রত্যয় আমাদেরকে দিকনির্দেশনা দিয়েছে। আপনার প্রতি আমরা গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। প্রথাগত আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার পাশাপাশি জঙ্গি ও সন্ত্রাস দমনের যে বিরাট চ্যালেঞ্জ আমাদের সামনে এসেছিলো, বাংলাদেশ পুলিশ তা অভূতপূর্ব, স্বত:স্ফূর্ততা, দক্ষতা ও পেশাদারিত্বের সাথে মোকাবিলা করেছে।
জঙ্গি দমনে বাংলাদেশ আজ বিশ্বে রোল মডেল হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। দুর্নীতি ও মাদকের বিরুদ্ধে সরকারে জিরো টলারেন্স নীতির আলোকে আমরা কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। পাশাপাশি বাংলাদেশ পুলিশের আভ্যন্তরীণ স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণে আমরা কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি।’
আভ্যন্তরীণ প্রশাসনেও স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা
আইজিপি বলেন, ‘শুধু পুলিশের নিয়োগের ক্ষেত্রেই নয়, অপরাধ ব্যবস্থাপনা, সেবা প্রদান, আভ্যন্তরীন প্রশাসনের সকলক্ষেত্রে আমরা একই রকম স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করছি। আমাদের এসব পদক্ষেপের ফলে জনগণ আমাদেরকে যে নতুন উচ্চতায় দেখতে শুরু করেছে তা অটুট রাখতে যেকোন ত্যাগ স্বীকারে আমরা বদ্ধপরিকর।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, তথ্যপ্রযুক্তির বৈপ্লবিক বিকাশের সময় ইন্টেলিজেন্সলি ও টেকনো বেজড পুলিশি কার্যক্রমের উপর আমরা বিশেষ গুরুত্বারোপ করছি। বাংলাদেশ পুলিশের সার্বিক ব্যবস্থাপনায় জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ ইতোমধ্যেই জনগণের দৌরগোঁড়ায় পৌছে গিয়েছে।
আপনি জেনে খুশি হবেন, গত দু’বছরের মধ্যে ২ কোটিরও অধিক লোক এই ৯৯৯ এ সাহায্যের জন্য প্রতিনিয়ত ফোন করেছে। প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ টেলিফোন আমাদের এই ৯৯৯ তে আসছে। অনলাইনে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট, বিডি পুলিশ হেল্পলাইন, বিভিন্ন মোবাইল অ্যাপস প্রবর্তনসহ তথ্য উপাত্ত সংরক্ষণে সর্বাধুনিক সফটওয়্যারের সংযোজনের ফলে জনগণের নিকট পুলিশের সেবাপ্রাপ্তি সহজ ও জনপ্রিয় হয়েছে।
সাইবার পুলিশ সেন্টার, ডিএনএ ল্যাব, আধুনিক ফরেনসিক ল্যাব ও রাসায়নিক পরীক্ষাগার স্থাপনে মামলার তদন্তে অপরাধী শনাক্তকরণে পুলিশের সফলতা বৃদ্ধি পেয়েছে।’
বিশ্বের যে কোন পেশাদার পুলিশ বাহিনীর মতো
ড.জাবেদ পাটোয়ারী বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আমরা শুধু প্রমাণ করেছি, সক্ষমতা বৃদ্ধিসহ যথাযথ স্বীকৃতি, সুযোগ্য নেতৃত্বের সঠিক দিকনির্দেশনা, আন্তরিক পৃষ্ঠপোষকতা ও অনুপ্রেরণা পেলে বিশ্বের যেকোন পেশাদার পুলিশ বাহিনীর মত বাংলাদেশ পুলিশও সেবা, সাহসিকতা, ত্যাগ ও পেশাদারিত্বের এক অনন্য দৃষ্টান্ত হতে পারে।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, বিগত ২০০৯ সালে আপনার নেতৃত্বাধীন সরকার আইন-শৃঙ্খলা খাতকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে বাজেট প্রণয়ন করেছে। আপনার ঐকান্তিক আগ্রহ ও প্রচেষ্টায় বাংলাদেশ পুলিশ আজ হয়ে উঠছে দেশের আইন শৃঙ্খলা রক্ষায় পূর্বের যেকোন সময়ের তুলনায় অধিকতর দক্ষ ও যোগ্য।’
পুলিশ জনসংখ্যার অনুপাত
আইজিপি বলেন, ‘বিগত দশ বছরের ব্যবধানে আপনার নেতৃত্বাধীন সরকার পুলিশ জনসংখ্যার অনুপাত ১:১৩৫৫ হতে ১:৮০১ এ উন্নীত করেছে। এতে পুলিশের কার্যক্রমে গতিশীলতা বৃদ্ধি পেয়েছে। সেবাপ্রার্থী জনগণ তার সুফল ভোগ করতে শুরু করেছে।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, সাম্প্রতিক সময়ে পুলিশের জনবল নজিরবিহীন হারে বৃদ্ধি করা হলেও পুলিশের কর্মপরিধি ও সময়ের চ্যালেঞ্জ যেভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে এর বিবেচনায় জনবলের ক্ষেত্রে আমরা এখনও কাঙ্খিত পর্যায় থেকে বেশ দূরে রয়েছি। জাতিসংঘ সুপারিশকৃত পুলিশ ও জনসংখ্যার অনুপাত হলো ১:৪০০।
বিভিন্ন উন্নত দেশের কথা বাদ দিলেও আমাদের প্রতিবেশী দেশের তুলনায় পুলিশ ও জনসংখ্যার অনুপাতে আমরা অনেক পিছিয়ে আছি। পুলিশ জনসংখ্যার অনুপাতে সিঙ্গাপুরে প্রায় ১:১৪০, শ্রীলঙ্কায় ১:২৩০, মালয়েশিয়ার একজন পুলিশ ৩০০ জন জনসংখ্যার জন্য, নেপালে ৫০০ জনসংখ্যার জন্য একজন পুলিশ, মায়ানমারে ৫৫০ জনের জন্য একজন পুলিশ এবং ভারতে ৬৫০ জনের জন্য একজন পুলিশ রয়েছে।
এমতাবস্থায় বাংলাদেশ পুলিশকে একবিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সক্ষম করে গড়ে তুলতে পুলিশের জনবল বৃদ্ধির ধারাটি অব্যাহত রাখা একান্ত প্রয়োজন বলে আমরা মনে করি।’
উন্নত দেশের পুলিশের ন্যায় সক্ষমতা অর্জন
‘সরকারের উন্নয়ন পরিকল্পনায় পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প, সারাদেশে ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলসহ বিভিন্ন প্রকল্পের কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে। এসব স্থাপনার নিরাপত্তা ও সুরক্ষাসহ সার্বিকভাবে বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিতকরণ এখন সময়ের দাবি।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, সেই লক্ষে উন্নত দেশের পুলিশের ন্যায় সক্ষমতা অর্জন ও টেকসই নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে প্রয়োজনীয় জনবলসহ অবকাঠামো উন্নয়নে আপনার সদয় দৃষ্টি আকর্ষণ করছি’ বলছিলেন ড.জাবেদ।
তিনি বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, যথা সময়ে পদোন্নতি পুলিশ সদস্যদের উদ্দীপনা ও কর্মসম্পৃহা বৃদ্ধিতে মূখ্য ভূমিকা পালন করে থাকে। কিন্তু পুলিশের মধ্য ও উচ্চপর্যায়ের পদের তুলনায় পদোন্নতির যোগ্য কর্মকর্তার সংখ্যা অনেক বেশি হওয়ায় পদোন্নতির অভাবে তাদের কর্মস্পৃহা কোন কোন ক্ষেত্রে কমে যাচ্ছে।
এ জটিলতা নিরসনকল্পে সাংগঠনিক কাঠামো সংস্কার করে গ্রেড ওয়ান, গ্রেড টু, গ্রেড থ্রিসহ উচ্চ পর্যায়ের পদ সৃজন ও সুপার নিউমারি পদে পদোন্নতি প্রদান করা প্রয়োজন বলে আমরা মনে করি। সম্প্রতি আপনার দূরদর্শী নির্দেশনায় ২৩০ জন কর্মকর্তাকে পুলিশ সুপার পদে সুপার নিউমারি পদোন্নতির ফলে পুলিশ সদস্যদের মাঝে ব্যপক উৎসাহ ও উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়েছে।
অন্যান্য উচ্চতর পদেও এরূপ পদোন্নতি প্রদানের মাধ্যমে পদোন্নতি সংক্রান্ত জটিলতা আশু সমাধানে আপনার সদয় দৃষ্টি কামনা করছি।’
প্রধানমন্ত্রীর আন্তরিক ছোঁয়ায় বদলে গেছে পুলিশ
আইজিপি দৃঢ়কন্ঠে উচ্চারণ করেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, বিগত এক দশকে আপনার ঔদার্য্য ও আন্তরিক ছোঁয়ায় বদলে গেছে বাংলাদেশ পুলিশ। আপনার একান্ত আগ্রহ ও উদ্যোগে বাংলাদেশ পুলিশের জনবল ব্যাপক বৃদ্ধি করা হয়েছে। পদমর্যাদা বৃদ্ধি করা হয়েছে। বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধ করা হয়েছে, পুলিশে বিভিন্ন বিশেষায়িত ইউনিট গঠন করা হয়েছে।
পুলিশ সদস্যদের কল্যাণে রেশন, চিকিৎসা সুবিধা, বিভিন্ন ভাতার আমুল সংস্কার করা হয়েছে। পুলিশ কল্যাণ ট্রাস্ট ও কমিউনিটি ব্যাংক পুলিশের সদস্যদের জন্য আপনার একান্ত কল্যাণচিন্তারই ফসল। এছাড়াও পুলিশের প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান, বিভিন্ন ইউনিটের ব্যারাক ভবনের নির্মাণসহ অবকাঠামো উন্নয়ন, যানবাহন ও লজিস্টিক সুবিধা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি করা হয়েছে।
এ সকল যুগান্তকারী পদক্ষেপ একবিংশ শতাব্দির চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আমাদের আত্মবিশ্বাসকে বহুগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। এজন্য বাংলাদেশ পুলিশ আপনার নিকট চিরকৃতজ্ঞ থাকবে। আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস অতীতের ন্যায় ভবিষ্যতেও বাংলাদেশ পুলিশের প্রতি আপনার উদারতা ও আন্তরিকতার দ্বার অবারিত থাকবে।’
পুলিশের সম্মুখে এগিয়ে যাওয়ার শক্তি
আইজিপি বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, সকল প্রতিকূলতা ও সংকটের মুখে অবিচল-অটল থেকে মানুষ ও দেশের প্রতি গভীর মমত্ব ও ভালোবাসার প্রত্যয় নিয়ে দেশ গড়ার দৃপ্ত অঙ্গীকারে আপনি যেভাবে এগিয়ে চলেছেন তা আমাদেরকেও সম্মুখে এগিয়ে যাওয়ার শক্তি ও প্রেরণা জোগায়।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, জাতির পিতা আমাদেরকে স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখিয়েছেন, মুক্তির মহামন্ত্রে জাতিকে জাগিয়েছেন এবং স্বাধীনতার পথ ধরে পুরো জাতিকে পৌঁছে দিয়েছেন বিজয়ের স্বপ্নতোরণে। কিন্তু সোনার বাংলা গড়ার যে স্বপ্ন তিনি দেখেছিলেন তা পূরণ করে যেতে পারেননি। আপনার দূরদর্শী ও বলিষ্ঠ নেতৃত্বে সেই স্বপ্ন পূরণের পথে দুর্বার গতিতে এগিয়ে চলছে বাংলাদেশ।
ইতোমধ্যে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে আমাদের উত্তরণ ঘটেছে। উন্নয়নের প্রতিটি সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান আজ সুসংহত হয়েছে। উন্নয়নের মহাসড়ক ধরে রূপকল্প ২০২১, রূপকল্প ২০৪১ বাস্তবায়নের পথে আমরা দুর্বার গতিতে এগিয়ে চলছি।’
জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকীর শুভলগ্নে
পুলিশের এই সর্বোচ্চ কর্মকর্তা বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, জাতির সমৃদ্ধির এই অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ পুলিশ হতে চায় এর গর্বিত অংশীদার। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন পূরণে তাঁর হাতেগড়া স্বাধীন বাংলাদেশের পুলিশ বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধারণ করে জনগণের সাথে নাগরিক সেবক সম্পর্ক স্থাপনের মাধ্যমে জনগণের পুলিশে পরিণত হওয়ার জন্য প্রচেষ্টা নিচ্ছে।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে অসাম্প্রদায়িক ও মানবিক প্রত্যয়ের যে বীজ আমরা ৭১ এ গড়েছি, আপনার গতিশীল নেতৃত্বে আমরা তাকে পূর্ণ মহিরুহে পরিণত করবো। জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকীর শুভলগ্নে এই আমাদের দৃঢ় প্রতিজ্ঞা- ‘মুজিব বর্ষের অঙ্গীকার, পুলিশ হবে জনতার।’
কালের আলো/এমএএএমকে