প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে করোনার যুদ্ধে সেনা সদস্যদের ১৬ দফা নির্দেশনা সেনাপ্রধানের
প্রকাশিতঃ 6:54 pm | April 12, 2020
বিশেষ সংবাদদাতা, কালের আলো :
‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী করোনা মোকাবেলাকে একটি যুদ্ধ হিসেবে ঘোষণা করেছেন। একজন সৈনিক হিসেবে আমরা অকুষ্ঠচিত্তে এই যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছি। এই যুদ্ধে আমরা জয়ী হবোই- ইনশাআল্লাহ্।’
বুকে সাহস, প্রবল আত্নবিশ্বাস আর দৃঢ় প্রত্যয় নিয়েই এমন উচ্চারণ করেছেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ।
তিনি বলেছেন, ‘সেনাপ্রধান হিসেবে জাতির এই সংকটকময় মুহূর্তে আপনাদের নেতৃত্ব দিতে পেরে আমি নিজেকে গর্বিত মনে করছি। আপনারা দিন-রাত নিরলসভাবে যে কাজ করে যাচ্ছেন তা অত্যন্ত মহৎ এবং আমরা জনগণের প্রকৃত বন্ধুরূপে আবারো আমাদের প্রাণপ্রিয় সেনাবাহিনীকে জাতির সামনে উপস্থাপনের সুযোগ পেয়েছি।’
প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সরকারের নির্দেশে সামাজিক দূরত্ব ও হোম কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিতে দেশজুড়ে কাজ করা সেনাবাহিনীর সদস্যদের উদ্দেশ্যে নিজের ১৬ দফা নির্দেশনায় এসব কথা বলেছেন জেনারেল আজিজ আহমেদ।
প্রায় এক সপ্তাহ আগে দেওয়া তার এসব নির্দেশনা ইতোমধ্যেই পৌঁছে গেছে দেশের ৬২ টি জেলায় বেসামরিক প্রশাসনকে নানাভাবে সহায়তা দিয়ে আসা বাহিনীটির সদস্যদের কাছে।
অতীতের ধারাবাহিকতায় আবারও জাতির কঠিন সংকটময় মুহুর্তে স্বমহিমায় উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে দেশপ্রেমিক সেনারা।
দেশের সাধারণ মানুষের প্রতি নিজেদের গভীর ভালোবাসা, আন্তরিকতা, একাগ্রতা, সাহসিকতায় এবং সর্বোপরি দৃঢ়তায় জাতির ঐকান্তিক প্রয়োজনের সময়েই ঠিকই নিজেদের জীবন বিপন্ন করে পাশে এসে দাঁড়িয়েছে সেনা সদস্যরা।
নিজের সম্মোহনী শক্তি, অসাধারণ বাগ্মিতা আর কঠিন বাস্তবতার নিরিখেই প্রস্তুত করা ১৬ দফা নির্দেশনা মূলত সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদের সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত বলেই মনে করছেন সবাই।
তার কার্যকর এসব নির্দেশনা সেনা সদস্যদের জন্য অনুপ্রেরণা ও প্রত্যয়ে প্রতীক হয়ে অমোঘ শাশ্বত ভরসা ও আশ্রয় হয়ে উঠেছে।
আবার শুরু থেকেই দেশব্যাপী জনসমাগম রোধে সেনাদের ব্যাপক তৎপরতার ফলেই এখনও পর্যন্ত এই ভাইরাসের মহামারি রূপ নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হয়েছে বলেও মনে করছেন পর্যবেক্ষক মহল।
নিজ বাহিনীর সদস্যদের উদ্দেশ্যে সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদের ১৬ দফা নির্দেশনাসমূহ হচ্ছে-
১.আপনারা সবাই অবগত আছেন যে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী করোনা মোকাবেলাকে একটি যুদ্ধ হিসেবে ঘোষণা করেছেন। একজন সৈনিক হিসেবে আমরা অকুষ্ঠচিত্তে এই যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছি। এই যুদ্ধে আমরা জয়ী হবোই- ইনশাআল্লাহ্।
২. জনগণকে যথাযথভাবে সচেতন করাই এখন আমাদের প্রধান কাজ । আমরা সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা এবং হোম কোয়ারেন্টাইনে সকলকে ঘরে থাকার জন্য উদ্বুদ্ধ করবো। ধৈর্য্য, সহনশীলতা ও সৎ সাহসের পরিচয় দিয়ে জনগণের পাশে থেকে আমরা জনগণের আস্থা অর্জন করবো।
৩. আমরা বেসামরিক প্রশাসনের সাথে অত্যন্ত সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপন করে তাদের সাথে যথাযথ সমন্বয় সাধনপূর্বক বিচক্ষণতার সাথে অর্পিত দায়িত্ব পালন করবো।
৪. আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী অন্যান্য সকল বাহিনীর সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে এই গুরু দায়িত্ব পালন করবো এবং সকলের সাথে সম্ভাব বজায় রাখবো।
৫. আমরা সেনাবাহিনীর ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হয় এ জাতীয় কোন কাজ, কথা ও আচরণ করবো না। শৃঙ্খলা পরিপন্থী কোন কাজে নিজেকে সম্পৃক্ত করবো না।
৬. আমরা আমাদের চেইন অব কমান্ড’ মেনে চলবো এবং নেতৃত্বের প্রতি সর্বাবস্থায় আস্থাভাজন থাকবো।
৭. আমরা সামজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারের ক্ষেত্রে বিচক্ষণতার পরিচয় দিবো। আমরা কোন গুজবে কান দিবো না এবং জনগণকে গুজব পরিহার করার জন্য উদ্বুদ্ধ করবো। কোন অপশক্তি যেন করোনা পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে গুজব ছড়াতে না পারে সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখবো।
৮. আমরা সর্বাবস্থায় শৃঙ্খলা মেনে চলবো। চলমান পরিস্থিতিতে সর্বাবস্থায় শৃঙ্খলা বহির্ভূত সকল কাজ হতে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখবো।
৯. আমরা আমাদের নিজস্ব নিরাপত্তার ব্যাপারে সচেতন ও সর্বদা সজাগ থাকবো । দায়িত্বরত অবস্থায় সর্বদা মাস্ক, গ্লাভস পড়া থাকবো। অযথা কোন ব্যক্তির সংস্পর্শে যাবো না। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (১১০) কর্তৃক প্রদত্ত সকল স্বাস্থ্যবিধি ঠিক মতো মেনে চলব।
১০. আমরা নিজেরা আতঙ্কিত হবো না। দায়িত্ব পালনকালীন আমাদের কেউ করোনা আক্রান্ত হলে তার জন্য সর্বোচ্চ চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করবো।
১১. চলমান করোনা যুদ্ধে সিএমএইচসহ মেডিক্যাল কোরের সকল সদস্যগণ প্রথম সারির যোদ্ধা হিসেবে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। আপনাদের এই সেবা এবং ত্যাগ, দেশ ও সেনাবাহিনী শ্রদ্ধাভরে স্মরণে রাখবে। আমরা সবসময় আপনাদের পাশে আছি।
১২. আমরা দায়িত্ব পালনকালীন সময়ে মানবতা ও সহানুভূতি বজায় রাখবো। প্রয়োজনে কঠোর হবো কিন্তু তা অশালীন, দৃষ্টিকটু বা মানবতা বিরোধী হলে চলবে না।
১৩. আমরা আমাদের দায়িত্বে কোন অবহেলা বা শীথিলতা প্রদর্শন করবো না। আমাদের নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার মনোভাব দেখিয়ে জনগণকে সচেতন করে অর্পিত দায়িত্ব পালনে সর্বোচ্চ সচেষ্ট থাকবো।
১৪. আমরা নিজ নিজ ধর্ম পালন করবো তবে ধর্মীয় উপাসনালয়ে না যেয়ে। রুমের মধ্যে একাকী পালন করবো।
১৫. আমরা নিজেদের মধ্যেও সর্বদা সামাজিক দূরুত্ব বজায় রাখবো যাতে করে আমরা সুস্থ্য থেকে আমাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করতে পারি।
১৬. সর্বোপরি আমরা আমাদের পরিবার পরিজনদের যথাযথ খোঁজ খবর রাখবো। তাদেরকে সাবধান থাকতে বলার পাশাপাশি যে কোন সমস্যা যথাযথ কর্তৃপক্ষকে অবগত করার মাধ্যমে তা সমাধানের চেষ্টা করবো।
নিজের বক্তব্যের শেষে সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ আরও বলেছেন, ‘করোনা ভয়ে আমরা এক ইঞ্চিও পিছু হটবো না। জাতির এই সংকটময় মুহূর্তে আমরা আমাদের পেশাদারীত্ব, সততা ও নিষ্ঠার মাধ্যমে জনগণের পাশে দাঁড়িয়ে আমাদের সেনাবাহিনীর ভাবমূর্তিকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যাবো।
আপনাদের সকলের সহযোগিতা, আন্তরিকতা এবং নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালনই পারবে এই পরিস্থিতি মোকাবেলা করে সবাইকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে নিতে। মহান সৃষ্টিকর্তা আমাদের সহায় হোন।’
কালের আলো/এমএএএমকে