খাদ্য মজুদের কিছু নেই : খাদ্যমন্ত্রী; অতিরিক্ত পণ্য কিনবেন না : বাণিজ্যমন্ত্রী

প্রকাশিতঃ 3:24 pm | March 18, 2020

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:

ব্যবসায়ীরা যদি করোনা ভাইরাসকে পুঁজি করে বাজে কথা ছড়ায় তাহলে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার।

তিনি বলেছেন, পর্যাপ্ত খাদ্য মজুদ আছে, ভোক্তাদের আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। অনেক খাদ্য কিনে মজুদ করারও প্রয়োজন নেই।

বুধবার (১৮ মার্চ) দুপুরে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে চলমান বাজার মনিটরিং বিষয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়ে তিনি এসব কথা বলেন।

খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার,‘সারাবিশ্বে করোনাভাইরাস মহামারি আকার ধারণ করেছে। পুরো বিশ্বই করোনায় আক্রান্ত হয়েছে, বাংলাদেশও হয়েছে। করোনা ভাইরাসের জন্য চাল-গম নিয়ে ভোক্তারা যেন আতঙ্কিত না হয়। কোনো ব্যবসায়ী, মিলার এটটাকে যদি পুঁজি হিসেবে ব্যবহার করে, বাজার অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করে, কোনোক্রমেই সরকার চুপচাপ বসে থাকবে না। আমাদের পর্যাপ্ত খাদ্য মজুদ আছে। শুধু মজুদই নয় আমরা ওএমএসে চাল বিতরণের জন্য মিলারদের চিঠি দিয়েছি। তারা নিয়ে বাজারে বিক্রি করবে এবং আমাদের আটার বিক্রয় সবসময় চলছে, চলবে।’

তিনি বলেন, ‘প্রকৃত ব্যবসায়ী-মিলারদের উচিত মানবতার প্রশ্নে আরও মানুষের সেবা দান করা। সেখানে যদি কেউ এটা নিয়ে বাড়তি সুযোগ নেয়ার চেষ্টা করে, খাদ্য মন্ত্রণালয় সে বিষয়ে নজর রাখবে। আমরা আরও মনিটরিং জোরদার করছি। সামনে রোজাকে সামনে রেখে যাতে কোনো প্রকারের অবৈধ ব্যবসা কেউ করতে না পারে, আমরা সে ব্যাপারে সচেষ্ট আছি। ভোক্তাদের চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই। কেউ মজুদ রেখে কষ্টে ফেলার চেষ্টা করলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়াসহ আমরা বাইরে থেকে চাল আমদানি করব। চালের দাম আমরা বাড়তে দেব না।’

যারা বেশি খাদ্য সংগ্রহ করছে সে বিষয়ে করণীয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ভোক্তাদের বলতে চাই, চালের কোনো সংকট নেই। অযথা বাড়তি চালক্রয়ের প্রয়োজন নেই। ব্যবসায়ীরা বাজে কথা বলে করোনার অজুহাত দিলে আমরা আইনগত ব্যবস্থা নেব। আমাদের ২৫টি মনটরিং টিম আছে। প্রয়োজনে তা আরও বাড়াব। এটা শুধু খাদ্য মন্ত্রণালয় নয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও প্রধানমন্ত্রীর সেলও মনিটরিং করছে। আমরা শক্ত অবস্থানে আছি।’

সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেন, ‘এ মুহূর্তে আমাদের ১৭ লাখ ৩৯ হাজার ৪৯৫ খাদ্যশস্য মজুদ আছে। যার মধ্যে গম ৩ লাখ ১৯ হাজার টন, বাকি সব চাল। গত বছর মজুদ ছিল ১৫ লাখ ৪৪ হাজার টন।’

ওএমএস কবে থেকে চালু হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ওএমএস চলমান আছে। যেহেতু বাজারের মোটা চাল থেকে ওএমএসের চালের দাম বেশি তাই কেউ কেনে না। আমরা ডিলারদের বলেছি, তারা তুলে বাজারজাত করবে।’

বাড়তি খাদ্য বিক্রি না করার বিষয় ব্যবসায়ীদের কোনো বার্তা দেবেন কি না- জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ‘এই বার্তার চিঠি আমরা ইতোমধ্যে রেডি করেছি। আমরা স্বরাষ্ট্র-বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, ব্যবসায়ী এবং এফবিসিসিআই সব জায়গায় আজকে চিঠি দিয়ে দিচ্ছি। আমরা অসাধু ব্যবসায়ীদের ধরতে পারলে কী ধরনের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হবে আপনারা তা জানতে পারবেন। যে শাস্তি হবে আপনারা বাহবা দেবেন। ২৫ দিন পর হাওরের ধান পাব, সুতরাং চিন্তার কোনো কারণ নেই।’

অতিরিক্ত পণ্য কিনবেন না : বাণিজ্যমন্ত্রী
অন্যদিকে করোনাভাইরাসের কারণে আতঙ্কিত হয়ে ভোক্তাদের প্রয়োজনের অতিরিক্ত পণ্য না কেনার আহ্বান জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি।

তিনি বলেছেন, করোনাভাইরাসের কারণে নিত্যপণ্য আমদানিতে কোনো ধরনের প্রভাব পড়েনি। এ জন্য অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ পণ্য বেশি রয়েছে। তাই প্রয়োজনের অতিরিক্ত পণ্য কিনে অযথা অস্থিরতা সৃষ্টি করবেন না।

বুধবার (১৮ মার্চ) বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন বাণিজ্যমন্ত্রী।

তিনি বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়ায় জনগণ আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে। তারা হঠাৎ করে প্রয়োজনের তুলনায় বেশি পণ্য ক্রয় করছে। তাই গত দুই দিনে খুচরা বাজারের দামে কিছুটা প্রভাব পড়েছে। গত দুই দিন এ অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। তবে পাইকারি বাজারে কোনো পণ্যের দাম বাড়েনি।

বাজারে কোন পণ্যে মজুদ ও সরবারাগে ঘাটতি নেই বলে জানান বাণিজ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, অতিরিক্ত পণ্য কিনে অহেতুক বাজারে অস্থিরতা তৈরি করবেন না। প্রত্যেকটি পণ্যের যথেষ্ট মজুদ আছে। জনগণ মনে করতে পারে সমস্যা হবে, কিন্তু আসলে কোন সমস্যা হবে না। কারণ, করোনার কারণে নিত্যপণ্য আমদানিতে কোন প্রভাব পড়েনি। বরং অন্যান্য বছরের চেয়ে ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ আমদানি বেশি হয়েছে। কাজেই আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।

টিপু মুনশি বলেন, মুজিববর্ষকে সামনে রেখে ইতোমধ্যে চিনি, ডাল, ভোজ্যতেল ও পেঁয়াজের বিক্রি কম করছে টিসিবি। আসন্ন রমজানে অন্যান্য বছরের তুলনায় ৭ থেকে ১০ গুণ বেশি পণ্য নিয়ে মাঠে থাকবে টিসিবি।

তিনি বলেন, প্রত্যেকটি পণ্যের ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ বেশি মজুদ রয়েছে। বৈশ্বিক সমস্যার পরও আমাদের সবকিছু সুদৃঢ় রয়েছে। প্রয়োজনের অতিরিক্ত পণ্য কেনার জন্য হঠাৎ করে বাজারে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে।

কালের আলো/এনআর/এমএইচএ