বিশ্ব মানচিত্রে সুনাম কুড়ানো সশস্ত্র বাহিনীর ইমেজ ‘প্রশ্নবিদ্ধ’ করতে চায় কারা?
প্রকাশিতঃ 12:26 pm | March 26, 2020
বিশেষ সংবাদদাতা, কালের আলো :
প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় দেশজুড়ে জেলা ও বিভাগীয় প্রশাসনকে সহায়তা দিচ্ছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীসহ সশস্ত্র বাহিনী। সামাজিক দূরত্ব ও বিদেশ ফেরত প্রবাসীদের হোম কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করতেই মূলত জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেটদের নেতৃত্বে নগর ও জেলার সড়ক এবং অলিগলিতে টহল দিচ্ছেন তারা।
আরও পড়ুন: প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তকে স্বাগত; করোনাভাইরাস মোকাবেলায় মাঠে সেনাবাহিনী
জনসমাগম না করতে হ্যান্ড মাইকে সবার প্রতি আহ্বান জানাচ্ছেন। করোনাভাইরাস প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি জেলা প্রশাসক (ডিসি) হওয়ায় তাদের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ শেষে বিভিন্ন এলাকায় কারা হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকছেন বা কারা এই নির্দেশ মানছেন না এই বিষয়টিও নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করতে বাড়ি বাড়িও যাচ্ছেন।
কিন্তু এসবের মধ্যেই বিশ্বশান্তি রক্ষায় অহঙ্কার ও গৌরবের ইতিহাস বহনকারী বাংলাদেশ সেনাবাহিনী তথা সশস্ত্র বাহিনীর নামে আজগুবি, অসত্য ও বানোয়াট গুজব রটিয়ে আতঙ্ক ছড়াতে চেষ্টা করেছে একটি চক্র।
স্থানীয় প্রচলিত নানা ভাষার প্রয়োগে দীর্ঘ সময়ের পুরনো ছবি ব্যবহার ও ভিত্তিহীন খবর প্রচারের মাধ্যমে ভীতি-আতঙ্ক তৈরির পাশাপাশি বাঙালি জাতির গর্বের এই বাহিনীর ইমেজ ‘প্রশ্নবিদ্ধ’ করার অপচেষ্টাও চালাচ্ছে।
আরও পড়ুন: করোনা নিয়ন্ত্রণে সেনাবাহিনীর কর্মপরিকল্পনা, ডিসিরা রিকুইজিশন দিলে হবে ‘ক্যাম্প’ স্থাপন
অপপ্রচার বা গুজবে সেই পুরনো ছবি
গাড়ির ভেতর এলএমজি তাক করে সেনাবাহিনী যাচ্ছে এটা কোন এক নির্বাচনের সময়কার অনেক পুরনো ছবি। জনমনে আতংক তৈরির জন্যই এই ছবি ব্যবহার করে বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে। গুজব ছড়ানো হচ্ছে, সেনাবাহিনী ও পুলিশ বাসার ভেতর ঢুকে ফ্রিজে রাখা সব খাবার ফেলে দিচ্ছে।
আসলে এবার জনগণকে সচেতন করতেই মুলত সেনাবাহিনী মাঠে কাজ করছে। সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী তারা জনসমাগম না করে মানুষকে ঘরের ভেতর থাকার অনুরোধ জানিয়ে আসছে। কিন্তু তাদেরকে জনগণের প্রতিপক্ষ হিসেবে দাঁড়া করানোর ষড়যন্ত্র করছে একটি চক্র।
জাতির উদ্দ্যেশ্যে দেওয়া ভাষণে গুজব ছড়িয়ে বা গুজবে কান না দিয়ে সবাইকে নিজ নিজ ঘরে থাকার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘করোনাভাইরাস মোকাবেলাও একটা যুদ্ধ। এই যুদ্ধে আপনার দায়িত্ব ঘরে থাকা। আমরা সকলের প্রচেষ্টায় এই যুদ্ধে জয়ী হব ইনশাআল্লাহ।’
আরও পড়ুন: পথে পথে সেনাবাহিনীর জীবাণু নাশক স্প্রে কার্যক্রম (ভিডিও)
সতর্ক বার্তা আইএসপিআরের
এসব অপপ্রচার ও বানোয়াট মিথ্যাচারের বিষয়টি নজরে আসায় সতর্ক বার্তা দিয়েছে সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর মুখপাত্র হিসেবে পরিচিত আন্ত:বাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর)। বুধবার (২৫ মার্চ) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে তারা সশস্ত্র বাহিনী সম্পর্কে বিভ্রান্তিকর সংবাদ প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়েছেন।
বলেছেন, ‘করোনা ভাইরাস বিস্তার রোধে দেশের সব জেলায় মোতায়েনকৃত সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনী সম্পর্কে কোনো ধরনের অসত্য, বিভ্রান্তিকর ও অনুমান নির্ভর সংবাদ ও ছবি প্রকাশ না করার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করা হয়েছে।
এছাড়া সশস্ত্র বাহিনী সম্পর্কে সংবাদ পরিবেশনের আগে আইএসপিআরের কাছ থেকে যাচাই করে নেওয়ার জন্যও অনুরোধ করা হয়েছে।’
আরও পড়ুন: বক্সের মাধ্যমে দূরত্ব চিহ্নিত; সেনাবাহিনীর কর্মযজ্ঞে দেশজুড়ে স্বস্তির সুবাতাস (ভিডিও)
প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ; সেনাবাহিনীর প্রশংসা
বিশ্বের অনেক দেশ নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঝুঁকি এড়াতে ইতোমধ্যেই ১৪ দিন বা ২১ দিন লকডাউন হওয়ার রেকর্ড গড়েছে। সেই পথে হেঁটেছে বাংলাদেশও।
বুধবার (২৫ মার্চ) রাতে জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে করোনা পরিস্থিতি, সরকারের সর্বাত্নক প্রস্তুতি ও এরই মধ্যে দেওয়া বিভিন্ন নির্দেশনার কথা তুলে ধরে মানুষকে আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।
এই যুদ্ধে জয়ী হওয়ার সংগ্রামে নিজেদের নিবেদিতপ্রাণ ভূমিকার জন্য প্রধানমন্ত্রী সেনাবাহিনীসহ সশস্ত্র বাহিনীর ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। বলেছেন, ‘২৪ মার্চ থেকে বিভাগীয় ও জেলা শহরগুলোতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা বলবৎ হয়েছে। এটি কার্যকর করতে জেলা প্রশাসনকে সেনাবাহিনীর সদস্যগণ সহায়তা করছেন।’
গত বছর রাজশাহী সেনানিবাসের শহীদ কর্নেল আনিস প্যারেড গ্রাউন্ডে বাংলাদেশ ইনফেন্ট্রি রেজিমেন্টের ৭ম, ৮ম, ৯ম এবং ১০ম রেজিমেন্ট ন্যাশনাল স্ট্যান্ডার্ড প্রদান অনুষ্ঠানে সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদের উপস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জনগণের সেবা করার জন্য সেনাবাহিনীকে তাঁর সরকার সব সময় পাশে পেয়েছে। রাষ্ট্র পরিচালনার সময় যখনই প্রয়োজন হবে তখনই সেনাবাহিনী জনগণের পাশে এসে দাঁড়াবে।’
জীবনের চরম ঝুঁকি নিয়ে আবারও মাঠে
দেশের সচেতন নাগরিকরাও মনে করেন, দেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে সশস্ত্র বাহিনীর গৌরবোজ্জল ভূমিকা ইতিহাসের স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। দেশের সব প্রাকৃতিক দুর্যোগে সশস্ত্র বাহিনী অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে দ্বিধাহীনভাবে সংকট মোকাবেলায় সব সময়ই ঝাঁপিয়ে পড়েছে।
জাতিসংঘসহ বিশ্বের শান্তিরক্ষা কার্যক্রম বাস্তবায়নে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী তথা সশস্ত্র বাহিনী এক গর্বিত অংশীদার। বিশ্বের ৪০টি দেশে ৫৪টি শান্তিরক্ষা মিশনে শান্তি ও সৌহার্দ্য প্রতিষ্ঠায় তারা নিরলসভাবে কাজ করছে। বিশ্বের বিরোধপূর্ণ স্থানে জাতিসংঘের ডাকে শান্তি স্থাপন ভুরি ভুরি উদাহরণ তৈরি করেছে।
বিশ্বের সব প্রান্তের দুর্গত, নিপীড়িত ও নিরীহ মানুষের সেবায় এই শান্তিরক্ষীদের হাত প্রসারিত। সংঘাতপূর্ণ ও প্রতিকূল পরিস্থিতিতে নিজের জীবনের চরম ঝুঁকি নিয়েও তারা আর্তমানবতার সেবা করে চলেছেন।
দেশে ও বিদেশে নিজেদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালনে স্বীয় দক্ষতা ও পেশাদারিত্বের জন্য সব মহলের প্রশংসা অর্জন করতে সক্ষম হওয়া বাংলাদেশ সেনাবাহিনীসহ সশস্ত্র বাহিনীকে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধের পাশাপাশি দেশব্যাপী উদ্ভুত পরিস্থিতি মোকাবেলায় বেসামরিক প্রশাসনকে সব রকমের সহযোগিতা করতে দায়িত্ব দেয় সরকার।
মনিটরিং করছেন সেনাপ্রধান, আপডেট যাচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর কাছে
এই দায়িত্ব প্রদানের আগে সোমবার (২৩ মার্চ) নিজের কার্যালয়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদের সঙ্গে দীর্ঘক্ষণ বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জাতির কঠিন সংকটময় মুহুর্তে তিনি সেনাবাহিনী তথা সশস্ত্র বাহিনীকে বিভাগীয় ও জেলা শহরগুলোতে সামাজিক দূরত্ব ও সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণের সুবিধার্থে মাঠে নামার নির্দেশ দেন।
এই নির্দেশনার পর পরই প্রধানমন্ত্রীর মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও মুখ্য সচিব জরুরি সংবাদ সম্মেলন করে বিষয়টি নিশ্চিত করেন। আগামী ৪ এপ্রিল পর্যন্ত মানুষকে ঘরের মধ্যে রাখতে সর্বাত্নক প্রচেষ্টার কথাও জানান তারা।
এরপর বুধবার (২৫ মার্চ) থেকে জেলা ও বিভাগীয় শহরগুলোতে সেনাবাহিনীর টহল কার্যক্রম শুরুর পর দ্রুতই ঘরমুখী হচ্ছে মানুষ।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, মঙ্গলবার (২৪ মার্চ) দেশের সব জেলা ও বিভাগীয় শহরে প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠক করে কর্মপরিকল্পনা ঠিক করেন সেনা কর্মকর্তারা। এরপর বুধবার (২৫ মার্চ) থেকে এসব এলাকায় জনসমাগম বন্ধ ও সামাজিক দূরত্ব বাড়ানো ছাড়াও হোম কোয়ারেন্টাইনের সব শর্ত মানা হচ্ছে কীনা সেই বিষয়টি দেখভাল করার দায়িত্ব পালন করছেন তারা।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকের পর থেকেই সারা দেশে সেনাবাহিনীর হোম কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিতসহ সামগ্রিক বিষয়টি মনিটরিং করছেন স্বয়ং সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ।
জেলা, পুলিশ ও বিভাগীয় প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় সাধনের পর কীভাবে কার্যক্রম জোরদার করতে এই বিষয়ে দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। তাদের প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা প্রদান করছেন। আবার এসব বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীকেও ‘টাইম টু টাইম’ আপডেট রাখছে সেনা সদর দপ্তর।
চৌকস, গতিশীল ও মর্যাদাপূর্ণ বাহিনী হিসেবে বিশ্বে সমাদৃত বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর নেতৃত্ব দিতে গিয়ে জেনারেল আজিজ আহমেদ সব সময় নিজেদের পেশাগত দক্ষতা ও স্বকীয়তায় ভাস্বর হয়ে দেশের যেকোনো সংকটময় মুহূর্তে দেশের কল্যাণে নিজের জীবনবাজি রাখার বিষয়টিও স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন।
করোনা মোকাবেলায় সরকারের নির্দেশে এই দায়িত্ব গ্রহণ করে দেশপ্রেমিক সেনা সদস্যরা আবারও নিজেদের পেশাদারিত্ব, মানবতার প্রেম এবং সৌহার্দ্যরে নিদর্শনের দৃষ্টান্তও স্থাপন করেছেন বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
গোটা দেশে সেনাবাহিনীর কার্যক্রমের সারসংক্ষেপ
কালের আলো’র বিভিন্ন জেলা ও বিভাগীয় প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্যে জানা গেছে, করোনাভাইরাসের বিস্তৃতির ঝুঁকি এড়াতে সেনা সদস্যদের মোতায়েন করা হয়েছে। অনেক এলাকায় টহলের পাশাপাশি মাইকিং করছেন তারা।
সাধারণ মানুষকে অহেতুক রাস্তায় ঘোরাঘুরি করতে নিষেধ করছেন এসব সেনা সদস্যরা। হোম কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করতে বেসামরিক প্রশাসনকেও সব রকমের সহায়তা দিয়ে যাচ্ছেন তারা।
বগুড়ায় সেনা সদস্যরা মাঠে নেমেছেন। বুধবার (২৫ মার্চ) সকাল থেকেই বগুড়া শহর ছাড়াও জেলার বিভিন্ন উপজেলা সদরসহ প্রত্যন্ত অঞ্চলে তাদের তৎপরতা লক্ষ্য করা গেছে। বগুড়ার জেলা প্রশাসক (ডিসি) ফয়েজ আহাম্মদ বলেন, ‘সেনা সদস্যরা জেলার প্রতিটি উপজেলা এলাকায় কাজ শুরু করেছেন।
বিদেশ ফেরত ব্যক্তিরা কোয়ারেন্টাইনে থাকছেন কিনা, সেটিও সেনা সদস্যরা তদারক করবেন। জনসমাবেশ এড়িয়ে সকলে নিজ নিজ বাড়িতে অবস্থানের পরামর্শ দেওয়া হয় মাইকে।
কুমিল্লায় টহল ও মাইকিং’র পাশাপাশি কেউ যাতে খাদ্য মজুদ ও নিত্যপণ্যের দাম বাড়াতে না পারে সেই বিষয়টিও নজরদারি করছেন সেনা সদস্যরা।
চট্টগ্রামে সর্বস্তরের জনসাধারণকে ঘোরাঘুরি না করে ঘরে থাকার আহ্বান জানিয়ে নগরীর বিভিন্ন স্থানে মাইকিং করছেন সেনাবাহিনীর সদস্যরা। বুধবার (২৫ মার্চ) সকাল ৮টা থেকে প্রশাসনের সঙ্গে মাঠে নেমে করোনা মোকাবিলায় মাইকিং ছাড়াও নগরীর প্রধান প্রধান সড়ক, অলিগলিতে টহল দেন তারা।
এই বিষয়ে সংশ্লিষ্ট নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. তৌহিদুল ইসলাম জানান, নগরীর খুলশি এলাকায় একটি কোরিয়ান রেস্টুরেন্টে অভিযান চালায় সেনাবাহিনী। পরে রেস্টুরেন্টটি সিলগালা করে দেওয়া হয়। সেখানে দুইজন কোরিয়ান ম্যানেজার ও তিনজন কর্মীকে হোম কোয়ারেন্টাইনে পাঠানো হয়েছে।
খুলনাতেও জেলা প্রশাসনকে সহায়তা দিতে মাঠে সক্রিয় রয়েছেন সেনাবাহিনীর সদস্যরা। জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে এদিন দুপুর থেকে নগরী ও জেলার সড়কগুলোতে টহল দিচ্ছেন তারা।
খুলনা জেলা প্রশাসক (ডিসি) হেলাল হোসেন জানিয়েছেন, আপাতত সেনাবাহিনীর ৬ প্লাটুন সদস্য মাঠে নেমেছেন। পরে আরও দুই প্লাটুন সেনা সদস্য নামবেন।
মাদারীপুরে জেলা প্রশাসনকে সহায়তার জন্য দুই প্লাটুন সেনা সদস্য মাঠে রয়েছেন। সামাজিক সচেতনতাসহ জেলা প্রশাসনকে সহযোগিতার জন্য সেনাবাহিনীর ৩০ সদস্যের দুটি টিম মাদারীপুর সদর ও শিবচরে অবস্থান করছেন। মাদারীপুর জেলা প্রশাসক মো. ওয়াহিদুল ইসলাম জানান, ‘সেনাবাহিনীর সদস্যরা স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে মাদারীপুরে সচেতনতা বৃদ্ধির কাজটি করবেন।’
জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলা প্রশাসন মাইকিং করে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কাউকে ঘর থেকে বের না হওয়ার জন্য অনুরোধ করেছেন। এখানে সেনা সদস্যদের টহলের খবরে মানুষ ঘর থেকে বের হচ্ছে কম। অনেকটাই একই রকম চিত্র ঠাকুরগাঁওয়ের।
এই জেলাতে সেনা সদস্যরা বিদেশফেরত নাগরিকদের হোম কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করা, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার বিষয়টি নিশ্চিত করা, জনসমাগম রোধ করা, বাজার মনিটরিংসহ নানা কাজে স্থানীয় প্রশাসনকে সহায়তা দিচ্ছেন। এখানকার ৫ উপজেলায় ২৫০ জন সেনা সদস্যের দু’টি কম্পানি টহল কাজ পরিচালনা করছে।
মাগুরায় সামাজিক দুরত্ব বজায় রাখার নির্দেশনা বাস্তবায়নে মাঠে নেমেছে সেনাবাহিনী। কক্সবাজারের রামুর ১০ পদাতিক ডিভিশনের চিকিৎসাদলসহ সেনা সদস্য জেলার পাঁচটিসহ বৃহত্তর চট্টগ্রামের ৮ টি উপজেলায় কাজ শুরু করেছেন। সেই সঙ্গে উখিয়া ও টেকনাফের ৩৪টি রোহিঙ্গা শিবিরেও কাজ করছে তাঁরা।
রাজবাড়ী, ফরিদপুর, খুলনা, পঞ্চগড়, নাটোর, নওগাঁসহ দেশের বিভিন্ন জেলায়ও পূর্ণোদ্যমে বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তা দিয়ে যাচ্ছেন সেনাসদস্যরা।
বগুড়া সেনাবানিবাসের ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আনিসুর রহমান জানান, সেনাবাহিনী জেলা প্রশাসনকে সব রকমের সহায়তা দিচ্ছে। হোম কোয়ারেন্টাইন তদারিক ও জনসমাগম বন্ধ তাদের মূল কাজ। জনসচেনতার জন্যও কাজ করবে তারা। কতজন সদস্য লাগবে এটা নির্ভর করবে প্রয়োজনের ওপর।
রংপুরে বৈঠকের পর জনসমাগম বন্ধে তিন ভাগে বিভক্ত হয়ে সিটি করপোরেশনসহ ৮ উপজেলায় কাজ শুরু করেছে সেনাবাহিনী। ফরিদপুর, টাঙ্গাইল, নাটোর, গোপালগঞ্জ, নোয়াখালী, ঝিনাইদহ ও নারায়ণগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকাতেও সক্রিয়ভাবে কাজ করছে তারা।
যশোরে সেনা সদস্যরা বিদেশ ফেরতদের বাড়িতে যাচ্ছেন এবং তারা ঠিক ঠিক কোয়ান্টোইন মানছেন কীনা তা পর্যবেক্ষণ করছেন। বরিশাল নগরীতে সেনাবাহিনীর সদস্যরা টহলের পাশাপাশি কাজ করছে দু’টি ভ্রাম্যমাণ আদালত।
ময়মনসিংহের পাড়া মহল্লায় টহল দিয়ে সেনা সদস্যরা হুঁশিয়ার করেন জনসমাগম এড়িয়ে চলার নির্দেশনা মানা না হলে বৃহস্পতিবার (২৬ মার্চ) থেকে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের।
৬১ জেলায় সেনাবাহিনীর কার্যক্রম
আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর(আইএসপিআর) জানায়, বিশ্বব্যাপী মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়া করোনা ভাইরাসের বর্তমানে বাংলাদেশের সংক্রমণ এবং বিস্তৃতির ঝুঁকি বিবেচনায় মাঠ পর্যায়ে কাজ করছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী।
বৃহস্পতিবার(২৬ মার্চ) সেনাবাহিনীর ২৯০ টি দল দেশের ৬১ টি জেলায় করোনা ভাইরাস নিয়ন্ত্রণে স্থানীয় প্রশাসনের সাথে একযোগে কাজ করেছে। বাহিরে কোন ক্যাম্প স্থাপন না করে স্থানীয় সেনানিবাস সমূহ থেকেই এই কার্যক্রম পরিচালনা করছে সেনাবাহিনী।
জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এর সমন্বয়ে সেনাবাহিনী বিভাগীয় ও জেলা শহর গুলোতে সামাজিক দূরত্ব ও সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সাধারণ জনগণকে উৎসাহিত করছে। পাশাপাশি তারা বিদেশ ফেরত ব্যক্তিদের বাধ্যতামূলক কোয়ারান্টিন এর বিষয়টিও পর্যবেক্ষণ করছে।
বর্তমানে সারাদেশে এই কার্যক্রমে সেনাবাহিনীর আড়াই হাজারের অধিক সেনাসদস্য দায়িত্ব পালন করছে। করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে সেনাবাহিনীর এই কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।
কালের আলো/এমএএএমকে