নিখাদ আনন্দে প্রধানমন্ত্রী, ‘সাহসের বাতিঘর’ উজ্জীবিত করলেন আনসার বাহিনীকে
প্রকাশিতঃ 9:55 pm | February 13, 2020
বিশেষ সংবাদদাতা, কালের আলো :
নিজের বাবার হাতে গড়া বাংলাদেশকে নিজের নেতৃত্বের ছোঁয়ায় বদলে দিয়েছেন। উন্নয়নের সব সূচকেই তরতরিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে দেশ। মহান জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আরাধ্য কাজ বাস্তবায়ন করছেন নিরলসভাবে, দক্ষতার সঙ্গে। যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়েই আধুনিকায়ন করছেন বাংলাদেশের প্রতিটি বাহিনীকে।
আরও পড়ুন: প্রধানমন্ত্রীর আন্তরিকতায় অবহেলার বৃত্ত থেকে বেরিয়ে আসছে আনসার বাহিনী
সেই ধারাবাহিকতায় ৬১ লাখ সদস্যের বিশাল বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীকেও পাল্টে দিয়েছেন। এই বাহিনীর প্রতিটি প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানেই নিখাদ আনন্দে মেতে উঠেন প্রধানমন্ত্রী। বাহিনীটির ৩৯ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে নিজের ভবিষ্যত জীবনের সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছিলেন। বলেছিলেন, ‘আমার অবসর জীবন কাটবে টুঙ্গিপাড়ায়।’
বৃহস্পতিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) সকালে বাংলাদেশ আনসার ও ভিডিপি একাডেমি, সফিপুরে বাংলাদেশ আনসার ও ভিডিপি’র ৪০ তম জাতীয় সমাবেশেও সৃষ্টিসুখের উল্লাসে যেন অন্য রকম একদিন কাটিয়েছেন। নিজের সুগভীর প্রজ্ঞা, দক্ষতা ও দূরদৃষ্টির মিশেলে নিজের অনবদ্য ভাষণে দেশের গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক পর্বে বরাবরই গৌরবময় অবদান রাখা এই বাহিনীর সদস্যের উজ্জীবিত করেছেন।
আরও পড়ুন: সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ নির্মূলেও আনসার সদস্যরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে : প্রধানমন্ত্রী
সাহসের এই বাতিঘর দেশকে এগিয়ে নিতে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের কথা ও তাঁর সরকারের মিশন-ভিশনও তুলে ধরেছেন সুনিপুণ দক্ষতায়। অন্যরকম নতুনত্ব ও স্বকীয়তায় ভাস্বর এই ভাষণ তাৎপর্যপূর্ণ এবং অনুপ্রেরণা সঞ্চারী।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আনসার ও ভিডিপি সদস্যদের পরিবেশনায় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতি অনুষ্ঠান যেমন উপভোগ করেছেন তেমনি তাদের দরবারেও যোগ দিয়েছেন। আনসার সদস্যদের উদ্যোগে কুটির শিল্পের স্টল ঘুরে ঘুরে দেখেছেন; কথা বলেছেন প্রাণখুলে।
সবাইকে নিয়ে কেক কেটেছেন। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে তন্ময় হয়ে উপভোগ করেছেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সংগ্রামী জীবন ও কর্ম তুলে ধরা নাটিকা, গীতিনাট্য এবং গম্ভীরা।
তিনি আনসার ও ভিডিপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে আনসার একাডেমি প্রাঙ্গনে একটি গাছের চারা রোপন করেন। ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন ও ভৌত অবকাঠামোর উদ্বোধন করেন বঙ্গবন্ধু স্পোর্টস কমপ্লেক্সের।
প্রতিটি ক্ষণে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব মোস্তাফা কামাল উদ্দীন, বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল কাজী শরীফ কায়কোবাদ ও স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্সের (এসএসএফ) মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মজিবুর রহমান।
এর আগে সকালে প্রধানমন্ত্রী সমাবেশস্থলে এসে পৌঁছলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব মোস্তাফা কামাল উদ্দীন এবং বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল কাজী শরীফ কায়কোবাদ তাঁকে অভ্যর্থনা জানান।
প্রধানমন্ত্রীকে বর্ণাঢ্য কুচকাওয়াজ থেকে অভিবাদন জানানো হয়। প্রধানমন্ত্রী একটি সুসজ্জিত খোলা জিপে চড়ে প্যারেড পরিদর্শন এবং অভিবাদন গ্রহণ করেন।
দৃষ্টান্তমূলক কাজের স্বীকৃতি হিসেবে এই বছর ৮টি ক্যাটাগরিতে ১৪৩ জন আনসার ও ভিডিপি সদস্যের মধ্যে ‘সেবা’ ও ‘সাহসিকতা’ পদক প্রদান করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি অনুষ্ঠানে প্রয়াত আনসার সদস্য গোলাম মোস্তফার সহধর্মিনীর হাতে তাঁর (গোলাম মোস্তফা) মরণোত্তর পদক তুলে দেন।
নিজের ভাষণে প্রধানমন্ত্রী আনসার ও ভিডিপি’র প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর সাহসিকতা ও কর্মদক্ষতা বর্তমানে সর্বজন স্বীকৃত। আনসার ও ভিডিপি বাহিনীকে উন্নয়ন কাজে আরও সম্পৃক্ত করার পরিকল্পনা আমাদের রয়েছে। আপনারা আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করে যাবেন, আমি সে আশাই করছি।’
প্রধানমন্ত্রী স্মরণ করে বলেন, ‘এই বাহিনীর গর্বিত সদস্য ভাষা শহিদ আনসার কমান্ডার আব্দুল জব্বার ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি মাতৃভাষার জন্য জীবন বিসর্জন দেন। এই বাহিনীর ১ হাজার ২২৯ বীর সদস্য ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল মেহেরপুরের আম্রকাননে বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকার প্রধানকে গার্ড অব অনার প্রদান করেন।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষকে স্মরণীয় করে রাখতে ২০২০-২০২১ সালকে তাঁর সরকার ঘোষিত ‘মুজিববর্ষ’ হিসেবে উদযাপনে বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর পক্ষ থেকে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করায় প্রধানমন্ত্রী তাঁদেরকে ধন্যবাদ জানান।
১১ বছরে সরকারের ধারাবাহিক উন্নয়ন
দেশের জনগণের উন্নয়নের সরকারের নেয়া বিভিন্ন জনকল্যাণমূলক কর্মসূচির প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘উন্নয়নশীল দেশের কাতারে আমরা প্রবেশ করেছি। সম্প্রতি বিশ্বের ৪১তম অর্থনীতির দেশ হিসেবে আর্ন্তজাতিক স্বীকৃতি পেয়েছে বাংলাদেশ। এসবই গত এগার বছরে আমাদের সরকারের ধারাবাহিক উন্নয়নের ফলে সম্ভব হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘মাথাপিছু আয়, জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ও শিক্ষার হার বৃদ্ধি পেয়েছে এবং দারিদ্র্যের হার আগের তুলনায় অনেক কমে এসেছে। দেশের ৯৬ শতাংশ মানুষ এখন বিদুৎ সুিবধার আওতায় এসেছে এবং ‘মুজিববর্ষে’ দেশের প্রত্যেক ঘরে ঘরে বিদ্যুতের আলো জ্বালাই সরকারের লক্ষ্য।’
সরকার প্রধান বলেন,‘মহাকাশে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণ, পারমাণবিক বিদুৎ কেন্দ্র, মেট্রোরেল নির্মাণ, কর্ণফুলী টানেল স্থাপন – এ সবই আমাদের উন্নয়নের অগ্রযাত্রার বহি:প্রকাশ। এছাড়া নারী উন্নয়ন ও ক্ষমতায়নে বাংলাদেশ ঈর্ষণীয় সাফল্য অর্জন করেছে। এই উন্নয়ন অগ্রযাত্রাকে আমাদের ধরে রেখে আরো সামনে এগিয়ে যেতে হবে।’
অনুষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ.ক.মোজাম্মেল হক, যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ হাসান রাসেল, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ, বাংলাদেশ নৌ বাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল আওরঙ্গজেব চৌধুরী, বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল মাসিহুজ্জামান সেরনিয়াবাত, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কোয়ার্টার মাস্টার জেনারেল (কিউএমজি) লেফটেন্যান্ট জেনারেল শামসুল হক প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
কালের আলো/এমএএএমকে