যুক্তরাজ্য বিএনপি’র সম্মেলন স্থগিত, নেতৃত্ব নিয়ে শঙ্কায় এম.এ.মালেক!
প্রকাশিতঃ 2:29 am | January 04, 2018

ডা: আব্দুল আজিজ, যুক্তরাজ্য থেকে:
প্রতিক্ষার পালা শুরু হয়েছিল মাত্র। আর ঠিক তখনই এলো একটি দু:সংবাদ। যুক্তরাজ্য বিএনপি’র সম্মেলন হচ্ছে না। আগামী দু’সপ্তাহের জন্য স্থগিত করা হয়েছে এ সম্মেলন। এতে করে নেতা-কর্মীরা অনেকটাই হতাশ হয়ে পড়েছেন। সম্মেলনে কাঙ্খিত নেতৃত্ব নিয়েও শুরু হয়েছে নতুন মেরুকরণ।
ইতোমধ্যেই বর্তমান সভাপতি এম.এ.মালেক জানিয়ে দিয়েছেন, তিনি আর এ পদে থাকছেন না। জীবনের পুরোটা সময় দলকে উজাড় করে দিলেও এবার তিনি মনোনিবেশ করতে চান নিজের পরিবারের দিকে। যাদের বিষয়ে বরাবরই উদাসীন ছিলেন তিনিG
এম.এ.মালেকের এমন আকস্মিক বার্তা নিয়ে চূলচেরা বিশ্লেষণে নেমেছেন নেতা-কর্মীরা। তারা মনে করছেন, অভিমান থেকেই হয়তো এমন সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন দু:সময়ের ত্রাতা এম.এ.মালেক।
এদিকে, কেন এবং কী কারণে আকস্মিক সম্মেলন স্থগিত হলো এ নিয়ে শুরু হয়েছে তুমুল আলোচনা। মূলত কাউন্সির প্রক্রিয়া নিয়ে ব্যাপক সমালোচনার কারণেই এমন সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে হাইকমান্ডকে।
জানা যায়, বিএনপি’র কেন্দ্রীয় কমিটির নির্দেশে মাত্র এক সপ্তাহের নোটিশে যুক্তরাজ্য বিএনপির কাউন্সিল হওয়ার কথা ছিল গত ২ জানুয়ারি। কিন্তু বিনা মেঘে বজ্রপাতের মতোই সোমবার রাতে যুক্তরাজ্য বিএনপির অফিসে অনুষ্ঠিত এক বিশেষ সভায় দু’সপ্তাহের জন্য স্থগিত করা হয় সম্মেলন।
আর এ ঘোষণাটি আসে বিএনপির কেন্দ্রীয় আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক মাহিদুর রহমানের মুখ থেকেই। এ সভাতে বক্তব্য রেখেছেন যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি এম এ মালেক ও সাধারণ সম্পাদক কয়ছর এম আহমদ। বিশেষ সভাকে ঘিরে নেতা-কর্মীদের মাঝে উদ্দীপনার কমতি ছিল না মোটেও।
বিএনপির নেতাদের বক্তব্য দেওয়া ও লাইভ ফেইসবুকে সম্প্রচারকে কেন্দ্র করে উত্তেজনার সৃষ্টি হলে শীর্ষ নেতাদের হস্তক্ষেপে সভা আবারো শুরু হয়। একাধিক নেতার ফেইসবুকে লাইভে আবার দলের ভেতরের কোন্দলের চিত্র উঠে আসাতেও সৃষ্টি হয়েছে তোলপাড়।
তবে পুরো বিষয়টিকে ঠান্ডা মাথায় ট্যাকেল করেছেন দলের আন্তর্জাতিক সম্পাদক মাহিদুর রহমান। তিনি বেশ কয়েকজন নেতার বক্তব্য শুনেন এবং মঙ্গলবার যুক্তরাজ্য বিএনপির সিনিয়র নেতাদের সাথে বসে কাউন্সিলের তারিখ ও কাউন্সিলের কারা ভোটার হবেন এবং কোন প্রক্রিয়ায় কাউন্সিল হবে তা নির্ধারন করা হবে বলেও জানিয়েছেন।
২০১৫ সালের ১৯ জুলাই এম এ মালিককে সভাপতি ও কয়ছর এম আহমদকে সাধারণ সম্পাদক করে যুক্তরাজ্য বিএনপি’র কমিটি ঘোষণা করা হয়। প্রায় ছয় মাস আগে কমিটির মেয়াদ পেরিয়ে যায়। এরপর আসন্ন কাউন্সিলকে কেন্দ্র করে যুক্তরাজ্য বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে আনন্দ-উদ্দীপনার সৃষ্টি হয়। একই সঙ্গে আবার সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ অন্যান্য গুরুত্বপুর্ণ পদ প্রত্যাশী নেতাদের মাঝেও সৃষ্টি হয় সন্দেহ আর নানান প্রশ্নের।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, কাউন্সিলে জোনাল কমিটির সংখ্যা নিয়ে মতভেদ সৃষ্টি হয়। টিভি ওয়ানের সাথে এক স্বাক্ষাতকারে সংগঠনের সভাপতি এম এ মালিক বলছেন, জোনাল কমিটি ৬০টি। কিন্তু ভিন্ন রকম তথ্য দিয়েছেন সাধারণ সম্পাদক কয়ছর এম আহমদ। তিনি বলেছেন, এর সংখ্যা ৪৫টি। তবে কিছু প্রস্তাবিত কমিটি রয়েছে।
নির্বাচনের প্রক্রিয়া সম্পর্কে বলতে গিয়ে সভাপতি সাধারণ সম্পাদক উভয়ই নিশ্চিত করেন বিগত দুই কাউন্সিলের মত এবারো বিভিন্ন জোনাল কমিটির নেতা-কর্মীদের মতামতের ভিত্তিতেই নতুন কমিটি আসবে। তাদের সঙ্গে কথা বলেই নতুন নেতৃত্ব নির্ধারণ করে দিবেন আগামী দিনের কান্ডারী, বিএনপির ভাবী সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
অন্যদিকে, এ কাঙ্খিত সম্মেলন পিছিয়ে গেলেও নতুন করে দলটির শীর্ষ পদে আসার তোড়জোড় শুরু করেছেন এ কমিটিরই সাবেক সভাপতি শায়েস্তা চৌধুরী কুদ্দুছ। ইতোমধ্যে তাঁর সঙ্গে না কী বিভিন্ন জোনাল কমিটির নেতারাও যোগাযোগ করছেন। তার অতীত কাজের জন্য তাকে আবারো সভাপতি পদে দাঁড়াতে তারা উৎসাহিত করছেন।
এদিকে, শেষ মুহুর্তে সাবেক সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক শরিফুজ্জামান চৌধুরী তপন সভাপতি প্রার্থী হচ্ছেন বলে বিভিন্ন মিডিয়ায় সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে।
সময় গড়াতেই সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে আবারো আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে এসেছেন যুক্তরাজ্য বিএনপি’র বর্তমান সভাপতি এম.এ.মালেক। গত বৃহস্পতিবার তিনি আবারো সভাপতি পদে থাকার নিজের ইচ্ছার কথা জানিয়েছিলেন। তার মতে, অবৈধ সরকারের পতন না হওয়া পর্যন্ত তিনি এ পদে থেকে আন্দোলনকে আরো গতিশীল করবেন। তবে সোমবার রাতের বিশেষ জরুরী সভায় তিনি তার অবস্থান থেকে সরে এসেছেন। সবাইকে অবাক করে দিয়ে এ নেতা বলেছেন, আগামী কাউন্সিলে সভাপতি হবেন কিনা তা এখনো নিশ্চিত নন। তিনি আবেগময়ী বক্তব্যে বলেন, এই দলের জন্য জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সময় দিয়েছি। পরিবারকে সভায় দিতে পারিনি। ছেলে-মেয়েরা মানুষ হয়েছে তার মায়ের কাছে। তাদের প্রয়োজনের সময় পাশে থাকতে পারিনি। এই দেশে বেড়ে উঠা ছেলে-মেয়েরা আমার উপর তাদের অনেক অভিযোগ। এখন সময় হয়েছে পরিবারকে সময় দেয়ার।
তিনি বলেন, আমার সভাপতি হওয়ার ইচ্ছাপূরণ হয়েছে দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যানের একান্ত ইচ্ছায়। আমি আজীবন তার কাছে ঋনী। দলে শীর্ষ পদে না থাকলেও পিছনের সারি থেকে কাজ করব।’ দলীয় রাজনীতিতে ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতা হিসেবে পরিচিত এম.এ.মালেক অভিমান থেকেই হয়তো এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে মনে করছেন জোনাল শাখার দলীয় নেতা-কর্মীরা। এদিকে, তৃতীয়বারের মত সাধারণ সম্পাদক হয়ে হ্যাট্রিক করতে ইচ্ছুক বর্তমান সাধারণ সম্পাদক কয়ছর এম আহমদ। তিনি গত শুক্রবার এক স্বাক্ষাতকারে বলেন, যুক্তরাজ্যে বর্তমান গতিশীল আন্দোলন সংগ্রামের ধারা অব্যাহত রাখতে একই পদে থাকতে ইচ্ছুক। তবে তিনি নেতাকর্মীদের উপর আস্থা রেখে বলেন, তারা চাইলে আমি আবারো এই দায়িত্ব পালন করতে প্রস্তুত।
এদিকে সাধারণ সম্পাদকের পদে পরিবর্তন আনতে প্রার্থী হয়েছেন বেশ কয়েকজন সাবেক ছাত্রনেতা। এর মধ্যে রয়েছেন যুক্তরাজ্য বিএনপির সাবেক সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নাসিম আহমদ চৌধুরী, সাবেক যুগ্ম সম্পাদক এডভোকেট তাহির রায়হান চৌধুরী পাবেল ও যুক্তরাজ্য যুবদলের সাবেক আহবায়ক দেওয়ান মোকাদ্দেম চৌধুরী নিয়াজ।
তবে তারা কাউন্সিলের প্রক্রিয়া নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তাদের উদ্বেগের বিষয়টি দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যানের কাছেও লিখিত আকারে পাঠানো হয়েছে।
সম্মেলনকে সামনে রেখে যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক পদ প্রার্থী ৭ নেতা গত শনিবার (৩০ ডিসেম্বর) তারেক রহমানের কাছে লিখিত অভিযোগ পত্র দিয়েছিলেন।
আসন্ন সম্মেলনে সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী ও সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নাসিম আহমদ চৌধুরী, যুক্তরাজ্য যুবদলের সাবেক আহবায়ক দেওয়ান মুকাদ্দেম চৌধুরী নিয়াজ, বর্তমান কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তাজ উদ্দীন, তাহির রায়হান চৌধুরী পাবেল, সভাপতি পদপ্রার্থী মোঃ শরীফুজ্জামান চৌধুরী তপন, কাজী ইকবাল হোসেন, মুজিবুর রহমানের স্বাক্ষরিত এই অভিযোগ দায়ের করা হয় বলে সংবাদ প্রকাশ করেছে একটি অনলাইন নিউজ পোর্টাল।
তারেক রহমান বরাবরে লিখিত ওই অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়, “আপনি জানেন যে, আগামী ২-রা জানুয়ারি ২০১৮ তারিখে বিএনপির কাউন্সিল। গত ২৪শে ডিসেম্বর যুক্তরাজ্য বিএনপির জরুরি সভা অনুষ্টিত হয়েছিল। সভায় সর্বসম্মতিক্রমে একটি প্রস্তাব গৃহীত হয়েছিল যে, নতুন কমিটি গঠনে আপনার সিদ্ধান্ত যুক্তরাজ্য বিএনপির নেতাকর্মী সবাই মেনে নেবে। আপনার উপস্থিতি ছাড়া যুক্তরাজ্য বিএনপির কাউন্সিল বা সম্মেলন অনুষ্টান করা কোন অবস্থাতেই সম্ভব হবে না। কিন্তু এর পরের দিনই আমরা একটি অনলাইন পত্রিকার মাধ্যমে জানতে পারলাম যে ২রা জানুয়ারি যুক্তরাজ্য বিএনপির কাউন্সিল ঘোষণা করা হয়েছে। কিন্তু উক্ত কাউন্সিল অনুষ্টানের কয়েকটি বিষয়ে এখনও নেতাকর্মীদের মাঝে সংশয় রয়েছে।
এ সময় তারা বেশ কয়েকটি প্রশ্নও ছুঁড়ে দেন। তারা জানতে চান, এই কাউন্সিলে আপনার সম্মতি রয়েছে কি না, কাউন্সিলে আপনার উপস্থিতি থাকবে কী না, নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন হলে সে কমিটি কাউন্সিলারদের সরাসরি ভোটার মাধ্যমে হবে কী না? কে হবেন নির্বাচন কমিশনার? ভোটের মাধ্যমে হলে কারা ভোটার হবেন? কারা কাউন্সিলার হবেন? কাউন্সিলের স্থান কোথায় এবং কখন হবে? কাউন্সিলারদের তালিকা তৈরী করা না হলে যারা সভাপতি কিংবা সাধারণ সম্পাদক পদে নির্বাচন করতে ইচ্ছুক, তারা কিভাবে কোন পক্রিয়ায় কার কাছে নিজেদের প্রার্থিতা ঘোষণা করবেন, কাউন্সিলারদের চূড়ান্ত তালিকা না পেলে কিভাবে কাদের কাছে ভোট চাইবেন।’