প্রখর খরতাপেও পথে পথে মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে সেনাবাহিনী (ভিডিও)

প্রকাশিতঃ 10:07 pm | March 31, 2020

বিশেষ সংবাদদাতা, কালের আলো :

চৈত্রের খরতাপে পুড়ছে দেশ। দেশের কোথাও এক ফোঁটা বৃষ্টি নেই। খরতাপ পুঞ্জীভূত হয়ে সৃষ্টি করেছে তাপপ্রবাহ। সেই তাপে পুড়ছে পুরো দেশ।

আরও পড়ুন: প্রধানমন্ত্রীর রাষ্ট্রনায়কোচিত নেতৃত্বে এক মোহনায় দেশ, মানুষকে ‘সুরক্ষার যুদ্ধে’ সেনাবাহিনী

অস্বাভাবিক এই তাপমাত্রায় জনজীবন স্থবির না হলেও অলিখিত লক ডাউনেই মূলত থেমে গেছে জীবন। গণপরিবহন বা ট্রেন বন্ধ থাকায় ফাঁকা সড়ক, স্টেশন-টার্মিনাল।

আরও পড়ুন: করোনা নিয়ন্ত্রণে সেনাবাহিনীর কর্মপরিকল্পনা, ডিসিরা রিকুইজিশন দিলে হবে ‘ক্যাম্প’ স্থাপন

প্রতিটি মানুষই অদম্য করোনা ভাইরাসের তান্ডব থেকে প্রাণে বাঁচতে সামাজিকতা বা কারবার ভুলে স্বেচ্ছায় বা সরকারি সিদ্ধান্তে ঘরবন্দি হয়েছেন। তবে হাটবাজারের চিত্র খানিকটা ভিন্ন। পেটের তাগিদেই ঘর ছেড়ে বের হচ্ছেন শ্রমজীবী মানুষেরা।

আরও পড়ুন: প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তকে স্বাগত; করোনাভাইরাস মোকাবেলায় মাঠে সেনাবাহিনী

নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের কেনাকাটায় যারা বের হচ্ছেন তারা আবার দ্রুত সময়ের মধ্যেই বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন। অবশ্য অতি জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কেউ ঘর ছেড়ে বের হচ্ছেন না। দেশের প্রতিটি জেলায় জেলায় সড়কে সড়কে সেনাবাহিনীসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতা চোখে পড়ার মতো।

আরও পড়ুন: বৃত্তের মাধ্যমে দূরত্ব চিহ্নিত; সেনাবাহিনীর কর্মযজ্ঞে দেশজুড়ে স্বস্তির সুবাতাস (ভিডিও)

যশোরের একটি বাজারের দৃশ্যই ধরা যাক না। সড়কের পাশে রিকশার অস্থায়ী গ্যারেজে মেরামত কার্যক্রম চালাচ্ছেন এক তরুণ মিস্ত্রি। মুখে মাস্ক ব্যবহার করলেও হাতে নেই হ্যান্ড গ্লাভস। এমন দৃশ্য দেখে থমকে দাঁড়ায় সেনাবাহিনীর সদস্যরা। সবেমাত্র পাশের সড়কে করোনা ভাইরাস নিয়ে সচেতনতামূলক কাজ শেষে এই পথে যাচ্ছিলেন তারা।

সেনা সদস্যদের গাড়ি থেকে নামতে দেখেই যেন চোখ কপালে উঠলো তাঁর। চোখে মুখে ভয়-আতঙ্কের ছাপ স্পষ্ট। কিন্তু মুহুর্তেই সেই ভুল ভেঙে দিলেন সেনা সদস্যরা। তার অস্থায়ী দোকানটির সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে এক সেনা সদস্য বললেন, ‘ভয় পাচ্ছেন কেন?

আপনার মুখে মাস্ক থাকলেও হ্যান্ড গ্লাভস নেই। দেশে করোনা সংক্রমণের বিস্তার নিয়ে সবাই অনেক শঙ্কিত। আপনারাও পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা মেনে চলুন।’

নিজের কথা শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ওই রিকশা মেকানিকের হাত হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিয়ে পরিস্কার করে দিলেন। তুলে দেন সচেতনতামূলক প্রচারপত্র। সেনা কর্মকর্তাদের এমন অমায়িক আচরণের পরেও যেন বিস্ময়ের ঘোর কাটছিল না ওই তরুণের।

সেনা সদস্যদের প্রস্থানের পরেই স্থানীয় সংবাদকর্মীদের সঙ্গে কথা হয় ওই তরুণের। তিনি যে কথা বলেছেন তা প্রমিত বাংলায় দাঁড়ায়- ‘আমি সেনা সদস্যদের গাড়ি থেকে নামতে দেখে ভয় পেয়েছিলাম।

আমাদের মাঝে বদ্ধমুল একটি ধারণা ছিল তারা আচরণে কঠোর হবেন। কিন্তু তাদের এমন ভদ্র-বিনয়ী আচরণ আমাকে মুগ্ধ করেছে।’

বগুড়া শহরতলীর একটি উদাহরণ। ‘সাবান দিয়ে হাত ধুবো, জীবাণু থেকে মুক্ত হবো’ ‘বিদেশ ফেরত সকলে ঘরে অবস্থান করবেন’ এমন প্ল্যাকার্ড হাতে সড়কে হেঁটে যাচ্ছেন সেনা সদস্যরা। পথ চলতি এক রিকশা চালককে পেয়ে ঘরের বাইরে বের হওয়ার কারণ জানতে চাইলেন নম্র কন্ঠে।  

ভালোবাসার আবেশ ছড়িয়ে সেনা সদস্যরা তাঁর হাতে মাস্ক তুলে দিয়ে হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিয়ে হাতের জীবাণু মুক্ত করে দিলেন।

সেখানকার একটি বাজারের পরিবেশ-পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে প্রবেশ করলেন সেনা সদস্যরা। সেখানে উপস্থিত লোকজনের সঙ্গে চড়া সুরে নয়, অমায়িক ভদ্রতার আবরণে বিনয়ী বাক্যে কথা বলতে শুরু করেন একজন সেনা কর্মকর্তা।

‘আমরা সবাই গ্লাভস ও মাস্ক পড়ে ঘুরছি একটি কারণে। আমরা সচেতন আমরা আপনাদের উৎসাহিত করছি, আপনারাও সচেতন হোন। আপনারা নিজেরা পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন থাকুন। অযথা ঘরের বাইরে সময় কাটাবেন না।

যে কোন একজন আক্রান্ত হলে সবাই আক্রান্ত হবে। আমরা নেমেছি আপনাদের সুস্থতার জন্য। কেউ মাস্ক ছাড়া বাড়ি থেকে বের হবেন না।’

সেনা কর্মকর্তাদের ব্যবহারে নিজের মুগ্ধতা প্রকাশ করে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকুরে ইনসান আলী (৫৫) বলেন, ‘সত্যিই আমাদের দেশের সেনা সদস্যরা দেশ ও দেশের মানুষকে ভালোবাসে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাদের নিয়ে কত মিথ্যা প্রচারণা চলে। আজ আমিসহ অনেকেই স্বাক্ষী।

তারা আমাদের প্রতি কঠোর না হয়ে গভীর আন্তরিকতায় আমাদের সতর্ক করেছেন। নিজেকে নিরাপদ রাখার পরামর্শ দিয়েছেন। তারাই পারবেন দেশের মানুষকে নিরাপদ করতে।’

শুধু যশোর বা বগুড়া নয়, দেশের ৬২ টি জেলাতেই করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রুখে দিতে জেলা প্রশাসনের সহায়তায় এভাবেই মাঠে মাঠে ছুটে বেড়াচ্ছে সেনাবাহিনীর সদস্যরা।

এসব এলাকায় টহলের পাশাপাশি তারা মাইকিং করে বিদেশ ফেরতদের হোম কোয়ারেন্টিনে থাকতে এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে জনসাধারণকে রাস্তায় বের না হয়ে ঘরে অবস্থান করার আহবান জানাচ্ছেন।

প্রবাসীরা ঠিকঠাক হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকছেন কীনা এই বিষয়টি তদারকি করতেও তাদের বাড়ি যাচ্ছেন। অনেকের হাতে তুলে দিচ্ছেন ফলমূল। আবার পথচলতি মানুষকে সুরক্ষার পরামর্শ দিয়ে ভালোবাসার প্রতীক ফুল তুলে দিচ্ছেন।

নিতপণ্যের বাজারে কীভাবে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে কেনাকাটা করতে হবে সেই পথও বাতলে দিচ্ছেন। সড়কে সড়কে তারা নিজেদের উদ্যোগে জীবাণু নাশক স্প্রে করছেন। সেনা সদস্যদের দেশজুড়ে টহল জনসমাবেশ এবং জনসমাগম কঠোরভাবে নিরুৎসাহিত করছে।

সবাইকে নিতান্ত প্রয়োজন ব্যতীত বাসায় থাকার জন্য সেনাবাহিনী অনুরোধ জানাচ্ছে। তাদের কার্যক্রমে সাধারণ মানুষের মাঝে ইতিবাচক  সাড়া পড়েছে।

আন্ত:বাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আব্দুল্লাহ ইবনে জায়েদ কালের আলোকে জানান, মঙ্গলবার(৩১ মার্চ) দেশের ৬২ টি জেলায় সেনাবাহিনীর ৪৯৬ টি দল করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে স্থানীয় প্রশাসনের সাথে বিভিন্ন কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করে।

সেনা কর্মকর্তারাও বলছেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে আমরা সবাই যেন ভেদাভেদ ভুলে একসাথে কাজ করি, এটিই সবার কাছে প্রত্যাশা। সেনাবাহিনী সব সময় কঠিন পরিস্থিতিতে জনগণের পাশে আছে এবং থাকবে।

বতর্মান করোনা পরিস্থিতিতে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে সরকারের নিদের্শনা বাস্তবায়ন করছে দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী।

কালের আলো/এমএএএমকে