‘যুগোপযোগী’ বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, ভবিষ্যত তালিকায় অ্যাটাক হেলিকপ্টার
প্রকাশিতঃ 3:56 pm | February 20, 2020
বিশেষ সংবাদদাতা, কালের আলো :
‘সেনাবাহিনীর কাছে সবার আগে দেশের সার্বভৌমত্ব’ বরাবরই সবিশেষ গুরুত্ব দিয়েই এমনটি বলেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ। দেশের সার্বভৌমত্বের প্রধান ঢাল হিসেবে পরিচিত দেশপ্রেমিক এই বাহিনীটিকে আধুনিক, যুগোপযোগী ও শক্তিশালী সেনাবাহিনী হিসেবে গড়ে তুলতে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
দিনবদলের পানসিতে চড়ে, সময়ের ঘূর্ণায়মান স্রোতে মহান মুক্তিযুদ্ধের সুমহান প্রক্রিয়ায় গড়ে উঠা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সামরিক সক্ষমতা বাড়ছে ক্রমশ; সেই সঙ্গে দক্ষতাও।
১৯৭৪ সালে প্রণীত জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অনুমোদিত বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা নীতির আলোকেই আধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন যুদ্ধ সরঞ্জাম সংগ্রহ করে বাড়ানো হচ্ছে সমর শক্তি।
এই প্রতিরক্ষা নীতি পুরোপুরি বাস্তবায়ন হলে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর আরও আধুনিকায়ন ও উন্নয়ন হবে বলেও আশা প্রকাশ করেন সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ। এরই ধারাবাহিকতায় প্রতিনিয়ত সেনাবাহিনীতে সংযোজন হচ্ছে আধুনিক যানবাহন, হেলিকপ্টার, সমরাস্ত্র ও সরঞ্জামাদি।
নতুন নতুন ট্যাংক, অরলিকন রাডার কন্ট্রোল্ড গান বা প্রশিক্ষণ বিমান কেনা হচ্ছে। মাস দুয়েক আগে সংযোজিত হয়েছে চারটি ডায়মন্ড ডিএ৪০এনজি প্রশিক্ষণ বিমান। পরিকল্পনা রয়েছে একটি কাসা বিমান কেনারও। আর ইতোমধ্যেই প্রক্রিয়া চলছে অ্যাটাক হেলিকপ্টার কেনারও।
মঙ্গলবারও (১৮ ফেব্রুয়ারি) টাঙ্গাইলের ঘাটাইল শহীদ সালাউদ্দিন সেনানিবাসে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৬টি ইউনিটের রেজিমেন্টাল কালার প্রদান অনুষ্ঠান শেষে গণমাধ্যমকর্মীদের প্রশ্নের জবাবে সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন, ‘আমাদের সেনাবাহিনীর জন্য, বিমান বাহিনীর জন্য অত্যাধুনিক অ্যাটাক হেলিকপ্টার প্রয়োজন।
আমরা অ্যাটাক হেলিকপ্টার কেনার জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। শিগগির যেকোন ধরনের অ্যাটাক হেলিকপ্টার আমাদের সেনাবাহিনীতেও আসবে’ যোগ করেন তিনি।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে আধুনিক ও উন্নত করার স্বপ্ন দেখতেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তার দূরদৃষ্টিসম্পন্ন প্রতিরক্ষা নীতি অনুসরণে ২০২১ সালের রূপকল্পের ধারাবাহিকতায় সরকারের ফোর্সেস গোল-২০৩০ এর আলোকেও সেনাবাহিনীর সাংগঠনিক কাঠামো বিন্যাস ও পরিবর্তনের পাশাপাশি আধুনিকায়নেও অনেক দূর এগিয়ে নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
নিজের সরকারের টানা তৃতীয় মেয়াদে সেনাবাহিনীর অবকাঠামোগত পরিবর্তনের পাশাপাশি ব্যাপক সক্ষমতাও বাড়িয়েছেন। এরই ধারাবাহিকতায় সেনাবাহিনীতে আর্মড ব্রিগেড, কম্পোজিট ব্রিগেড, প্যারা কমান্ডো ব্রিগেড ও পদাতিক ডিভিশন, ইনফ্যান্ট্রি ডিভিশন প্রতিষ্ঠাসহ অত্যাধুনিক অস্ত্রশস্ত্র ও সরঞ্জামাদিতে সজ্জিত করা হয়েছে।
স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেও বলেছেন, ‘অবকাঠামোগত, কৌশলগত এবং প্রযুক্তিগত দিক থেকে অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে অনেক বেশি উন্নত, স্বয়ংসম্পূর্ণ, চৌকস এবং পেশাগতভাবে দক্ষ এক বাহিনীতে পরিণত হয়েছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী।
কয়েক বছর আগে এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী একটি দক্ষ ও চৌকস সশস্ত্র বাহিনী গড়তে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবদানের কথা তুলে ধরে বলেছিলেন, ‘স্বাধীনতা উত্তর যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশের আর্থিক সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও তিনি গভীর প্রজ্ঞা ও দূরদৃষ্টি নিয়ে একটি আধুনিক সশস্ত্র বাহিনী গড়ে তোলার ঐকান্তিক প্রচেষ্টা ও উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন।’
সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রীর ভিশন ২০৩০-এর আলোকে আর্মি এভিয়েশনকে একটি অত্যাধুনিক সংস্থায় রূপান্তরিত করতে ইতোমধ্যেই কেনা হয়েছে স্পেনের তৈরি চতুর্থ প্রজন্মের একটি অত্যাধুনিক কাসা সি-২৯৫ সামরিক পরিবহন বিমান।
সংযোজিত হয়েছে রাশিয়ার তৈরি অত্যাধুনিক ৬টি এমআই ১৭১ এসএইচ হেলিকপ্টার এবং ফ্রান্সের তৈরি চতুর্থ প্রজন্মের দুইটি টকহীন হেলিকপ্টার।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান হিসেবে কর্মদক্ষতার সঙ্গে বলিষ্ঠ নেতৃত্বের অপূর্ব সমন্বয় ঘটানো জেনারেল আজিজ আহমেদও মঙ্গলবারও (১৮ ফেব্রুয়ারি) টাঙ্গাইলের ঘাটাইল শহীদ সালাউদ্দিন সেনানিবাসে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৬টি ইউনিটের রেজিমেন্টাল কালার প্রদান অনুষ্ঠানে সংবাদকর্মীদের বলেছেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে আমরা ভিশন ২০৩০ প্রণয়ন করেছি। এবং সেটার আঙ্গিকেই বাংলাদেশ সেনাবাহিনী আধুনিকায়নের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।’
তিনি বলেছেন, ‘আগামী দিনগুলোতে দেখবেন আরও অনেক অত্যাধুনিক সমরাস্ত্র আমাদের সেনাবাহিনীতে আসবে। কারণ জাতির পিতা স্বপ্ন দেখিয়ে গেছেন যে আমাদের এই সেনাবাহিনী একটি শক্তিশালী আধুনিক সমরাস্ত্রে সজ্জিত সেনাবাহিনী হবে।
এবং সেই ধারাবাহিকতায় আমাদের বর্তমান মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কাজ করে যাচ্ছেন এবং আমাদেরকে নানাভাবে সহায়তা করে যাচ্ছেন।’
‘বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এদেশের সম্পদ। মানুষের আশা-বিশ্বাসের মূর্ত প্রতীক। দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় সাংবিধানিক এবং পেশাগত দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি বাংলাদেশ সেনাবাহিনী দেশ গঠন ও নানা দুর্যোগ মোকাবেলায় বলিষ্ঠ ভূমিকা রেখে চলেছে’ নিজের প্রতিটি বক্তব্যেই একাধিকবার অমিত দৃঢ়তার সঙ্গেই এমনটি উচ্চারণ করেছেন সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ।
কালের আলো/এসআর/এমএএএমকে