ক্রিকেটে নারী জাগরণ
প্রকাশিতঃ 10:28 am | June 11, 2018
:: সম্পাদকীয় ::
সময়ের হাত ধরিয়া বাংলাদেশের নারীরা যেমন বিভিন্ন ক্ষেত্রে নিজেদের সাফল্য তুলে ধরছে তেমনি ক্রিকেটেও তার ব্যতিক্রম নয়। ভারতের দেরাদুন থেকে চরম হতাশাই উপহার দিয়েছিল সাকিব আল হাসানরা। আফগানিস্তানের মতো দলের কাছে হোয়াইটওয়াশের লজ্জায় পুড়তে হলো পুরুষ ক্রিকেট দলকে। সেই আশা-ভরসার ক্রিকেটও যেন পথ হারিয়ে বসেছিল দেরাদুনে গিয়ে। হতাশার নদীতে আশার ভেলা ভাসালেন আমাদের নারী ক্রিকেটাররা। কুয়ালালামপুরের কিনরারা একাডেমি ওভাল মাঠে নারী ক্রিকেটের পরাশক্তি ভারতকে ৩ উইকেটে হারিয়ে এশিয়া কাপের শিরোপা জিতে নিলো বাংলাদেশ। ঈদের আগেই বাংলাদেশকে ভাসালো ঈদের আনন্দে। অভিনন্দন টিম টাইগ্রেস।
ক্রিকেটকে বলা হয় গৌরবময় অনিশ্চয়তার খেলা। গতকালের ফাইনালেও যথারীতি ছিল টানটান উত্তেজনা। কিন্তু অবশেষে জয় ছিনিয়ে এনেছে সালমারা। ভারত এশিয়া কাপের আগের ৬ আসরের টানা ৬বার চ্যাম্পিয়ন। নারী এশিয়া কাপের আগের ৬ আসরে একটি ম্যাচও হারেনি ভারতের মেয়েরা। এবার তারা হারলো দুটি ম্যাচ এবং দুটিই বাংলাদেশের কাছে। সর্বশেষ ফাইনালে বাংলাদেশের উজ্জীবিত নারী ক্রিকেটারদের কাছে হেরেই ভারতের গৌরবের সমাপ্তি ঘটে গেলো।
কুয়ালালামপুরের কিনরারা ওভাল স্টেডিয়ামে শেষ মুহূর্তে তৈরি হয়েছিল দারুণ উত্তেজনা। টানটান উত্তেজনা। পেন্ডুলামের মতো দুলছিল পুরো ম্যাচ। কে জিতবে, নিশ্চিত করে কেউই বলতে পারছে না। আগে ব্যাট করে ১১৩ রানের টার্গেট দেয় ভারত। এক পর্যায়ে পরিস্থিতিতে শেষ ওভারে বাংলাদেশের জয়ের জন্য প্রয়োজন হয়ে দাঁড়ায় ৯ রান। বোলিংয়ে ভারতের অধিনায়ক এবং অন্যতম সেরা বোলার হারমানপ্রিত কাউর। ব্যাটসম্যান সানজিদা রহমান এবং রুমানা আহমেদ।
সানজিদা এবং রুমানা আহমেদ দু’জনই মোটামুটি সেটা ব্যাটসম্যান। রুমানা তো আশা-ভরসারই প্রতীক হয়ে উঠেছিলেন। হারমানপ্রীত কাউরের কাছ থেকে ১ রান নিয়ে রুমানাকে স্ট্রাইকে পাঠান সানজিদা। দ্বিতীয় বলে এক্সট্রা কভার দিয়ে ৪ মেরে সমীকরণ সহজ করে নেন রোমানা। পরের বলে ১ রান নিয়ে লক্ষ্যমাত্রাটা ৩ বলে ৩ রানে নামিয়ে আনেন রোমানা।
চতুর্থ এবং পঞ্চম বলে তৈরি হয়েছিল চরম নাটকীয়তা। ছক্কা মারতে গিয়ে লংঅনে বাউন্ডারি লাইনে ধরা পড়েন সানজিদা। তখনো ২ বলে প্রয়োজন ছিল ৩ রান। তবে স্ট্রাইকে রোমানা থাকায় আশা বেঁচে ছিল বাংলাদেশের। কিন্তু ২ রান নিতে গিয়ে রানআউটে কাঁটা পড়েন ২২ বলে ২৩ রান করা রোমানা। নিজের ভুলের কারণে রানআউট হয়ে যান তিনি।
শেষ বলে প্রয়োজন ২ রান। জাহানারা আলম উইকেটে। হারমানপ্রিতের অফস্টাম্পের বলে সুইপ করেই পড়িমড়ি দৌড় লাগান স্ট্রাইকে থাকা জাহানারা। অনেকটা অসম্ভব এক ডাবল নিয়েই উল্লাসে ফেটে পড়ে জাহানারাসহ পুরো বাংলাদেশ দল। স্টেডিয়ামে উপস্থিত বাংলাদেশি দর্শক-সমর্থকরা নেমে আসেন মাঠে। আনন্দ-উল্লাস করতে শুরু করেন নারী ক্রিকেটারদের ঘিরে।
আমাদের পুরুষতান্ত্রিক সমাজে মেয়েরা এখনও পশ্চাত্পদ। তবে বর্তমানে বিভিন্ন ক্ষেত্রে পরিলক্ষিত হচ্ছে নারী জাগরণ ও উত্তরণ। নারীদের ক্রিকেট খেলায় অংশগ্রহণ ও পোশাক পরাটাই একসময় ছিল কল্পনাতীত। এখন পুরুষের মন ও সমাজের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তনও লক্ষ্যণীয়। একের পর এক প্রমীলা ক্রিকেটারদের জয়ে তারা উচ্ছ্বসিত ও আনন্দিত। উনিশ শতকে বাঙালি সমাজে যে নারী জাগরণের সূত্রপাত হয়, এখন তা ফুলে-ফলে অনেকখানি প্রস্ফুটিত। নারী ক্রিকেটারদের এশিয়া চ্যাম্পিয়ান হওয়ার মধ্য দিয়ে সেটি যেন আরও প্রমাণিত হল। জয়তু বাংলাদেশের নারী ক্রিকেট দল।
কালের আলো/ওএইচ