নবযাত্রার অপেক্ষায় স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ, দায়িত্বকে চ্যালেঞ্জ হিসেবেই নিয়েছেন নতুন সচিব
প্রকাশিতঃ 5:48 pm | June 08, 2020

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো :
স্বাস্থ্য খাত নিয়ে সমালোচনা ও বিতর্কের শেষ নেই। করোনা সঙ্কটের সময়েও বেহাল দশা আরও প্রকট হয়ে উঠেছে। সুরক্ষা সামগ্রী সরবরাহ নিয়ে নজিরবিহীন অনিয়ম কঠোর সমালোচনার মুখে ফেলেছে মন্ত্রণালয়কে। মূলত কোন ‘ক্রাইসিস ম্যানেজার’ না থাকায় হ-য-ব-র-ল অবস্থা বিরাজ করছে।
পরিস্থিতি উত্তরণে বিচক্ষণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে সরকার। প্রশাসনে সৎ, দক্ষ ও চৌকস হিসেবে পরিচিত মো.আবদুল মান্নানকে স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনার মন্ত্রণালয়ের অধীনে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগে সচিব পদে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। গত ৪ জুন তাকে এ পদে নিয়োগ দিয়েছে সরকার।
অতীতের ধারাবাহিকতায় চলমান সঙ্কটে সামনে থেকে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগকে নেতৃত্ব দিয়ে তিনিই নবযাত্রার সূচনা করবেন, এমনটিই মনে করছেন সবাই।
তবে গুরুত্বপূর্ণ এ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে আসা ভূমি সংস্কার বোর্ডের সদ্য বিদায়ী চেয়ারম্যান মো.আবদুল মান্নান মনে করেন, স্বাস্থ্যসেবা খাতের অব্যবস্থাপনার চিত্র রাতারাতি পাল্টে দেওয়া সম্ভব নয়। যদিও তিনি নতুন এ দায়িত্বকে চ্যালেঞ্জ হিসেবেই গ্রহণ করেছেন।
সামনে এগিয়ে যাওয়ার দৃঢ় প্রত্যয়ে প্রাঞ্জল ভাষায় উচ্চারণ করেছেন- ‘তবুও বলছি, আমি মোটেও ভীত নই, হতাশ নই, জয়ের ব্যাপারে, উত্তরণের পথে আত্মপ্রত্যয়ে দৃঢ় পায়ে সামনে হেঁটে যাবো।’
শনিবার (০৭ জুন) নিজের ফেসবুকে দেওয়া একটি স্ট্যাটাসে এমনটিই বলেছেন চৌকস মেধা ও দক্ষতা দিয়ে বারবার নিজেকে প্রমাণ করা এ ঝানু সচিব।
ফেসবুকে দেওয়া স্ট্যাটাসে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের নতুন এ সচিব লিখেছেন, ‘ভাবছি, সম্প্রতি আমার একটি বদলিকে কেন্দ্র করে (এটি পদোন্নতি নয়, স্থান পরিবর্তন) দেশব্যাপী এমনকি দেশের বাহির থেকেও আমার অগণিত বন্ধু, সহকর্মী, শুভাকাঙ্খী, বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের সতীর্থ ও নিত্যশুভার্থীগণ আমার অতীত কর্মময়তা বিবেচনা করে যে অভাবনীয় আশাবাদ, উচ্ছ্বাস ও গগনস্পর্শী প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন তা আমাকে রীতিমতো বিব্রত ও বাকরুদ্ধ করেছে।
যুগপৎভাবে আমাকে এক কঠিনতম চ্যালেঞ্জের সামনে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে।’
স্বাস্থ্যসেবা খাতের বিদ্যমান চিত্র রাতারাতি কী বদলে দেওয়া সম্ভব, এমনটি উল্লেখ করে তিনি বলেছেন, ‘জাতীয় জীবনের এমন উদ্বেগ, উৎকন্ঠা ও মানুষের আশা আকাঙ্ক্ষার বাস্তব রূপদান, চাওয়া পাওয়ার মিল অমিলে আমরা কী বিস্ময়কর কিছু করে উঠতে পারবো?
বিদ্যমান এবং দৃশ্যমান চিত্রটি কী রাতারাতি বদলে দেয়া যাবে?’
কঠিন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় ভীত ও হতাশ নন বলেও আশাবাদী উচ্চারণ জনপ্রশাসনের এ মেধাবী কর্মকর্তার।
লিখেছেন- ‘তবুও বলছি, আমি মোটেও ভীত নই, হতাশ নই, জয়ের ব্যাপারে, উত্তরণের পথে আত্মপ্রত্যয়ে দৃঢ় পায়ে সামনে হেঁটে যাবো। আমি সততায় বিশ্বাস করি, এ দেশ আমাকে অনেক দিয়েছে যা কখনো ভাবিনি।
আমাদের কী কিছুই করণীয় নেই এই মাটির জন্যে? রজনীকান্ত সেন এর কথায়, ‘আমি অকৃতি অধম বলেও তো কিছু কম করে মোরে দাওনি।’
দীর্ঘ চাকরি জীবনে সফলতার সঙ্গেই দায়িত্ব পালন করেছেন আব্দুল মান্নান। ছিলেন ব্রাক্ষণবাড়িয়া ও চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক (ডিসি)।
কাজ করেছেন গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার বিভাগ, বিদ্যুৎ, জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়, সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় ও মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে বিভিন্ন পদে।
রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের পরিচালক, প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা ও রাজনৈতিক উপদেষ্টা ড. আলাউদ্দীনের একান্ত সচিব হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে দায়িত্ব পালনকালেও সুনাম কুড়িয়েছেন স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের এ নতুন সচিব।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে যুগ্ম সচিব ও অতিরিক্ত সচিব হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে দায়িত্ব পালন শেষে চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার পদে তাকে পদায়ন করা হয়।
বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের অষ্টম ব্যাচের কর্মকর্তা আবদুল মান্নান নিজের গুরুত্বপূর্ণ সময় ভাষ্যে আরও লিখেছেন- ‘জানি, এবারের এ যাত্রার মূল সারথি হয়ে আছেন সমগ্র দেশবাসী ও বাঙালি জাতি।
চেতনায় ও প্রেরণায় আছেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব এবং তাঁর যোগ্যতম কন্যা মানবিক, সংবেদনশীল ও বিশ্বনন্দিত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।’
সরকারের তথ্য কমিশন আয়োজিত ‘আন্তর্জাতিক তথ্য অধিকার দিবস-২০১৯’ এ শ্রেষ্ঠ বিভাগীয় কমিশনার হিসেবে ‘তথ্য অধিকার পদক’ পেয়েছেন আবদুল মান্নান।
মিয়ানমারের নিপীড়নের শিকার হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া ১০ লাখ রোহিঙ্গার সার্বিক কার্যক্রম তদারকি ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে গঠিত জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের ডেপুটি টিম লিডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
কালের আলো/এসআর/আরআই