স্বপ্ন অ্যাটাক হেলিকপ্টার; নতুন সংযোজন হচ্ছে ৬ হেলিকপ্টার : সেনাপ্রধান (ভিডিও)
প্রকাশিতঃ 7:26 pm | March 02, 2020
বিশেষ সংবাদদাতা, কালের আলো, লালমনিরহাট থেকে ফিরে :
আধুনিক বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে ভিশন ২০৩০’কে সামনে রেখে অ্যাটাক হেলিকপ্টার কেনার স্বপ্ন দেখছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। পুরনো অ্যাটাক হেলিকপ্টার কেনার ইচ্ছা না থাকলেও নতুন অ্যাটাক হেলিকপ্টার কেনার বিষয়টি এখনও পরিকল্পনার মধ্যেই রয়েছে।
আরও পড়ুন: ট্রাফিক জটমুক্ত লালমনিরহাটের আকাশ; আনন্দমুখরতায় উদ্বোধন আর্মি এভিয়েশন স্কুলের (ভিডিও)
তবে সুসংবাদ হচ্ছে, বর্তমানে অত্যাধুনিক ওয়ান সেভেন ওয়ান হেলিকপ্টার ব্যবহার করা সেনাবাহিনীর আর্মি এভিয়েশন গ্রুপে সংযোজন হচ্ছে আরও ৬টি হেলিকপ্টারের। ইতোমধ্যেই সরকার থেকে এই ৬ টি হেলিকপ্টারের অনুমোদন মিলেছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ। তিনি বলেছেন, ‘এই হেলিকপ্টারগুলো আসতে আরও এক থেকে দুই বছর লেগে যাবে।’
সোমবার (২ মার্চ) দুপুরে লালমনিরহাট ক্যান্টনমেন্টে আর্মি এভিয়েশন স্কুল, অফিসার্স মেস, এসএম ব্যারাক ও মিলিটারি ফার্মের মিল্কিং পার্লার উদ্বোধন শেষে গণমাধ্যমকর্মীদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
আধুনিকায়নের কৃতিত্ব প্রধানমন্ত্রীর
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর আধুনিকায়নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে সেনাপ্রধান বলেন, ‘বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর উন্নয়নের জন্য প্রধানমন্ত্রী অত্যন্ত আন্তরিক। আজকে আপনারা আর্মি এভিয়েশন গ্রুপকে যে পর্যায়ে দেখছেন এটার মূল কৃতিত্ব প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার।’
ভিশন ২০৩০’র আলোকে সেনাবাহিনীর আধুনিকায়ন
বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান বলেন, ‘ভিশন ২০৩০’র আলোকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর আধুনিকায়ন হচ্ছে। এই ভিশন ২০৩০ আমরা প্রণয়ন করেছি আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৪ সালে আমাদের ডিফেন্স পলিসির যে কনসেপ্টটা দিয়ে গেছেন সেটার আঙ্গিকেই আমাদের ভিশন ২০৩০ করা হয়েছে।
ছেচনা দিয়ে শুরু আর্মি এভিয়েশন গ্রুপের
‘আজকে আমাদের আর্মি এভিয়েশন গ্রুপে যা আছে, সেটা কিন্তু একদিনে হয়নি। প্রথম আমরা ছেচনা হেলিকপ্টার দিয়ে শুরু করি। তারপর আসতে আসতে কারাবেন সংযুক্ত হয়। ফ্রিক্সড উইং থেকে রোটার উইংয়ে যাই। সেখানে আমাদের বিভিন্ন ধরণের রোটার উইং আসে’ বলছিলেন সেনাপ্রধান।
তিনি বলেন, ‘বর্তমানে আমাদের ওয়ান সেভেন ওয়ান অত্যাধুনিক হেলিকপ্টার যেটা দেখেছেন এই হেলিকপ্টার সংযোজিত হয়েছে। আমাদের আরও ৬টি হেলিকপ্টার সংযোজনের জন্য সরকারের সদয় সম্মতি দিয়েছে। আগামী বছরগুলোতে সেগুলো আমাদের আর্মি এভিয়েশন গ্রুপে সংযুক্ত হবে।’
অ্যাসেট বাড়ার সঙ্গে বেড়েছে দায়িত্ব
আর্মি এভিয়েশন গ্রুপের অ্যাসেট বাড়ার সাথে সাথে দায়িত্ব অনেক বেড়ে যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেন সেনাপ্রধান। তিনি বলেন, ‘এই দায়িত্ব বৃদ্ধির সাথে সাথে কিন্তু আমাদের নতুন নতুন প্রশিক্ষণেরও প্রয়োজনীয়তা দেখা দিচ্ছে। কোন এক সময় শুধুমাত্র কীভাবে তারা ফ্লাই করে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যাবে বা পেশেন্ট নিয়ে আসার মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল।
ক্রমান্বয়ে এখন আমরা চিটাগাং হিল ট্রাকসে আমাদের প্রচুর কাউন্টার ইনসারজেন্সি অপারেশন পরিচালিত হয়। সেই ক্যাম্পগুলোতে রেশন সাপোর্ট দেওয়া ও অন্যান্য অ্যাডমিনিস্ট্রিটিভ সাপোর্ট দেওয়া শুরু করেছি আমাদের এভিয়েশন থেকে।
যে কাজগুলো আমরা সব সময় আমাদের এয়ার ফোর্সের উপর নির্ভরশীল ছিলাম। এখন ক্রমান্বয়ে আমাদের কর্মকান্ড সেক্ষেত্রে বৃদ্ধি করছি। এই যে তারা অ্যাডমিনস্ট্রিটিভ ও অন্যান্য অপারেশনাল সাপোর্টগুলো দিচ্ছে, যোগ করেন জেনারেল আজিজ আহমেদ।
তিনি বলেন, ‘এমনকি কখনও কখনও যদি আমাদের কোন বিশেষ অপারেশন কনডাক্ট করা হয় বর্ডারিং এরিয়াতে। বিশেষ করে আমাদের বন্ধু প্রতিম দেশ মায়ানমার ও ভারত থেকে বিশেষ কোন রিকোয়েস্ট পাই তাদের বর্ডারিং এলাকাতে আমাদের সহযোগিতা করতে হবে।
এবং আমাদের সৈন্য সেই বর্ডারিং এরিয়াতে পাঠানোর প্রয়োজন হয়, তখন আমরা আমাদের আর্মি এভিয়েশন গ্রুপের এই হেলিকপ্টারগুলো ব্যবহার করি। তাদের দিয়ে আমরা কমান্ডো পাঠাই, রেগুলার আর্মি পাঠাই। আমাদের কিন্তু এরকম দায়িত্ব বৃদ্ধির সাথে সাথে আমাদের নতুন নতুন প্রশিক্ষণেরও প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে।’
একদিন অ্যাটাক হেলিকপ্টার হবে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর
বাংলাদেশ সেনাবাহিনী অ্যাটাক হেলিকপ্টার কিনছে, এমন প্রশ্নের উত্তরে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ বলেন, ‘আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমাদের একটি জিনিস শিখিয়েছেন যে স্বপ্ন দেখা।
স্বপ্ন দেখলে কিন্তু সেটা বাস্তবায়নের প্রশ্ন আসে। আমাদেরও ভিশন ২০৩০ অনুযায়ী আমরাও স্বপ্ন দেখছি যে- আমাদের বাংলাদেশ আর্মির অ্যাটাক হেলিকপ্টার হবে আমাদের আর্মি এভিয়েশন গ্রুপের। আমরা সেটা দেখেছি সেটা নিয়ে কাজ করছি এবং সরকারের কাছেও আমাদের ইচ্ছার কথা ব্যক্ত করেছি।
তবে কোন কিছুই কিন্তু ওভার নাইট হয়না; সময় লাগে। বাট আজ না হোক একদিন আমাদের এই আর্মি এভিয়েশন গ্রুপে অ্যাটাক হেলিকপ্টার হবে। সেটা আমাদের পরিকল্পনায় আছে।’
অ্যাটাক হেলিকপ্টারের প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্বের কথা উল্লেখ করে সেনাপ্রধান বলেন, ‘এই অ্যাটাক হেলিকপ্টারগুলো বিশ্বের প্রতিটি দেশেই সেনাবাহিনীর একটি এলিভেটেড প্ল্যাটফর্ম। সেনাবাহিনীকে যদি দিনের বেলা মুভ করতে হয় ক্লোজ এয়ার সাপোর্ট হয়তো আমাদের অনেক ক্ষেত্রে সম্ভব হবেনা।
সেক্ষেত্রে ইন্টেরিয়েক্ট ক্লোজ এয়ার সাপোর্টের মাধ্যমে এলিভেটেট প্লাটফর্মটি অ্যাটাক হেলিকপ্টারের প্রতিটি দেশের সেনাবাহিনীরই আছে।
তখন তাদের দিয়ে সেনানায়ক যারা থাকে তারা খুব ক্লোজলি ব্যবহার করতে পারেন। সেনাবাহিনীর এটা খুব প্রয়োজন। যেহেতু আমাদের সবকিছুই আধুনিকায়ন হচ্ছে আমাদের আধুনিক সরঞ্জামাদি যুক্ত হচ্ছে। একদিন দেখবেন যে অ্যাটাক হেলিকপ্টারও বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে আসবে।
এই মুহুর্তে আপনারা যেগুলো দেখছেন এবং আমরাও চেষ্টা করছি, আমাদের এয়ার ফোর্সও চেষ্টা করছে সরকার হয়তো অগ্রগণ্যতার ভিত্তিতে কাকে আগে দিবে, কাকে পরে দিবে সেটা হয়তো সরকার সিদ্ধান্ত নিবে। বাট আমার দৃঢ় বিশ্বাস একদিন সবারই অ্যাটাক হেলিকপ্টার হবে।’
আমরা কেন পুরনো অ্যাটাক হেলিকপ্টার কিনতে যাবো?
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর পুরনো অ্যাটাক হেলিকপ্টার কেনার সম্ভাবনা নেই জানিয়ে সেনাপ্রধান বলেন, ‘আজকে সরকার যদি আমাদের অ্যাটাক হেলিকপ্টার কেনার অনুমোদনও দেয় এবং আমি যদি ডিমান্ড প্লেস করি সেটা কিন্তু আসতেও কয়েক বছর লেগে যাবে।
এটা কোন দিন সম্ভব হবে না যে, এই বছরের মধ্যে অ্যাটাক হেলিকপ্টার চলে আসবে। আনলেস কেউ যদি পুরোনো কিছু কিনতে না চায়, আমরা পুরোনো কেন কিনতে যাবো। সেটা সম্ভব না যে, এই বছরের মধ্যে। আমাদের অ্যাটাক হেলিকপ্টার কেনার পরিকল্পনার মধ্যে আছে। বাস্তবায়ন তো অনেক কিছুর উপরে ডিপেন্ড করে। আমাদের চিন্তায় আছে, আমাদের পরিকল্পনায় এটি আছে।’
এ সময় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কোয়ার্টার মাস্টার জেনারেল (কিউএমজি) লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. সামছুল হক, এভিয়েশন গ্রুপ কমান্ডার মেজর জেনারেল আলমগীর হোসেন, মাস্টার জেনারেল অব অর্ডন্যন্স মেজর জেনারেল মো. আবু সাঈদ সিদ্দিক, রংপুর সেনানিবাসের ৬৬ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি মেজর জেনারেল মো. নজরুল ইসলাম প্রমুখ সেনাপ্রধানের সঙ্গে ছিলেন।
অনুষ্ঠানে লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক (ডিসি) আবু জাফর, জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) আবিদা সুলতানা ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মতিয়ার রহমান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
কালের আলো/এমএএএমকে