পেশাদারিত্বে জোর আইজিপির, করোনার বিস্তার ঠেকাতে লড়াই করছে পুলিশও (ভিডিও)
প্রকাশিতঃ 7:55 pm | March 29, 2020
বিশেষ সংবাদদাতা, কালের আলো :
দেশের সার্বিক আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি মামলা, তদন্ত, প্রটোকল সবকিছুই সামাল দিতে হয় তাদের। রুটিন এই ওয়ার্কের বাইরে এবার সরকারের নির্দেশে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে মাঠে মাঠে লড়াই করতে হচ্ছে। কঠিন এই দায়িত্ব পালনে জীবনের ঝুঁকি যেমন আছে তেমনি মহামারি এই ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কাও যেন পিছু ছাড়ে না।
কিন্তু ব্যক্তিস্বার্থ দেখার সময় নেই নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলার প্রতীক বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের। জীবন ও পেশা এই দুইয়ের ভেতর মানবতা আর দায়িত্বকেই সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছেন তারা। পেশাগত দায়িত্ব পালনে এই ভাইরাস প্রাদুর্ভাবের শুরু থেকেই স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে তাদের চাহিদামতো সার্বক্ষণিক সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছে পুলিশ।
বিদেশফেরত রোগীদের ইমিগ্রেশন থেকে শুরু করে রোগী সনাক্তকরণ, নির্দেশিত ব্যক্তি হোম কোয়ারেন্টাইন মানছেন কিনা তা নিশ্চিতকরণ, দ্রব্যমূল্যের মজুদদারি বন্ধ করা, গুজবের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণসহ ইত্যাকার বিষয়ে শতভাগ নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার সঙ্গেই দেশজুড়ে পেশাদারিত্ব ও অসীম সাহসিকতার সঙ্গে দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে ইতিবাচক ধারার সূত্রপাত করেছেন।
তবে এরই মধ্যে আবার অতি উৎসাহী কিছু পুলিশ সদস্যের তেড়েফুড়ে চলার মানসিকতা ‘জনবান্ধব’ পুলিশ বাহিনীর ভাবমূর্তিকে প্রশ্নের মুখে ঠেলে দেওয়ায় এই বিষয়টিকেও সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর। দুই দফা পুলিশ প্রধান ড.মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী, বিপিএম (বার) পুলিশ সদস্য থেকে কর্মকর্তাদের সাধারণ মানুষের সঙ্গে পেশাদার, ধৈর্য্যশীল ও মানবিক আচরণ করার নির্দেশ দিয়েছেন।
রোববার (২৯ মার্চ) বিকেলে পুলিশ সদর দপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলনে আইজিপি স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন, ‘শুধু দেশে নয় করোনাভাইরাসের কারণে সারা বিশ্ব বিপর্যয়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এই মুহূর্তে আমরা সকলের পাশে থাকতে চাই, সকলের সঙ্গে থেকে একসাথে কাজ করতে চাই। ইনশাআল্লাহ্ আমরা সবাই মিলে এ যুদ্ধে জয়ী হব। আমরা সব সদস্যকে বলেছি, আপনারা জনগণের সাথে পেশাদার, ধৈর্যশীল ও মানবিক আচরণ করবেন।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে পুলিশকে ‘জনবান্ধব’ হিসেবে গড়ে তুলতে এমনিতেই সাধারণ মানুষের আবেগ-অনুভূতির সঙ্গে একাত্ন হয়ে, তাদের প্রতি অধিক সংবেদনশীলতা, সহমর্মিতা এবং জনসেবার মূল্যবোধের অধিকারী হয়ে পেশাদারিত্বের সঙ্গেই নিজ বাহিনীর সদস্যদের দায়িত্ব পালনের ‘কঠোর বার্তা’ দিয়ে যাচ্ছিলেন পুলিশ প্রধান ড.মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী।
তার যুগান্তকারী উদ্যোগে পুলিশের কর্মকর্তাদের আচরণ ও সেবায় গুণগত পরিবর্তন আসতে শুরু করে। সেবার কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে গড়ে উঠছে দেশের অনেক থানাই। নিজেদের ওপর অর্পিত দায়িত্বকে কেবলমাত্র ‘রুটিন ওয়ার্ক’ হিসেবে না ভেবে জনসাধারণের সমস্যাকে একান্ত আন্তরিক ও মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখার পুলিশ প্রধানের অনুশাসনও ক্রমশ বাস্তবায়ন হচ্ছে।
কিন্তু করোনা মোকাবেলায় স্থবির দেশে জরুরি প্রয়োজনে ঘর থেকে বের হওয়া মানুষজনের সঙ্গে দেশের বিভিন্ন স্থানে পুলিশ সদস্যদের ‘অমানবিক আচরণ’ এর ময়না তদন্ত শুরু করে পুলিশ সদর দপ্তর। নাগরিকদের সঙ্গে সহিষ্ণু ও বিনয়ী আচরণ করার ব্যাপারে গত শুক্রবার রাতে পুলিশের সব ইউনিটের প্রধান, রেঞ্জের ডিআইজি, মেট্রোপলিটন এলাকার কমিশনার, পুলিশ সুপার (এসপি) ও থানার ওসিদের এই বার্তা দেন আইজিপি।
সেই বার্তায় আইজিপি বলেন, ‘জনজীবন সচল রাখতে চিকিৎসা, ওষুধ, নিত্যপণ্য, খাদ্যদ্রব্য, বিদ্যুৎ, ব্যাংকিং ও মোবাইল ফোনসহ আবশ্যিক সব জরুরি সেবার সঙ্গে সম্পৃক্ত ব্যক্তি ও যানবাহনের অবাধ চলাচল নিশ্চিত করুন। দায়িত্ব পালনকালে সাধারণ জনগণের সঙ্গে বিনয়ী, সহিষ্ণু ও পেশাদার আচরণ বজায় রাখুন।’
জানতে চাইলে পুলিশ সদর দফতরের এআইজি (মিডিয়া) মো. সোহেল রানা কালের আলোকে বলেন, ‘ইতোমধ্যেই বার্তাটি ঊর্ধ্বতনের কাছে পৌঁছে গেছে। তারা এই অনুযায়ী ব্যবস্থা নিচ্ছেন।’
ডিএমপি কমিশনারের ১০ নির্দেশনা
শনিবার (২৮ মার্চ) ডিএমপি কমিশনার মো. শফিকুল ইসলাম মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের ১০টি নির্দেশনা পাঠান। এতে বলা হয়, অনেক মানুষের রান্না-বান্নার ব্যবস্থা নেই, তাই তাদের জন্য খাবার হোটেল, বেকারি খোলা থাকবে। এসব হোটেল-বেকারিতে কর্মরতদের সড়কে চলাচল করতে দিতে হবে। নিত্যপ্রয়োজনীয় ও অপরিহার্য পণ্যের দোকান খোলা থাকবে এবং এসব দোকানে কর্মরতরা কাজে যোগ দিতে পারবেন। হোটেল থেকে গ্রাহকদের খাবারের পার্সেল নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিতে হবে। তবে কিছু ক্ষেত্রে ‘সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে’ কেউ হোটেলে বসে খেতে পারবেন। স্বাস্থ্যবিধি মেনে ঢাকায় যেকোনও নাগরিক একা যেকোনও মাধ্যম ব্যবহার করে চলাফেরা করতে পারবেন বলেও নির্দেশনায় বলা হয়েছে।
কী করছে পুলিশ?
করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে তাদের নিরাপদ থাকতে করণীয় বিশেষ করে সচেতনতার বিষয়ে সবার আগে মাঠ পর্যায়ে কাজ শুরু করে পুলিশ। সরকারের প্রতিটি নির্দেশনা সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দিয়ে তা মানতে আহ্বান জানাচ্ছে পুলিশ সদস্যরা।
আইন-শৃঙ্খলার দায়িত্বে ব্যবহূত পুলিশের গাড়িগুলোতে লাগানো হচ্ছে সচেতনতামূলক পোস্টার। সাধারণ মানুষের মধ্যে বিলি করা হয়েছে এবং হচ্ছে লিফলেট ও হ্যান্ডবিলসহ অন্যান্য প্রচারপত্র।
পুলিশের গাড়িতে মাইক লাগিয়ে সাধারণ মানুষকে সচেতন করছে পুলিশ সদস্যরা। মসজিদ ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের সাউন্ড সিস্টেম ব্যবহার করে এবং সামাজিক ও ধর্মীয় গুনীজনের মাধ্যমেও সাধারণ মানুষকে আহ্বান জানানো হচ্ছে প্রয়োজনীয় সব নির্দেশনা মানতে।
পুলিশের প্রতিটি ইউনিট তার নিজস্ব পেজ ও পোর্টালেও প্রচার করছে প্রয়োজনীয় নানা বার্তা। বাড়ি বাড়ি গিয়ে নিশ্চিত করা হচ্ছে বিদেশফেরত ব্যক্তিরা হোম কোয়ারেন্টাইন মানছেন কিনা। না মানলে ম্যাজিস্ট্রেটের সহায়তায় তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থাও নেয়া হচ্ছে। বাজার ঘুরে মজুদদারদের বিরুদ্ধে এবং গুজব সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে নেওয়া হয়েছে কঠোর ব্যবস্থা।
নভেল করোনা ভাইরাসের বৈশি^ক দুর্যোগে পুলিশের পুরো ইউনিট মাঠে কাজ করছে প্রায় এক মাস যাবত। জনসচেতনায় প্রচারপত্র বিলি থেকে শুরু করে মাস্ক বিতরণ, হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকা মানুষকে খাবার পৌঁছে দেয়া, রাস্তায় জীবাণুনাশক পানি স্প্রে করাসহ লোকজনকে ঘরে থাকতে মাইকিং করছে পুলিশ।
করোনা ভাইরাস আক্রান্ত হলে রোগী হাসপাতালে পাঠাতে অ্যাম্বুলেন্স সেবা ও এতে কেউ মারা গেলে কবর দেয়ার কাজেও পৃথক টিম করে তৎপর রয়েছে মাঠ পুলিশ। পুলিশ সদর দপ্তর থেকে পুরো ব্যবস্থা মনিটরিং করা হচ্ছে।
রাজধানীর গুলশান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম কামরুজ্জামান ও ময়মনসিংহের কোতোয়ালী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহমুদুল ইসলাম কালের আলোকে জানান, অতিদরিদ্রদের পাশাপাশি কোয়ারেন্টাইনে থাকা লোকজনকে খাবার পৌঁছে দিচ্ছে পুলিশ।
বিদেশিদের প্রতি বিশেষ নজর রাখা হচ্ছে। বিদেশফেতরদের সার্বক্ষণিক নজরদারি চলছে। ওষুধসহ নিত্যপণ্যের দোকানে নির্ধারিত দূরত্ব বজায় রাখার জন্য বৃত্তাকার মার্কিং করে দেয়া হচ্ছে।’
মানবিকতার দৃষ্টান্ত পুলিশের
দেশের প্রতিটি সংকটে-দুর্যোগে সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে পুলিশ। করোনা দুর্যোগেও ব্যতিক্রম নয়। প্রিিতদিন আড়াই হাজার ছিন্নমূল শিশু ও অসহায় (দুঃস্থ) মানুষকে খাবার সরবরাহ করার কথা জানিয়েছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)।
গত রোববার (২৯ মার্চ) থেকে রাজধানীর ৫০টি থানায় ছিন্নমূল মানুষদের এক বেলা করে খাবার সরবরাহ করা হবে বলে জানান ডিএমপি কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম।
জানা যায়, রোববার (২৯ মার্চ) থেকে ডিএমপির প্রতিটি থানায় ৫০ জন করে ছিন্নমূল শিশু ও দুঃস্থ নাগরিকদের মাঝে এই খাবার পৌঁছে দেওয়ার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এই কার্যক্রম চলবে আগামী আগামী ৪ এপ্রিল পর্যন্ত।
শুধু কী তাই? করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে জনগণকে ঘরে রাখতে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য ও ওষুধ সংগ্রহ করে মানু্ষরে ঘরে পৌঁছে দিচ্ছে পুলিশ। এমন ঘটনা ঘটেছে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশসহ বিভিন্ন ইউনিটে।
সিএমপি সূত্র জানায়, সিএমপি কমিশনার মো. মাহাবুবর রহমানের নির্দেশনায় নগরের ১৬ থানায় চালু করা হয়েছে পুলিশের ‘হোম সার্ভিস’ সুবিধা। সিএমপি হটলাইন ছাড়াও জোনের সংশ্লিষ্ট থানার ডিউটি অফিসারের নাম্বারে ফোন করে অর্ডার দিলে বাজার নিয়ে হাজির হচ্ছে পুলিশ।
একই সূত্র জানায়, সিএমপি’র চার জোনের উপ-কমিশনাররা (ডিসি) তদারকি করছেন এ কার্যক্রম। শনিবার (২৮ মার্চ) সকাল থেকে চারটি পরিবারকে তাদের চাহিদামতো বাজার পৌঁছে দিয়েছে খুলশী থানা পুলিশের সদস্যরা।
শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবুল হাসান জানান, বিদেশফেরতদের হোম কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিতে তারা কাজ করছেন। থানার অন্তর্গত পুরো এলাকায় মাইকিং করা হয়েছে- প্রয়োজনে পুলিশ বাড়ি বাড়ি গিয়ে বাজার করে দিয়ে আসবে। থানায় বা সংশ্লিষ্টদের ফোন করলেই এই সেবা মিলবে।
শুন্যের কোঠায় অপরাধ
করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে অঘোষিত লক ডাউন চলছে বাংলাদেশে। বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া লোকজনকে ঘরের বাইরে বের না হতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। মরণব্যাধি করোনা ভাইরাস আতঙ্কে লোকজন ঘরবন্দি হয়ে থাকায় দেশের সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বলতে গেলে শান্ত। অপরাধ অনেকটাই শূন্যের কোটায় নেমে এসেছে। নিয়মিত অপরাধ হিসেবে পরিচিত চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, খুন এখন নেই বললেই চলে। টুকিটাকি কিছু সামাজিক অপরাধের ঘটনা ঘটলেও তা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির জন্য উদ্বেগজনক নয়।
করোনা সতর্কতায় পুলিশের পদক্ষেপ; কড়া বার্তা আইজিপির
রোববার (২৯ মার্চ) বিকেলে পুলিশ সদর দপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড.মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী, বিপিএম (বার) বলেন, ‘ওদের চাইনিজ কমিউনিটির তরফ থেকেও আমাদের কিছু স্বাস্থসেবার জন্য কিছু ইক্যুইপমেন্ট এবং গ্লোভস এবং মাস্কসহ পিপিই আমাদের হাতে হ্যান্ডওভার করা হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ পুলিশ প্রথম থেকেই স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং সরকারের যে সকল নির্দেশনা পরামর্শ রয়েছে তার যথাযথ সচেতনতামূলক প্রচারণা করার জন্য কয়েক লক্ষ লিফলেট তৈরি করেছি, হ্যান্ডবিল প্রস্তুত করেছি। সারা বাংলাদেশে এবং সাধাররণ মানুষের মাঝে তা ব্যপকভাবে বিতরণ করেছে বাংলাদেশ পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটের সদস্যরা।
সচেতনতামূলক নানা ধরণের ব্যানার তৈরি করে আমাদের যে পুলিশের গাড়িগুলো আছে সেগুলোতে ব্যবহার করেছি। বিভিন্ন জায়গায় আমাদের যে স্থাপনাগুলো আছে সে জায়গায় আমরা ব্যবহার করেছি। যাতে মানুষের চোখে পড়ে এবং মানুষ সচেতন হয়। দায়িত্বপালনরত পুলিশের গাড়িতে আপনারা হয়তো দেখেছেন বিভিন্ন জায়গায় আমরা মাইকিং করেছি, সারা বাংলাদেশেই এটা অব্যাহত রয়েছে। এখনও রয়েছে কারণ মানুষকে আমরা সচেতন করে যাচ্ছি।’
মসজিদ এবং ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোতে সাউন্ড সিস্টেমকে আমরা কাজে লাগিয়ে মানুষকে রোগ সচেতনতা এবং সরকারের নির্দেশনা বিষয়ে বারবার সচেতন করা হচ্ছে প্রথম থেকেই জানান পুলিশ মহাপরিদর্শক। তিনি বলেন, ‘আমাদের বিভিন্ন ইউনিটকে নির্দেশনা দিয়েছি যে, লোকাল যে ক্যাবল নেটওয়ার্ক আছে সেই ক্যাবল নেটওয়ার্কগুলোকে ব্যবহার করে যেন মানুষকে সচেতন করা যায় এবং এই রোগের বিরুদ্ধে কিভাবে নিজেকে প্রস্তুত করা যায়, নিজের পরিবার এবং সমাজকে রক্ষা করা যায় সেটা প্রচার করার জন্য।’
‘বাংলাদেশ পুলিশের কেন্দ্রীয় ফেসবুক পেজ রয়েছে, আপনারা দেখেছেন। সেখানেও নিয়মিত দেখবেন আমাদের প্রচারণাগুলো চ্যানেলসহ, পুলিশের সকল ইউনিটের যে নিজস্ব পেজ ও চ্যানেল রয়েছে সেখানে সচেতনতামুলক প্রচারণা নিয়মিতভাবে চালানো হচ্ছে এবং এটি অব্যাহত থাকবে।
বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে পুলিশের সচেতনতামূলক বার্তা প্রচারের ব্যবস্থা করা হয়েছে নিয়মিতভাবে আমাদের মিডিয়া উইং থেকে। আমরা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং আইইডিসিআরকে সকল প্রশাসনিক পুলিশি সহায়তা আমরা প্রথম থেকেই অব্যাহত রেখেছি এবং আমরা নিবিড়ভাবে তাদের সাথে যোগযোগ অব্যাহত রেখেছি এবং সার্বক্ষণিকভাবে আমাদের সাথে সকল প্রশাসন পর্যায়ে যোগাযোগ রয়েছে এবং তাদেরকে আমরা যেকোন প্রয়োজনে সকল ধরণের সহায়তা দিয়ে যাচ্ছি’ যোগ করেন আইজিপি।
নিয়মিত আইনশৃঙ্খলার ও নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন বাংলাদেশ পুলিশের নিয়মিত ডিউটি উল্লেখ করে ড.মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী বলেন, ‘তার পাশাপাশি করোনা বিস্তারোধে প্রচারণা ও সচেতনতামুলক কার্যক্রমে পুলিশের সকল ইউনিট একযোগে কাজ করে যাচ্ছে।
সারাদেশে সকল পুলিশের কার্যক্রম সমন্বয়, গতিশীল ও ফলপ্রসু করতে পুলিশ সদর দপ্তর এই বিষয়ে একটি কন্টোলরুম স্থাপন করা হয়েছে যা ২৪ ঘন্টা সাতদিন খোলা আছে। সার্বক্ষণিকভাবে আমাদের এখানে কন্ট্রোলরুম খোলা রয়েছে। আমি ব্যক্তিগতভাবে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে আমাদের সকল ইউনিটের সাথে আমরা যোগাযোগ স্থাপন করেছি।
বর্তমান পরিস্থিতিতে আমরা পুলিশ সদস্যদের করণীয় ও বর্জনীয় তৈরি করেছি, বলছিলেন ড.জাবেদ পাটোয়ারী। পুলিশ প্রধান বলেন, ‘তারা কি করতে পারবেন, কি করতে পারবেন না ইতোমধ্যে আমরা এসওপি (স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিয়োর) তৈরি করে তাদের জানিয়েছি। এছাড়াও আমরা ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে কমিটি করেছি। যাতে করোনার বাইরেও পুলিশের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যহত না হয়। ফিল্ড কমান্ডারদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি।
‘আমি ব্যক্তিগতভাবে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সব ইউনিটের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করেছি, মোবাইলে ও ক্ষুদেবার্তায় প্রতি মুহূর্তে ঊর্ধ্বতন অফিসারদের সব তথ্য পৌঁছে দিচ্ছি,’ যোগ করেন আইজিপি।
করোনাভাইরাসকে কেন্দ্র করে দেশের গুজব পরিস্থিতি নিয়ে তিনি বলেন, করোনাকে কেন্দ্র করে পৃথিবীব্যাপী ফেক নিউজ ও গুজব ভয়ঙ্কর রূপে দেখা দিয়েছে। বাংলাদেশও এর বাইরে নয়। আমরা গুজব ও ফেক নিউজের বিরুদ্ধে প্রচারণা ও ব্যবস্থা নিচ্ছি। গোয়েন্দা সংস্থা ও র্যাব পুলিশের সাইবার টিম কাজ করে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে কয়েকজনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে এবং গুজব ছড়ানো আইডি বন্ধ করা হয়েছে।
মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী বলেন, পর্যাপ্ত সুরক্ষা নিশ্চিত না করেই করোনা বিস্তারের প্রথম দিক থেকে পুলিশ প্রতিটি বাড়ি বাড়ি গিয়ে তাদের হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকা প্রবাসীদের খোঁজ খবর নিয়েছেন। যাদেরকে পাসপোর্টে উল্লিখিত ঠিকানায় গিয়ে পাওয়া যায়নি, তাদের থানায় যেতে বলেছি।
এরপরেও অনেকে সরকার ও পুলিশের বিনীত আহ্বানে সাড়া দেননি, হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকেননি। তাদের আমরা ম্যাজিস্ট্রেটের সহায়তায় জরিমানা নিশ্চিত করেছি। করোনা সন্দেহে কোনো রোগী যখন মারা যাচ্ছে তাদের দাফনের জন্য পুলিশ নিরাপত্তা দিচ্ছে। সেসব সদস্যের জন্য আমরা পিপিই দিচ্ছি। এছাড়াও পুলিশের হাসপাতালগুলোতে আমরা পিপিই দিচ্ছি। পরবর্তীতে সাধারণ হাসপাতালগুলোতেও পুলিশের পক্ষ থেকে পিপিই দেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।
সাধারণ মানুষের উদ্দেশে পুলিশের এ সর্বোচ্চ কর্মকর্তা বলেন, আপনারা সরকারের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন। প্রয়োজন ছাড়া বাইরে যাবেন না। যারা এই নির্দেশনার আওতার বাইরে, তাদের পরিচয়পত্র রাখা এবং প্রয়োজনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে প্রদর্শনেরও আহ্বান জানান ড.জাবেদ।
কালের আলো/এমএএএমকে