‘দাম্ভিক’ উপজেলা চেয়ারম্যান মালেকের ‘গোমর ফাঁস’ চেয়ারম্যানদের অনাস্থায় তোলপাড়
প্রকাশিতঃ 12:46 am | March 02, 2020

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো :
পেশিশক্তির জোরেই সবকিছু করতে চান। কথায় কথায় দেখান দাম্ভিকতা। নিজেকে ভাবেন ‘মহাক্ষমতাধর’। অনিয়ম-দুর্নীতিতেও তার জুড়ি মেলা ভার। বিদেশ ভ্রমণে যান সরকারি অনুমতি ছাড়াই।
আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে যখন তখন ভয় দেখান। বিপরীতে ‘টু শব্দ’ করলে তেড়ে আসেন। রুচিহীনতার পরিচয় দেন নিজের পরিষদের নারী ভাইস চেয়ারম্যানকে নিয়ে অশ্লীল মন্তব্য করেন।
দিনের পর দিন নিজের বেপরোয়া আচরণের মাধ্যমে ‘ত্রাহি’ অবস্থার সৃষ্টি করেছেন। সংকটময় পরিস্থিতিতে তার বিরুদ্ধে একযোগে অনাস্থা জানিয়েছেন নিজের উপজেলা পরিষদের দুই ভাইস চেয়ারম্যান ও ১৩ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান।
ফলে তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে টাকার জোরে পথচলা ফুলবাড়িয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল মালেক সরকার ওরফে মালকির ভাবমূর্তি।
নিজের ভেতরকার এসব ‘গোমর ফাঁস’ হওয়ায় ভেতরে ভেতরে তেলেবেগুনে জ্বলছেন রহস্যময় এই ‘ধনকুবের’। দ্রুত সময়ের মধ্যে তাকে অপসারণে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের হস্তক্ষেপও কামনা করেছেন ভুক্তভোগী দুই ভাইস চেয়ারম্যান ও ১৩ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান।
তারা বলছেন, উপজেলা চেয়ারম্যানের দায়িত্বহীনতার কারণে পুরো উপজেলায় উন্নয়ন কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, রোববার (০১ মার্চ) বিকেলে জেলার ফুলবাড়িয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল মালেক সরকারের বিরুদ্ধে অনিয়ম, দুর্নীতি, অসদাচরণ, ক্ষমতার অপব্যবহার, স্বৈরাচারী মনোভাব ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ এনে অনাস্থা প্রস্তাব দাখিল করা হয়েছে।
উপজেলা পরিষদের দুই ভাইস চেয়ারম্যান ও ১৩ ইউপি চেয়ারম্যান এসব অভিযোগের ভিত্তিতে এদিন বিকেলে ময়মনসিংহ বিভাগীয় কমিশনারের কাছে এই অনাস্থা প্রস্তাব দাখিল করেন।
দাখিলকৃত অনাস্থা প্রস্তাবে উল্লেখ করা হয়েছে, সরকার দলীয় এই উপজেলা চেয়ারম্যান নিজের পেশিশক্তি, দাম্ভিকতা, স্বেচ্ছাচারি মনোভাব দেখিয়ে সকল নিয়ম উপেক্ষা করে চলছেন। ফলে পরিষদের কাজের পরিবেশ মারাত্নকভাবে বিনষ্ট হচ্ছে।
উপজেলা চেয়ারম্যান মালেক সরকার সরকারি বাসভবন কাম-অফিস এবং পরিষদে চেয়ারম্যানের ব্যবহার উপযোগী অফিস থাকার পর কোন ধরণের অনুমোদন ছাড়াই ১০ লাখ টাকা ব্যয়ে নিজের অফিস বাড়িয়েছেন।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার দাপ্তরিক কাজের অফিস ভেঙ্গে একীভূত করেন। ফলে প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার অফিস পরিচালনায় মারাত্নক অসুবিধা হচ্ছে। এ ক্ষমতাধর উপজেলা চেয়ারম্যান সরকারের বিনা অনুমতিতে ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে বিদেশ ভ্রমণ করেছেন।
অভিযোগে আরও বলা হয়েছে, ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত আসনের ইউপি সদস্যদের মধ্য থেকে নির্বাচনের মাধ্যমে পরিষদের তিনজন মহিলা সদস্য নিয়োগের বিধান থাকায় তাগিদ দেওয়া সত্বেও তিনি কোন উদ্যোগ নিচ্ছেন না। পরিষদের পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার প্রণয়নের নিয়ম থাকলেও তিনি তা না করে স্ববিরোধী কাজ করছেন।
চলতি বছরের ৮ মাস পেরিয়ে গেলেও তিনি পরিষদের উন্মুক্ত বাজেট প্রণয়ন না করে বিধি পরিপন্থি কাজ করছেন। এছাড়া পরিষদের বিভিন্ন স্থায়ী কমিটি গঠনের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কিন্তু তাকে বার বার তাগাদা সত্বেও তিনি কোন স্থায়ী কমিটি গঠন আইনকে অবজ্ঞা করে চলছেন।
টিআর, কাবিখা ও এডিপি বরাদ্দ সময়মত বণ্টন না করায় উপজেলার সর্বত্র উন্নয়ন থমকে গেছে উল্লেখ করে আরও বলা হয়েছে, চলতি বছরে এডিপির এক কোটি ৮ লাখ টাকা উপজেলা প্রকৌশল বিভাগ থেকে আয়তন, জনসংখ্যা ও অনগ্রসরতার ভিত্তিতে সকল ইউনিয়নে বিভাজন করে বন্টন করতে দুই মাস আগে চিঠি দিলেও তিনি কোন ব্যবস্থা নেননি।
উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল মালেক সরকার গত বছরের এডিপির বরাদ্দকৃত ২৫ লাখ টাকা স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে টেন্ডারবিহীন নামে বেনামে প্রকল্প দেখিয়ে উত্তোলন করে আত্নসাত করেছেন বলেও দাখিলকৃত অনাস্থা প্রস্তাবে বলা হয়েছে।
এখানে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, মালেক সরকার সব সময় আগ্নেয়াস্ত্র সাথে রাখেন। মূলত এই আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে তিনি সব সময় মানুষকে ভয়ভীতি দেখান। ফলে কেউ তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার সাহস পর্যন্ত দেখাতে পারেন না।
অভিযোগে আরও বলা হয়েছে, স্থানীয় ১নং নাওগাও ইউপি চেয়ারম্যানের কাছে এডিপির ১ লাখ টাকার একটি বিল আনতে গেলে তিনি ৩০ হাজার টাকা অন্যায়ভাবে দাবী করেন। যা না পেলে তিনি ওই বিল দিবেন না। ওই চেয়ারম্যান প্রতিবাদ করায় তাকে অকথ্য গালমন্দ করেন। এই ক্ষমতাধর চেয়ারম্যান পরিষদের নারী ভাইস চেয়ারম্যানের সাথে অসভ্য, অশ্লীল আচরণ এবং কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করেন। যা মানহানিকর।
এসব অভিযোগের বিষয়ে ফুলবাড়িয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল মালেক সরকারের সাথে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
জানতে চাইলে ময়মনসিংহ বিভাগীয় কমিশনার খোন্দকার মোস্তাফিজুর রহমান কালের আলোকে বলেন, উপজেলা পরিষদের দুই ভাইস চেয়ারম্যান ও ১৩ ইউপি চেয়ারম্যানের অনাস্থা প্রস্তাবের চিঠি পেয়েছি। এই বিষয়ে বিধি মোতাবেক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
কালের আলো/বিআর/ওএইচ