সরকারি হাসপাতালে মাদকাসক্তদের চিকিৎসার জন্য ১০ শয্যা রাখার মত আইজিপি’র

প্রকাশিতঃ 12:33 pm | June 06, 2018

অ্যাক্টিং এডিটর, কালের আলো:
মাদকাসক্তকে পুরোপুরি মাদকমুক্ত করতে দীর্ঘমেয়াদি পুনবার্সন ব্যবস্থা জরুরি বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড.মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী (বিপিএম বার)।

তিনি বলেন, ‘মাদক নিয়ন্ত্রণ করার পাশাপাশি মাদকাসক্তদের সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। এমনিতেই মাদকাসক্তদের জন্য সরকারি মাদক নিরাময় কেন্দ্র অনেক কম।

এজন্য দেশের প্রতিটি সরকারি হাসপাতালে মাদকাসক্তদের চিকিৎসার জন্য কমপক্ষে ১০ শয্যা নির্ধারণ করে দেয়ার পক্ষেও মত দিয়ে পুলিশ প্রধান বলেন, পুলিশের একার পক্ষে মাদক নির্মুল করা সম্ভব নয়।

এটি সম্ভব হলে একটি বিশাল অবকাঠামো তৈরি হবে। এর জন্য সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলারও আহবান জানান পুলিশ বাহিনীতে আলোকিত এ মানুষটি।

সম্প্রতি পুলিশ সদর দপ্তরে নিজ কক্ষে কালের আলোকে দেয়া বিশেষ সাক্ষাতকারে এসব কথা বলেন আইজিপি। সৎ, নির্লোভ ও বহুমাত্রিক কৃতিত্বের অধিকারী পুলিশের এ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) মাদককে সামাজিক সমস্যা হিসেবেই চিহ্নিত করেছেন।

একই সঙ্গে এই সমস্যা সামাজিকভাবে মোকাবেলা করার অঙ্গীকার করে তিনি কালের আলোকে বলেছেন, ‘মাদক উৎপাদন থেকে শুরু করে পরিবহন, বিপণন, বিক্রি কিংবা সেবনকারীদের নিরাময় করার পাশাপাশি ঠিকভাবে পুনর্বাসিতও করতে হবে।’

নৈতিকতায় দৃঢ় ও বিনয়ী দেশের পুলিশের এ সর্বোচ্চ কর্মকর্তা মনে করেন- ‘মাদক নির্মুলে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরকে সমৃদ্ধ করতে হবে। আর এটি সম্ভব হলেই মাদক নিয়ন্ত্রণে তারাও কার্যকরী ভূমিকা রাখতে পারবে।’

তিনি বলেন, ‘এখন স্বয়ংসম্পূর্ণ এই অধিদপ্তর থাকলেও সবাই মাদক নিয়ে শুধমাত্র দোষারোপ করে পুলিশকে। অথচ মাদকসেবীদের নিরাময় করা এবং পুনর্বাসিত করার বিষয়গুলোও এ অধিদপ্তরই দেখে। এসব দিক বিবেচনা করে তাদের সমৃদ্ধ করা জরুরি।’

আইজিপি ড.মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী অমিত দৃঢ়তার সঙ্গেই কালের আলোকে বলেন, ‘আমাদের দেশে মাদক উৎপাদন বা তৈরি হয় না। ইয়াবা, ফেন্সিডিল ও হিরোইন দেশের বাইরে থেকে আসে। সীমান্তে অন্যান্য বাহিনীর সদস্য কাজ করে। তাঁরা পরিশ্রম করেন।

তাঁরা আরো আন্তরিক হলে, মাদক নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে, সরবরাহ ও চাহিদা কমিয়ে দিতে পারলে মাদক কমে আসবে’, যোগ করেন বাংলাদেশ পুলিশের এ মহাপরিদর্শক।

মাদক নামক সামাজিক সমস্যা মোকালেবা করার জন্য ‘হলিস্টিক অ্যাপ্রোচ’ প্রয়োজন মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘জনগণকে সম্পৃক্ত করে সবাইকে এক করে মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করতে পারলে সামাজিক এই সমস্যা নিরসন করা সম্ভব।

অ্যাকশনের মাধ্যমে সাময়িক পরিত্রাণ হয় ঠিকই কিন্তু একে দীর্ঘ মেয়াদী করতে হলে এই থিমের কোন বিকল্প নেই। সবাইকে উদ্যোগী করা সম্ভব হলেই কেবলমাত্র মাদক সমস্যার গ্রহণযোগ্য সমাধান সম্ভব।’

ইস্পাতসম চারিত্রিক দৃঢ়তার অধিকারী এবং নীতির প্রশ্নে আপোষহীন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড.মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী বলেন, ‘মাদক ব্যবসায়ী বা কারবারিদের সঙ্গে পুলিশের কোন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের যোগাযোগ থাকলে এবং এর প্রমাণ মিললে তাঁর অপরাধকে ব্যক্তিগত অপরাধ হিসেবেই বিবেচনা করা হবে। কোন ব্যক্তির অপরাধের দায় পুলিশ বাহিনী গ্রহণ করবে না।’

মাদক কারবারিদের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী, বিশ্বনেতা শেখ হাসিনার কঠোর অবস্থানের কথাও স্মরণ করিয়ে দেন পুলিশ প্রধান। তিনি বলেন, ‘মাদকের বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধু কন্যা, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেছেন।

মাদকের বিরুদ্ধে আমাদের চলমান এ অভিযান অব্যাহত থাকবে। সবাই মিলে ঠিকভাবে কাজ করলে এর অপব্যবহার কমে আসবে।’

সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষকে আপন করে নেয়ার বিরণ গুণ রয়েছে আইজিপি ড.মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারীর। দেশ, সমাজ ও মানুষের জন্য কাজ করাই যেন তাঁর জীবনের পরম ব্রত। বাংলাদেশ পুলিশে এজন্যই তাকে বলা হয় ‘বিবেকবান এক মহীরূহ।’

৩২ বছরের বর্ণাঢ্য চাকরি জীবনে অঢেল বিত্ত-বৈভবের মালিক হওয়ার সুযোগ সত্ত্বেও অর্থ অর্জনের সুযোগকে তিনি অবলীলায় উপেক্ষা করে রীতিমতো দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। সৎ, সুস্থ, সুশৃঙ্খল, স্বাচ্ছন্দ্যময় ও সুন্দর যাপিত জীবনে অভ্যস্ত এ মানুষটি বিশ্বাস করেন জঙ্গিবাদের মতোই মাদককেও দমন করা সম্ভব।

এ প্রসঙ্গে কালের আলোকে তিনি বলেন, ‘পরিবার ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকেই মাদক কতটুকু ক্ষতিকর এ বোধ জাগাতে হবে। জাতিকে মাদকের অভিশাপ থেকে মুক্ত করতে পূর্ণোদ্যমে জনমত গড়ে তোলতে হবে।’

কালের আলো/এএ

আরও পড়ুন: বাস্তববাদিতার পাশাপাশি স্বপ্ন দেখতে পছন্দ করেন আইজিপি

আরও পড়ুন: আইজিপি ড.জাবেদ পাটোয়ারী’র সাক্ষাতকার পড়ুন কালের আলোতে

** দ্রুত খবর জানতে ও পেতে কালের আলো’র ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে রাখুন: KalerAlo/Facebook