মুজিববর্ষে কীভাবে পুলিশ জনতার হবে, জানালেন আইজিপি (ভিডিও)
প্রকাশিতঃ 3:37 pm | February 26, 2020
বিশেষ সংবাদদাতা, কালের আলো, নেত্রকোণা থেকে :
চলতি বছরে পুলিশ সপ্তাহে ‘মুজিব বর্ষের অঙ্গীকার, পুলিশ হবে জনতার’ স্লোগানে নিজের মুগ্ধতার কথা প্রকাশ করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই প্রতিপাদ্যকে বাস্তবে রূপ দিতে তিনি পুলিশকে জনতারই হতে বলেছেন। আক্ষরিক অর্থেই সেই পথেই হাঁটছে মহান মুক্তিযুদ্ধে পাকিদের বিরুদ্ধে প্রথম প্রতিরোধ গড়া বাংলাদেশ পুলিশ।
আরও পড়ুন: ৩১ বছর পর নিজের স্মৃতিবিজড়িত সেই কর্মস্থলে আইজিপি!
তবে মুজিববর্ষেই পুলিশ কীভাবে জনতার হবে, এমন প্রশ্নে নিজেদের বিস্তর কর্মযজ্ঞের গল্পই উচ্চারণ করলেন পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড.মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী, বিপিএম (বার)। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব, বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সেই অমোঘ বাণী ‘তোমরা জনগণের পুলিশ’ হৃদয়-মনে ধারণ করেই জনগণের পুলিশ ও মানবিক পুলিশ উপহার দিতে চান পুলিশ প্রধান।
‘থানা হবে সেবার কেন্দ্রবিন্দু। সেখানে সাধারণ মানুষ নির্ভয়ে যাবেন, সেবা নিয়ে বের হবেন হাসিমুখে’ দেশের প্রতিটি প্রান্ত ঘুরে নিজের বাহিনীর সর্বস্তরের কর্মকর্তাদের এমন কঠোর বার্তাই দিয়ে যাচ্ছেন তিনি। বুধবারও (২৬ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে নেত্রকোণা সার্কিট হাউজে অপেক্ষমান সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপে ড.মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী বলেছেন সেই অভিন্ন কথাই।
মুজিববর্ষে দেশের প্রতিটি থানায় চারটি করে হেল্পডেস্ক স্থাপন, বিপদগ্রস্ত নারী ও অসহায় শিশুদের রক্ষার্থে তাদের জন্য তাৎক্ষণিক পুলিশী সেবার ব্যবস্থা করে দিতে একটি অ্যাপস চালুর পরিকল্পনার কথাও জানিয়েছেন এই পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি)।
নিজ বাহিনীকে জনগণের বন্ধু বা জনতার পুলিশ হতে গণমাধ্যমেরও সহযোগিতা চেয়েছেন সাসটেইনেবল পুলিশিং ব্যবস্থা কার্যকরের জন্য অহর্নিশ পরিশ্রম করে যাওয়া এ বাহিনীটির প্রধান। বলেছেন, ‘আপনাদের সহযোগিতায় জনগণের পুলিশ বা জনতার পুলিশ হবো আমরা।’
রাজারবাগের অকুতোভয় পুলিশ সদস্যদের প্রথম প্রতিরোধ
গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে আলাপের শুরুতেই পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড.মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী বলেন, ‘জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহ্বানে সাড়া দিয়ে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ পাক হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে রাজারবাগের অকুতোভয় পুলিশ সদস্যরা প্রথম প্রতিরোধ যুদ্ধ গড়ে তুলে।
হানাদারদের বিরুদ্ধে মহান মুক্তিযুদ্ধে প্রথম বুলেট ছুঁড়ে প্রতিরোধ শুরু করেছিল গর্বিত পুলিশ সদস্যরাই। মুক্তিযুদ্ধে পুলিশের প্রায় ১৪ হাজার সদস্য অংশগ্রহণ করেন।
জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে পুলিশের রয়েছে অসামান্য অবদান। আমাদের ৮ জন সদস্য জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে প্রাণ দিয়েছে। পুলিশের এই পেশাদারী, অগ্রণী ও আত্নোৎস্বর্গকারী ভূমিকার কারণে বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের কার্যক্রম প্রায় শুন্যের কোঠায় নেমে এসেছে।’
আমাদেরকে যেতে হবে জনগণের কাছে
তিনি বলেন, ‘জনসংখ্যা ও বাংলাদেশের পুলিশ অনুপাত ১ হাজার জনগণের জন্য একজন পুলিশ। একজন পুলিশের পক্ষে এক হাজার জনের পুলিশিং সঠিকভাবে করা সম্ভব নয়। আমাদেরকে জনগণের কাছে যেতে হবে। জনগণের হয়ে জনগণের কাজ করতে হবে।’
বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন ‘তোমরা স্বাধীন দেশের পুলিশ’
স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধুই প্রথম পুলিশ সপ্তাহে রাজারবাগে পুলিশকে জনগণের সেবক হিসেবে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছিলেন, বললেন আইজিপি ড.মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী, বিপিএম (বার)। তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘তোমরা জনগণের পুলিশ; স্বাধীন দেশের পুলিশ।
তোমাদের কর্তব্য জনগণকে সেবা করা, জনগণকে ভালবাসা। দুর্দিনে জনগণকেই সাহায্য করা।’ আমরা সেই শব্দমালাকেই ধারণ করে জনগণের পুলিশ হওয়ার চেষ্টা করছি অনবরত। মুজিববর্ষে জনতার পুলিশ হতে চাই আমরা। এজন্য আমাদের সকল কর্মকান্ড চলছে।’
ট্রিপল নাইনের মাধ্যমে ৫৮ লাখ নাগরিককে সেবা
তথ্যপ্রযুক্তির বৈপ্লবিক বিকাশের সময় ইন্টেলিজেন্সলি ও টেকনো বেজড পুলিশি কার্যক্রমের উপর পুলিশ বিশে গুরুত্ব দিয়েছে বলে মন্তব্য করেন ড.মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী। পুলিশ প্রধান বলেন, ‘বাংলাদেশ পুলিশের সার্বিক ব্যবস্থাপনায় জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ ইতোমধ্যেই জনগণের দৌরগোঁড়ায় পৌছে গিয়েছে।
গত দুই বছরে প্রায় ৫৮ লাখ নাগরিককে ট্রিপল নাইনের মাধ্যমে আমরা সেবা দিতে পেরেছি। সেখানে পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস ও অ্যাম্বুলেন্সের সেবা ছিল। এর বাইরেও বেশ কিছু সেবা ছিল। সত্যিকার অর্থেই আমরা জনগণের পুলিশ হতে চাই। ফলে এই সেবাকে আরও প্রসারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।’
থানা হবে জনবান্ধব; মানুষ বেরিয়ে যাবেন হাসিমুখে
দেশের প্রতিটি থানাকে আমরা জনবান্ধব থানা হিসেবে গড়ে তুলতে চাই, এমনটি জানিয়ে আইজিপি বলেন, ‘মানুষ নির্ভয়ে থানায় এসে হাসিমুখে বেরিয়ে যাবেন। তাদের অভাব-অভিযোগ হাসিমুখে আমাদের লোকজন শুনবেন। পুলিশ তাদের সমস্যার সমাধান করবে। আমরা এখন পর্যন্ত কতটুকু সফল হয়েছি সেটা জনগণ বলবে।’
প্রতি থানায় চারটি হেল্পডেস্ক; নারী-শিশুদের জন্য অ্যাপস
মুজিববর্ষে আমরা বেশ কিছু প্রকল্প হাতে নিয়েছি উচ্চারণ করে ড.মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী বলেন, ‘দেশের প্রতিটি থানায় চারটি করে হেল্পডেস্ক স্থাপন করা হবে। নারীদের পাশাপাশি প্রতিবন্ধী ও বয়স্কদের জন্য সার্ভিস ডেস্ক থাকবে। মোট চারটি সার্ভিস ডেস্ক এই বছরই প্রতিটি থানায় চালু করবো।’
তিনি বলেন, ‘এরই বাইরে নারী ও অসহায় শিশু বিপদে পড়লে তাৎক্ষণিকভাবে পুলিশী সেবা পেতে পারে এজন্য সহসাই আমরা অ্যাপস চালু করছি। এটা পরীক্ষা নিরীক্ষার পর্যায়ে রয়েছে। আপাতত কয়েকটি থানায় চালুর পর সারাদেশের প্রতিটি থানায় চালু হবে। অ্যাপস চাপলেই তাৎক্ষণিক পুলিশ পৌঁছে যাবে। সেই নারীকে তাৎক্ষণিকভাবে সাহায্য করবে। এটা পরীক্ষামূলকভাবে শুরু করতে যাচ্ছি।
অনুষ্ঠানে পুলিশের ময়মনসিংহ রেঞ্জের ডিআইজি ব্যারিস্টার হারুন অর রশিদ, অতিরিক্ত ডিআইজি ড.আক্কাছ উদ্দিন ভূঞা, নেত্রকোণা জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. মঈনুল ইসলাম, জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) আকবর আলী মুনসি, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) এস.এম.আশরাফুল আলম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান জুয়েল প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে দুপুর পৌনে ১২ টার দিকে ঢাকা থেকে সড়কপথে নেত্রকোণায় এসে পৌঁছেন পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড.মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী। নেত্রকোণার সার্কিট হাউজে অপেক্ষমান সংবাদকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে তিনি নেত্রকোণা জেলা পুলিশ সুপারের (এসপি) কার্যালয় পরিদর্শন করেন। এরপর তিনি জেলা পুলিশ লাইন্সে বার্ষিক পুলিশ সমাবেশ ও ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দেন।
কালের আলো/এমএএএমকে