সম্মিলিত প্রয়াসেই এলজিইডিকে অনন্য উচ্চতায় নিতে চান নতুন প্রধান প্রকৌশলী
প্রকাশিতঃ 9:25 am | May 07, 2020

বিশেষ সংবাদদাতা, কালের আলো :
নিয়মতান্ত্রিকভাবেই স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের (এলজিইডি) প্রধান প্রকৌশলী পদে ঘন ঘন পরিবর্তন এসেছে। প্রায় দেড়শ’ দিনের ব্যবধানে জ্যেষ্ঠতা অনুসারেই ‘প্রধান প্রকৌশলী’ পদে দায়িত্ব পালন করে চাকরি জীবন শেষ করে কমপক্ষে ৫ কর্মকর্তা অবসরে গেছেন।
মাত্র দুই সপ্তাহে আগে এই পদে দায়িত্ব নিয়েছেন এলজিইডির বিদায়ী অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (পল্লী অবকাঠামো উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা) মো.আব্দুর রশীদ খান। ৩২ বছরের বর্ণাঢ্য চাকরি জীবনের মাথায় তিনি সর্বোচ্চ পদে আসীন হয়েছেন।
গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নে নেতৃত্বদানকারী প্রতিষ্ঠানটির প্রধানের পদে এসে নিজের অধিদফতরটিকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে নিয়ে যাওয়ার আকাঙ্খার কথা বলেছেন আব্দুর রশীদ খান। তবে এজন্য সবার সম্মিলিত প্রয়াসের ওপরই জোর দিয়েছেন তিনি।
এলজিইডিকে এগিয়ে নিতে নিজের আগে দায়িত্ব পালন করা প্রধান প্রকৌশলীদেরও কৃতিত্ব দিয়েছেন। শ্রদ্ধাবনত চিত্তে তাদের স্মরণ করেছেন। বিনয়ের সুরেই তাঁর উচ্চারণ- ‘আমার অগ্রজ যারা ছিলেন তারা আমাদের অনেক দিয়েছেন। তাদের যে স্বপ্ন ছিলো, সেই স্বপ্নের কাছাকাছি এলজিইডিকে যেন নিয়ে যেতে পারি সেই চেষ্টাই চালিয়ে যাবো।’
বুধবার (০৬ মে) দুপুরে কালের আলো’র এই প্রতিবেদকের সঙ্গে মুঠোফোনে কথা হচ্ছিল স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের (এলজিইডি) নতুন প্রধান প্রকৌশলী আব্দুর রশীদ খানের। আলাপচারিতায় এলজিইডিকে নিয়ে তাঁর পরিকল্পনা, চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার কৌশল, এডিপি অর্জনসহ গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সোজা সাপ্টা উপস্থাপন করেছেন তিনি।
জাগিয়ে তুলতে চান মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের
প্রথম কোন কাজটি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে করতে চান, কালের আলো’র এমন প্রশ্নের জবাবে নতুন এই প্রধান প্রকৌশলী বলেন, ‘আমি আমার মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের জাগিয়ে তুলতে চাই। তাদের মাঝে জাগরণ তৈরি করতে চাই।
তারা অভিভাবক শুন্য না, আমি তাদের পাশে আছি। করোনাভাইরাসের ভয়ঙ্কর প্রাদুর্ভাবের কারণে সবার মাঝেই একটি ভীতি কাজ করছে। আমরা সরকারি নিয়মনীতি ও স্বাস্থ্যবিধি মেনেই আমাদের চলমান কাজগুলো শেষ করতে চাই। পূর্ণোদ্যমে সব কাজ সম্পন্ন করতেই মনোনিবেশ করতে চাই।’

সম্প্রতি এলজিইডির প্রধান প্রকৌশলী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন মো.আব্দুর রশীদ খান। তিনি বিদায়ী প্রধান প্রকৌশলী মতিয়ার রহমানের স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন। ১৯৮৪ সালে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) থেকে (সিভিল বিভাগ) বিএসসি করেন আব্দুর রশীদ। পাশ করে বের হওয়ার পরই বিভিন্ন বিদেশি কনসালটেন্সি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেছেন।
পরে ১৯৮৮ সালে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরে (এলজিইডি) যোগদান করেন। বিভিন্ন উপজেলায় সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে কাজ করেছেন। দায়িত্ব পালন করেছেন গুরুত্বপূর্ণ বেশকিছু প্রকল্পের পরিচালক হিসেবেও। ২০০০ সালে কনস্ট্রাকশন ম্যানেজমেন্ট বিষয়ে মাস্টার করেছেন যুক্তরাজ্যের বার্মিংহাম ইউনিভার্সিট থেকে।
সমন্বিতভাবেই মোকাবেলা করতে হবে চ্যালেঞ্জ
এলজিইডি’র প্রতিটি জেলার নির্বাহী প্রকৌশলীদের সামনে যে চ্যালেঞ্জ আসবে তা সমন্বিতভাবে মোকাবেলা করার আহ্বান জানিয়েছেন নতুন এই প্রধান প্রকৌশলী। কালের আলো’র সঙ্গে আলাপে তিনি বলেন, ‘প্রতিটি নির্বাহী প্রকৌশলী যে কোন কার্যক্রম বাস্তবায়নে কোন রকম অসুবিধার সম্মুখীন হলে অনায়েসেই আমার সহায়তা গ্রহণ করবেন।
আমি আমার টিমকে সামগ্রিকভাবে সব রকমের সহযোগিতা দিতে প্রস্তুত। সমন্বিতভাবে সমাধান বের করে ঐক্যবদ্ধভাবেই আমরা কাজগুলোকে এগিয়ে নিতে চাই। তবে অবশ্যই ব্যক্তিগত সুরক্ষা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করেই আমরা আমাদের কার্যক্রম বাস্তবায়নে পথ চলবো।’
উন্নয়ন-অগ্রযাত্রায় গর্বিত অংশীদার
সবার সহযোগিতা নিয়ে ‘আই উইল গো ইন দ্যা রাইট ডিরেকশন’ বলছিলেন আব্দুর রশীদ খান। অভিজ্ঞ এই প্রকৌশলী মনে করেন, ‘কাজের ক্ষেত্রে আমি সব সময় যে একশ’তে একশ’ পাবো এটা আশা করিনা। আমি যদি একশ’তে নব্বই পাই এটাই ওকে।’
স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী তাজুল ইসলাম এমপি ও সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ’র দিকনির্দেশনা ও আন্তরিকতায় দেশের উন্নয়ন-অগ্রযাত্রায় এলজিইডিকে গর্বিত অংশীদার করতে নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে বলেও মন্তব্য করেন বর্তমান প্রধান প্রকৌশলী।

লক্ষ্যমাত্রা শতভাগ এডিপি অর্জন
তিনি বলেন, ‘আমরা প্রতি বছরই শতভাগ এডিপির কাছাকাছি পৌঁছতে চাই। এবারও আমাদের লক্ষ্যমাত্রা শতভাগ এডিপি অর্জন। কিন্তু এরপরেও করোনা মহামারির বিষয়টি আমাদের মাথায় রাখতে হবে। গোটা বিশ্বের মতো আমাদের দেশও চরম ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। এরপরও আমরা পিছিয়ে যেতে চাই না। আমরা লক্ষ্যপূরণে দুর্বার গতিতেই এগিয়ে যেতে চাই।’
মন্ত্রীর ভিডিও কনফারেন্স উদ্দীপ্ত করেছে নির্বাহী প্রকৌশলীদের
সোমবার (০৪ এপ্রিল) বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) ও এলজিইডির অন্যান্য কার্যক্রমের অগ্রগতি পর্যালোচনার উদ্দেশ্যে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে দেশের ৬৪ জেলার এলজিইডি’র নির্বাহী প্রকৌশলীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী তাজুল ইসলাম ও মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ।
এই ভিডিও কনফারেন্সকে বেশ তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করেন প্রধান প্রকৌশলী আব্দুর রশীদ খান। তিনি বলেন, ‘ভিডিও কনফারেন্সে মন্ত্রী মহোদয় ও জ্যেষ্ঠ সচিব মহোদয়ের নির্দেশনা মাঠ পর্যায়ের নির্বাহী প্রকৌশলীদের উদ্দীপ্ত ও অনুপ্রাণিত করেছে। এটা অবশ্যই তাদের কার্যক্রমে বড় রকমের ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।’
কালের আলো/আরআই/এমএএএমকে