টার্গেট শতভাগ এডিপি; করোনায় ‘অচলাবস্থা’ নেই এলজিআরডি মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রমে
প্রকাশিতঃ 9:30 am | May 06, 2020
নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো :
প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের ভয়ঙ্কর থাবার মধ্যেও স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ে অচলাবস্থা তৈরি হয়নি। টিম ওয়ার্কের মাধ্যমে মন্ত্রণালয়ের স্বাভাবিক কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছেন মন্ত্রী তাজুল ইসলাম।
কখনও ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে দেশের ৬৪ জেলার এলজিইডি’র নির্বাহী প্রকৌশলীদের সঙ্গে তিনি কথা বলছেন।
তাদের সুবিধা-অসুবিধার কথা শোনছেন। চলমান উন্নয়ন কর্মকান্ডসমূহ বাস্তবায়নের পথে বাঁধা দূর করতে গুরুত্বপূর্ণ দিক নির্দেশনা প্রদান করছেন। অনেক প্রতিকূলতা মোকাবেলা করেই জেলার নির্বাহী প্রকৌশলীরা উন্নয়ন কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ায় মন্ত্রী তাদের প্রশংসা পেয়েছেন।
দেশের সর্ববৃহৎ এই মন্ত্রণালয়ের সামগ্রিক কর্মকান্ড বাস্তবায়নে মন্ত্রীর পাশে থেকেই তাকে সব রকমের সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছেন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ।
মন্ত্রী-সচিবের ‘টাইম টু টাইম’ নির্দেশনা বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়নেও চমক তৈরি করেছে।
বেশিরভাগ জেলায় এডিপির শতকরা ৮০ ভাগ কাজ বাস্তবায়িত হওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন মন্ত্রী। পাশাপাশি নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই এ অর্জন শতভাগ করতেও তিনি সংশ্লিষ্টদের যাবতীয় নির্দেশনা প্রদান করেছেন। খবর সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল সূত্রের।
জানতে চাইলে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ কালের আলোকে বলেন, করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের মধ্যেও গত দেড় মাসে স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের সাবির্ক কর্মকান্ডে কোন অচলাবস্থা তৈরি হয়নি।
অনেক এলাকাতেই মন্ত্রণালয়ের উন্নয়ন কর্মকান্ড চলমান ছিল। নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই সব কাজ সম্পন্ন করতে ইতোমধ্যেই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আমরা আশা করি শত প্রতিবন্ধকতার মধ্যেও সময়ের কাজ সময়েই শেষ হবে।’
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, করোনার প্রবল দাপটে লকডাউনে স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্বের কঠোর অনুশাসন মেনেই উন্নয়ন কর্মকান্ড পরিচালনা করেছেন জেলায় জেলায় দায়িত্বশীলরা। এরপরেও অনেক এলাকায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বাঁধার মুখে সাময়িক কার্যক্রম বন্ধ করা হয়।
কোথাও কোথাও কাজ পরিচালনা করতে গিয়ে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারকে জরিমানা গুণতে হয়েছে। এরপর অনেক এলাকায় কাজের গতি হ্রাস পেলেও কার্যক্রম থেমে থাকেনি।
সোমবার (০৪ এপ্রিল) ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে দেশের ৬৪ জেলার এলজিইডি’র নির্বাহী প্রকৌশলীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন স্থানীয় সরকার মন্ত্রী তাজুল ইসলাম। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) ও এলজিইডির অন্যান্য কার্যক্রমের অগ্রগতি পর্যালোচনার উদ্দেশে এই ভিডিও কনফারেন্সের উদ্যোগ গ্রহণ করে মন্ত্রণালয়।
মতবিনিময়কালে মন্ত্রী তাজুল ইসলাম বলেন, ‘জাতির এই দু:সময় ও দুর্দিনে এলজিইডির জেলা পর্যায়ে কর্মরত নির্বাহী প্রকৌশলীরা কাজ করছেন। আমরা যেভাবে এগুচ্ছিলাম কোভিড১৯ পরিস্থিতির কারণে তাতে কিছুটা বাঁধার সৃষ্টি হয়েছে। তবে সবাই একযোগে কাজ করলে এ বিপর্যয় কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে আমি আশা করি।’
সভায় এলজিইডি’র বিভিন্ন জেলার নির্বাহী প্রকৌশলীরা জানান, রাস্তায় মাটি ভরাটসহ বিভিন্ন কাজ সামাজিক দূরত্ব মেনে করা সম্ভব হচ্ছে। তবে কার্পেটিং বা ঢালাইয়ের কাজ করতে কিছুটা অসুবিধার সৃষ্টি হচ্ছে।
নিয়মিত কাজ করা শ্রমিকরা নিজ নিজ এলাকায় চলে যাওয়াতে দক্ষ কর্মী সঙ্কট তৈরি হয়েছে।
পাথর আমদানিতে ও পরিবহনেও একই রকমের সমস্যা তৈরি হয়েছে। আবার সিমেন্টসহ প্রয়োজনীয় উপকরণের দাম বেড়েছে। সঙ্গে স্বাস্থ্যগত ঝুঁকির বিষয় তো রয়েছেই। স্থানীয় প্রশাসনও লকডাউন বা ছুটি বাস্তবয়নে কঠোর হবার কারণে কাজ করতে সমস্যা হচ্ছে।
তবে এসব সমস্যা সমাধানের পথও বাতলে দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী তাজুল ইসলাম। তিনি বলেছেন, ‘সরকার কিছু কিছু ক্ষেত্রে শিথিল হওয়ার নির্দেশনা প্রদান করেছে। কাজেই সমস্যাগুলো ধীরে ধীরে কেটে যাবে। তারপরও যেসব জায়গায় আমাদের ভূমিকা রাখা দরকার সেটা আমরা করব।’
একই বিষয়ে এ মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ কালের আলোকে বলেন, ‘স্বাস্থ্যবিধি মেনে ও শারীরিক দুরত্ব বজায় রেখেই সংশ্লিষ্টদের চলমান উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালনার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
সাধারণত সড়ক নির্মাণে দক্ষ শ্রমিক অপরিহার্য হওয়ায় সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে কাঙ্খিত শ্রমিকদের তালিকা প্রস্তুত করে সমস্যা সমাধানের কথা বলা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘ব্রিজ, সড়কসহ অবকাঠামোগত উন্নয়ন কাজগুলো শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখেই করা হয়। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্টরা সবাই সতর্ক পদক্ষেপ নিয়েছে। তাছাড়া কোন কোন এলাকায় ৫’শ বা ৬’শ মিটার ব্রিজের কাজগুলো বন্ধ রাখলে সমস্যা তৈরি হবে।
সাধারণত এসব কাজ অনেক লোক একত্রে করে না। কেউ ১০ হাত আবার কেউ ১৫ হাত দূরে অবস্থান নিয়েই কাজ করে। তাই এ কাজগুলো পূর্ণোদ্যমে চালিয়ে যেতে বলা হয়েছে।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চমকের মন্ত্রীসভায় দায়িত্ব নিয়েই আগামী ৫ বছর দেশের অবকাঠামো খাতে উন্নয়নে চমক থাকবে বলে ঘোষণা দিয়েছিলেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী তাজুল ইসলাম। অঙ্গীকার করেছিলেন দেশের প্রতিটি গ্রামে শহরের সব নাগরিক সুবিধা পৌঁছে দেওয়ার।
লক্ষ্যপূরণের অগ্রযাত্রায় নিজেকে সমর্পণ করলেও কোভিড-১৯ সব মন্ত্রণালয়ের মতোই স্থানীয় সরকার মন্ত্রলায়কেও একটি বড় ধাক্কা দিয়েছে।
তবে এ ধাক্কা সামলে দ্বিগুণ গতি ও উৎসাহে চলমান উন্নয়ন কার্যক্রম চালিয়ে যেতে এলজিইডি’র জেলার নির্বাহী প্রকৌশলীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন মন্ত্রী তাজুল ইসলাম।
তবে এক্ষেত্রে গুণগত মান নিশ্চিত করতেও কড়া বার্তা দিয়েছেন তিনি। মন্ত্রী বলেছেন, ‘এডিপি ও অন্যান্য কার্যক্রম যথাযথভাবে এবং গুণগত মান নিশ্চিত করে বাস্তবায়ন করতে হবে।
যেসব জেলায় কাজের অগ্রগতি কিছুটা ঘাটতি রয়েছে তারা একটু জোর দিয়ে কাজ করলেই এই ঘাটতি পুষিয়ে ওঠা এবং এডিপির শতভাগ অর্জনও সম্ভব হবে।’
কালের আলো/আরআই/এমএএএমকে