আধুনিক সশস্ত্র বাহিনীর ‘রূপকার’ বঙ্গবন্ধু, বেড়েছে সেনাবাহিনীর আভিযানিক সক্ষমতা

প্রকাশিতঃ 8:07 pm | February 23, 2020

বিশেষ সংবাদদাতা, কালের আলো :

একটি আধুনিক, যুগোপযোগী ও শক্তিশালী সেনাবাহিনী যে কোনো দেশের জন্য অপরিহার্য বলে মন্তব্য করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। একই সঙ্গে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে তিনি আধুনিক সশস্ত্র বাহিনীর ‘রূপকার’ হিসেবেও উল্লেখ করেছেন।

আরও পড়ুন: যেকোন ত্যাগ স্বীকারে সেনাবাহিনীকে সবসময় প্রস্তুত থাকার আহ্বান রাষ্ট্রপতির

সেনাবাহিনীর নিজস্ব কার্যক্রমের পাশাপাশি জাতিগঠনমূলক কর্মকান্ডে নিজেদের নিয়োজিত রাখারও প্রশংসা করেন রাষ্ট্রপতি। বলেছেন, ‘নিজেদের কর্তব্যনিষ্ঠা ও পেশাদারিত্বের মাধ্যমে বিশ্ব পরিমন্ডলে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী দেশের ভাবমূর্তিকে উজ্জ্বল করেছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলাসহ ভোটার ডাটাবেজ তৈরি, সিভিল প্রশাসনকে সহায়তা প্রদান করে সেনাবাহিনী জনগণের সুনাম কুড়িয়েছে।

পেশাগত দক্ষতার কারণে দীর্ঘ প্রত্যাশিত পদ্মা সেতু নির্মাণের কাজ তদারকিসহ কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়ক প্রকল্প, হাতিরঝিল সমন্বিত উন্নয়ন প্রকল্প, বহদ্দারহাট ফ্লাইওভার নির্মাণ, মহিপাল ফ্লাইওভার নির্মাণ এবং থানচি-আলীকদম সড়ক নির্মাণের দায়িত্ব সেনাবাহিনীর ওপর ন্যস্ত করা হয়েছে।

বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় এবং বিভিন্ন বৈদেশিক মিশনে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদস্যরা তাদের কর্তব্যনিষ্ঠা ও পেশাদারিত্বের মাধ্যমে বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তিকে অত্যন্ত উজ্জ্বল করেছে। দেশ ও জাতির প্রয়োজনে ভবিষ্যতেও এভাবে জনকল্যাণমূলক কাজে সশস্ত্র বাহিনীকে অবদান রাখতে হবে।

রোববার (২৩ ফেব্রুয়ারি) বন্দর নগরী চট্টগ্রামের হালিশহর আর্টিলারি সেন্টার ও স্কুল প্রাঙ্গণে ১, ২, ৩ ফিল্ড ও ৩৮ এয়ার ডিফেন্স রেজিমেন্ট আর্টিলারির জাতীয় পতাকা প্রদান অন্ষ্ঠুানে কুচকাওয়াজ পরিদর্শন শেষে প্রধান অতিথির ভাষণে এসব কথা বলেন সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান।

পরিদর্শন বইয়ে স্বাক্ষর করছেন রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ। পাশেই উপস্থিত ছিলেন সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ।

এর আগে সকালে রাষ্ট্রপতি মো.আবদুল হামিদ প্যারেড গ্রাউন্ডে এসে পৌঁছালে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ তাকে স্বাগত জানান।

সরকার জাতির পিতা কর্তৃক প্রণীত প্রতিরক্ষা নীতির আলোকে ‘ফোর্সেস গোল-২০৩০’ বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে সেনাবাহিনীর সাংগঠনিক কাঠামো বিন্যাস ও পরিবর্তনের পাশাপাশি আধুনিকায়নের প্রক্রিয়া অব্যাহত রেখেছে বলেও জানান রাষ্ট্রপতি।

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অগ্রযাত্রার অংশ হিসেবে আর্টিলারি রেজিমেন্টের উন্নতি সাধনে নানাবিধ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। এরই মধ্যে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে তিনটি আর্টিলারি ব্রিগেড এবং একটি এয়ার ডিফেন্স আর্টিলারি ব্রিগেড তৈরি করা হয়েছে।

ইউনিটসমূহের যুদ্ধক্ষেত্রে সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য ফিল্ড গান, অত্যাধুনিক এয়ার ডিফেন্স গান, ক্ষেপণাস্ত্র, কম্বাট সিমুলেটর, বিভিন্ন ধরনের রাডার, অত্যাধুনিক লোকেটিং সরঞ্জামাদি প্রদান করা হয়েছে। এছাড়াও চীন এবং ইউরোপীয় দেশসমূহ থেকে সর্বাধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন গান, রাডার এবং যানবাহন রেজিমেন্ট অব আর্টিলারির ইউনিটসমূহে সংযোজনের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।’

আনন্দঘন পরিবেশে সবাইকে নিয়ে কেক কাটছেন রাষ্ট্রপতি। এ সময় সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদসহ সাবেক ও বর্তমান উচ্চপদস্থ সামরিক কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

মহামান্য রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘দুর্বার ও অব্যাহত উন্নয়নের ধারায় এয়ার ডিফেন্স আর্টিলারির প্রশিক্ষণ ফায়ার পরিচালনার জন্য বিভিন্ন ধরনের টার্গেট ড্রোন স্থানীয়ভাবে উন্নয়নের প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। দেশের আকাশ প্রতিরক্ষাকে আরও সুসংহত করতে সংযোজিত হয়েছে এমএলআরএস এবং মিসাইল রেজিমেন্ট।

আধুনিক ও উন্নত বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে বর্তমান সরকার সেনাবাহিনীতে অত্যাধুনিক বিভিন্ন যুদ্ধাস্ত্র, আর্টিলারি গান এবং মডার্ন ইনফ্যান্ট্রি গেজেট ইত্যাদি সংযোজন করে সেনাবাহিনীর আভিযানিক সক্ষমতাকে বহুলাংশে বৃদ্ধি করেছে।’

রাষ্ট্রপতি খোলা জিপে করে প্যারেড গ্রাউন্ডে মনোজ্ঞ কুচকাওয়াজ পরিদর্শন ও সালাম গ্রহণ করেন। এ সময় তাঁর সঙ্গে ছিলেন সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের অর্থনৈতিক সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও একটি শক্তিশালী সশস্ত্রবাহিনী গড়ে তোলার উদ্যোগ নেন জানিয়ে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর নির্দেশেই ১৯৭২ সালে কুমিল্লা সেনানিবাসে গড়ে তোলা হয় বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমি।

১, ২, ৩ ফিল্ড ও ৩৮ এয়ার ডিফেন্স রেজিমেন্ট আর্টিলারিকে জাতীয় পতাকা প্রদান অনুষ্ঠানে ভাষণ দিচ্ছেন রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ। পাশেই উপস্থিত বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ।

উন্নত ও পেশাদার সেনাবাহিনীর প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করে বঙ্গবন্ধু ১৯৭৪ সালে একটি প্রতিরক্ষা নীতি প্রণয়ন করেছিলেন। তাঁর সুদূরপ্রসারী এই প্রতিরক্ষা নির্দেশনার আলোকেই সাংগঠনিক কাঠামোর বিন্যাস ও পরিবর্তনের পাশাপাশি সেনাবাহিনীর আধুনিকায়নের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী আজ দেশ ও দেশের বাইরে এক সম্মানজনক অবস্থায় উন্নীত হয়েছে।

অনুষ্ঠানে সাবেক সেনাবাহিনী প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল আতিকুর রহমান, সাবেক সেনাবাহিনী প্রধান আবু বেলাল মোহাম্মদ শফিউল হক, আর্মি ট্রেনিং অ্যান্ড ডকট্রিন কমান্ডের (আর্টডক) এর জিওসি লেফটেন্যান্ট জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ, আনসার ও ভিডিপির মহাপরিচালক (ডিজি) মেজর জেনারেল কাজী শরীফ কায়কোবাদ, নবম পদাতিক ডিভিশনের জিওসি মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আকবর হোসাইন, ১১ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি মেজর জেনারেল সাইফুল আলমসহ উচ্চ পদস্থ বিভিন্ন সামরিক কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

এছাড়া এই অনুষ্ঠানে সাবেক মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এমপি, ওয়াসিয়া আয়েশা খান, মোছলেম উদ্দিন আহমেদ, চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এম এ সালামসহ বিভিন্ন কূটনৈতিক মিশনের প্রধানরা উপস্থিত ছিলেন।

অনুষ্ঠানের পর রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ সিনিয়র কর্মকর্তাদের সাথে ছবি তুলেন এবং দর্শনার্থীদের বইয়ে স্বাক্ষর করেন।

অনুষ্ঠানে ফটোসেশনে অংশনেন রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ ও সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ

কালের আলো/এসআর/এমএএএমকে