পদ্মা সেতুর চতুর্থ স্প্যান জাজিরায়, বসানো হবে চলতি মাসেই

প্রকাশিতঃ 5:05 pm | May 12, 2018

বিশেষ প্রতিবেদক, কালের আলো:

৫০ মিটার দীর্ঘ পদ্মা সেতুর পদ্মা চতুর্থ স্প্যানটি শরিয়তপুরের জাজিরা প্রান্তে চলে গেছে। এটি ১৪ বা ১৫ মের মধ্যে বসানো হবে। এর আগে ২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর ৩৭ ও ৩৮ নম্বর খুঁটিতে প্রথম স্প্যানটি বসানোর মধ্য দিয়ে দৃশ্যমান হয় পদ্মা সেতু।

সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে রোববার (১৩ মে) সকাল থেকে ৪০ ও ৪১ নম্বর পিলারের ওপর স্প্যান বসানোর কার্যক্রম শুরু করবেন বলে জানিয়েছেন প্রকৌশলীরা।

পদ্মা সেতু প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক শফিকুর রহমান শনিবার এ তথ্য জানিয়েছেন।

বহুল আলোচিত পদ্মা সেতু প্রকল্পটির যাত্রা শুরু হয় ২০০৭ সালে। সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকার ওই বছরের ২৮ আগস্ট ১০ হাজার ১৬১ কোটি টাকার প্রকল্প পাস করেছিল। পরে আওয়ামী লীগ সরকার এসে রেলপথ সংযুক্ত করে ২০১১ সালের ১১ জানুয়ারি প্রথম দফায় সেতুর ব্যয় সংশোধন করে।

পদ্মা সেতু প্রকল্পসংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, কুমারভোগ কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ডে প্রস্তুত করার পর শনিবার সকালে ভাসমান ক্রেন দিয়ে ধূসর রঙের স্প্যানটি জাজিরায় পাঠানোর কাজ শুরু হয়। দুপুর ১২টার দিকে ক্রেনটি ৩২ নম্বর খুঁটির কাছাকাছি অবস্থান করছিল। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে ১৪ বা ১৫ মে স্প্যানটি বসানোর কাজ সম্পন্ন হবে।

এরপর এ বছরের ২৮ জানুয়ারি ৩৮ ও ৩৯ নম্বর খুঁটিতে বসানো হয় দ্বিতীয় স্প্যান। সবশেষ গত ১১ মার্চ ৩৯ ও ৪০ নম্বর খুঁটির ওপর বসে তৃতীয় স্প্যান।

স্প্যানটি ৪০ ও ৪১ নম্বর পিলারের (খুঁটি) ওপর বসানো হলে পদ্মা সেতুর ৬০০ মিটার দৃশ্যমান হবে।

পদ্মা সেতুর প্রকল্পের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, মাওয়ার কুমারভোগ কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ডে আরও ১৬টি স্প্যান প্রস্তুত রয়েছে। এগুলোর ওপর রং দেয়ার কাজ চলছে। একইভাবে পদ্মা নদীর ওপর খুঁটির নির্মাণকাজও পুরোদমে চলছে। আগের পাঁচটি খুঁটিসহ আগামী দুই মাসের মধ্যে মোট ১৮টি খুঁটি দৃশ্যমান করা সম্ভব হবে।

পদ্মা সেতু সূত্রে জানা গেছে, মাওয়া প্রান্তে ২, ৩, ৪ ও ৫ নম্বর খুঁটি এবং মাঝনদীতে ১৩, ১৪, ১৬, ১৭, ১৮, ২০, ২১, ২২, ২৩ খুঁটির মধ্যে কোনোটির একটি ঢালাই বাকি রয়েছে। কোনো কোনো খুঁটির আবার দুটি ঢালাইয়ের কাজ বাকি রয়েছে। এ ছাড়া ৪২ নম্বর খুঁটির নির্মাণকাজও শেষের পথে।

গত মার্চ মাসে পদ্মা সেতু প্রকল্পের ২২টি খুঁটির সমস্যা পুরোপুরি সমাধান করা হয়। নদীর ওপরে থাকা ৪০টি পিলারের মধ্যে ২২টির নকশা পরিবর্তন করা হয়। এসব নকশা মূল সেতুর ঠিকাদার চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন কোম্পানির কাছে পাঠানো হয়েছে। তাই ২০১৯ সালেই পুরো পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ শেষ করা যাবে বলে জানান বিশেষজ্ঞরা। নদীর তলদেশের গভীরে নরম মাটির স্তর থাকায় সেতুর ১৪টি খুঁটির নকশা চূড়ান্ত করা যাচ্ছিল না।

পদ্মার তলদেশে নরম মাটির কারণে ১৪টি খুঁটি নিয়ে চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি হয়। আরও ৮টি খুঁটিতে কিছুটা সমস্যা দেখা দেয়। বিশেষজ্ঞরা সেতুটির দীর্ঘস্থায়িত্বের বিষয়টি বিবেচনা করে পুরো ২২টি খুঁটিরই নতুন ডিজাইন পরিবর্তন করেছেন। পদ্মা সেতু প্রকল্পের দায়িত্বশীল প্রকৌশলীরা এসব তথ্য জানিয়েছেন।

মূল সেতুর দৈর্ঘ্য (পানির অংশের) ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার। ডাঙার অংশ ধরলে সেতুটি প্রায় নয় কিলোমিটার দীর্ঘ হবে। খুঁটির ওপর ইস্পাতের যে স্প্যান বসানো হবে, এর ভেতর দিয়ে চলবে ট্রেন। আর ওপর দিয়ে চলবে যানবাহন। পুরো সেতুতে মোট খুঁটির সংখ্যা হবে ৪২। একটি থেকে আরেক খুঁটির দূরত্ব ১৫০ মিটার। এই দূরত্বের লম্বা ইস্পাতের কাঠামো বা স্প্যান জোড়া দিয়েই সেতু নির্মিত হবে। ৪২টি খুঁটির ওপর এ রকম ৪১টি স্প্যান বসানো হবে। এর মধ্যে তিনটি স্প্যান বসানোর কাজ শেষ হয়েছে।

কালের আলো/এসএসকে