হঠাৎ মেয়রের নামে মামলা’র কারণ, প্রশ্ন নেপথ্য কুশীলবদের নিয়েও

প্রকাশিতঃ 10:38 am | May 12, 2018

বিশেষ প্রতিবেদক, কালের আলো :

ইউনিয়ন পরিষদের ভূমি হস্তান্তর করের টাকা পৌরসভার ব্যাংক হিসাবে কেটে নেয়ার মামলায় টাকার পরিমাণ উল্লেখ করা হয়েছে ১ কোটি ৮২ লাখ ৪ হাজার ৫৮৩। কিন্তু স্থানীয় সরকার বিভাগের নির্দেশ পাওয়ার পর পরই পৌরসভা পরিশোধ করেছে ৫০ লাখ টাকা। কিন্তু টাকার অঙ্ক না কমিয়ে ‘ভুল’ তথ্য দিয়েই আদালতে দায়ের করা হয়েছে মামলা।

চার দিন আগে দায়ের করা এ মামলার বাদী আবার পৌরসভার গাড়ি ভাংচুর মামলার আসামি মোর্শেদুল আলম জাহাঙ্গীর। এ ইউপি চেয়ারম্যানের মামলার আড়ালের নেপথ্য কুশীলবরা পৌরসভার প্রায় ৫ কোটি টাকা মূল্যের ৬০ শতাংশ জমি ইতোপূর্বেই জোরপূর্বক দখল করে প্রভাবশালী এক রাজনীতিকের সন্তানের নামে স্কুল করেছে। দখলবাজির এ ঘটনায় পৌর কর্তৃপক্ষ মামলাও করেছে।

এসব ঘটনার জেরেই হঠাৎ করেই ময়মনসিংহ পৌরসভার মেয়র মো: ইকরামুল হক টিটু, পৌরসভার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা তরিকুল আলম ও সাবেক সাব রেজিষ্ট্রার সাইফুল ইসলামের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে।

গত ক’দিন যাবত জেলার রাজনৈতিক অঙ্গণে তোলপাড় সৃষ্টি করা এ মামলার নেপথ্য কারণ সম্পর্কে এভাবেই বলছিলেন পৌরসভার প্যানেল মেয়র-২ নজরুল ইসলাম। বুধবার (০৯ এপ্রিল) সকালে এ প্রতিবেদকের কাছে উল্টো এসব অভিযোগ করেন তিনি।

ময়মনসিংহ পৌরসভার প্রশাসনিক শাখার একটি সূত্র জানায়, ২০১৬ সালের পহেলা সেপ্টেম্বরের গেজেট অনুযায়ী পৌরসভার সীমানা বর্ধিত হওয়ায় সদরের বেশ ক’টি ইউনিয়নের ভূমি হস্তান্তর করের শতকরা এক ভাগ টাকা পৌরসভার হিসাবে ১ কোটি ৮২ লাখ ৪ হাজার ৫৪৩ টাকা ৯৬ পয়সা জমা দেয় সদর সাব রেজিষ্ট্রি অফিস।

২০১৭ সালের ১২ জুন পর্যন্ত ২৭০ দিনে পৌরসভার হিসাবে এ টাকা জমা প্রদান করা হয়। এ টাকাকে রাজস্ব আয় ধরে সরকারি বিধি মোতাবেক পৌরসভা নাগরিক সেবা নিশ্চিতসহ দৈনন্দিন কাজে ব্যয় করে।

কিন্তু এ টাকা ইউনিয়ন পরিষদ না পৌরসভা পাবে এ বিষয়টি সুস্পষ্ট করতে স্থানীয় সরকার বিভাগে চিঠি দেয়া হয়। পরবর্তীতে স্থানীয় সরকার বিভাগ সিটি করপোরেশনের চূড়ান্ত গেজেট প্রকাশের আগে ওই টাকা উপজেলা পরিষদের তহবিলে জমা দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়।

পৌর কর্তৃপক্ষ দুই ধাপে ইতোমধ্যেই ৫০ লাখ টাকা পরিশোধ করেছে। বাদ বাকী টাকাও পর্যায়ক্রমে পরিশোধ করা হবে। কিন্ত তা সত্ত্বেও গত রোববার (০৬ মে) ১ নং আমলী আদালতে দায়ের করা এ মামলায় এসব তথ্য গোপন করা হয়েছে এবং পরিশোধকৃত টাকা পাওনার অঙ্ক থেকে বিয়োগও করা হয়নি বলে অভিযোগ করেন পৌরসভার একাধিক কাউন্সিলর।

ময়মনসিংহ পৌরসভার দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা বলেন, অভিযোগপত্রে বাদী দাবি করেছেন গত পহেলা এপ্রিল তিনি তিনজন বিবাদীর উপস্থিতিতে প্রাপ্ত অর্থ প্রদানের অনুরোধ করেন এবং বিবাদীরা টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানান।

এক্ষেত্রেও ‘ভুল’ তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে। ৩ নং বিবাদী সাব রেজিষ্ট্রার আরো বছরখানেক আগেই বদলী হয়েছেন। মেয়র ময়মনসিংহের বাইরে ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা খাগড়াছড়িতে ওয়ার্কশপে ছিলেন।

ময়মনসিংহ জেলা নাগরিক আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী নুরুল আমিন কালাম বলেন, মেয়র টিটু’র জনবান্ধব ভাবমূর্তি রয়েছে। কিন্তু তার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ রয়েছে। তাদের তুষ্ট করতেই হয়তো এ মামলা করা হয়েছে।

ময়মনসিংহ চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাষ্ট্রির পরিচালক শঙ্কর সাহা বলেন, রাজনীতিতে মেয়রের জনমত তুঙ্গে থাকায় তাঁর ইমেজহানি করতেই একটি মহলের অঙ্গুলী হেলনে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে মামলা দায়ের করা হয়েছে।

মেয়র টিটু’র সংবাদ সম্মেলন
এদিকে, ময়মনসিংহ পৌরসভার জনপ্রিয় মেয়র মো: ইকরামুল হক টিটু’র বিরুদ্ধে মনগড়া, ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে মামলা দায়েরের ঘটনায় সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার বিকেলে পৌরসভা মিলনায়তনে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে মেয়র মো: ইকরামুল হক টিটু বলেন, আত্নসাতের অভিযোগটি সম্পূর্ণ মিথ্যা, ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। নির্ধারিত ব্যাংক হিসাবে জমাকৃত অর্থ পৌরসভার বাজেটভুক্ত করে বিধি সম্মতভাবে পৌরসভার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতনভাতা, শ্রমিকের মজুরিসহ দৈনন্দিন ব্যয় ও উন্নয়ন কর্মকান্ডের ব্যয় যৌথ স্বাক্ষরে চেকের মাধ্যমে ব্যয় হয়েছে। এটি নিরীক্ষা কার্যালয় দ্বারা নিরীক্ষিত হয়েছে।

তিনি বলেন, আমার জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়ে এ মামলার মাধ্যমে ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের অপচেষ্টা করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে পৌরসভার প্যানেল মেয়র মো: নজরুল ইসলাম, ওয়ার্ড কাউন্সিলর ফারুক হাসান, মাহাবুবুর রহমান দুলাল প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

কালের আলো/এমকে/ওএইচ