করোনা সঙ্কটে ‘নন্দিত’ জনপ্রতিনিধি
প্রকাশিতঃ 10:29 am | May 11, 2020
পলিটিক্যাল এডিটর, কালের আলো :
করোনা স্থবিরতা কাঁদাচ্ছে অভাবী ও কর্মহীন জনগোষ্ঠীকে। অনাহারে-অর্ধাহারে কাটছে অনেকের দিন। নিজেদের এমন ঘোর দু:সময়ে এলাকার জনপ্রতিনিধিদের পাশে পাওয়ারই তো কথা!
কিন্তু দেখা নেই বেশিরভাগ জনপ্রতিনিধির। কারও বন্ধ মোবাইল ফোনও। কেউ কেউ খোদ দলীয় নেতা-কর্মীদেরও এড়িয়ে চলছেন।
ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রমে আবার সচিবদের দায়িত্ব দেওয়ায় ‘নাখোশ’ অনেকেই। ফলে করোনা ভীতির কষ্টে বন্দি জীবনে হাহাকার করছেন শ্রমজীবী ও খেটে খাওয়া মানুষজন। ওইসব জনপ্রতিনিধি দুস্থ ও অসহায় মানুষের চোখে হয়েছেন ‘নিন্দিত’।
আবার, এর বাইরে রয়েছে উল্টো চিত্রও। কোন কোন জনপ্রতিনিধি দেশের চলমান এ সঙ্কটেও আলো ছড়িয়েছেন। আবির্ভূত হয়েছেন ‘ত্রাতার’ ভূমিকায়।
নিজেদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করছেন সুচারুরূপে। সামাজিক নিরাপত্তার নিয়ম-কানুন মেনেই নিজ নিজ কার্যক্রমে গতি বাড়িয়েছেন।
মাস্ক আর হ্যান্ড স্যানিটাইজার বিতরণের মধ্যেই কেবলমাত্র নিজেদের সীমাবদ্ধ না রেখে জীবনের ঝুঁকি নিয়েই অভাবী মানুষের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন।
সাধ্যমতো তাদের কাছে পৌঁছে দিচ্ছেন ত্রাণ সামগ্রী। ব্যক্তিগত উদ্যোগে, সমাজের বিত্তশালীদের সহযোগিতা নিয়ে নিয়মিতভাবেই দরিদ্রদের মধ্যে খাদ্য সামগ্রী বিতরণের কাজ করছেন।
কোন কোন জনপ্রতিনিধি টানা এলাকায় অবস্থান করছেন আবার কেউ কেউ নিয়মিত এলাকায় যাতায়াত করছেন। খাদ্যসামগ্রী বিতরণসহ অনেক কাজ তদারকি করছেন। আলোচিত এই জনপ্রতিনিধিরা বিপদে ‘বন্ধুর পরিচয়’ দিয়ে হয়েছেন ‘নন্দিত’।
নন্দিত এসব জনপ্রতিনিধিদের ভাষ্য হচ্ছে- ‘সঙ্কটে মানুষের পাশে থাকাই মানবতা। একজন প্রকৃত রাজনীতিক মানেই এমন মানবিক গুণের অধিকারী।
আর তাই মানবিক হৃদয় নিয়েই তারা নিজ নিজ এলাকার দরিদ্র জনগোষ্ঠীর বিপদকালীন মুহুর্তে পাশে রয়েছেন। থাকবেন সামনের দিনগুলোতেও।’
তাজুল ইসলাম
স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী তাজুল ইসলাম ‘কম কথা’র মানুষ। বিচক্ষণ ও দক্ষ প্রশাসক হিসেবেও পরিচিতি রয়েছে।
তার মন্ত্রণালয়ের কর্মপরিধি রাজধানীর গুলশান থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত ইউনিয়ন পর্যন্ত বিস্তৃত। বাৎসরিক বাজেটও প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকার কাছাকাছি।
করোনা সঙ্কটে তৃণমূলের কোন জনপ্রতিনিধির ত্রাণ চুরি বা অনিয়মের ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত হলেই কঠোর অ্যাকশনে গেছেন মন্ত্রী। নুন্যতম কাউকে ছাড় দেওয়া হচ্ছে না। এক্ষেত্রে মন্ত্রীর ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি দৃষ্টি কেড়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত ৪৯ জনপ্রতিনিধিকে সাময়িকভাবে বহিস্কার করা হয়েছে। মন্ত্রী তাজুল ইসলাম ত্রাণ বিতরণে কেউ অনিয়ম করলেই শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ ও মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার করেছেন।
ফলে ত্রাণে অনিয়মের ঘটনা কমে এসেছে। আবার করোনার মধ্যেও ডেঙ্গু দমনেও সতর্ক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। কয়েক দফা সংশ্লিষ্টদের নিয়ে বসে কর্মপন্থা নির্ধারণ করেছেন।
গতবার ডেঙ্গু দমনে মন্ত্রী নিজেই মাঠে নেমেছিলেন। এবারও মন্ত্রী করোনা দুর্যোগেও হাত গুটিয়ে বসে নেই। সব সময়ই তাকে নানামুখী কর্মকান্ডে সরব দেখা গেছে।
মন্ত্রীকে সব রকমের সহযোগিতা করে যাচ্ছেন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ। ‘কাজের মানুষ’ হিসেবেই প্রশাসনে আলাদা ইমেজ রয়েছে তার।
গত দেড় মাসে বহিস্কৃত ৪১ জনপ্রতিনিধিদের একটি তালিকা সম্প্রতি এ জ্যেষ্ঠ সচিব এক পত্রের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব ড.আহমদ কায়কাউসকে জানিয়েছেন।
সূত্র মতে, করোনাভাইরাসের প্রকোপের শুরুর দিকেই নিজের নির্বাচনী এলাকা লাকসাম-মনোহরগঞ্জ উপজেলার প্রায় ২৫ হাজার পরিবারকে ত্রাণ সহায়তা দিয়েছেন মন্ত্রী তাজুল ইসলাম। সময় পেলেই নিজের এলাকার সার্বিক খোঁজ খবর নিচ্ছেন।
এলাকাও সফর করছেন। স্থানীয় নেতা-কর্মীদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিচ্ছেন। সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে পুরো নির্বাচনী এলাকার কার্যক্রম মনিটরিং করছেন।
মন্ত্রী বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) ও এলজিইডি’র অন্যান্য কার্যক্রমের অগ্রগতি পর্যালোচনার উদ্দেশ্যে ইতোমধ্যেই ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে দেশের ৬৪টি জেলার স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) নির্বাহী প্রকৌশলীদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্স করেছেন।
তিনি করোনা পরিস্থিতিতে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে ও সর্তকতা অবলম্বন করে উন্নয়নমূলক কাজ বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
একই সঙ্গে এডিপি ও অন্যান্য কার্যক্রম যথাযথভাবে এবং গুণগত মান নিশ্চিত করার ওপরও জোর দেন মন্ত্রী তাজুল ইসলাম এমপি।
সাধন চন্দ্র মজুমদার
তৃণমূল থেকেই উঠে আসা বর্ষীয়াণ রাজনীতিক সাধন চন্দ্র মজুমদার। নওগাঁ-১ (নিয়ামতপুর, পোরশা ও সাপাহার) আসন থেকে তিনবার নির্বাচিত সংসদ সদস্য।
প্রবল আস্থা ও বিশ্বাস রেখেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দিয়েছেন। মন্ত্রী মন্ত্রণালয়ের ‘ভাবমূর্তি’ পুনরুদ্ধারে সক্ষমতার পরিচয় দিয়েছেন।
করোনায় অর্থনৈতিক স্থবিরতার জেরে সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও কর্মহীনতা ও দারিদ্র্যতা দেখা দিতে পারে। বিপুল সংখ্যক মানুষ পড়তে পারে ভয়াবহ খাদ্য সঙ্কটে।
এমন শঙ্কায় সরকার আগেভাগেই খাদ্য নিরাপত্তায় জোর দিয়েছে। দুর্যোগকালীন এ সময়ে মানুষ যাতে খাদ্য সঙ্কটে না ভুগে সেজন্য আগাম পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন খাদ্যমন্ত্রী।
এজন্যই করোনা সঙ্কটেও নিজের দাপ্তরিক কাজ অব্যাহত রেখেছেন। কখনও ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে খাদ্য পরিকল্পনা ও পরিধারণ কমিটির সভা করছেন।
কখনও নিজের এলাকার সার্বিক পরিস্থিতি খোঁজ নিতে জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের (ইউএনও) সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্স করেছেন।
ভার্চুয়ালি গাইড লাইন দিচ্ছেন। সারাদেশে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের প্রকল্পসমূহও বাস্তবায়ন কার্যক্রম নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন।
করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে শ্রমজীবী, রিকশা চালক, দিনমজুরসহ কর্মহীন হয়ে পড়া মানুষের জন্য ওএমএস কর্মসূচির আওতায় চালের দাম প্রতি কেজি ৩০ টাকার স্থলে ১০ টাকা নির্ধারণ করার ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী।
পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বিশেষ ওএমএস কার্যক্রম পরিচালনা সংক্রান্ত নীতিমালা’ জারি করে খাদ্য মন্ত্রণালয়। রাজধানী ঢাকাসহ বিভাগীয় জেলা শহরে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) দেখিয়ে প্রতি সপ্তাহে একজন ভোক্তা অনায়েসেই ১০ টাকা কেজিতে ৫ কেজি চাল কিনেছেন।
কিন্তু স্বাস্থ্য বিধি রক্ষা না হওয়ার কারণে সেটি বন্ধ করে দিয়েছেন। কার্ড সিস্টেমে এখন একজন ভোক্তা ২০ কেজি করে চাল পাবেন।
খাদ্য মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল সূত্র নিশ্চিত করেছে, বিভাগীয় শহরে বিভাগীয় কমিশনারদের সভাপতি করে, জেলা শহরে জেলা প্রশাসক এবং পৌরসভাগুলোতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের (ইউএনও) সভাপতি করে কমিটি করা হয়েছে।
সেই কমিটি দরিদ্রদের নামের তালিকা করে কার্ড সিস্টেমে ১০ টাকা কেজিতে মাসে ২০ কেজি করে ওএমএস চালু করা হয়েছে।
একই সূত্র মতে, নিত্যদিন সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত সারাদেশ থেকে ওএমএস এবং খাদ্য বান্ধব কর্মসূচি বিষয়ক বিভিন্ন সমস্যার কথা শুনছেন মন্ত্রী। এ সংক্রান্ত সমস্যা সমাধানে দ্রুতই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বা কর্মকর্তার মাধ্যমে সমাধানের বিষয়টিও তদারকি করছেন।
নিজের জেলা নওগাঁয় বোরো ধান কাটার শ্রমিকদের মাঠে পাঠানোর আগে শ্রমিকদের তাপমাত্রা পরিমাপের জন্য ১১টি উপজেলা ও ৯৯ ইউনিয়নে ২০০ টি থার্মাল স্ক্যানার প্রদান করেছেন।
জেলার প্রতিটি উপজেলার জন্য এক লাখ ৭০ হাজার মাস্ক, ৩’শ পিপিই এবং করোনা রক্ত পরীক্ষার জন্য ১ হাজার স্যাম্পল কিটস সিভিল সার্জনের কাছে হস্তান্তর করেছেন।
ভয়ঙ্কর এ সময়ে পর্যাপ্ত খাদ্য মজুদ থাকায় দেশে কোন খাদ্য সঙ্কট হবে না বলে যেমন অভয় দিচ্ছেন তেমনি রমজানে চালের দর স্থিতিশীল রাখার বিষয়টিও নিজেই মনিটরিং করছেন। এর ইতিবাচক সুফল মিলছে বাজারে।
পাশাপাশি কয়েক দফায় নিজের নির্বাচনী এলাকায় প্রায় ২৫ হাজার মানুষকে চাল, ডাল, লবণ, চিনি, ভোজ্যতেলসহ নিত্য প্রয়োজনীয় খাদ্য সামগ্রী বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দিয়েছেন। যা একটি পরিবারের কমপক্ষে এক সপ্তাহের চাহিদা মেটাবে।
শ.ম.রেজাউল করিম
করোনার আঘাতে পোল্ট্রিশিল্পে বড় ধস নেমেছে। উৎপাদনের ব্যয় বাড়লেও উদ্যোক্তা ও খামারিরা ন্যায্য মূল্য পাচ্ছেন না।
খামারিরা বড় লোকসানের কারণে মুখ ফিরিয়ে নিলে দেশ আমিষের চাহিদা পূরণে সঙ্কটে পড়বে। একইভাবে করোনাভাইরাস দেশে দুগ্ধশিল্পে বড় অশনিসংকেত নেমে এসেছে।
এমন প্রেক্ষাপটে প্রান্তিক পর্যায়ের চাষী, খামারি এবং উদ্যোক্তাদের উৎপাদিত মাছ, দুধ, ডিম ও পোল্ট্রি বাজারজাত করার উদ্যোগ গ্রহণের জন্য সব জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে কর্মরত মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তাদের নির্দেশনা প্রদান করেছেন মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম অ্যাডভোকেট।
করোনা পরিস্থিতিতে বাজারজাতকরণ সঙ্কটে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ উৎপাদক, খামারি ও উদ্যোক্তাদের কথা মাথায় রেখে এবং ভোক্তাদের প্রাণিজ পণ্য প্রাপ্তির চাহিদা বিবেচনা করে মন্ত্রী এ নির্দেশনা প্রদান করেন।
ডিম মাছ, দুধ, মুরগী এবং মাংস সরবরাহের চেইন ঠিক রাখতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সময়োপযোগী পদক্ষেপের ফলে একদিকে যেমন মানুষ পুষ্টিকর খাবার খেতে পারছে তেমনি খামারিরাও উপকৃত হচ্ছেন।
পাশাপাশি মন্ত্রী নিজ নির্বাচনী এলাকায় কয়েক দফা দুস্থ ও শ্রমজীবী মানুষের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করেছেন। প্রথমধাপে পিরোজপুর-১ আসনের কর্মহীন হয়ে পড়া ১২ হাজার পরিবারের মাঝে এবং দ্বিতীয় ধাপে আরও ১৫ হাজার পরিবারের মাঝে ইফতার ও খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করেন মন্ত্রী শ.ম.রেজাউল করিম।
এছাড়া মন্ত্রী তার নির্বাচনী এলাকায় করোনা রোগীদের চিকিৎসার সুবিধার জন্য স্বাস্থ্য বিভাগের কাছে অ্যাম্বুলেন্সসহ ৫টি গাড়ির চাবি হস্তান্তর করেছেন।
এনামুল হক শামীম
করোনা বিপর্যয়ের মধ্যেও সক্রিয় রয়েছেন পানি সম্পদ উপমন্ত্রী ও শরীয়তপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য এনামুল হক শামীম।
প্রতি সপ্তাহে অন্তত দু’দিন নিজের নির্বাচনী এলাকায় অবস্থান করছেন। শরীয়তপুর জেলায় এ পর্যন্ত নিজের উদ্যোগে ২৫ টি ইউনিয়নে ৫ ধাপে ৩১ হাজার ৫’শ পরিবারের মাঝে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করেছেন।
স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে নিয়ে সম্মিলিত এ সহায়তা গিয়ে দাঁড়িয়েছে ৪৭ হাজার ২৩৫’এ। শুধু তাই নয়, জেলার ৬ টি হাসপাতালে প্রায় ১২ হাজার মাস্ক ও ৩’শ পিপিই বিতরণ করেছেন। নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন চিকিৎসদের সঙ্গে।
স্বশরীরে গিয়ে জানছেন তাদের সুবিধা-অসুবিধার কথা। অক্সিজেন সিলিন্ডার আপডেট করা, আইসোলেশন সেন্টার ঠিক রয়েছে কীনা এগুলো তদারকি করছেন। হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা কার্যক্রম জোরদার করতে নানাভাবে তাদের উৎসাহিত করছেন।
এনামুল হক শামীমের উদ্ভাবিত ‘ডাক্তারের কাছে রোগী নয় রোগীর কাছে ডাক্তার’ ইতোমধ্যেই জনমনে সাড়া ফেলেছে। দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে এ উদ্যোগের ভূয়সী প্রশংসা মিলেছে।
সূত্র মতে, প্রায় এক মাস যাবত নড়িয়ায় ও সখিপুর এলাকায় করোনা দুর্যোগে ঘরবন্দি মানুষকে বাড়ি বাড়ি গিয়ে চিকিৎসাসেবাসহ ওষুধ প্রদান করছে সংশ্লিষ্ট দু’টি টিম। প্রতিটি টিমে দু’জন চিকিৎসক ও দু’জন নার্স সার্বক্ষণিক সেবায় নিয়োজিত রয়েছেন।
জানতে চাইলে পানি সম্পদ উপমন্ত্রী এনামুল হক শামীম কালের আলোকে বলেন, ‘মন্ত্রীত্ব আমার পারমানেন্ট পদ নয়। ৩৫ বছর রাজনীতি করে এখানে এসেছি।
আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী হচ্ছেন ‘মানবতার জননী’। বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে কোন দুর্যোগে গরীব ও মেহেনতি মানুষের পাশে ছিলেন এবং আছেন। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে কোনো গরীব-দুঃখী না খেয়ে কষ্ট পায় না।’
নূরে আলম চৌধুরী লিটন
করোনা সঙ্কটের শুরু থেকেই নিজ নির্বাচনী এলাকা মাদারীপুরের শিবচরের বাসিন্দাদের পাশে আছেন জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ নূরে আলম চৌধুরী লিটন। এলাকার পাঁচশত স্বাস্থ্যকর্মীদের পিপিই, মাস্ক, হ্যান্ড স্যানিটাইজার দেওয়া হয়েছে তার উদ্যোগে।
উপজেলার প্রতিটি গ্রামে তালিকা করে চিফ হুইপ ৩০ হাজার পরিবারের কাছে পৌঁছে দিয়েছেন খাদ্য সামগ্রী। এমনকি এলাকার বিত্তবান দলীয় নেতাদেরও উদ্বুদ্ধ করেছেন যারা তাদের ব্যক্তিগত পক্ষ থেকে আরও ১০ হাজার দরিদ্রকে খাবার পৌঁছে দেন।
ইতালি ও অন্য দেশ ফেরতদের পুরো পরিবারকে হোম কোয়ারিন্টেইন নিশ্চিত করা এবং তাদের বাড়ি বাড়ি খাদ্য সরবরাহ ও স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে চিফ হুইপ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। যা কীনা, স্থানীয়দের মনোবল বৃদ্ধিতে সহায়ক হয়েছে।
রেজওয়ান আহাম্মেদ তৌফিক
একেবারেই সাদামাটা নিরাবরণ জীবনের অধিকারী প্রকৌশলী রেজওয়ান আহাম্মেদ তৌফিক। কিশোরগঞ্জ-৪ (ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রাম) আসন থেকে টানা তিনবার নির্বাচিত সংসদ সদস্য।
বাবা মহামান্য রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের মতোই হাওরের মাটি-আলো-বাতাসে দিনের পর দিন পরিণত হয়েছেন।
বাবার কাছ থেকেই বুকের মধ্যে হাওরের মানুষ আর প্রকৃতিকে ধারণ করার শিক্ষা নিয়েছেন। কার্যত জনতার এ রাজনীতিক পেয়েছেন ‘ভাটির রত্ন’ খ্যাতি।
করোনা সঙ্কটের শুরু থেকেই বঙ্গভবনের সুরম্য প্রাসাদ ছেড়ে এলাকার অতি দরিদ্র, অসহায় ও দুস্থ মানুষের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন।
অষ্টগ্রাম, ইটনা ও মিঠামইন উপজেলার কোন ইউনিয়নের মানুষ খাবারের কষ্টে আছেন, খোঁজ খবর নিয়ে তাদের কাছেই পৌঁছে দিচ্ছেন চাল-ডাল, তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্য সামগ্রী। জীবনের ঝুঁকির কথা না ভেবে হাওরের এক মাথা থেকে আরেক মাথায় ছুটছেন নিরন্তর।
সরকারি ত্রাণ সামগ্রীতেও চাহিদা না মেটায় নিজের উদ্যোগে তাদের দূয়ারে সহায়তা পৌঁছে দিচ্ছেন। নিজের নির্বাচনী এলাকার ২৪ টি ইউনিয়নের গরিব ও খেটে খাওয়া মানুষের মাঝে ইতোমধ্যেই প্রায় ৮’শ বস্তা চাল, ৪ টন খেজুর, দেড়শ’ বস্তা ডাল, দেড়শ’ বস্তা আলু ও ৬০০ লিটার সয়াবিন তেল বিতরণ করা হয়েছে।
পর্যাপ্ত পিপিই, মাস্ক, হ্যান্ড স্যানিটাইজার, থার্মাল গান তুলে দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট হাসপাতালগুলোর কর্তৃপক্ষের কাছে।
মানবিক এই সহায়তার ভেতরই নিজেকে না আটকে হাওরে ধান নিয়ে বিপাকে থাকা কৃষককূলের কাছেও রীতিমতো ‘দেবদূত’ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন।
তিনিই একমাত্র সংসদ সদস্য, যিনি সরকার প্রধানের ঘোষণার আগেই মানবতার টানে হাওরের অসহায় কৃষকের ধান কেটে দিয়েছেন।
হাওরে শ্রমিক সঙ্কটের আশঙ্কায় গত ৭ এপ্রিল মহামান্য পুত্র জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি স্ট্যাটাসের মাধ্যমে কৃষকের ধান কেটে দেওয়ার জন্য ছাত্রলীগকে আহ্বান জানান। এরপরেই অভূতপূর্ব সাড়া পড়ে যায়। পরের দিন থেকেই পূর্ণোদ্যমেই শুরু হয় ধান কাটা।
এখনও ছাত্রলীগের এ কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। পহেলা বৈশাখকে ঘিরে তিন উপজেলার ২৪ টি ইউনিয়নের ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের মাঝে তিনি ধান কাটার জন্য ১ হাজার ৭০০ কাঁচি উপহার দিয়েছেন।
স্থানীয়রা জানায়, কয়েক দফা সংসদ সদস্য নিজেই নেতৃত্ব দিয়ে ভাগ্য বিড়ম্বিত কৃষকের ধান কেটে দিয়েছেন। হাওরে মানুষজনের পাশে তার বুক চিতিয়ে থাকার মানসিকতা স্থানীয় কৃষকদের উজ্জীবিত করেছে।
তারা ফিরে পেয়েছেন তাদের হারানো মনোবল। ইতোমধ্যেই ছাত্রলীগের এ কর্মযজ্ঞে হাওরের তিন উপজেলার প্রায় ৯৭ শতাংশ ধান কাটা শেষ হয়েছে।
আব্দুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব
ভোলা-৪ আসনে করোনা পরিস্থিতিতে ‘মানুষ মানুষের জন্য’ কর্মসূচি চালু করেছেন জাতীয় সংসদের যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এমপি আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব।
দরিদ্র মানুষের মধ্যে খাদ্যসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য বিতরণে ব্যক্তিগতভাবে তিনি চরফ্যাশন ও মনপুরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের (ইউএনও) হাতে ২৫ লাখ টাকা তুলে দিয়েছেন।
নুরুন নবী চৌধুরী শাওন
চরম দুর্দিনে নিজ এলাকার বাসিন্দাদের পাশে আছেন ভোলা-৩ (লালমোহন-তজুমদ্দিন) আসনের সংসদ সদস্য নুরুন্নবী চৌধুরী শাওন। করোনা সংক্রমণের শুরু থেকেই তিনি এলাকায় অবস্থান করছেন।
প্রায় দেড় মাস যাবত অসহায় ও শ্রমজীবীদের খাদ্য সহায়তা দিয়ে যাচ্ছেন।
অসহায় ও দুস্থ মানুষকে খাদ্য সহায়তা দিতে চালু করেছেন ‘হটলাইন’। এ হটলাইনে কেউ ফোন দিলেই দিন বা গভীর রাত বলে কোন কথা নেই। মুহুর্তেই তার বাড়িতে পৌঁছে যােেচ্ছ এমপি শাওনের গাড়ি।
যেখানে থাকছে প্রয়োজনীয় নিত্যপণ্য সামগ্রী। পাশাপাশি তিনি নিজেই মানুষের বাড়িতে খাদ্য ও নগদ টাকা পৌঁছে দিচ্ছেন।
স্থানীয়রা বলছেন, করোনা ছাড়াও প্রতিটি দুর্যোগে-দু:সময়ে এলাকার মানুষের জন্য জোরালো অবস্থান গ্রহণ করেন সংসদ সদস্য শাওন। নিজ নির্বাচনী এলাকার গরিব ও অসহায় মানুষকে সাধ্যমতো সহায়তা করেই দায়িত্ব শেষ করেননি তিনি।
গরিবের চাল আত্নসাতকারীদের বিরুদ্ধেও কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেছেন সংসদ সদস্য নুরুন্নবী চৌধুরী শাওন।
দিন কয়েক আগে জেলার লালমোহনের ফরাজগঞ্জ ইউনিয়নের এক ব্যবসায়ীর বাড়ি থেকে সরকারি ৮ বস্তা চাল উদ্ধার করেন তিনি। পরে ভ্রাম্যমাণ আদালত চাল জব্দ করে ব্যবসায়ী সামছুদ্দিনকে ১ মাসের কারাদন্ড প্রদান করে।
মাশরাফি বিন মুর্তুজা
নড়াইল-২ আসনের সংসদ সদস্য মাশরাফি বিন মর্তুজা নানা সহযোগিতা নিয়ে তাঁর নির্বাচনী এলাকার মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন।
সহস্রাধিক অতি দরিদ্র মানুষকে খাদ্য সহায়তা, চিকিৎসাসেবায় যুক্তদের পিপিই প্রদানসহ করোনার সময় মানুষের চিকিৎসাপ্রাপ্তি ও দুর্ভোগ লাঘবে সার্বক্ষণিক তৎপর রয়েছেন।
সাবেক এ টাইগার ‘কাপ্তান’ গঠন করেছেন একটি ভ্রাম্যমাণ মেডিকেল টিম। এর মাধ্যমে প্রত্যন্ত অঞ্চলে সেবা দেওয়া হচ্ছে। সদর হাসপাতালে একটি জীবাণুনাশক কক্ষ স্থাপন করেছেন।
চিকিৎসকদের জন্য তৈরি করে দিয়েছেন সেফটি চেম্বারও। এলাকার কৃষকদের তিনি উপহার দিয়েছেন ধান কাটার মেশিন।
আতিকুল ইসলাম
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আতিকুল ইসলাম প্রবল সাহস ও আত্নপ্রত্যয়ের মধ্যে দিয়েই নিজেকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন।
গভীর সঙ্কটেও নগরীর বাসিন্দাদের সঙ্গে নিজেকে জড়িয়েছেন প্রাণের মায়ায়। করোনা দুর্যোগে নগর পিতা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে, নিজের অর্থ ব্যয় করে জনগণের পাশে দাঁড়িয়েছেন।
কাজ করেছেন জনসচেতনতা তৈরিতেও। বাড়ি ভাড়া নিয়ে ভাড়াটিয়াদের প্রতি মানবিক আচরণের আহ্বান জানিয়েও ছুটেছেন। নিজের তহবিল থেকে ডিএনসিসি এলাকার গরিব-অসহায় মানুষদের মাঝে খাদ্য সহায়তা দিয়ে যাচ্ছেন।
বনানীর বিদ্যানিকেতন স্কুলে প্রতিদিন সকাল থেকেই নিয়ম করে বসেন। নিজেই খাবারের প্যাকেটসহ পুরো বিষয়টি নজরদারি করেন। এ পর্যন্ত প্রায় ৭১ হাজার মানুষের মাঝে খাদ্য সহায়তা দিয়েছেন।
এর মধ্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) নিম্ন আয়ের মানুষজনও রয়েছেন।
রাজধানীতে তৃতীয় লিঙ্গের প্রায় এক হাজার মানুষের মাঝে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য বিতরণ করেছেন মেয়র আতিকুল ইসলাম।
প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা মোতাবেকই করোনা সংকট চলাকালীন সময়ে নগরীর তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের সার্বিক সহায়তা করছে সিটি করপোরেশন।
প্রকৃত অর্থেই রাজধানীর যে প্রান্ত থেকেই ফোন পাচ্ছেন, সেই প্রান্তেই পৌঁছে যাচ্ছে বিনয়ী মেয়র আতিকুল ইসলামের উপহার খাদ্য ও পণ্য। ‘সবাই মিলে সবার ঢাকা’ সামাজিক সংগঠনের ব্যানারে এ খাদ্য সামগ্রী বিতরণ অব্যাহত রাখা হয়েছে।
জানতে চাইলে মেয়র আতিকুল ইসলাম কালের আলোকে বলেন, ‘আমার মোবাইল ফোনে প্রতিদিন ২’শ থেকে ৩’শ এসএমএস আসে। ফেসবুকেও অনেকেই লিখে পাঠান।
হোন্ডা এবং পাঠাওয়ের মাধ্যমে তাদের ‘ডোর টু ডোর’ খাদ্য সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। আমাদের প্রায় দু’শতাধিক স্বেচ্ছাসেবক সার্বক্ষণিক সক্রিয় রয়েছেন।’
মো.ইকরামুল হক টিটু
নিজের এলাকার বেশিরভাগ জনপ্রতিনিধিই যখন স্বেচ্ছা ‘কোয়ারেন্টাইনে’ ঠিক সেই সময়ে নগরীর বাসিন্দাদের কাছে বলিষ্ঠ প্রাণময় শক্তির উৎস ইকরামুল হক টিটু। তিনি একাই লড়ে যাচ্ছেন। ঘরবন্দী নিম্ন আয়ের মানুষের একমাত্র ভরসাস্থল হয়ে উঠেছেন।
বহুবিধ মানবিক গুণের অধিকারী ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের এই মেয়র কোন রিকশা চালক, ভ্যান চালক, দিনমজুরসহ অসহায় মানুষ খাদ্যকষ্ট যেন না থাকে সেজন্য সাধ্যমতো সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন।
করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের শুরু থেকেই নিজের জীবনের মায়া ত্যাগ করেই আঁটঘাট বেঁধে মাঠে নেমে পড়েন। ইতোমধ্যেই তাঁর মাঠে ছুটোছুটির ‘হাফ সেঞ্চুরি’ পূর্ণ হয়েছে।
নগর পিতা টিটু নিজেই গাড়ি ড্রাইভ করে সাধারণ মানুষের ঘরে পৌঁছে দিচ্ছেন খাদ্য সামগ্রী। এ পর্যন্ত প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার পরিবারের কাছে সরকারি ও নিজস্ব উদ্যোগে খাদ্য সহায়তা দিয়েছেন। এতে করে এসব মানুষের মুখে ফুটিয়েছেন স্বস্তির হাসি। কাটিয়ে দিয়েছেন অনিশ্চয়তা।
সুন্দর ও বাসযোগ্য ময়মনসিংহ নগরী গড়ে তুলতে নিরন্তর পরিশ্রমী নগর পিতা অদৃশ্য করোনা দুর্যোগেও সাহস ও পরিশ্রম দিয়েই নগরীর বাসিন্দাদের জন্য কাজ করে গতানুগতিক রাজনীতির ধারা পাল্টে দিয়েছেন।
আরও জানা যায়, মেয়র টিটুর মতোই দুস্থ ও অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন তার সহোদর বড় ভাই, রেকর্ড ভোটে এফবিসিসিআইয়ের টানা তিনবারের নির্বাচিত সাবেক পরিচালক আমিনুল হক শামীম।
‘অকৃপণ’ হাতে নগরীর খেটে খাওয়া কর্মহীন মানুষের জন্য খাদ্য সহায়তা দিয়ে যাচ্ছেন তিনিও। দুই ভাইয়ের মানবিক নজিরের জেরে অনেক সংসদ সদস্যকেই বাধ্য হয়েই এলাকায় অবস্থান নিতে হচ্ছে।
কালের আলো/আরআর/এমএএএমকে