সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে বেচাবিক্রি, অনুসরণ হচ্ছে ‘সেনাবাহিনী মডেল’ (ভিডিও)

প্রকাশিতঃ 9:30 pm | March 28, 2020

বিশেষ সংবাদদাতা, কালের আলো :

অলিখিত ‘লক ডাউনে’ গোটা দেশ। রাজধানী ঢাকা থেকে শুরু করে জেলা বা বিভাগীয় শহরগুলোর প্রধান সড়ক, অলিগিলি সুনসান নীরবতা। ফাঁকা সব শহর যেন জনমানবশুন্য। খুব প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের হচ্ছে না কেউ।

আরও পড়ুন: পথে পথে সেনাবাহিনীর জীবাণু নাশক স্প্রে কার্যক্রম (ভিডিও)

গণপরিবহন ও রেল যোগাযোগও বিচ্ছিন্ন। কার্যত অচল ৫৬ হাজার বর্গমাইলের লাল-সবুজের দেশ। করোনার প্রভাব ঠেকাতে সরকারের সিদ্ধান্ত মেনে ‘ঘরবন্দি’ সবাই।

আবার, জরুরি প্রয়োজনে বের হওয়া লোকজনকে তল্লাশি চৌকিতে দিতে হচ্ছে কৌফিয়ত। সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে জনসাধারণকে কঠোর নজরদারিতে রেখেছে সেনাবাহিনীসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।

আরও পড়ুন: প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তকে স্বাগত; করোনাভাইরাস মোকাবেলায় মাঠে সেনাবাহিনী

নিত্যদিন সকাল থেকেই চলছে করোনাভাইরাস মোকাবেলায় জীবাণু নাশক পানি ছিটানোর কার্যক্রম। করোনার ভয়াল থাবা ঠেকাতে এমন পরিবেশকেই যথার্থই মনে করছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।  

আরও পড়ুন: করোনা নিয়ন্ত্রণে সেনাবাহিনীর কর্মপরিকল্পনা, ডিসিরা রিকুইজিশন দিলে হবে ‘ক্যাম্প’ স্থাপন

এই প্রেক্ষাপটে করোনা সতর্কতার মধ্যেও সাধারণ মানুষের জরুরি প্রয়োজনের বিষয়টি উপলব্ধি করেই ব্যতিক্রমী এক পন্থা চালু করে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী।

নিত্যপণ্যের বাজার ও দোকানের সামনে দূরত্ব রেখা দিয়ে বৃহস্পতিবার (২৬ মার্চ) থেকে কুমিল্লায় কাঁচাবাজার ও ওষুধের দোকানগুলোতে সর্বপ্রথম বেচাকেনার এই পদ্ধতি চালু করে তারা।

আরও পড়ুন: বৃত্তের মাধ্যমে দূরত্ব চিহ্নিত; সেনাবাহিনীর কর্মযজ্ঞে দেশজুড়ে স্বস্তির সুবাতাস (ভিডিও)

এরপর থেকেই গোটা দেশেই আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নিত্যপণ্য ও ওষুধের দোকানের সামনে দাগ কাটে বৃত্ত তৈরি করছে। সেই বৃত্তে অবস্থান করে নির্দিষ্ট দূরত্বে পণ্য বেচাবিক্রি করছে ব্যবসায়ী-ক্রেতারা। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনী পুরো বিষয়টিই কঠোর নজরদারি করছে।

আরও পড়ুন: পথে পথে সেনাবাহিনীর জীবাণু নাশক স্প্রে কার্যক্রম (ভিডিও)

নির্দিষ্ট সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর এই মডেল দেশজুড়েই সাড়া ফেলেছে। সেনাবাহিনীর এই কার্যকর উদ্যোগের বিষয়ে যারপরেনাই মিলছে প্রশংসাও।

টাঙ্গাইলে জরুরি প্রয়োজনে কাঁচাবাজারে আসা দিলরুবা আক্তার কালের আলোর স্থানীয় প্রতিবেদককে বলেন, ‘তিন ফিট বাই তিন ফিট দূরত্বে অবস্থান করে পণ্য কিনতে হচ্ছে। এটা অবশ্যই ভালো একটি উদ্যোগ। এতে করে একজনের সঙ্গে আরেকজনের গা লাগছে না।’

রাজধানীর গুলশানের এক ওষুধ ব্যবসায়ী কালের আলোর নিজস্ব প্রতিবেদককে বলেন, ‘গোল দাগের ভেতরে দাঁড় করিয়ে ক্রেতারা ওষুধ নিচ্ছে। তাদেরকে আমরা ওষুধ দিচ্ছি। এতে উভয় পক্ষই নিজেদের নিরাপদ মনে করছে। এখন থেকে পুরো দেশেই এই উদ্যোগের বাস্তবায়ন চাই।’

খোঁজ খবর নিয়ে জানা গেছে, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় নিরাপদ দূরত্ব নিশ্চিত করতে বিভিন্ন দোকান ও বাজারে রেড মার্কিংসহ কোয়ারেন্টাইন মানতে সক্রিয় ভূমিকা পালন করছে সেনাবাহিনীসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনী।

সংশ্লিষ্টরা জানান, জনবহুল বাজারে বড় ঝুঁকি ক্রেতা-বিক্রেতার নিরাপদ দূরত্ব বজায় না রাখা। বিভিন্ন জেলায় জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখতে দোকানের সামনে লাল বৃত্ত আঁকা হচ্ছে। কয়েক ভাগে ভাগ হয়ে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেটরা ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে বিভিন্ন স্থানে ব্যতিক্রম এই পদ্ধতির বাস্তবায়ন করছেন।

বিভিন্ন বাজার মনিটরিং করতে বের হওয়া সেনা সদস্যদের হাতে শোভা পাচ্ছে জনসচেতনতামূলক প্ল্যাকার্ড। সেখানে লেখা রয়েছে- ‘ভীড় জমায়েত এড়িয়ে চলি, দূরে থেকেই কথা বলি’, ‘বিদেশ ফেরত এলাম যারা কোয়ারেন্টাইন থাকবো তারা’ ও ‘করোনা যুদ্ধ করবো জয়, ঘরের বাইরে আর নয়’।

জেলা বা উপজেলার বাজারগুলোতেও সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েই চলছে এমন কার্যক্রম।  এই ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে সক্ষম হলে দেশে করোনা মোকাবেলা তুলনামূলকভাবে সহজ হবে বলে মত দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

আন্ত:বাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) জানিয়েছে, শনিবারও (২৮ মার্চ) দেশের ৬২ টি জেলায় সেনাবাহিনীর ৩৭১টি দল করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে স্থানীয় প্রশাসনের সাথে বিভিন্ন কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করছে। পাঁচ হাজারের অধিক সেনাসদস্য এসব কার্যক্রম পরিচালনা করছেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, রাজধানীসহ সারা দেশে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসনের সঙ্গে মানুষকে অযথা রাস্তায় ঘুরাফেরা না করে বাসায় থাকার আহ্বান জানাচ্ছেন। অপ্রয়োজনে কাউকে ঘর থেকে কাউকে বের না হওয়ার জন্য মাইকিং করছেন। পাশাপাশি প্রয়োজন শেষ করে দ্রুত ঘরে ফেরার আহ্বান জানাচ্ছেন। প্ল্যাকার্ড নিয়েও মানুষের ঘরে ঘরে যাচ্ছেন।

দেখা গেছে, মানবিক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কার্যকর পদক্ষেপে লড়াইয়ে নামিয়েছেন ষোল কোটির বাংলাদেশকে। তার রাষ্ট্রনায়কোচিত ভাষণ, পদক্ষেপ, ঘোষণা, গণভবন থেকে সারা দেশ মনিটরিংয়ে রাখায় দেশের সাধারণ মানুষও ঐক্যবদ্ধভাবে লড়াই করছেন।

মানবতার এই লড়াইয়ে একাত্তরের মতো এক মোহনায় দেশবাসী। সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদও প্রধানমন্ত্রীর কাছে প্র্রতি মুহুর্তের আপডেট পৌঁছে দিচ্ছেন।

প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা মানতে জেলা ম্যাজিষ্ট্রেটের সমন্বয়ে দেশপ্রেমিক সেনা সদস্যরা বিভাগীয় ও জেলা শহরগুলোতে সতর্কতামূলক ও সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে সাধারণ জনগণকে উৎসাহিত করছেন।

পাশাপাশি বিদেশ ফেরত মানুষজনদের বাধ্যতামূলক ঘরবন্দি থাকার বিষয়টিও পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। যারা বের হচ্ছেন তারা যথাযথ সুরক্ষা ব্যবস্থা গ্রহণ করছেন কীনা এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় থাকছে কীনা তা নিশ্চিত করতে সড়কে সড়কে জোরদার করা হয়েছে টহল।

কালের আলো/এমএএএমকে