এসএ গেমসে পদক জয়ী তারকাদের মিলনমেলা, ‘ক্রীড়াবান্ধব’ প্রধানমন্ত্রীর প্রশংসায় সেনাপ্রধান
প্রকাশিতঃ 10:08 pm | January 21, 2020
বিশেষ সংবাদদাতা, কালের আলো :
তারুণ্যে রাজপথে মিছিল আর পরিপূর্ণ রাজনীতিক হওয়ার আগে ফুটবল নিয়ে দুরন্তপনায় মেতে থাকতেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। প্রতিযোগিতামূলক ফুটবলের আসরে যেমন শিরোপা জিতেছেন তেমনি স্বাধীন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি হয়েও খেলোয়াড়দের উৎসাহ-অনুপ্রেরণা দিয়েছেন।
ঠিক যেন তাঁর মতোই বঙ্গকন্যা শেখ হাসিনা। খেলাধুলার প্রতি প্রধানমন্ত্রীর আগ্রহ আর উৎসাহের কমতি নেই। বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের খেলা থাকলে সময় করে এখনও টেলিভিশনের সামনে বসেন। কোনো গেমসে বাংলাদেশের কোনো অ্যাথলেট পদক জিতলে সবার আগে শুভেচ্ছা জানান তাকে।
কৃতি ফুটবলার বঙ্গবন্ধু আর ক্রীড়াপ্রেমী প্রধানমন্ত্রীর এমন গুণের কথাই যেন উচ্চারণ করলেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ।
বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের (বিওএ) এই সভাপতি সাউথ এশিয়ান (এসএ) গেমসে পদকজয়ী তারকাদের প্রতিশ্রুত আর্থিক পুরস্কার তুলে দিয়ে দেশের ক্রীড়াঙ্গণকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে প্রধানমন্ত্রীর অবদানের কথা স্মরণ করেছেন।
এসএ গেমসের সব শাখায় সাফল্য অর্জন করে দেশের জন্য অনন্য গৌরব বয়ে আনা আরচার রোমানা সানা ও সোহেল রানাদের প্রদান করা অর্থও যে সরকার থেকে পাওয়া এই বিষয়টিও তিনি উল্লেখ করেছেন স্বাচ্ছন্দ্যে।
ক্রীড়াবীদদের এই মিলমেলায় বিওএ সভাপতি বলেছেন, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান খেলাধুলাকে ভালোবাসতেন। তার কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও ক্রীড়াবান্ধব।
প্রধানমন্ত্রী ক্রীড়াঙ্গনে অনেক সহযোগিতা করছেন। এসএ গেমসের যাবতীয় অর্থ সরকার থেকে দিয়েছে। এসএ গেমসের ক্যাম্পে ক্রীড়াবিদরা ডেঙ্গু আক্রান্ত হলে বিওএ তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ নিয়েছে।’
সোমবার (২০ জানুয়ারি) রাতে রাজধানীর কুর্মিটোলা গলফ ক্লাবে নেপালের কাঠমান্ডু ও পোখরায় অনুষ্ঠিত সাউথ এশিয়ান (এসএ) গেমসে পদকজয়ীদের বাংলাদেশ অলিম্পিক এ্যাসোসিয়েশনের (বিওএ) আর্থিক পুরস্কার ও সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে এভাবেই তিনি উপস্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বদলে যাওয়া সময়ের স্রোতধারায় সাফল্যের পাল তুলে এগিয়ে যাওয়া দেশের ক্রীড়াঙ্গণের নেপথ্য কথা।
দুরন্ত, আমুদে, হাসিখুশি, মিশুক, সদা প্রাণচঞ্চল আরচার রোমান সানা, ইতি খাতুন, সোহেল রানা, তামিমুল ইসলাম, ভারোত্তোলক মাবিয়া আক্তার সীমান্ত কে ছিলেন না এই অনুষ্ঠানে?
জিয়ারুল ইসলাম, ফেন্সার ফাতেমা মুজিব, তায়কোয়ান্দোকা দিপু চাকমা, কারাতেকা হুমায়রা আক্তার অন্তরা, মারজান আক্তার পিয়া ও আল আমিন সবাই সমবেত হয়েছিলেন এক ছাদের নিচে।
কুর্মিটোলা গলফ ক্লাবে বাংলাদেশ অলিম্পিক এসোসিয়েশনের জমকালো এই আয়োজনে রীতিমতো যেন এক মিলনমেলাই বসে যায়। গর্বিত সব ক্রীড়াবীদদের একত্রে পেয়ে স্বভাবতই উৎফুল্ল ছিলেন বিওএ’র সভাপতি জেনারেল আজিজ আহমেদ।
আর হবেনই বা না কেন? রোমানা, ফাতেমা, তামিমুলরাই বিশ্বের বুকে উঁচিয়ে ধরেছে লাল-সবুজের পতাকা। এসএ গেমসের ইতিহাসে এবারই প্রথম সর্বোচ্চ ১৯টি স্বর্ণপদক নিয়ে এসেছেন বাংলাদেশের জন্য। উজ্জ্বল আলোর রোশনাইয়ে ভরে দিয়েছেন টেকনাফ টু তেঁতুলিয়ার অলিগলি।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, এসএ গেমসের এই আসরে লাল-সবুজের ক্রীড়াবীদরা ৩২টি রুপা ও ৮৫টি ব্রোঞ্জপদকও জিতেছেন। ফলে ক্রীড়াবিদদের প্রায় ৩ কোটি ৪৩ লাখ টাকার আর্থিক পুরস্কার প্রদান করা হয়েছে। এছাড়া ক্রীড়াবিদদের আর্থিক পুরস্কারের দশভাগ অর্থ পুরস্কার পেয়েছেন সংশ্লিষ্ট ডিসিপ্লিনের কোচরা।
যার পরিমাণ ৩৪ লাখ ৩০ হাজার টাকা। এই অর্থ ক্রীড়াবিদদের বরাদ্দের বাইরে আলাদা করে দিচ্ছে বিওএ। দলগত স্বর্ণজয়ী ক্রীড়াবিদদের প্রত্যেকে ১ লাখ টাকা, রুপা জয়ীরা ৫০ হাজার এবং ব্রোঞ্জজয়ীদের ৩০ হাজার টাকা করে প্রদান করা হয়েছে।
বাংলাদেশ অলিম্পিক এসোসিয়েশনের অর্থ পুরস্কার পেয়ে উচ্ছ্বসিত ক্রীড়াবীদরাও। কৃতি এই ক্রীড়াবীদদের পক্ষে অনুষ্ঠানে সেই কথাই বলেছেন সাউথ এশিয়ান গেমসে কারাতের কুমি অনূর্ধ্ব-৫৫ কেজিতে সোনাজয়ী মারজানা আক্তার পিয়া।
‘বিওএ আমাদের প্রতিবারের মতো এবারও সংবর্ধিত করছে। আমাদের গর্ব দেশের প্রধানমন্ত্রী থেকে সবাই ক্রীড়াপ্রেমী। আশা করি বিওএ অভিভাবক হিসেবেই আমাদের পাশে থাকবে’। তাঁর সঙ্গে যেন তখন কন্ঠ মেলান রোমান সানা, সোহেল রানারা।
এসএ গেমস শুরুর আগে বাংলাদেশ দলের ক্রীড়াবিদদের উৎসাহ যোগাতে এমন পুরস্কারের ঘোষণা দিয়েছিল বাংলাদেশ অলিম্পিক এসোসিয়েশন। কথা থেকে সরে আসেনি তাঁরা।
বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বিভিন্ন ডিসিপ্লিনের পদকজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দিয়েছেন বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের (বিওএ) সভাপতি ও সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ।
এ সময় বিওএ’র মহাসচিব সৈয়দ শাহেদ রেজাসহ অন্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এমপি সময়স্বল্পতার জন্য আসতে পারেননি। অসুস্থ থাকায় অনুষ্ঠানে যোগ দিতে পারেননি যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল এমপি।
সেনাপ্রধান সবাইকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, ‘আজকের এই সাফল্যের অধিকারী খেলোয়াড় এবং যারা তাদের তৈরি করেছেন তাদেরকেও অভিনন্দন জানাই।’
বিওএ’র মহাসচিব সৈয়দ শাহেদ রেজা বলেন, ‘এই সাফল্যের রূপকার ক্রীড়াবিদ, কোচ ও কর্মকর্তা সবাই। সবার অক্লান্ত পরিশ্রমেই এই সাফল্য এসেছে। ভবিষ্যতে আরও সাফল্য এলে অর্থ পুরস্কার বাড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করব আমরা।’
কালের আলো/এমসি/এমএএএমকে