সেনাবাহিনীর দক্ষতার প্রশংসায় প্রধানমন্ত্রী, উন্নয়ন কর্মকান্ডে নিয়োজিত থাকার অঙ্গীকার সেনাপ্রধানের
প্রকাশিতঃ 11:17 am | March 13, 2020
বিশেষ সংবাদদাতা, কালের আলো :
প্রথম এক্সপ্রেসওয়ে যুগে পদার্পণ করেছে বাংলাদেশ। ঢাকার যাত্রাবাড়ী থেকে মাওয়া হয়ে ফরিদপুরের ভাঙ্গা পর্যন্ত আন্তর্জাতিকমানের দেশের প্রথম এক্সপ্রেসওয়েটি দৃষ্টিনন্দন, ঝকঝকে এবং তকতকে। সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের দৃষ্টিতে যা হার মানাবে ইউরোপের অনেক সুন্দর ও চমৎকার সড়ককে।
বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট ও পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের পর এক্সপ্রেসওয়ের মাধ্যমে দেশের অসামান্য অগ্রগতির সঙ্গে যুক্ত হয়েছে সাফল্যের আরেকটি পালক। দেশের দক্ষিণাঞ্চলের সকল মানুষের যোগাযোগের নতুন দ্বার উন্মোচন কেবলই সম্ভব হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সময়োপযোগী দিক নির্দেশনা ও প্রগাঢ় আন্তরিকতার দৌলতেই।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঐকান্তিক আগ্রহ, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, সেবা প্রদানকারী বিভিন্ন সংস্থা ও এই অঞ্চলের আপামর জনসাধারণের আন্তরিক সহযোগিতায় কাঙ্খিত সময়ের আগেই এই হাইভোল্টেজ প্রকল্পটির বাস্তবায়ন সম্ভব হয়েছে বলেই মনে করেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ।
বৃহস্পতিবার (১২ মার্চ) গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এক্সপ্রেসওয়ে ও সেতুসহ নানা প্রকল্প উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। এতে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের যাত্রাবাড়ী মাওয়া-ভাঙ্গা ৬ লেনের এক্সপ্রেসওয়ে, খুলনা, বরিশাল ও গোপালগঞ্জে নির্মিত ২৫টি সেতু, তৃতীয় কর্ণফুলী সেতুর আওতায় ৬ লেনের অ্যাপ্রোচ সড়ক উদ্বোধন করা হয়।
এ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানেই নিজেদের বক্তব্যে এমন মূল্যায়ন উপস্থাপন করেন সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ও সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ। প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউসের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব মো. নজরুল ইসলাম প্রকল্প বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ তথ্য চিত্র উপস্থাপন করেন।
দেশের প্রথম এই এক্সপ্রেসওয়ে উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘এই ধরনের বড় বড় প্রকল্প আমাদের বাংলাদেশের মর্যাদা আরও বৃদ্ধি করবে।
এই ধরনের আধুনিক সড়কপথ নির্মাণ হওয়ায় দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের জীবনযাত্রার চিত্রও পাল্টে যাবে। এখন থেকে খুব দ্রুত টুঙ্গিপাড়া যেতে পারব। এই মাসেই আমি টুঙ্গিপাড়া যাবো। তখন এক্সপ্রেসওয়ে দেখা যাবে।’
ঢাকা থেকে মাওয়া পর্যন্ত অর্থাৎ, যাত্রাবাড়ি মাওয়া, পাচ্চর-ভাঙ্গা জাতীয় মহাসড়ক-এটা হচ্ছে দেশের সর্বপ্রথম এক্সেস কন্ট্রোল এক্সপ্রেসওয়ে’ উল্লেখ করে প্রধামন্ত্রী নির্মাণ কাজে দক্ষতার জন্য বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেন।
তিনি বলেন, ‘এই সেতু নির্মাণে আমাদের বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ওপর দায়িত্ব ছিল। কারণ এটা একটি জটিল কাজ ছিল। আর যেখানে জটিল হয় সেখানে আমাদের সেনাবাহিনী খুব দক্ষতার সঙ্গে কাজ করে।’
চোখে-মুখে খুশির ঝিলিক নিয়ে যখন প্রধানমন্ত্রী বলছিলেন তখন অদূরেই বসে থাকা বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদও মাথা নাড়াচ্ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের সেনাবাহিনীর ২৪ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্রিগেড সর্বক্ষণ কাজ করেছে। তাদের সঙ্গে আমাদের ১৭, ১৯ ও ২০ ইঞ্জিনিয়ার ব্যাটালিয়ন তাদের সকল অফিসার থেকে শুরু করে জেসিও থেকে শুরু করে যারা সৈনিক কাজ করেছেন, তাদের ধন্যবাদ।’
২৪ কনস্ট্রাকশন ব্রিগেড সেনাবাহিনী অনেক দু:সাধ্য সাধন করেছে জানিয়ে সড়কমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এমপি বলেন, ‘থানচীর উঁচু পাহাড়ে সেনাবাহিনী রাস্তা নির্মাণ করেছে। সেখানে তাদের দু’তিনজন জোয়ানকে জীবন দিতে হয়েছে। অনেক কষ্ট করে তারা করে।
ঢাকার বাইরে তারা প্রথম ফেনী উড়াল সেতু, মাওনা উড়াল সেতু সেনাবাহিনীর কাজ। নির্দিষ্ট সময়ের আগে তারা এই কোয়ালিটি কাজগুলো তারা করেছে। আমাদের সীমান্ত সেতু তারা নির্মাণ করেছে।
২২ বছরের ঝুলে থাকা মেরিন ড্রাইভটি প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে সেনাবাহিনী সম্পন্ন করতে না পারলে আমরা সাংঘাতিক ঝামেলার মধ্যে পড়ে যেতাম।’
অনুষ্ঠানে নিজের বক্তৃতায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে আজ আমরা পদ্মাসেতু নিজেরাই তৈরি করছি।
সেই স্বপ্নের পদ্মাসেতুর উভয় পাশের সংযোগ সড়ক নির্মাণে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সম্পৃক্ততায় আমরাও আপনার স্বপ্নের অংশীদার হতে পেরে নিজেদের কৃতার্থ মনে করছি।’
বাংলাদেশ সেনাবাহিনী আজ দেশের অবকাঠামোগত উন্নয়নে সর্বোচ্চ দক্ষতার স্বাক্ষর রেখে চলেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘চলমান প্রকল্পসমূহের ক্রমবর্ধমান জটিলতা সত্ত্বেও গুণগতমান বজায় রেখে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে প্রকল্পসমূহের কার্যক্রম সমাপ্তকরণকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী চ্যালেঞ্জ হিসেবে গ্রহণ করে।
এই সকল চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে কাঙ্খিত সাফল্য আনয়নে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের দৃঢ় ভূমিকা ও সার্বিক সহযোগিতা অব্যাহত রয়েছে।’
পদ্মাসেতু বাস্তবায়নে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ওপর অর্পিত অংশের কাজ ইতোমধ্যেই শেষ হয়েছে জানিয়ে সেনাপ্রধান বলেন, ‘সেই সাথে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর পরামর্শক সেবায় ১৭২ কিলোমিটার দীর্ঘ পদ্মা ব্রিজ রেললিংক প্রজেক্টের নির্মাণ কাজও দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে।
সময়ের পরিক্রমায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী আজ একটি দক্ষ, সুশৃঙ্খল ও সুসংগঠিত বাহিনীরূপে আত্নপ্রকাশ করেছে।’
‘আমাদের অকুতোভয় সেনানীরা দেশ গঠনমূলক বিভিন্ন কার্যক্রমে জাতীয় দুর্যোগ মোকাবেলায় ও আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে নিজেদের আন্তরিকতা, কতর্ব্যনিষ্ঠা, দক্ষতা এবং সর্বোপরি নিরপেক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে বিশ্বব্যাপী সুখ্যাতি ও প্রভূত সুনাম অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে, যোগ করেন জেনারেল আজিজ আহমেদ।
তিনি বলেন, ‘গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের বর্তমান সুযোগ্য নেতা, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বলিষ্ঠ নেতৃত্বে এবং সুনির্দিষ্ট দিক নির্দেশনায় ফোর্সেস গোল-২০৩০ বাস্তবায়নের পথে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী আজ একটি আধুনিক ও সমৃদ্ধ সেনাবাহিনী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
আপনার প্রত্যক্ষ নির্দেশনা অনুযায়ী এই সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের নিয়ন্ত্রণাধীন সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে ৫৫ কিলোমিটার দীর্ঘ দেশের সর্বপ্রথম নির্মিত এই এক্সেস কন্ট্রোল এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণে সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ও ট্রাফিক ডিজাইন অনুসরণ করা হয়েছে।’
দেশপ্রেমিক এই বাহিনীর প্রধান আরও বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনার সুদক্ষ নেতৃত্ব এবং সময়োচিত দিক নির্দেশনায় ঢাকা মহানগরীসহ সমগ্র দেশে ভৌত অবকাঠামো এবং যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন ও আধুনিকায়নে যে বৈপ্লবিক পরিবর্তন ও অসামান্য উন্নয়ন সাধিত হয়েছে তার জন্য আপনার প্রতি অশেষ ধন্যবাদ ও আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।’
‘দেশ ও জাতির উন্নয়নে এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নে উন্নয়ন সহযোগী হিসেবে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সর্বদা নিরলস কাজ করে যাচ্ছে এবং ভবিষ্যতেও এই ধরণের উন্নয়ন কর্মকান্ডে সেনাবাহিনীর সদস্যরা সর্বদা নিয়োজিত থাকবে, দৃঢ় কন্ঠে উচ্চারণ আজিজ আহমেদের।
তিনি বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আলোচ্য এই প্রকল্পটির বাস্তবায়ন কাঙ্খিত সময়ের পূর্বেই সম্ভবপর হয়েছে শুধুমাত্র আপনার ঐকান্তিক আগ্রহ, সকল মন্ত্রণালয় ও সেবাপ্রদানকারী বিভিন্ন সংস্থা তথা অত্র অঞ্চলের আপামর জনসাধারণের আন্তরিক সহযোগিতায়।
সফলভাবে এবং দ্রুততার সাথে এই প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য আমি ইএনসি মহাপরিচালক ২৪ ইঞ্জিনিয়ার কনষ্ট্রাকশন ব্রিগেড এবং তার অধীনস্থ ১৭ ও ১৯ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্যাটালিয়নের সকল অফিসার, জেসিও ও অন্যান্য পদবীর সৈনিকদের আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাচ্ছি।’
‘বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে ভবিষ্যতেও যে কোন অবকাঠামোগত উন্নয়নে যে কোন প্রকল্প প্রদান করা হলে আন্তরিকতার সাথে একই স্পৃহা নিয়ে তা সম্পাদনে সর্বদা প্রস্তুত রয়েছে, বলেও জানান সেনাপ্রধান।
কালের আলো/এমএএএমকে