নজরুলের গান-কবিতায় মাতালেন রওশন এরশাদ
প্রকাশিতঃ 8:50 pm | May 26, 2018
নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো: জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের গান ও কবিতায় মুগ্ধতা ছড়ালেন জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদ। নজরুলের বিখ্যাত কান্ডারী, বিদ্রোহীসহ কয়েকটি কবিতা যেমন আবৃত্তি করলেন তেমনি গেয়ে শোনালেন ‘ও মন রমজানের ওই রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ, তুই আপনাকে আজ বিলিয়ে দে শোন আসমানি তাকিদ।’
পেশাদারি শিল্পীর মতোই স্বয়ং বিরোধী দলীয় নেতার কন্ঠে এমন গান গেয়ে উপস্থিত দর্শকদ শ্রোতাদের আনন্দ দিলেন তিনি। এ সময় মুর্হুমুর্হ করতালির মধ্যে দিয়ে সবাই তাকে স্বাগত জানান।
শনিবার (২৬ মে) দুপুরে ময়মনসিংহের ত্রিশালে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের স্মৃতি বিজড়িত নজরুল একাডেমী মাঠের নজরুল মঞ্চে তিন দিনব্যাপী অনুষ্ঠানে দ্বিতীয় দিনে এভাবেই দর্শক-শ্রোতাদের মুগ্ধ করেন বিরোধী দলীয় নেতা।
‘অনন্য সাধারণ লেখনীর মাধ্যমে কবি নজরুল আমাদের সাহিত্য, সঙ্গীত ও সংস্কৃতিকে সমৃদ্ধ করেছেন’ উল্লেখ করে বেগম রওশন এরশাদ এমপি বলেন, পরাধীন বাঙালির মুক্তির বাণী নিয়ে ধূমকেতুর মতো তাঁর আবির্ভাব ঘটেছিল। দ্রোহে-প্রেমে, কোমলে-কঠিনে বাঙলা কাব্য ও সঙ্গীতে এক নতুন মাত্রা সংযোজন করেছিলেন কাজী নজরুল ইসলাম।
তিনি বলেন, নজরুলের মূল উদ্দেশ্যে ছিল পরাধীন বাংলাকে স্বাধীন করার। যেখানে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় থাকবে। সব মানুষ মিলেমিশে বাস করবেন। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও স্বীকার করেছেন নজরুল বিশ্ব কবি পর্যায়ে।
এরপর কবিতায় কবিতায় নজরুলকে স্মরণ করেন বিরোধী দলীয় নেতা। এ সময় তাঁর কন্ঠে উচ্চারিত হয়- ‘কে আছে জোয়ান, হও আগুয়ান হাঁকিছে ভবিষ্যত’, ‘মোর প্রিয়া হবে এসো রাণী’, ‘ঘুমিয়ে গেছে শান্ত হয়ে আমার গানের বুলবুলি’, ‘কাঠবিড়ালি, কাঠবিড়ালি পেয়ারা তুমি খাও?’ ‘আমি যেদিন হারিয়ে যাবো, বুঝবে সেদিন বুঝবে’ কিংবা ‘মসজিদের পাশে আমার কবর দিও ভাই’সহ কয়েকটি কবিতা।
বেগম রওশন এরশাদ বলেন, জাতীয় কবিকে ১৯৭২ সালে কলকাতা থেকে ঢাকায় নিয়ে আসেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তখন এভাবে নজরুল জয়ন্তী পালন হতো না। আমাদের জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ.এম.এরশাদ প্রথম নজরুলের নামে গুলশানের একটি বাড়ি বরাদ্দ দিলেন।
এবং তার খরচের জন্য মাসিক টাকারও ব্যবস্থা করতেন। আমাদের সময়েই ১৯৯০ সালে প্রথম ত্রিশালে জাতীয় পর্যায়ে নজরুল জন্ম জয়ন্তী পালন করার উদ্যোগ নেয়া হয়।
তিনি আরো বলেন, কবি নজরুল প্রেম-প্রকৃতির অনুরক্ত ছিলেন একই সঙ্গে অন্যায়, অনাচার, শাসন-শোষণের বিরুদ্ধেও ছিলেন উচ্চকিত। আক্ষেপ করে বিরোধী দলীয় নেতা বলেন, কাব্যের সাহিত্যিক দিকটা আমরা যতই চর্চা করব ততই লাভবান হবো। আজকালকার ছেলে মেয়েরা কবিতা তো দুরের কথা বই-ই পড়ে না।
সারাক্ষণ মোবাইলে ফেসবুক নিয়ে পড়ে থাকে। এটা বন্ধ করতে হবে। আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মকে মোবাইল থেকে উঠিয়ে তাদের দৃষ্টি ও মনযোগ বইয়ের দিকে আনতে হবে। বইয়ের প্রতি আকর্ষন বাড়াতে হবে।
বিশেষ অতিথির বক্তৃতায় ময়মনসিংহ-৮ (ঈশ্বরগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য ফকরুল ইমাম বলেন, কবি নজরুলের অভিজ্ঞতার পরতে পরতে জমেছিল মানুষের চোখের জল, দীর্ঘশ্বাসের অজ¯্র কাহিনী। শোষণ-বঞ্চনার কাহিনী তাকে বই পড়ে শিখতে হয়নি। পরাধীন ভারতে তিনি প্রথম সাম্যবাদী কবি।
তিনি বলেন, নজরুল স্বনামধন্য পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। সাংস্কৃতিক বিষয়ে এ পরিবার অনেক এগিয়ে ছিল। দুর্যোগময় পূর্ণ রাতে প্রচন্ড বৃষ্টির মধ্যে নজরুলের জন্ম হয়েছিল। সারা রাত সে কেঁদেছিল। ভোরের আজানের সময় কান্না বন্ধ হয়েছিল। জীবনের সঙ্গে কাজী নজরুলের ঐশ্বরিক সম্পর্ক ছিল। তিনি ছিলেন ভিন্ন প্রতিভার অধিকারী।
অনুষ্ঠানে ময়মনসিংহ বিভাগীয় কমিশনার জিএম সালেহ উদ্দিন, জেলা প্রশাসক (ডিসি) ড.সুভাষ চন্দ্র বিশ্বাস, জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) সৈয়দ নুরুল ইসলাম, জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি জহিরুল হক বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন।
কালের আলো/এমকে