ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাছির উদ্দিন, বদলী হলে লাভ-ক্ষতি কাদের?
প্রকাশিতঃ 11:40 am | June 01, 2018
অ্যাক্টিং এডিটর, কালের আলো:
নাছির উদ্দিন আহমেদ। একজন উচ্চপদস্থ সেনা কর্মকর্তা। একজন স্বাপ্নিক। এই স্বপ্ন তিনি ঘোমের ঘোরে দেখেননি। বরং এই স্বপ্নই কেড়ে নিয়েছে তাঁর জীবনের অনেক দিনের ঘুম। যখন যেখানে দায়িত্ব পালন করেছেন সেখানেই সেবার মানসিকতা ও নতুন নতুন কনসেপ্ট বাস্তবায়ন করে দৃশ্যপট আমুল বদলে দিয়েছেন। ঢাকা সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের কমাডেন্ট হিসেবে ওই হাসপাতালকেও বিশ্বমানে পৌঁছে দিতে তাঁর সফল প্রয়াসের গল্প কার না জানা!
নিজের কর্ম, নেতৃত্ব ও সাহসিকতায় ৫৪ বছর আগে প্রতিষ্ঠিত ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ (মমেক) হাসপাতালকেও দেশের মানচিত্রে অনন্য এক উচ্চতায় নিয়ে গেছেন এ পরিচালক। সরকারি এ হাসপাতালে সেবার গল্প এখন রূপকথা নয়, বাস্তবতা এমনটিই প্রমাণ করে ছেড়েছেন মাত্র দুই বছর সাত মাসে। সরকারি এ হাসপাতালের প্রতি বৃহত্তর ময়মনসিংহের প্রায় আড়াই কোটি মানুষের আস্থা ও বিশ্বাসের জায়গা তৈরি করেছেন দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীর এ ব্রিগেডিয়ার জেনারেল।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন একজন অসুস্থ রোগী থেকে শুরু করে স্থানীয় জনসাধারণ-সবাইকেই আলোর পথ দেখিয়েছেন তিনি। কর্মজীবনেও দৃঢ়চেতা, আদর্শনিষ্ঠ ও নীতিবান এ মানুষটিকে একবার নয়, বার বার এই পদ থেকে সরিয়ে দেয়ার পরিকল্পনা হয়েছে। ষড়যন্ত্র এখনো হচ্ছে একদিন-প্রতিদিন।
কিন্তু কোন পরিকল্পনা বা ষড়যন্ত্র সাফল্যের মুখে দেখেনি মূলত সরকার প্রধান, বিশ্বনেত্রী শেখ হাসিনা এমপি এবং বিরোধী দলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদ এমপি’র দক্ষ নেতৃত্বগুণ ও বিচক্ষণতার দৌলতে। স্থানীয় জনসাধারণও বিশাল হৃদয়ের অধিকারী মহানুভব এ মানুষটিকে যেতে দিতে চাননা সহসাই। এজন্যই তো স্বপ্রণোদিতভাবে মাস কয়েক আগে স্বত:স্ফূর্ততার সঙ্গেই তাঁরা রাস্তায় নেমেছিলেন। তাদের সেই প্রত্যাশা, হৃদয়ের আকাঙ্খা পূরণ করেছেন বঙ্গবন্ধু কন্যা।
সরকার প্রধান ও বিরোধী দলীয় নেতার তড়িৎ হস্তক্ষেপে অসীম সাহসী, দৃঢ়তায় অবিচল, দেশপ্রেম ও মানবিক গুণাবলী সম্পন্ন আদর্শবান এ ‘টিম লিডার’কে এ হাসপাতালেই বহাল রাখা হয়েছে। মানবিক ভালোবাসায় এ পরিচালক সবার মন জয় করতে পারলেও অবশ্য তুষ্ট করতে পারেননি এক শ্রেণির চিকিৎসক নেতা বা তাদের ঘনিষ্ঠদের।
ফলে তাঁরাই এখন প্রচার-প্রপাগান্ডা ছড়িয়ে দিচ্ছেন ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ (মমেক) হাসপাতালে শেষ হতে যাচ্ছে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাছির উদ্দিনের আলোকিত ও স্বর্ণালী অধ্যায়। আর মাত্র ক’দিনের মাথায় বিদায় নিতে হবে তাকে। এ গুজবের বিপরীতে প্রতিবাদী হয়ে ওঠেছে মানুষজন। এ নিয়ে সৃষ্ট ধূম্রজালের অবসানও ঘটিয়েছেন দেশের সব সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালকদের মধ্যে অনুকরণীয় এ মানুষটি।
বৃহস্পতিবার (৩১ মে) রাতে নিজের ফেসবুক ওয়ালে একটি স্ট্যাটাসে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ (মমেক) হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাছির উদ্দিন লিখেছেন- ‘একটি মহল অপপ্রচার চালাচ্ছে আমি সহসা বদলী হয়ে যাব। এটা মিথ্যা, ভিত্তিহীন, গুজব। সরকার যতদিন চাইবে আমি ততদিন আমার দায়িত্ব পালন করব।’ আদতে ঠিকই বলেছেন দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীর এ কর্মকর্তা।
এ অঞ্চলের মানুষের ভালোবাসার দৃঢ়তায় সত্যনিষ্ঠ ও মানবতাবাদী এ মানুষটির বিরুদ্ধে ‘ক্যু’ এর আগে যেভাবে রোধ করা সম্ভব হয়েছিল এবারো ঠিক একইভাবে ‘তর্জনী’ দেখিয়েই হটিয়ে দেয়া হবে সেইসব ষড়যন্ত্রকারীদের যারা এ হাসপাতালটিকে আবারো পৌনে তিন বছরের আগের অবস্থায় ফিরিয়ে নিয়ে যেতে চান।
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাছির উদ্দিন আহমেদের স্ট্যাটাসে ময়মনসিংহ চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাষ্ট্রি’র পরিচালক শঙ্কর সাহা লিখেছেন- ‘ধন্যবাদ স্যার। আপনার জন্য শুভ কামনা রইলো।’ অবুঝ বাবু নামে একজনের মন্তব্য- ‘আপনার জন্য আমরা মাঠে নামতে প্রস্তুত।’
দুলাল তালুকদার নামে আরেকজন লিখেছেন- ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সহানুভূতি রয়েছে আপনার প্রতি। একই সঙ্গে বৃহত্তর ময়মনসিংহের জনসাধারণের ভালোবাসা আপনার প্রতি আছে। আপনি আছেন বিধায় জনসাধারণ সুচিকিৎসা পাচ্ছে এবং সকল প্রকার পরীক্ষা হাসপাতালে ভেতরে হচ্ছে। রোগীরা শতভাগ ওষুধ পাচ্ছে। হাসপাতাল ব্যাপক উন্নয়ন হচ্ছে।’
আপন চিত্তের বৈভবে, বিশাল মনের ঔদার্যে দেশের চিকিৎসা অঙ্গণে এক উজ্জ্বলতম প্রতিভূ ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাছির উদ্দিনের প্রতি স্থানীয় জনসাধারণের এমন ভালোবাসাই প্রমাণ করে, সরকার দলের পেশাজীবী সংগঠনের এক শ্রেণির নেতা, তাদের স্বজন, ক্লিনিক-ডায়াগনোস্টিক সেন্টারের মালিকদের এমন ‘রঙিন খোয়াব’ স্থানীয় জনসাধারণ কর্পূরের মতো মিশিয়ে দেবে।
‘একজন উচ্চপদস্থ সেনা কর্মকর্তা বদলী হবেন না কী কর্মগুণেই স্বপদে বহাল থাকবেন- এটা কী জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ঠিক করবে না কী এক শ্রেণির নেতারা নির্ধারণ করবেন? তারা কী সরকারের চেয়েও ক্ষমতাধর! আড়মোড়া ভেঙে জেগে ওঠা মানুষজনের কেউ কেউ এমন প্রশ্নও তুলেছেন।
স্থানীয়দের ভাষ্য হচ্ছে- ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ (মমেক) হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাছির উদ্দিন আহমেদ নিজের মানবিক জীবনদর্শন দিয়ে আন্দোলিত করেছেন এ অঞ্চলের প্রায় আড়াই কোটি মানুষকে। তিনি বঙ্গবন্ধু কন্যা, জননেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেছেন।
ময়মনসিংহ-৪ (সদর) আসনের বর্ষীয়াণ সংসদ সদস্য ও জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদ ও ধর্মমন্ত্রী প্রিন্সিপাল মতিউর রহমানও নি:সন্দেহে তাঁর নেতৃত্বে মমেক হাসপাতালের গৌরবময় পথচলার অংশীদার। দুই বছর সাত মাসের স্বল্প-দৈর্ঘ্য পথচলায় বরাবরই তাদের আকুন্ঠ সমর্থন ও হৃদয় নিংড়ানো ভালোবাসা পেয়েছেন তিনি।
দেশপ্রেমিক এ সেনা কর্মকর্তার সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে মিশেছেন কিংবা তাঁর পরিচিতজনেরাও বলছেন, কর্মে-কথায়, চিন্তা-চেতনায় উদার, সত্যনিষ্ঠ ও মানবতাবাদী পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাছির উদ্দিন একটি চক্রের প্রপাগান্ডায় ক্ষণে ক্ষণেই গভীর বেদনা অন্তরে ধারণ করেন ঠিকই।
কিন্তু তিনিই যখন দেখেন সুচিকিৎসা ও কাঙ্খিত সেবা নিয়ে হাসিমুখে একজন রোগী এই হাসপাতাল থেকে বের হয়ে যাচ্ছেন তখন এ মানুষটির মুখেই আবার ফুটে ওঠে তৃপ্তির হাসি। একদিন না একদিন হাসপাতাল বিরোধী, সুবিধালোভী চক্রটি অভিশপ্ত, ঘৃণিত এবং পরাজিত হবেনই এবং দিন শেষে জয় হবে মানবতার জয়গান গাওয়া বিশাল হৃদয়ের এ মানুষটির।
কালের আলো/এএ
** দ্রুত খবর জানতে ও পেতে কালের আলো’র ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে রাখুন: KalerAlo/Facebook