প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে করোনায় সবজি উৎপাদন ‘স্বাভাবিক’ রাখতে সেনাবাহিনীর ভিন্নধর্মী উদ্যোগ!

প্রকাশিতঃ 9:18 pm | April 15, 2020

বিশেষ সংবাদদাতা, কালের আলো :

কোন যুদ্ধ নয়, কোভিড-১৯’র ভয়াবহতায় টালমাটাল হয়ে পড়েছে বিশ্ব অর্থনীতি। ভেঙে খান খান হয়ে গেছে ‘গ্লোবাল ভিলেজ’ কনসেপ্ট।

ইউরোপ, আমেরিকা, মধ্যপ্রাচ্যের পর এশিয়া-গোটা বিশ্বই এখন করোনার থাবায় রক্তবর্ণ। কোণঠাসা বৈশ্বিক অর্থনীতি শঙ্কা জাগাচ্ছে মহামন্দার।

করোনা পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও বিশ্বে খাদ্য সংকটের আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। জোর দিয়েছেন কৃষি উৎপাদন অব্যাহত রাখার ওপর।

প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে করোনা যুদ্ধের ‘অগ্রসৈনিক’ বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদস্যরা দেশজুড়ে সামাজিক দূরত্ব ও হোম কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিতে কঠিন এক সংগ্রামে নিজেদের সামিল করেছেন রাত-দিন; ক্লান্তিহীন।

একই সঙ্গে বিশেষ এই পরিস্থিতিতে দেশের কৃষি অর্থনীতিকে উজ্জীবিত করতেও তারা বিশেষ ভূমিকা রাখছেন। কৃষির উৎপাদন স্বাভাবিক রাখতে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের ঘরে ঘরে গিয়ে তাদের হাতে তুলে দিচ্ছেন নানা জাতের উন্নত সবজির বীজ।

করোনায় পুরো দেশ স্থবির হয়ে পড়লেও কৃষি যেন থমকে না দাঁড়ায় সেজন্য ফসলের ‘মাঠের আসল নায়ক’ কৃষকদের দূয়ারে দূয়ারে গিয়ে মনোবল সুদৃঢ় করে তাদের জন্য নিজেদের খরচায় প্রয়োজনীয় উপকরণও সরবরাহ করছেন।

দেশের মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত ও কৃষি উৎপাদন অব্যাহত রাখতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর এমন কর্মপ্রয়াসকে ইতিবাচক, বাস্তবভিত্তিক ও সময়োপযোগী বলেই মন্তব্য করেছেন কৃষি বিশেষজ্ঞরাও।

জানা যায়, প্রাণঘাতী করোনার ভয়াল কান্ডে ভবিষ্যত খাদ্য সংকট মোকাবেলায় আগাম প্রস্তুতি গ্রহণের ওপর জোর দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই ভাইরাসের কারণে বিশ্বব্যাপী খাদ্যাভাবের মারাত্মক প্রভাব পড়তে পারে, এমন সতর্কতা সরকার প্রধানের।  

পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী কোনো জমি অনাবাদি না রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। বঙ্গবন্ধু কন্যা ইতোমধ্যেই ক্ষুদ্র ও মাঝারি কৃষকদের জন্য ৫ শতাংশ সুদে পাঁচ হাজার কোটি টাকার বিশেষ প্রণোদনার ঘোষণা দিয়েছেন।

এর মাধ্যমে পোল্ট্রি, কৃষি খামার, ফলমূল, মসলাজাতীয় খাদ্যপণ্য উৎপাদনকারী চাষীরা এখান থেকে ঋণ নিয়ে উৎপাদন বৃদ্ধি করতে পারবেন।

বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানিয়েছে, দেশের এই কঠিন পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা বাস্তবায়নে সামগ্রিক উৎপাদনের ওপরও বিশেষ নজর দিয়েছেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ।

সামনের দিনের খাদ্য সংকট ও মন্দা কাটাতেই কৃষি অর্থনীতিকে আরও মজবুত করতে কৃষি উৎপাদন বাড়াতে মাঠ পর্যায়ের কৃষকদের নিজেদের সাধ্যমতো সহায়তারও ‘বিশেষ বার্তা’ দিয়েছেন নিজ বাহিনীর দায়িত্বশীলদের।

একই সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার পর নিজেদের ‘রুটিন’ দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ কৃষিজ উৎপাদন অব্যাহত রাখতে অনেক জেলাতেই বাড়ি বাড়ি কৃষকদের উৎসাহী করছেন সেনা সদস্যরা।

এমনকি যারা মৌসুমী কৃষক তাদেরকেও কৃষি উৎপাদনে আগ্রহী করতে উদ্যোগী ভূমিকা গ্রহণ করেছেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, সেনাদের নিজেদের অর্থায়নে দেশের বিভিন্ন জেলায় উন্নতজাতের সবজির বীজ বিনামূল্যে চাষীদের মাঝে বিতরণ করা হচ্ছে।

গ্রামীণ গৃহবধূদেরও বাড়ির উঠানে, জমির আইলে, রাস্তার পাশে বা পুকুরপাড়ে সাধ্যমত সবজি চাষ করতে নানা জাতের সবজি বীজ সরবরাহ করা হচ্ছে।

অভাব, ক্ষুধা বা হতাশা কাটিয়ে কৃষকদের নতুনভাবে ঘুরে দাঁড়াতে সহায়তা করতেই তৃণমূলে এসব কর্মপরিকল্পনার সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েই বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।

কৃষি বিশেষজ্ঞরা কালের আলোকে বলছেন, কৃষি, গার্মেন্টস এবং প্রবাসী শ্রমিকদের রেমিট্যান্সের ওপর নির্ভর করে বাংলাদেশের জাতীয় অর্থনীতি শক্ত অবস্থানে দাঁড়িয়েছে। এর মধ্যে আবার কৃষিই চিরস্থায়ী।

বিভিন্ন রকম প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং আবহাওয়ার প্রতিকূলতা মোকাবিলা করেই যুগের পর যুগ টিকে আছে কৃষি।

আর দিনের পর দিন যারা এই কাজটি করে যাচ্ছেন সেই কৃষককূল করোনার প্রাদুর্ভাবে এখন রীতিমতো হতাশ।

‘জাতিকে ক্ষুধামুক্ত এবং অপুষ্টি থেকে রক্ষায় তাদের মনোবল বৃদ্ধির পাশাপাশি ফসল উৎপাদন অব্যাহত রাখতে সেনাবাহিনীর এই কর্মকৌশল অনুসরণযোগ্য বলেই মত দিয়েছেন সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক আবুল কাশেম।

কালের আলোর সঙ্গে আলাপে তিনি বলেন, ‘অন্যরাও নিজ নিজ অবস্থান থেকে এই কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নে এগিয়ে এলে খাদ্য উৎপাদন যথাযথ করার পাশাপাশি সম্ভাব্য অর্থনৈতিক মন্দাও কাটানো সম্ভব হবে।’

জানতে চাইলে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) কৃষি পরিসংখ্যান বিভাগের অধ্যাপক ড.পরেশ চন্দ্র মোদক কালের আলোকে বলেন, ‘দেশে সম্ভাব্য বেকারত্ব ও খাদ্য সংকটের ধাক্কা সামাল দিতে আগেভাগেই কৃষকদের অগ্রাধিকার দিয়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ব্যতিক্রমী এমন কর্মপ্রয়াসকে আমি স্বাগত জানাচ্ছি।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশের কৃষক অনেক পরিশ্রমী। কৃষক যদি ঠিকভাবে বীজ পায় তাহলে তারা পরিশ্রম করে ফসল ফলাতে পারবে।

খাদ্য ঘাটতি ঠেকানোর পাশাপাশি কৃষি উৎপাদন অব্যাহত রাখতে আমাদের দেশপ্রেমিক সেনাদের সময়োচিত উদ্যোগ নি:সন্দেহে প্রশংসনীয়। আমি মনে করি, দেশব্যাপী তাদের এমন প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখা প্রয়োজন।’  

কালের আলো/এমএএএমকে