ত্রাণ বিতরণে সেনাবাহিনীর কৌশল, মানতে হবে সামাজিক দূরত্বের অনুশাসনও

প্রকাশিতঃ 11:58 pm | April 08, 2020

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো :

ঘেষাঘেষি করে ত্রাণদাতারা নিজেরাই নিয়ম ভাঙছেন। পরোয়া করছেন না নিতে আসা অসহায় ও দুস্থ সাধারণ মানুষও।

আরও পড়ুন: প্রখর খরতাপেও পথে পথে মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে সেনাবাহিনী (ভিডিও)

করোনাভাইরাসের সংক্রমণের মাত্রা ও গতি কমিয়ে আনতে সামাজিক দূরত্ব অপরিহার্য হলেও নিয়ম না মানারই যেন অঘোষিত এক প্রতিযোগিতা চলছে রাজধানী থেকে শুরু করে দেশের প্রতিটি জেলার সামাজিক ও বেসরকারি সংগঠনগুলোর।

আবার কোন কোন ক্ষেত্রে ত্রাণ নিয়ে হুড়োহুড়ি ও বিশৃঙ্খলাও যেন নিত্যকার ঘটনা। ত্রাণ নিতে কোথাও কোথাও রীতিমতো ধস্তাধস্তি দেখে মনে হচ্ছে ‘বাঁচা-মরার’ লড়াইয়ে নেমেছেন একেকজন। ‘সামাজিক দূরত্ব’ শব্দটির বেলাতে প্রত্যেকের এমন উদাসীনতায় প্রতিনিয়ত বাড়ছে সংক্রমণের ঝুঁকি।

আরও পড়ুন: সহায়তায় আর্মি এভিয়েশন; আকাশপথে সেনা সদস্যদের হাতে যাচ্ছে মেডিকেল সরঞ্জামাদি

এমন ভয়ঙ্কর স্রোতের বিপরীতেই শৃঙ্খলা ও নিয়মানুবর্তিতায় একের পর এক নজর কেড়েছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। প্রত্যেকের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করতে রাজধানী ঢাকা থেকে শুরু করে দেশের প্রতিটি জেলাতেই সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিতের কঠোর অনুশাসন তারা নিজেরা মানছেন।

আরও পড়ুন: প্রধানমন্ত্রীর রাষ্ট্রনায়কোচিত নেতৃত্বে এক মোহনায় দেশ, মানুষকে ‘সুরক্ষার যুদ্ধে’ সেনাবাহিনী

একই সঙ্গে এই শব্দবন্ধটি সবাইকে মানতে উৎসাহী করছেন। দোকান বা বাজারের সড়কে রঙ দিয়ে সুরক্ষারেখা টেনে সেখান থেকে কেনাকাটা করতে পরামর্শ দিচ্ছেন।

আবার সামাজিক বিন্যাস ঠিক রেখেই সামাজিক দূরত্ব মেনেই তারা দরিদ্র ও নিম্ন আয়ের মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছেন।

আরও পড়ুন: করোনার বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষিত যুদ্ধে সেনাবাহিনী, সেনাপ্রধানের বক্তব্যে আশার সঞ্চার

মানবিক এই কর্মযজ্ঞের ধারাবাহিকতায় দেশপ্রেমিক বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সেনা পরিবার কল্যাণ সমিতি (সেপকস) ও আর্মি অফিসার্স লেডিস ক্লাব বুধবার (০৮ এপ্রিল) রাজধানীতে এক হাজার দুস্থ মানুষকে ত্রাণ সহায়তা দিয়েছে।

ঢাকা সেনানিবাসে সেনা পরিবার কল্যাণ সমিতি (সেপকস) ও আর্মি অফিসার্স লেডিস ক্লাবের পক্ষ থেকে রাজধানীর দিশেহারা দরিদ্র মানুষের মাঝে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদের সহধর্মিণী দিলশাদ নাহার আজিজ।

আরও পড়ুন: বৃত্তের মাধ্যমে দূরত্ব চিহ্নিত; সেনাবাহিনীর কর্মযজ্ঞে দেশজুড়ে স্বস্তির সুবাতাস (ভিডিও)

শুধু তাই নয়, এসব ত্রাণ সামগ্রী আবার নিম্নবিত্ত মানুষের বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। সেখানেও তিন ফুট দূরত্ব বজায় রেখে হেঁটে হেঁটে সেনা সদস্যরা ওইসব অভাবী ও খেটে খাওয়া মানুষের বাড়িতে বাড়িতে খাদ্য সহায়তা পৌঁছে দিচ্ছেন।

আরও পড়ুন: প্রকৃতিতে ফিরেছে প্রাণ, আতঙ্ক নয় প্রতিরোধের ডাক সেনা সদস্যদের (ভিডিও)

এদিন ওই দু’টি সেনা সংগঠনের ত্রাণ বিতরণের এমন সুশৃঙ্খল ও নজরকাড়া দৃশ্যের ছবি ভাইরাল হয়েছে জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। সেখানে কেউ কেউ লিখেছেন, ‘ত্রাণ বিতরণে বিশৃঙ্খলা ও সামাজিক দূরত্ব না মানাই যেখানে নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে সেখানে ব্যতিক্রমী উদাহরণ স্থাপন করেছেন আমাদের সেনা সদস্যরা।

আরও পড়ুন: ‘করোনা যোদ্ধা’ সেনা সদস্যদের এ যেন মানবতারই জয়গান! (ভিডিও)

নিজেরা সুরক্ষা সামগ্রী ব্যবহার করে প্রয়োজনীয় সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে হেঁটে যেভাবে সাধারণ মানুষের বাড়ি বাড়ি খাবার পৌঁছে দিচ্ছেন, সেটি সামাজিক-বেসরকারি সব সংগঠনেরই অনুসরণ করা উচিত। দূরত্ব বজায় রেখেও এর মাধ্যমে প্রকারান্তরে তারা আলগা হওয়া সামাজিক বন্ধনকেই মজবুত করছেন।’

আরও পড়ুন: সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে বেচাবিক্রি, অনুসরণ হচ্ছে ‘সেনাবাহিনী মডেল’ (ভিডিও)

আরও পড়ুন: দেশজুড়ে স্বাস্থ্য সেবাতেও এখন ভরসার নাম সেনাবাহিনী

একই বিষয়ে আবার কারও কারও ভাষ্য হচ্ছে-‘যে কোন দুর্যোগ বা মহামারী মোকাবেলায় এমন ঐক্যবদ্ধ ও সমন্বিত উদ্যোগই বেশি প্রয়োজন। আর সেটিই বারবার আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে দেশ মাতৃকার কল্যাণে নিবেদিতপ্রাণ সেনা সদস্যরা।’

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একই অনুষ্ঠানের ভাইরাল হওয়া আরেকটি ছবির বিষয়ে আলোচনা হচ্ছে এমন-‘ত্রাণ বিতরণে নিয়ম-শৃঙ্খলা কেমন হওয়া উচিত সেই বিষয়ে একটি ধারণা মিলবে প্রয়াসের পৃষ্ঠপোষক ও সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদের স্ত্রী দিলশাদ নাহার আজিজসহ ত্রাণবিতরণকারী অন্যান্য অতিথি ও ত্রাণ গ্রহীতাদের ছবি দেখে।

আরও পড়ুন: সহায়তায় আর্মি এভিয়েশন; আকাশপথে সেনা সদস্যদের হাতে যাচ্ছে মেডিকেল সরঞ্জামাদি

নিজেরা ফেইস মাস্ক, গ্লাভস পড়ে দূরত্ব বজায় রেখেছেন। যিনি ত্রাণ নিতে এসেছেন তিনি নির্ধারিত বৃত্তে দাঁড়িয়েছেন একই রকম সুরক্ষা সামগ্রী পরিধাণ করেই। এরপর তার হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে ত্রাণ সহায়তা।

করোনা প্রতিরোধে নিজ নিজ অবস্থান থেকে সবাই এভাবে উদ্যোগী হলেই কমিউনিটি ট্রান্সমিশন ঠেকিয়ে দেওয়া সম্ভব।’

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরাও বলছেন, গোটা বিশ্বকে একরকম গ্রাসই করেছে কোভিড-১৯। চীন, স্পেন, ইতালি পেরিয়ে আমেরিকা হয়ে এশিয়ায় এসে এখন বড় রকমের ধাক্কার মুখে পড়ার আশঙ্কা তৈরি করেছে বাংলাদেশেও। সম্ভাব্য এই বিপর্যয় রুখে দিতেই একে অন্যের নিরাপদ সামাজিক দূরত্ব বজায় অপরিহার্য।

ইতালি সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে বিলম্ব করেছে। এখন তাদের চরম মূল্য দিতে হচ্ছে। কিন্তু এখনও হুঁশ ফিরছে না বাংলাদেশে। সড়কে বা বাজারে কোথাও মানা হচ্ছে না সামাজিক দূরত্বের রীতি নীতি। সামাজিক দূরত্ব শব্দটির সঙ্গেই যেন কারও পরিচয়ই ঘটেনি এতোদিনেও!

সচেতন মহল বলছেন, সবাইকে সুরক্ষিত রাখতেই ত্রাণ বিতরণে সেনাবাহিনীর এমন কর্মকান্ডের কৌশল রপ্ত করতে হবে। বিশেষ পরিস্থিতিতে সতর্কতার সঙ্গেই সবাইকে স্বাস্থ্য বিষয়ক এমন নির্দেশনা মানতেই হবে।

আক্ষরিক অর্থেই এ নির্দেশনা বাস্তবায়নের জন্যই সরকারি ও বেসরকারি সংগঠনের মধ্যে সমন্বয় ও নিয়মিত তদারকি বাড়ানোর ওপরও মত দিয়েছেন অনেকেই।

কালের আলো/পিসি/এমএএএমকে