পেরিয়ে গেছে ২১ বছর; সাবেক ছাত্রলীগ নেতা টিপুকে মনে পড়ে?

প্রকাশিতঃ 9:16 pm | March 11, 2020

বিশেষ সংবাদদাতা, কালের আলো :

সাঈদ আহমেদ টিপু। নেতৃত্বের, মেধার ও সাংগঠনিক দক্ষতার প্রতিযোগিতায় বিশ্বাসী এক ছাত্রলীগ নেতার প্রতিকৃতি। মূল্যবোধের নীতি-নৈতিকতা ও চোখের পর্দা নির্বাসিত হওয়ার বিপরীতেই যিনি পথ চলতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করতেন।

দম্ভ, উন্নাসিকতা, হঠকারী ও নীতিহীন কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে যিনি থাকতেন সোচ্চার। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত ছাত্রলীগের রাজনীতি করেছেন। শিক্ষার্থীদের ভোটে নির্বাচিত ভিপি হয়েছিলেন।

সেই ছাত্রলীগ নেতা প্রয়াত শহিদ সাঈদ আহমেদ টিপু’র কথা কী মনে পড়ে? নিজে যেমন ছিলেন আদর্শিক ঠিক তেমনি তার অনুসারীদেরও সৎ, নির্লোভ ও ত্যাগী মনোভাবের শিক্ষা দিয়েছেন সব সময়।

ইতিহাসের মহান নেতা, মহাকাব্য যুগের রাজনীতিতে মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও দেশের উন্নয়ন-অগ্রযাত্রায় নেতৃত্ব দেওয়া মহিয়সী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রতি ছিল তার গভীর হৃদয়গ্রোথিত আবেগ।

বঙ্গবন্ধু এবং শেখ হাসিনা যেন তাঁর কাছে অনুভূতি এবং অহংকার দু’টোই। ছাত্রলীগের পতাকাতলে বঙ্গবন্ধুর আদর্শিক চিন্তা-চেতনা, মননশীলতায় ও মেধায় জননেত্রী শেখ হাসিনার প্রতি নিবেদিত থেকেছেন। রাজধানীর মোহাম্মদপুর সরকারি কলেজের (পড়ুন সরকারি কমার্শিয়াল কলেজ) নির্বাচিত ভিপি ছিলেন।

একুশ বছর ক্ষমতার বাইরে থাকা উপমহাদেশের ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ যখন ১৯৯৬ সালে প্রথমবারের মতো সরকারে আসে এর ঠিক তিন বছরের মাথায় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে নৃশংসভাবে হত্যা করা খুনি ফারুক-রশিদের ফ্রিডম পার্টির সহচররাই তাকে হত্যা করেছিল বীরদর্পে। সময়টা ১৯৯৩ সালের ১৩ মার্চ রাজধানীর খিলক্ষেত এলাকায়।

১৯৮৯ সালের ১১ আগস্ট বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ১২টায় বঙ্গবন্ধু কন্যা, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে ফ্রিডম পার্টির সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু ভবনকে লক্ষ্য করে মুড়িমুড়কির মতো গুলি ও গ্রেনেড বিস্ফোরণ ঘটিয়েছিল।

সেই সশস্ত্র সন্ত্রাসীরাই ১০ বছরের মাথায় মহান জাতির জনক ও জননেত্রীর আদর্শের পথে অবিচল সাঈদ আহমেদ টিপুকে নৃশংসভাবে হত্যা করেছিল।

অভিযোগ রয়েছে, স্বাধীনতা উত্তর নিষিদ্ধ ঘোষিত ফ্রিডম পার্টির ধানমন্ডি শাখার কো-অর্ডিনেটর, সরকার ঘোষিত ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর অন্যতম সানজিদুল ইসলাম ইমন ওরফে ক্যাপ্টেন ইমনের বাহিনী ও তাদের মিত্র শক্তি বিএনপি-জামায়াতের সশস্ত্র ক্যাডাররা তাকে হত্যা করেছিল।

এই ঘটনায় মামলা দায়েরের পর ইমন বাহিনীর প্রধান ইমন পালিয়ে যায়। পরে তাকে ভারতে গ্রেফতার করা হয়। এখন সে বান্দরবান কারাগারে বন্দি রয়েছেন। টিপু হত্যার মামলাটি এখনও আদালতে বিচারাধীন।

প্রতি বছর গভীর শোক-শ্রদ্ধায় নানা কর্মসূচিতে পালিত হয় শহিদ সাঈদ আহমেদ টিপু’র মৃত্যুবার্ষিকী। আগামী শুক্রবার (১৩ মার্চ) তাঁর ২১ তম মৃত্যুবার্ষিকী। এই মৃত্যুবার্ষিকীকে সামনে রেখে শহীদ টিপু’র পরিবারের সদস্য, আত্নীয় স্বজন, বন্ধু-শুভার্থীরা নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছেন।

বাবা ওয়াদুদ আহমেদ ছিলেন বাংলাদেশ বিমানের কর্মকর্তা। পৃথিবীকে বিদায় জানিয়েছেন অনেক আগেই। টিপু’র মা রেনুজা বেগম (৮৫) এখনও নিজের সন্তানের জন্য চোখের জলে বুক ভাসান। ছেলে হত্যার বিচার দেখে যেতে চান জীবনের গোধূলী বেলাতেও। চান ছেলের খুনিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি।

শহীদ সাঈদ আহমেদ টিপু’র সহোদর ভাতিজা আসিফ আহমেদ ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডের সদ্য নির্বাচিত কাউন্সিলর। কালের আলোকে তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু এবং শেখ হাসিনার প্রশ্নে আপোসহীন থেকে, আদর্শের পথে খেয়ে না খেয়ে কষ্ট করে নিজের ক্যারিশমা দিয়ে ছাত্রলীগকে সুসংগঠিত করেছিলেন শহীদ সাঈদ আহমেদ টিপু।

যারা জাতির আরাধ্য পুরুষ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করেছিল, মমতাময়ী নেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালিয়েছিল সেই খুনিরাই দলীয় রাজনীতির কঠিন সময়কে জয় করা শহীদ সাঈদ আহমেদ টিপুকে হত্যা করেছিল।

স্বজন হারানোর বেদনা আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চেয়ে কেউ বেশি বোঝেন না। আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি আমার চাচা হত্যার বিচার এই বাংলার মাটিতে হবেই। সরকার এই হত্যাকান্ডেরও বিচার করবে।’

শহীদ সাঈদ আহমেদ টিপু শিক্ষা সংঘের সভাপতি সাইফুদ্দিন ভূইয়া রিপন ও সাধারণ সম্পাদক শেখ শফিউল আলম মানিক কালের আলোকে জানান, ‘আদর্শিক মূল্যবোধের কঠিন পথই বেছে নিয়েছিলেন শহীদ সাঈদ আহমেদ টিপু।

নেতা-কর্মীদের দুর্বিষহ যাতনা তিনি অনুভব করতেন। বুকের উত্তাপে আগলে রাখতেন। অর্থবিত্তের মোহ কখনও তাকে আকর্ষণ করেনি। বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনা অন্ত:প্রাণ সাহসী এই ছাত্রলীগ নেতাকে হত্যা করা খুনিদের বিচার দ্রুত সময়ের মধ্যে শেষ করার জোর দাবি জানাচ্ছি।’

কালের আলো/এসআর/সিএইচ