দুধ খামারিদের বাঁচাতে ‘ত্রাতা’র ভূমিকায় র্যাব; মুখে অনাবিল হাসি (ভিডিও)
প্রকাশিতঃ 8:31 pm | May 14, 2020

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো :
প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস কেড়ে নিয়েছে দুধ খামারীদের স্বপ্নও। বিভিন্ন দুগ্ধ সংগ্রহকারী প্রতিষ্ঠান দুধ সংগ্রহ কার্যক্রম সীমিত করেছে। আবার কেউ বন্ধ করে দিয়েছে। মিষ্টি ও দইয়ের দোকানও খোলার জো নেই। ফলে একেবারেই চাহিদা কমে গেছে দুধের।
প্রতিদিন লাখ লাখ লিটার উৎপাদিত দুধ হয় পানির চেয়ে কম দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। কিংবা নিরুপায় হয়ে ফেলে দিতে হচ্ছে। এতে চরম আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েন দুধ খামারিরা।
অনিদ্রা আর অস্থিরতায় দিন কাটতে থাকে তাদের। নিজেদের এমন চরম দুর্দিনে এগিয়ে আসেনি কেউ।
ভয়ঙ্কর এ চিত্রটি দেশের দুগ্ধ ভান্ডার হিসেবে পরিচিত সিরাজগঞ্জ জেলার শাহজাদপুর ও উল্লাপাড়া উপজেলার। এমন বাস্তবতায় দুগ্ধ শিল্পকে বাঁচাতে রীতিমতো ‘ত্রাতা’র ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে এলিট ফোর্স র্যাব।
র্যাব-১২ গত এক মাসে শাহজাদপুর উপজেলার পোতাজিয়া এলাকায় প্রাথমিক দুগ্ধ উৎপাদনকারী সময়বায় সমিতির মাধ্যমে শাহজাদপুর, পাবনা জেলার ভাঙ্গুড়া ও ফরিদপুর এলাকার খামারিদের কাছ থেকে বাজারমূল্যেই প্রায় এক লাখ লিটার দুধ সংগ্রহ করেছে।
এতে করে দুধ খামারিদের কপালে দুশ্চিন্তার ভাঁজ ছাপিয়ে অনাবিল প্রশান্তির হাসি ফুটেছে তাদের মুখে। তারা র্যাবের এমন মানবিক কর্মকান্ডের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন।
র্যাবের মতো করেই সমাজের বিত্তবানরা দুধ খামারিদের এমন ঘোর দু:সময়ে এগিয়ে এলে ক্ষতি পুষিয়ে খামারিরা অনায়েসেই ঘুরে দাঁড়াতে পারবেন বলেই মনে করেন স্থানীয় ব্যবসায়ী নেতারা।

স্থানীয় শাহজাদপুর উপজেলার বাঘাবাড়ি, রুপবাটি, কর শালিকা, পোতাজিয়া, কায়েমপুর এলাকার দুগ্ধ খামারিরা জানান, এখানকার খামারিদের দুধ বিক্রির প্রধান ভরসা মিল্কভিটাসহ বিভিন্ন বেসরকারি দুগ্ধ প্রক্রিয়াজাত কারখানা। কিন্তু করোনাভাইরাসের প্রভাবে ছোট বড় সব কারখানা বন্ধ রয়েছে।
স্বাভাবিক সময়ে যেখানে মিল্কভিটা প্রতিদিন সকালে ও বিকেলে প্রায় দেড় লাখ লিটার দুধ সংগ্রহ করতো সেখানে এখন সেটি প্রায় তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে।
এছাড়াও ঢাকাসহ বিভিন্ন শহরেও কমে গেছে দুধের চাহিদা। দই-মিষ্টির দোকান বন্ধ থাকার কারণে তারাও কিনছেন না দুধ।
পাশাপাশি তরল দুধ সংগ্রহ বন্ধ রেখেছে প্রাণ, আড়ংসহ বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান। ফলে জেলার প্রায় ২৫ হাজার গরুর খামারে উৎপাদিত তরল দুধ নিয়ে চরম বিপাকে পড়েন গো-খামারিরা। আর্থিক ক্ষতির কারণে দু:শ্চিন্তায় তাদের ঘুম হারাম হয়ে পড়ে।
শাহজাদপুর উপজেলার পোতাজিয়া প্রাথমিক দুগ্ধ উৎপাদনকারী সমবায় সমিতির সভাপতি ওয়াজ আলী জানান, প্রতিদিন এ অঞ্চলে প্রায় ১০ লাখ লিটার দুধ উৎপাদন হয়।

প্রায় সাড়ে ৫ লাখ দুধ লিটার সংগ্রহ করে মিল্কভিটা, আড়ংসহ ২০টির মতো প্রক্রিয়াজাত কারখানা। বাকি দুধ খামারিরা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীসহ খুচরা বাজারে বিক্রি করে। কিন্তু করোনায় এসব কর্মকান্ড নেই বললেই চলে।
দু:সময়ে ভরসা র্যাবই
খামারের উৎপাদিত দুধ নিয়ে খামারি ও কৃষকদের চরম দু:সময়ে এগিয়ে আসার পরিকল্পনা গ্রহণ করেন র্যাব-১২ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্ণেল মো. খায়রুল ইসলাম। তিনি খামারিদের কাছ থেকে বাজারের দামেই দুধ কেনার চিন্তা-ভাবনা করেন।
বিষয়টি তিনি র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) মহাপরিচালক (ডিজি) চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন ও অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন) কর্নেল তোফায়েল মোস্তফা সারোয়ারকে অবহিত করেন।

এরপর তাদের সানুগ্রহ অনুমতি ও প্রবল উৎসাহের প্রেক্ষিতেই খামারিদের কাছ থেকে দুধ কেনা শুরু হয়।
র্যাব মহাপরিচালক ও অতিরিক্ত মহাপরিচালকের (অপারেশন) সার্বিক দিক নির্দেশনায় প্রথমে খামারিদের কাছ থেকে ৩ থেকে সাড়ে ৩ হাজার লিটার দুধ কেনা হয়।
পর্যায়ক্রমে গত এক মাসে এসব দুগ্ধ খামারিদের কাছ থেকে প্রায় এক লাখ লিটার দুধ কেনা হয়েছে। তাদের নির্দেশনাতেই মূলত এ কার্যক্রমটি বিস্তৃত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, র্যাব সদর দপ্তরে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে নিজের প্রথম ভার্চুয়াল মতবিনিময় অনুষ্ঠানে র্যাব মহাপরিচালক (ডিজি) চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন র্যাব-১২’র এমন মানবিক কর্মতৎপরতার প্রশংসা করেছেন।

একই সঙ্গে তিনি সিরাজগঞ্জের খামারী ও ব্যবসায়ীদের সহায়তার জন্য বিত্তশালীদের প্রতিও আহ্বান জানান।
তৈরি হচ্ছে ঘি পনির
দুগ্ধজাত পণ্য হিসেবে ঘি পনির খেতে সুস্বাদু। সবারই আগ্রহ রয়েছে মজাদার পনিরের প্রতি। যেহেতু র্যাব-১২ স্থানীয় খামারিদের কাছ থেকে প্রায় এক লাখ লিটার দুধ কিনেছে তাই এবার তারা সংগ্রহ করা দুধ দিয়ে ঘি পনির তৈরি করছে।
র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) মহাপরিচালক (ডিজি) চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনের নির্দেশনায় সারাদেশের র্যাব সদস্যদের মধ্যে উৎপাদিত মূলে ঘি ও পনির সরবরাহ করারও সিদ্ধান্ত হয়েছে। পর্যায়ক্রমে র্যাব সদস্যদের মাঝে ঘি ও পনির সরবরাহ করা হবে।
পনির তৈরির সঙ্গে সম্পৃক্ত কারিগররা কালের আলোকে জানান, ১০ লিটার গরুর দুধে এক কেজি পনির তৈরি হয়। পনির তৈরিতে ৩ থেকে ৪ ঘন্টা সময়ের প্রয়োজন পড়ে।

উপকৃত হচ্ছেন তিন পক্ষই
র্যাব-১২ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্ণেল মো. খায়রুল ইসলাম কালের আলোকে বলেন, ‘ইতোমধ্যেই ঘি পনির তৈরির কার্যক্রম পুরোদমে শুরু হয়েছে। এজন্য ঘি ও পনির তৈরির কারিগরদের কাজে লাগানো হয়েছে।
এর মাধ্যমে তাদের স্বল্প মেয়াদী কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে। আবার দুধ কেনার ফলে অসহায় খামারিরাও উপকৃত হয়েছেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘উৎপাদিত ঘি পনির র্যাব সদস্যদের সাশ্রয়ী মূল্যে সরবরাহ করা সম্ভব হলে করোনা সঙ্কটে তাদেরও পুষ্টির জোগান হবে।
দেশের চলমান পরিস্থিতিতে অর্থনীতি সচল রাখতে কৃষক-শ্রমিক ও খামারিদের পাশে দাঁড়ানোর আমাদের এ কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে’-যোগ করেন র্যাব-১২ এর এ অধিনায়ক।
কালের আলো/এসআর/আরআই