২২ জানুয়ারি থেকে ই-পাসপোর্ট, বিশ্বমানের সক্ষমতার উদ্যোগ ফায়ার সার্ভিসের

প্রকাশিতঃ 9:42 am | January 20, 2020

বিশেষ সংবাদদাতা, কালের আলো :

বর্তমান বিশ্বে প্রচলিত সর্বাধুনিক ইলেকট্রনিক পাসপোর্ট (ই-পাসপোর্ট) চালু করছে সরকার। আগামী ২২ জানুয়ারি এই পাসপোর্ট হাতে পাবেন দেশের নাগরিকরা। ওইদিন সকাল ১০ টায় রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থতি থেকে আনুষ্ঠানকিভাবে ই-পাসপোর্টের উদ্বোধন করবেন।

৪ হাজার ৫৬৯ কোটি টাকা ব্যয়ে বাংলাদেশ ই-পাসপোর্ট চালু এবং স্বয়ংক্রিয় বর্ডার কন্ট্রোল ব্যবস্থাপনা প্রবর্তন’ শীর্ষক প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। ২০১৮ সালের জুলাই থেকে ২০২৮ সালের জুন পযর্ন্ত সরকারের নিজস্ব তহবিলে এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হবে। এই ১০ বছরে মোট ৩০ মিলিয়ন পাসপোর্ট সরবরাহ করা হবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিব মো. শহিদুজ্জামান।

আরও পড়ুন: স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিবের সাক্ষাতকার কালের আলোতে

একই সঙ্গে অগ্নিকান্ডসহ যে কোন দুর্যোগ-দুর্ঘটনায় প্রথম সাড়াদানকারী প্রতিষ্ঠান ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স অধিদফতরকেও বিশ্বমানের সক্ষমতা বাড়ানোর কার্যকর উদ্যোগ নেওয়ার কথা বলেছেন তিনি। বলেছেন, কোন ভবনে অগ্নিকান্ডের ১০ মিনিটের মধ্যেই যেন ফায়ার সার্ভিস ঘটনাস্থলে পৌঁছতে পারে সেই চেষ্টাও চলছে। এই অধিদফতরের সক্ষমতা বাড়াতে সম্প্রসারণ করা হচ্ছে ডুবুরি ইউনিটকেও।

সম্প্রতি এক দুপুরে সচিবালয়ে নিজ কক্ষে কালের আলো’র সঙ্গে আলাপকালে এসব তথ্য জানান স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিব মো. শহিদুজ্জামান। মেধা মননে জ্ঞানে গরিমায় মানবিকতায় আদর্শিক এ কৃষিবীদ মন থেকেই কাজ করার চেষ্টা করেন। নিজ বিভাগের অধীনে প্রতিষ্ঠানগুলোকে নতুন করে ঢেলে সাজাচ্ছেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বর্তমানে ১১৯টি দেশের নাগরিকরা ই-পাসপোর্ট ব্যবহার করছেন। বাংলাদেশও সেই পথেই হাঁটছে। ২০১৮ সালের ১৯ জুলাই বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, বীর মুক্তিযোদ্ধা আসাদুজ্জামান খাঁন কামালের উপস্থিতিতে জি টু জি পদ্ধতিতে বাংলাদেশে ই-পাসপোর্ট চালুর বিষয়ে জার্মানির সরকারি প্রতিষ্ঠান ভেরিডোস জেএমবিএইচের সঙ্গে ই-পাসপোর্ট ও স্বয়ংক্রিয় বর্ডার কন্ট্রোল ব্যবস্থাপনা প্রবর্তন শীর্ষক প্রকল্পের চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।

এই বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিব মো. শহিদুজ্জামান বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দক্ষ ও গতিশীল নেতৃত্বে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। মানুষের আর্থ সামাজিক অবস্থা দিন দিন ভালো হচ্ছে। ফলে প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমরাও সর্বাধুনিক ইলেকট্রনিক পাসপোর্টে চলে যাচ্ছি। দেশকে উন্নত বিশ্বের কাতারে নিয়ে যেতে আমাদের সবধরণের প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘পাসপোর্ট পেতে এখন আর সাধারণ মানুষের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে না। মানুষ যেন দ্রুত সময়ের মধ্যে সেবা পায় এবং জনগণের দৌরগোড়ায় যাতে সহজে পৌঁছে আমরা সেই চেষ্টাই করে যাচ্ছি।’

সুরক্ষা সেবা বিভাগ সূত্র জানায়, চুক্তি অনুযায়ী জিটুজি প্রকল্পের আওতায় জার্মানের ভেরিডোস কোম্পানি ৩ কোটি ইলেকট্রনিক পাসপোর্ট বুকলেট সরবরাহ করবে। ঢাকার উত্তরায় বুকলেটের জন্য একটি অ্যাসেম্বলি কারখানা স্থাপন করা হয়েছে। যাতে বুকলেটের খরচ অর্ধেকেরও কম হবে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিব মো. শহিদুজ্জামান বলেন, ‘ই-পাসপোর্ট একটি পরীক্ষিত, নিরাপদ ও ঝুঁকিমুক্ত ভ্রমণ দলিল। বাংলাদেশ পাসপোর্টের নিরাপত্তা বৃদ্ধি এবং বহির্বিশ্বের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সর্বশেষ উন্নত প্রযুক্তি সম্পন্ন পাসপোর্ট ইস্যুর উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে বাংলাদেশে ই-পাসপোর্ট প্রবর্তনের লক্ষ্যে ওই প্রকল্পের  চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।

তিনি বলেন, ই-পাসপোর্টের ডাটাপেইজে রক্ষিত মাইক্রোপ্রসেসর চিপে পাসপোর্ট আবেদনকারীর সকল তথ্য, স্বাক্ষর, ছবি, চোখের কর্ণিয়া এবং ফিঙ্গারপ্রিন্ট সিল্ড অবস্থায় সুরক্ষিত থাকে। যা কোনভাবেই পরিবর্তন করা সম্ভব হয় না।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিব মো. শহিদুজ্জামান বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে ২০ লাখ পাসপোর্ট জার্মানি থেকে প্রিন্ট করিয়ে সরবরাহ করা হবে। বাকি ২ কোটি ৮০ লাখ পাসপোর্ট বাংলাদেশে যন্ত্রপাতি স্থাপন করে প্রিন্ট করা হবে। ই পাসপোর্ট হবে ৩৪ ও ৬৮ পৃষ্ঠার। মেয়াদ হবে ৫ ও ১০ বছর। এ পাসপোর্টে ৩৮ ধরণের নিরাপত্তা ফিচার থাকবে। এমআরপি ডাটাবেজে তথ্যসমূহ ই-পাসপোর্টে স্থানান্তর করা হবে।’

প্রধানমন্ত্রী ফায়ার সার্ভিসকে আধুনিক ও শক্তিশালী করার উদ্যোগ
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে দীর্ঘদিন যাবত ফায়ার সার্ভিসের সক্ষমতা বাড়ানোর উদ্যোগের বাস্তবায়ন চলছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিব মো. শহিদুজ্জামান।

তিনি বলেন, আধুনিক বিশ্বের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে প্রধানমন্ত্রী ফায়ার সার্ভিসের আধুনিকায়ন নিশ্চিত করেছেন। উন্নয়ন-অগ্রযাত্রার দৌলতে তিনি ফায়ার সার্ভিসকে অনেক ওপরে নিয়ে যাচ্ছেন।

‘ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের জনবলকে আরও দক্ষ করে তুলতে ফায়ার সার্ভিসের একটি বিশ্বমানের একাডেমি তৈরি হবে। যার নামকরণ করা হবে ইতিহাসের মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে। এই বিষয়ে ইতোমধ্যেই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দিয়েছেন এবং আমাদের কার্যক্রম এগিয়ে চলেছে’ যোগ করেন এ সচিব।

শহিদুজ্জামান বলেন, ‘আধুনিক যন্ত্রপাতি এবং উদ্ধার সরঞ্জাম দিয়ে ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স অধিদফতরকে আরও সমৃদ্ধ ও শক্তিশালী করার কাজ চলছে। এখন সারা দেশে ৪১৪টি ফায়ার স্টেশন চালু রয়েছে।

চলতি বছরের জুনের মধ্যে ৫৬৭টি ফায়ার স্টেশন স্থাপন কাজ সম্পন্ন হবে। প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ২০২২ সালে ৭০৯ টি ফায়ার স্টেশন তৈরি করার লক্ষ্যে নিয়ে সরকার কাজ করছে।’

ফায়ার সার্ভিসের সেই স্লোগানের রচয়িতা
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিব মো. শহিদুজ্জামান প্রায় ৯ বছর আগে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। প্রাকৃতিক ও মানবসৃষ্ট দুর্যোগে প্রকৃত বন্ধু হিসেবে ফায়ার সার্ভিসের স্লোগান ‘দুর্ঘটনা দুর্যোগে, সবার আগে, সবার পাশে’ নির্ধারণ করেছিলেন তিনি। ২০০৮ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত ছিলেন এই দায়িত্বে।

তিনি জানান, ওই সময় সারাদেশে ফায়ার স্টেশনের সংখ্যা ছিল ১৯২টি। কিন্তু শেখ হাসিনা সরকার গঠনের পর আমাদের ফায়ার স্টেশন সংখ্যা ৪১৪টি। প্রধানমন্ত্রীর হাত ধরেই এই আমুল পরিবর্তনের সূচনা হয়েছে।

ফায়ার সার্ভিসকে উন্নত এবং আধুনিক বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে যন্ত্রপাতি ও প্রশিক্ষণের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সদা সর্বদা তাঁর হাতকে প্রসারিত করেছেন। এজন্য আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাই। ধন্যবাদ জানাই আমাদের মাননীয় মন্ত্রিপরিষদের সদস্যদেরকে।

মেনে চলতে হবে ভবন নির্মাণ নীতিমালা
ভবন নির্মাণ নীতিমালা মেনে চলার আহ্বান জানিয়ে সুরক্ষা সেবা বিভাগের এ সচিব বলেন, ‘সবাইকে ভবন নির্মাণ নীতিমালা মানার মানসিকতা থাকতে হবে। আমরা ফায়ার সার্ভিসের সক্ষমতা বৃদ্ধি করছি। ভবন নির্মাণের নীতিমালা লঙ্ঘন করলে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। নিজেদের নিরাপত্তার জন্য সবারই উচিত ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স অধিদফতরের অনুমোদন ও ভবন নির্মাণ নীতিমালা মেনে চলা।’

কালের আলো/কেএএই/এমএএএমকে