প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তকে স্বাগত; করোনাভাইরাস মোকাবেলায় মাঠে সেনাবাহিনী

প্রকাশিতঃ 10:28 pm | March 23, 2020

বিশেষ সংবাদদাতা, কালের আলো :

করোনাভাইরাস আতঙ্কে কাঁপছে গোটা বিশ্ব। প্রতিনিয়তই বাড়ছে মৃত ও আক্রান্তের সংখ্যা। বাংলাদেশেও এই পর্যন্ত সরকারি হিসাবে ৩ জন মারা গেছেন।

আক্রান্ত হয়েছেন ৩৩ জন। ফলে দেশজুড়ে সাধারণ মানুষের মাঝে চাপা আতঙ্ক বিরাজ করছে। জীবনের স্বাভাবিক ছন্দপতন ঘটেছে। অনেক এলাকায় নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে চলাচল।

করোনার সংক্রমণ সামাজিকরণের সম্ভাবনা তৈরি হওয়ায় এর বিস্তার রোধ করতে সর্বোচ্চ কঠোর অবস্থান নিয়েছে সরকার। জনমনে বিরাজমান আতঙ্ক ও অস্বস্তি দূর করতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

আরও পড়ুন: করোনা নিয়ন্ত্রণে সেনাবাহিনীর কর্মপরিকল্পনা, ডিসিরা রিকুইজিশন দিলে হবে ‘ক্যাম্প’ স্থাপন

সরকারের নির্ধারিত কোয়ারেন্টাইন সেন্টার চালুর পাশাপাশি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে বিমানবন্দর সংলগ্ন হজক্যাম্পে কোয়ারেন্টাইন সেন্টারের কার্যক্রমও শুরু হয়েছে।

এবার অগামীকাল মঙ্গলবার (২৪ মার্চ) থেকে বিভাগীয় ও জেলা শহরগুলোতে সামাজিক দূরত্ব ও সতর্কতা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে জেলা প্রশাসনকে সহায়তা করতে মাঠে নামছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী।

সোমবার (২৩ মার্চ) সচিবালয়ে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে সরকারের এই সিদ্ধান্তের কথা জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম।

আরও পড়ুন: পথে পথে সেনাবাহিনীর জীবাণু নাশক স্প্রে কার্যক্রম (ভিডিও)

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সময়োপযোগী ও বিচক্ষণ এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন দেশের সাধারণ মানুষ। তারা মনে করেন, এই সিদ্ধান্ত গ্রহণের মাধ্যমে দেশের সাধারণ মানুষের প্রত্যাশার প্রতিফলন ঘটিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এই সিদ্ধান্তে খুশি হয়েছেন বুদ্ধিজীবী, সুশীল সমাজ ও পেশাজীবীসহ সব মহলই।

জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনীর সদস্য হয়ে বিশ্বের দেশে দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠায় অভাবনীয় সাফল্য দেখানো সেনাবাহিনীকে করোনাভাইরাস প্রতিরোধে বিভাগীয় ও জেলা শহরগুলোতে সামাজিক দূরত্ব ও সতর্কতা ব্যবস্থা নিশ্চিতের দায়িত্ব দেওয়ায় ইতিবাচক ফল আসবে বলেও মনে করছেন সচেতন সাধারণ মানুষ।

আরও পড়ুন: সারাদেশে মাঠে নামলো সেনাবাহিনী

প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সেনাপ্রধানের বৈঠক
বাংলাদেশের সেনাবাহিনী এদেশের সম্পদ। দেশের মানুষের ভরসা ও বিশ্বাসের মূর্ত প্রতীক। দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার সাংবিধানিক ও পেশাগত দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি সেনাবাহিনী মুক্তিযুদ্ধোত্তর বাংলাদেশ গঠন এবং বিভিন্ন দুর্যোগ মোকাবিলায় বলিষ্ঠ ভূমিকা রেখে চলেছে।

বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদও বারবার বলে আসছেন, জাতীয় যে কোন প্রয়োজনে সেনাবাহিনী সর্বোচ্চ ত্যাগ শিকারে প্রস্তুত। একই সঙ্গে দেশের অগ্রগতির ধারাকে অব্যাহত রাখতে সরকারকে সব রকম সহযোগিতা করবে।

প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস সংক্রমণসহ দেশের সামগ্রিক পরিস্থিতি নিয়ে সোমবার (২৩ মার্চ) নিজ কার্যালয়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদের সঙ্গে বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সোমবার (২৩ মার্চ) সচিবালয়ে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য জানান প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড.আহমদ কায়কাউস।

আরও পড়ুন: বক্সের মাধ্যমে দূরত্ব চিহ্নিত; সেনাবাহিনীর কর্মযজ্ঞে দেশজুড়ে স্বস্তির সুবাতাস (ভিডিও)

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বৈঠকে জেলা ও বিভাগীয় শহরগুলোতে সেনাবাহিনী মোতায়েনসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তাদের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হয়েছে। এই বৈঠকের পরপরই বিকেলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম সামাজিক দূরত্ব ও সতর্কতা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে জেলা প্রশাসনকে সহায়তা করতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর মাঠে নামার বিষয়ে ঘোষণা দেন।

আশকোনার কোয়ারেন্টাইন সেন্টারের সক্ষমতা 
মনোরম পরিবেশ ফিরিয়ে আনা হয়েছে আশকোনার হাজীক্যাম্পে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী পরিচালিত কোয়ারেন্টাইন সেন্টারে। এই সেন্টারে প্রায় ৩ শতাধিক মানুষকে রাখার সক্ষমতা রয়েছে। 

সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনেও বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার (পিএসও) লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো: মাহফুজুর রহমান জানান, হাজীক্যাম্পের কোয়ারেন্টাইন সেন্টারে ৩ জন রয়েছেন। পরিস্থিতি মোকাবেলায় আমাদের সব ধরণের প্রস্তুতি রয়েছে।’

আন্ত:বাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্ণেল আব্দুল্লাহ ইবনে জায়েদ কালের আলোকে জানান, আগামীকাল মঙ্গলবার (২৪ মার্চ) থেকে সামাজিক দুরত্ব ও সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ, সন্দেহজনক ব্যক্তিদের কোয়ারেনটাইন ব্যবস্থা পর্যালোচনায় বিভাগীয় ও জেলা শহরগুলোতে বেসামরিক প্রশাসনকে সহয়াতায় ইন এইড টু সিভিল প্রশাসন এর আওয়াতায় সেনাবাহিনী নিয়োজিত থাকবে।’

আরও কী কী কাজ করবে সেনাবাহিনী
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর দায়িত্বশীল বিভিন্ন সূত্র নিশ্চিত করেছে, জেলা ও বিভাগীয় শহরগুলোতে সশস্ত্র বাহিনী বিদেশফেরত যারা সেলফ কোয়ারাইন্টানে আছে কীনা এটা তদারক ও নিশ্চিত করবে। সিভিল প্রশাসন জেলায় মেডিকেল সহায়তা চাইলে সেটিও নিশ্চিত করা হবে।

সরকারের প্রয়োজন হলে ফিল্ড হসপিটালের পাশাপাশি কোয়ারেন্টাইন সেল প্রতিষ্ঠিত করবে। যারা বিদেশ থেকে এসেছে তারা ঘরের মধ্যে আছে কীনা তা খুঁজে বের করা হবে। সরকারের প্রয়োজন হলে ঢাকার বাইরেও বিভিন্ন জেলা ও বিভাগীয় শহরে কোয়ারেন্টাইন সেন্টার করতে পারবে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। 

আইএসপিআরের প্রেস নোট 
আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) রাতে এক প্রেস নোটে জানিয়েছে, জেলা ম্যাজিষ্টেটদের সমন্বয়ে সেনাবাহিনী করোনা ভাইরাস সংক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা ব্যবস্থা, সন্দেহজনক ব্যক্তিদের কোয়ারেনটাইন ব্যবস্থা পর্যালোচনা করবে। 

বিশেষ করে বিদেশ ফেরত ব্যক্তিদের কেউ নির্ধারিত কোয়ারেনটাইনের বাধ্যতামূলক সময় পালনে ত্রুটি/অবহেলা করছে কিনা তা পর্যালোচনা করবে। জেলা ম্যাজিষ্টেটগণ স্থানীয় আর্মি কমান্ডারের কাছে অবস্থা পর্যালোচনার জন্য আইন অনুসারে সেনা বাহিনীর নিকট অনুরোধ জানাবে। 

নৌবাহিনী উপকুলীয় এলাকায় বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তায় কাজ করবে। বিমান বাহিনী হাসপাতালের প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সামগ্রী ও জরুরী পরিবহন কাজে নিয়োজিত থাকবে।

কালের আলো/এমএএএমকে